Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

dazzle with me

Abstract Tragedy

3  

dazzle with me

Abstract Tragedy

ঘূর্ণাবর্ত

ঘূর্ণাবর্ত

5 mins
406



 তীর্থর আজকাল মাঝে মাঝে মনে হয়, "মরে যাই কেন বেঁচে আছি ?বেঁচে থাকাটা ভীষণ নিরর্থক? ",বিশেষ করে সকালে রোদ যখন চোখে এসে পড়ে বা সকালে ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় গড়াতে গড়াতে মনে হয় আবার একটা সকাল কেন হলো? না হলেও তো পারতো ?আসলে সকাল বেলা ওর ভীষণ মন খারাপ হয়,আর সেই মন খারাপটা ধীরে ধীরে ডালপালা মেলতে মিলতে গ্রাস করে ওর সমগ্র সত্তা। কিছুতেই রোদ ,সূর্যের আলো ওর ভালো লাগেনা, অনেকক্ষণ পর্যন্ত মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে দিনকে আড়াল করে। যদিও শোবার সময় জানালার ভারী পর্দা গুলো টেনে দেয়। সে যত বড়ই হোক কিন্তু মায়ের এক বদ অভ্যাস কিছুতেই পর্দা ঢাকা থাকলে চলবে না, সকাল হলেই এসে ঘরের জানালার পর্দা গুলো টেনে দিয়ে বলবেন, রোদের সঙ্গে সঙ্গে নাকি অনেক আলো বাতাস আসে, পজেটিভ ভাবনা চিন্তা ঢোকে, সূর্যের আলো ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে আসে।কিন্তু তীর্থ'র এসব কথা ভাল লাগে না, এমন কি সকালবেলা ঘরে ওর কারো ঢোকাও পছন্দ নয় । মাঝে কদিন দরজা বন্ধ করে শুতো কিন্তু মা রমাদেবী কান্নাকাটি করে তা বন্ধ করেছেন । অগত্যা দরজা খুলে শুতে হয় কিন্তু ভেজান থাকে।   রাতটা ওকে যেন চেপে ধরে ,ভীষণ বাজে লাগে। বিছানায় শুতে ইচ্ছে করে না, বিছানায় শুলে মনে হয় যেন রাশি রাশি চিন্তাভাবনাগুলো ওর মাথার মধ্যে তাজ্ঝিম মাজ্ঝিম করে। যত স্মৃতি, প্রাচীন ইতিহাস, গল্প, কবিতা ,পড়ার বিষয় ,প্রাক্তন বান্ধবী মনীষা সব মাথার মধ্যে জগঝম্প জুড়ে দেয়।


মনীষার কথা মনে হতেই তীর্থর মন খারাপ বাড়তে থাকে ,ভীষণ ভীষণ বাড়তে থাকে । মনীষার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো তাড়া করে বেড়ায় । ওর প্রথম হাতের ছোঁয়া, কিশোরবেলার প্রথম চুমু, পড়তে বসে প্রথম ইংরেজি স্যারের কোচিং এর টেবিলের তলায় পায়ের উপর পা রাখা। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় মনীষার করা বিদ্রুপ, ঠাট্টা,মনীষার করা ব্যঙ্গ,মনীষার শেষ কথা, মনীষার ওকে ছেড়ে তুহিনের বাইকে ওঠা । এই সব কথার ঝুলি যেন প্রতিরাতে খুলে বসে স্মৃতি, আর একে একে প্যান্ডোরার বাক্সের মতো তীব্র তীক্ষ্ণ যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিগুলো কালো কালো ছোট্ট ছোট্ট পরীর মতো ভেসে বেড়ায় চারিপাশে, মাঝে মাঝে হাতের ছোট বর্শা দিয়ে খোঁচাতে থাকে তীর্থকে। রক্তাক্ত তীর্থ চিৎকার করে ওঠে, "আহ, লাগছে! ",হাত বুলিয়ে দেখে সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ফুটে ওঠা রক্তের দাগ, চিড়বিড় করে জ্বলে। ও যন্ত্রণায় মাঝে মাঝে জোরে চেঁচিয়ে ওঠে।মা উঠে আসেন, "কি হলো বাবা তীর্থ? তীর্থ কি হলো?",তীর্থ চোখ খুলে দেখে ওর কালো পরীরা উধাও। ভালো করে অবাক চোখে দেখে সারা ঘরে টিউব লাইটের আলোয় কোথাও কোনো অন্ধকার নেই, গায়ের রক্তের দাগ গুলোও উধাও। অবাক হয়ে মা ওর কান্ড দেখেন বলেন, "বাবা লাইট নিভিয়ে দেব? " তীর্থ ভয় পায় আর্তনাদ করে ওঠে ,"না না, আলো নিভিও না জ্বলুক", রমাদেবী চলে যান।


   তীর্থ ঘরের দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখে নোনা ধরেছে ,ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায়, "আরে ওটা তো একটা মানুষের মুখ ",আরো ভালো করে দেখলেই বুঝতে পারে, ওটা মনীষার মুখ। ওই চোখ! ওই ভুরু! ওই ওই পাতলা ঠোঁট, ঠোটের নিচের তিলটা পর্যন্ত সুস্পষ্ট !আর চোখ দুটো প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ করে হাসছে।ঠাট্টা করছে বলছে ,"বিয়ে করার মুরোদ নেই ,চাকরি যে জোগাড় করতে পারে না, যার কোন মুরোদ নেই ,বেকার একটা ,ওয়ার্দলেস, আবার প্রেম করার শখ ! সরো", বলে ঠেলা দিয়ে ঐ তো !ঐ তো! মনীষা উঠছে তুহিনের মোটরসাইকেলের পেছনে।" মনীষা শোনো, শোনো, মনীষা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না, শোনো", ছুটে যায় তীর্থ ,প্রচন্ড জোরে ধাক্কা খায় দেওয়ালে ,মাথা ফুলে আলু, প্রচন্ড যন্ত্রণা! কই মনীষা নেই তো! তাহলে? এবার এই দেওয়ালে আর তাকাবে না তীর্থ, অন্য দেওয়ালে মুখ করে শোয়।কিন্তু এত অন্ধকার কেন? যত অন্ধকার হতে থাকে, তীর্থর আর ঘুম আসে না। কোনদিন মাঝরাতে উঠে পায়চারি করে, বিড়বিড় করে," মনীষা, মনীষা, দেখো আমি ভালো চাকরি পাব! মনীষা বিশ্বাস করো।"এভাবেই কেটে যায় প্রতিরাত, চোখের সামনে রাত কেটে কাক ডাকে, ঘনকালো চাকা চাকা দাগের মত অন্ধকার পাতলা হয় । কালো রংয়ে লাগে সোনালী ছোঁয়া। চোখের নিচে কত রাত জাগা, বেকারত্বের, প্রেমে ব্যর্থতার কালি। তীর্থ পর্দার আড়ালে মাথায় বালিশ চাপা দেয়।  তীর্থ আর ঘরের বাইরে বের হয়না, কারো সঙ্গে কথা বলে না ,এমনকি খাওয়া বাদে বাকি সময়ে মা বা বাবার সঙ্গেও কথা বলে না, চাকরি পেতে হবে ,চাকরি চাই। জেনারেল হল কেন? এস সি এস টি হলেও তো চাকরীটা জুটতো !মনীষা কে হারাতে হতো না !সত্যি তাই তো !   তুহিন এস সি বলে ভালো চাকরিটা পেয়ে গেল ,মনীষাকে সে কথা বলায় মানে নি, বলেছে, "হিংসা করো তুমি ওকে ,হিংসা করো !নিজের অযোগ্যতাকে এসসি এসটির দোহাই দিয়ে ঢাকতে চাও।",ওকে দেখাতেই হবে ও অযোগ্য নয় ,ওকে একটা সরকারি চাকরি পেতেই হবে ।


সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে তীর্থ, বইয়ের পাহাড়ের মাঝখানে। কখনো কখনো কিছু জিকে, কখনো অঙ্ক,কখনো অন্য কিছু।মনীষা ফিরে আসবে না, ততদিনে ও তুহিনের হয়ে যাবে কিন্তু ওকে প্রমাণ করতেই হবে ,ও অযোগ্য নয় হিংসুটে নয়।  তীর্থ পড়ে, সারাদিন চোখের সামনে বইয়ের পাতা খোলা ,তীর্থর মনে পুরনো ভাবনারা কিলিবিলি কাটে। তীর্থ বলে, "দূরে সরে যা ,আমি পড়ছি !বিরক্ত করিসনা! মনীষা এখন ডিস্টার্ব করোনা, আমি পড়ছি"! তীর্থ সারাদিন অংক কষে ,মোটা মোটা বইয়ের পাহাড়, হারিয়ে ফেলে নিজেকেই। চুল দাড়ির জঙ্গলে শান্তি পায়।   তীর্থর বাবা চিন্তিত মুখে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করেন,"কি করা যায়? "  তীর্থ শুয়ে আছে দেয়ালের দিকে মুখ করে, নোনা ধরা অংশটায় আজ ও মনীষাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। ওর চোখ ,নাক ,ঠোঁট, পাতলা সুন্দর ,দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট! কি পেলব,কি লোভনীয!।মনে পড়ে একবার জিভ দিয়ে চেখেছিল মনীষার কন্ঠার হাড়ের মাঝের ত্বকের স্বাদ, অমৃত ! শিউরে, কেঁপে উঠেছিল মনীষা। মনীষা সে শিহরণ ভুলে গেছো ?ভুলে গেছো ? তুমি যে বলতে আমার ঘামের গন্ধ তোমার সবচেয়ে প্রিয় !মণীষার আজ শুধু চোখে হাসি নয়, আজ ও ঠোঁট ফাঁক করে হাসছে! ওর দাঁত দেখা যাচ্ছে, মুখের গহ্বর দেখা যাচ্ছে, আস্তে আস্তে ওর হাসি আরো চওড়া হচ্ছে ,আরো আরো বিশাল, প্রশস্ত সে হাসি, নিকষ কালো অন্ধকার, এক কৃষ্ণ-গহবর যেন তীর্থকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।


 তীর্থ ভাবে ,যাবে না, যাবে না, ফিরিয়ে দেবে ওকে যেমন ও ফিরিয়ে দিয়েছিল দোলের দিন। শান্তিনিকেতনে দুটো শরীর যখন চূড়ান্ত মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত , তিরতির করে কাঁপছে, শেষতম মুহুর্তে নিংড়ে নিতে নিতে তীর্থর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, মনীষা হঠাৎই এক ধাক্কায় তীর্থকে সরিয়ে চলে গিয়েছিল ওয়াশরুমে, ফিরিয়ে দিয়েছিল তীর্থকে ,প্রত্যাখ্যান করেছিল ওর পৌরুষ।আজ ও যদি প্রত্যাখ্যান করে? কিন্তু ও যে মনীষা !ও ডাকলে কি ফেরানো যায়? যায় না! অনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মত সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তীর্থ বিছানা ছেড়ে উঠে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে সেই গহ্বরে। তীব্র অন্ধকার, চারিদিকে কোন আলো নেই । নিশ্ছিদ্র অন্ধকার ,কি শান্তি !কি তৃপ্তি !আর মাথায় বালিশ চাপা দিতে হবে না, ওই অন্ধকারে আবর্তিত হতে থাকে তীর্থ এক গ্রহাণুর মত।  ডাক্তারবাবু সব চেকআপ করে বললেন, "অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার তবে হ্যালুসিনেশন ও আছে , সিম্পটম দেখে মনে হচ্ছে সিজোফ্রেনিয়া।আরো একটু অবজারভেশনে রাখতে হবে",হাতে ধরিয়ে দিলেন প্রেসক্রিপশন।" এই ওষুধগুলো কন্টিনিউ করুন আর বাকিটা টেস্টগুলো করার পরেই জানা যাবে", তীর্থ কিন্তু তখনো ঘুরেইই চলেছে অন্ধকার ঘূর্ণাবর্তে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract