বিশ্বাস ঘাতক
বিশ্বাস ঘাতক
"প্রেম টা হিংয়ের কচুরী বা কষা আলুর দম নয়, যে পরিবেশিত হবে। " বেশ বিভক্তির সাথে কথা গুলো উচ্চারণ করল রনিতা।
তারপর অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। মাথা নীচু করে নিজের সাথে যুদ্ধ করল বেশ খানিকক্ষণ। তার ও কিছু টা পরে ধীরে ধীরে বেশ কেটে কেটে কথা গুলো উচ্চারণ করল, "আমার বা আমাদের কিছু করার ছিল না। প্রেম যখন অন্যখাতে বয়, এই যেমন ধরুন আমি তাকে চাই, অথচ সে আমায় চায় না, অথবা দুজন দুজনকে চাই কিন্তু পরিবার চায় না, যেখানে প্রেম উপেক্ষিত, হতাশাগ্রস্ত কিম্বা বিপর্যয় গ্রস্ত, সেখানে প্রেম ব্যপারটা একটু আলাদা। কিন্তু যখন ধরুন পরিস্থিতি এরকম দাঁড়াল, দুজন দুজনকে চাইলাম, পরিবার যেখানে গৌণ মাত্র, যেখানে মুখ্য বাঁধা হল সমাজ, সেখানে? "
খুব সম্ভবত প্রশ্ন টা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলেন রনিতা দেবী। মধ্য চল্লিশের সুন্দরী রনিতা দেবী এবার একটু শান্ত হয়ে বসলেন। আমার দিক থেকে কোন উত্তর না পেয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। তারপর খুব ধীর লয়ে শুরু করলেন, " এমনই ছিল আমাদের প্রেম ভালবাসা টা। যেখানে বাঁধা হয়ে ছিল শুধু সমাজ। আমি নিঃসন্তান, ডিভোর্সী, এবং সফল চাকুরীজীবি মহিলা। আর কেকা ছিল শিক্ষিতা সুন্দরী। পরিবারে বিধবা মা আর বিবাহ যোগ্য দুই বোন ছিল। ও ইংরেজি অনার্স নিয়ে এম এ পাশ করেও চাকরি পাচ্ছিল না, অসহায় ভাবে ঘুরছিল। আমি ওকে মোটা মাইনের চাকরি দিয়েছিলাম, ও আমার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল। আমার একাকিত্বের জীবনে ও মরুদ্যান হয়ে এসেছিল। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে ফেলেছিলাম। যে ভালবাসায় শরীরের টান ছিল না, শুধু মনের টান ছিল। দুটো মন পরস্পরকে ছুঁতে চেয়েছিল। যেখানে যৌনতা ছিল না, ছিল মানসিক ভরসা, পরিতৃপ্তি আর পরস্পর কে ভালো রাখার চেষ্টা। "
এতক্ষণ আমি একটাও কথা বলিনি, এবার আমি বললাম, "মিস্ কেকা কি করে ছিলেন, যার জন্য মরতে হলো? "
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম, উনি অসহায়ভাবে বললেন, "বিশ্বাস করুন অফিসার, আমি কেকা কে খুন করিনি। আমি ওকে খুব ভালবাসতাম। কেউ যদি খুন করে সে হল সমাজ, কারণ সমাজ আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নেয় নি, ওকে মরতে বাধ্য করেছে। আসলে ৩৭৭ ধারা সমকামী দের আইনত স্বীকৃত দিলেও সমাজ এখনও মেনে নিতে পারেনি। "
আমি বললাম, "ঠিক আছে আপনি এখন আসতে পারেন। "
থানা থেকে বেরিয়ে নিজের এ সি গাড়িতে উঠে বসলেন সুন্দরী রনিতা চৌহান। নিজের মনে হেসে উঠলেন, সেদিন যদি খালি ইনজেকশনের সিরিঞ্জ টা নিখুঁত ভাবে কেকার শরীরে না পুশ করতেন, তবে আজও কেকা ওনাকে ঠকাত। রনিতার সাথে শুধু ভালবাসার অভিনয় করে গেছে কেকা, রনিতা কে টাকা উপার্জনের মেশিন ভেবে ছিল। আর ভিতরে ভিতরে রজতের সাথে সংসার করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এমন বিশ্বাস ঘাতকের এই পরিনতিই হওয়া উচিত। তারপর মনে পরল আজ পূজা নামে র মেয়েটির আসার কথা। কেকা র জায়গায় নতুন জয়েন করছে। কেকা র থেকে অনেক বেশি সুন্দরী। গাড়িতে বসেই নতুন করে টোপ ফেললেন রনিতা চৌহান।