Gopa Ghosh

Classics Thriller

5.0  

Gopa Ghosh

Classics Thriller

অপরাধ

অপরাধ

9 mins
651


"কি হলো আজ এত দেরি করে বাড়ি ঢুকলে?"

অমর কথাটা যেন শুনেও শুনলা না। ঘরে ঢুকে জুতোটা খুলতে যাচ্ছে বীনা আবার বলল

"কি হলো কি বললাম কানে গেল না"?

এবার বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল

"আমাকে নিয়ে গোয়েন্দাগিরি টা এবার একটু বন্ধ করো প্লিজ, আমি কোথায় যাই এবং কি করি তা তোমার দেখার কোন দরকার নেই"

"ঠিক আছে এবার সেটা মাকেই বলো, মা আমায় সব সময় জিজ্ঞেস করতে বলে তাই করি, নাহলে আমার বয়ে গেছে তোমার খোঁজ রাখতে"

এইসব কথার মাঝেই প্রতিমা ঘরে ঢুকে একই কথা ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, মানে দেরি হল কেন ফিরতে। মেজাজটা এবার অমরের সপ্তমে চড়ে যায়, তবু গম্ভীর হয়ে উপরতলায় শুতে চলে যায়। মা অনেক করে খেতে ডাকলেও আর সাড়াশব্দ দেয় না। বেশ কিছুদিন হল অমরের এই এক বদঅভ্যাস হয়েছে, সারাদিন অফিস করার পর তাসের আড্ডায় যাওয়া চাই, সাথে একটু নেশাও হয় না তা নয়, তবে রোজ নয়। প্রতিমা একদিন খুব বকার পর আগের থেকে একটু কমেছে। বৌমাকে বারবার বললেও কোন ফল হয় না। আসলে বিনা খুব নরম প্রকৃতির মেয়ে, অমর একটু চোখ পাকিয়ে কিছু বললেই ও ভয় পেয়ে যায়। তবে বিয়ে হল প্রায় পাঁচ বছর, একটা ছেলেও আছে ওদের। এখন প্রতিমা বৌমাকে দিয়ে বারবার সতর্ক করায় যে ছেলেকে মানুষ করতে হলে নিজেকেও ঠিক থাকতে হবে, কিন্তু কে কার কথা শোনে।

সেদিন অমর বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলো। বিনা একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বলল না। প্রতিমা নাতিকে নিয়ে ঘরে টিভি দেখছিল। অমর কে দেখে বলে উঠলো " এত তাড়াতাড়ি ফিরেছিস আজ, শরীর ঠিক আছে তো?"

"বাবা তাড়াতাড়ি ফিরলেও দোষ আবার দেরি করলেও দোষ, আমি কী করি বলতে পারো?" অমর বেশ রুষ্ট ভাবে বলে উঠলো। 

প্রতিমা উত্তর দেওয়ার আগেই বিনা বলে উঠলো "মা শরীর খারাপ জিজ্ঞেস করছে মানে তোমাকে দোষ দিচ্ছে না"

অমর এই কথার কোন উত্তর না দিয়ে উপরে উঠে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই ওপর থেকে নেমে এসে জানায়

"আমি আজ এক বন্ধুর বাড়িতে রাতে থাকবো নিমন্ত্রণ আছে তোমরা সাবধানে থেকো"

"ও তাই এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছো এবার বুঝতে পারলাম" বিনা কথাটা বলেই প্রতিমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল

"মা আপনি আর কিছু বলবেন না ওর যা ইচ্ছা হয় করুক"

তবু প্রতিমা থেমে থাকতে পারে না বলে ওঠে "কোন বন্ধুর বাড়ি যাবি সেটা বলে যা"

"কেন আমি কি মিথ্যা কথা বলে অন্য কোথাও যাব"?

এবার প্রতিমা বেশ রেগে বলে ওঠে

"তোর একটা বাচ্চা আছে আর ঘরে তোর বউ আছে, তুই আমার কথা না হয় ছেড়ে দে, যেখানে যাবি তা জানার অধিকার বীণার আছে"

অমর আর বেশি দেরি করে না শার্ট টা পড়েই ছোট ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর বিনা অনেকবার ফোন করে কিন্তু ফোনটা ও আর কিছুতেই রিসিভ করেনা। 

পরেরদিন বিকেল পর্যন্ত অমর আর ঘরে এলো না। বিনা অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই ফোনে পেল না। ফোন সুইচড অফ। বিনা অমরের এক বন্ধুর ফোন নম্বর অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে জোগাড় করলো। বার তিনেক ফোন করার পর অমরের অফিসের বন্ধু ভাস্কর ফোনটা ধরলো। বিনার মনে হলো যেনো সে লটারি জিতেছে, এক ছুটে গিয়ে শাশুড়ি প্রতিমার কানে ফোনটা ধরিয়ে বলে উঠলো "এই নাও মা, তোমার ছেলের খোঁজ দেবে ওর বন্ধু" প্রতিমা নাতিকে কোলে বসিয়ে চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বৌমার কথা শুনে চিরুনি ফেলে রেখে মোবাইল ফোনটা ধরে "তুমি কি অমরের বন্ধু বলছো বাবা? আমার ছেলে কাল থেকে বাড়ী ফেরে নি" কান্নায় বুজে এলো প্রতিমার গলা। বিনা এবার ফোনটা নিজের কানে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো সে কিছু জানে কিনা, কিন্তু উত্তরে ভাস্কর তেমন কিছু জানাতে পারলো না। বিনা ফোন রেখে প্রতিমাকে বলল "মা আমাদের এবার থানায় যাওয়া উচিত, পুরো দেড় দিন হলো ও নিরুদ্দেশ, তুমি না যাও তো আমিই যাচ্ছি"। কথাটা শুনে প্রতিমা না করলো না। ওরা থানায় মিসিং ডাইরি করার পর আরো চব্বিশ ঘন্টা কেটে গেলো কিন্তু যে তিমিরে সেই তিমিরেই রইলো। কোনো খবর পেলো না অমরের। তবে দ্বিতীয় দিন সকালেই থানা থেকে ফোন এলো। ছেলেকে প্রতিমার কাছে রেখে বিনা একাই গেলো থানায়। থানার বড় বাবু নিজেই ডেকে পাঠালেন। বিনা শুনলো কয়েকদিন আগে দীঘার হোটেলে এক যুগল আত্মহত্যা করেছে, আর সেই লোকটির সাথে অমরের মুখের বহুলাংশে মিল আছে। বিনার মুখ দিয়ে যেনো অস্ফুট স্বরে বের হলো "না না এ হতে পারে না"। বড় বাবু দুটি লেডি কনেস্টবল এর সাথে বিনাকে মর্গে পাঠালেন মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য। হ্যাঁ, শনাক্ত হতে খুব বেশি সময় লাগলো না, কারণ বিনার এত বছরের সঙ্গী, তার স্বামীকে চিনতে ভুল হওয়ার কথা ছিল না। মুখে কোনো কষ্টের চিন্হ নেই, যেনো গভীর ঘুমে মগ্ন। বিনার বুকের ভেতরটা ভেঙ্গে চুরে একাকার হয়ে গেলো। প্রতিমা আর ছেলের মুখটাই ভেসে উঠতে লাগলো বারবার। বাড়ি ফিরে প্রতিমাকে সব জানানোর আগেই দেখল থানার বড়বাবু সব জানিয়ে ফোন করেছিলেন। প্রতিমা নাতিকে কোলে নিয়ে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। বিনার মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে, তাই শ্বাশুড়ি মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেলো না। শুধু ছেলের মাথায় হাত দিয়ে সজল চোখে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। 

অমরের কোনো ভাই বা বোন নেই তাই প্রতিমার ভাই শশাঙ্ক যে কোনো বিপদে আপদে ছুটে আসে। এবারেও এলো তবে একমাত্র ভাগ্নের মৃত্যু শোক তাকে বেশ কাবু করে দিলো। কোনো অসুখ নয়, দুর্ঘটনা নয় আত্যহত্যা করে মৃত্যু যেনো পরিবার কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না। বিশেষ করে বিনা। অমরের সাথে সম্পর্ক যে খুব মধুর ছিল তা নয়, তার অবহেলা সয়ে সয়ে বুকটা কখন যে পাথর হয়ে গিয়েছিল তা টেরই পাই নি, কিন্তু হোটেলে অন্য মেয়ের সাথে কি করে ......

না আর চিন্তা করতে পারছিল না, মাথাটা যেনো গুলিয়ে যাচ্ছিল। আসলে অমরকে অবিশ্বাস করতে কোনোদিন ওর মন চায় নি। একবার ওর এক বন্ধু কুহেলী বলেছিল সে নাকি অমরকে এক মহিলার সাথে ধর্মতলা অঞ্চলের এক বার এ ঢুকতে দেখেছিল। বিনা কথাটা এড়িয়ে গিয়েছিল অন্য বাহানায়। ভেবেছিলো অফিসের কোনো কলিগ হবে হয়তো। কুহেলীও আর দ্বিতীয়বার বলে নি। যদিও অমরের সাথে থাকা মহিলাটিকে সে বেশ ভালো করেই চিনত। আগের পাড়ার মেয়ে। দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী হলেও স্বভাব চরিত্র মোটেও ভালো ছিল না। স্কুলের গন্ডি পেরোতে না পেরোতেই দু দু বার পাড়ার এক বখাটে ছেলের সাথে পালিয়েছে। যদিও টাকার অভাবে কয়েকদিন পর ফিরেও এসেছিল। এরপর আরো একবার একই কান্ড ঘটিয়েছে। সেও প্রায় একই ভাবে সপ্তা দুই পরে এসে উঠেছে বাপের বাড়ি। দাদারা আর ঝুঁকি নেয় নি, এক সম্বন্ধ দেখে বিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শশুর বাড়ী ছেড়ে আবার এসে উঠেছিল বাপের বাড়ি। স্বামী অনেক চেষ্টা করেছিল নিয়ে যাওয়ার, দাদারাও মুখে, হাতে সব রকম চেষ্টা করে শেষে ক্ষান্ত হয়ে কপালের নামে ছেড়ে দিয়েছিলো। সেই থেকে বাপের বাড়িতেই থাকে। তবে আগের স্বভাব একটুও বদলায় নি।কুহেলী যখন অমরের মৃত্যুর খবরটা শুনলো তখন চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই অমর আর শীলার সাথে দেখা হওয়ার দিন টা। কুহেলী বিনাকে সর্তক করেছিল কিন্তু সে নিজের অবিশ্বাস কে ঠিক শক্ত মাটিতে দাঁড় করাতে পারে নি।বিনা ভালোবাসা কে ঘৃণায় রূপান্তরিত করতে অক্ষম হয়েছিল। 

প্রায় মাস শেষ হতে চলল কিন্তু অমরের মৃত্যুর কিনারার শেষ হলো না। এর মধ্যে প্রায় বার ছয়েক বিনা আর প্রতিমাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই মার্ডার নিয়ে দেশে বেশ শোরগোল পরে গেছে। সবাই চায় সত্যিটা জানতে। কে এবং কেনো অমর আর ওর সঙ্গিনী মহিলাকে হত্যা করলো। বিনা অনেক ছোটাছুটি করে শেষে অমরের অফিসে চাকরিটা পেলো। প্রাইভেট ফার্ম হলেও মালিকের দয়া হয়েছিল ওই একরত্তি শিশুটির জন্য। বিনা বাচ্চাকে নিয়ে মালিকের সাথে দেখা করেছিলো। চাকরি না পেলে যে তার সংসারটা ভেসে যাবে এটা বারবার বোঝাতে চেষ্টা করেছে। শেষমেশ মালিকের মন গলেছে। বিনা স্নাতক হলেও কোনো কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে অফিসে জয়েন করে প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজেকে কাজের উপযোগী করে তুলতে। এভাবে কেটে যায় আরো বেশ কয়েক মাস। এর মধ্যে বার তিনেক থানায় তলব হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। বিনার এখন প্রশ্নগুলো মুখস্ত হয়ে গেছে। আগের মত আর ভয় ভাবটা নেই। অমরের ছবিটাও আস্তে আস্তে অস্পস্ট হতে শুরু করেছে। অফিস, ছেলে আর শাশুড়িকে নিয়ে তার দিব্য কেটে যায় সারাদিন। আর অমরের খুন কে করলো বা সে কেনো আত্মহত্যা করলো এইসব ভাবনায় তার মাথায় যন্ত্রণা ধরে না। বলা যায় বিনা ভুলতেই বসেছিল অমরকে। কিন্তু একটি ঘটনা তার শান্তি কে ছারখার করে দিল। একদিন অফিস বেরোনোর সময় কয়েকজন পুলিশ এলো। এ তার কাছে গা সোওয়া তাই কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে বাড়ির বাইরে বেরোতে গেলেই একজন কনেস্টবল পথ আটকে বলে ওঠে "ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট ম্যাডাম"। বিনা তো আকাশ থেকে পড়ে। নিজেকে একটু সামলিয়ে প্রশ্ন করে "ব্যাপারটা কি বলুনতো, আসল খুনিকে ধরতে না পেরে আমাকেই খুনি বানিয়ে দিলেন?" পুলিশ কথা না বাড়িয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলো "এটা বড়বাবুর হুকুম, চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে"। বিনা প্রতিমার দিকে তাকিয়ে শুধু বলে গেলো "চিন্তা করোনা মা,আমি দোষী নই, একটু পরেই ফিরে আসছি, ছেলেকে খেয়াল রেখো"।

থানায় বড়বাবুর সামনে বসে বেশ উত্তেজিত গলায় বলে যাচ্ছিল তার কোনো দোষ নেই, কারণ অমরের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তার নিজের, কে নিজেই নিজের ক্ষতি করতে চাইবে। বড়বাবু এতক্ষণ একমনে বিনার কথা শুনছিলেন, হঠাৎ বেশ নরম সুরেই বলে উঠলেন "ঠিক আছে আপনি নির্দোষ, কিন্তু আপনার খুব ঘনিষ্ঠ একজন ঠিক আপনার উল্টো কথা বলছে, সে বলছে আপনি চক্রান্ত করেই স্বামীর খুন করিয়েছেন" বিনার মুখ মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে উঠলো। সে নিজের দুর্বলতা চাপা দেওয়ার জন্য বেশ উচু স্বরে বলে উঠলো "মিথ্যা বলে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে কেউ, আমার ঘনিষ্ঠ বলে কাকে বোঝাতে চাইছেন আপনি, নাম বলুন" বড়বাবু যেনো তৈরি ছিলেন এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলে। কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলেন "তারাপদ, আপনার বাপের বাড়ির পাড়ার ছেলে, আবার বর্তমান প্রেমিকও বটে।" বিনা ডিসেম্বর মাসের ঠান্ডাতেও দরদর করে ঘেমে উঠলো। বড়বাবু গ্লাসের জলটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন "আশাকরি বুঝছেন সত্যি বলা ছাড়া আপনার আর কোনো পথ নেই, বলুন ম্যাডাম, কি কারণে খুন করতে হলো স্বামীকে?" কথাটা বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বিনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে বড়বাবু ছাড়াও তিন অফিসার। বিনা ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছে শুরু করে "স্যার, অমরের অমানুষিক অত্যাচার আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি অনেক বছর, ওকে মন দিয়েই ভালোবেসেছিলাম কিন্তু যেদিন শুনলাম অন্য একটি মহিলার সাথে সম্পর্ক আর তাকে বিয়ে করে আলাদা সংসার করার কথা ভাবছে সেদিন থেকে আমার চোখের ঘুম উড়ে গিয়েছিল, আমি ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর নাম করে প্রায়ই বাপের বাড়ি যেতাম, কারণ আমি জানতামএইব্যাপারে আমাকে সাহায্যকরতেপারে একমাত্র আমার ছোটবেলার বন্ধু তারাপদ" একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো বিনা "তারাপদ আমাকে নিরাশ করলো না, অমরের সব খবর আমি পেতাম, কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার ওকে খুন করতে চাই নি, ও নিজেই নিজের খুনের জন্য দায়ী,ও যে একজন বাবা, সেটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল,, ওর আমাকে দূরে ঠেলে দেওয়া তারাপদকে আমার আরো মনের কাছে নিয়ে এসেছিল। বুঝতে পারতাম তারাপদ আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, আর তাই আমি যা বলছি ও সবকিছু করতে প্রস্তুত হয়ে যেত। কিন্তু তাও আমি এই সিদ্ধান্তটা নিতাম না যদি না অমর তার প্রেমিকাকে নিয়ে দীঘায় বিয়ে করতে যেত। হ্যাঁ, ওরা সেদিন বিয়ে করতেই দীঘায় গিয়েছিল। আমি আর স্থির থাকতে পারি নি। এতবড় বেইমানি যে আর সহ্য হচ্ছিলো না। তখন তারাপদ আমাকে বোঝায় দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো, অন্তত দিনরাত গরুর লাথি তো খেতে হবে না। কথাটা আমার খুব মনে ধরল। তারাপদর সাথে এক মত হয়ে আবার পরে মত পাল্টেছিলাম, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ, ভাড়াটে খুনি শেষ করে দিয়েছে দুটি জীবন। আমি থানা থেকে ছুটে গিয়েছিলাম তারাপদর কাছে, তাকে কিছু বলার আগেই সে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চেষ্টা করে, আমি যদি ওকে বিয়ে না করি তবে সবাইকে জানিয়ে দেবে সত্যিটা।" এতটা বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বিনা। বড়বাবু টেবিলে রাখা গ্লাসটা আবার এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠেন "আচ্ছা আপনি প্রথম জানলেন কি ভাবে অমর বাবু লুকিয়ে কারো সাথে প্রেম করছেন?" বিনা আবার শুরু করে "আমি আমার এক বান্ধবী কুহেলির থেকে প্রথম শুনি কিন্তু কুহেলিকে বিন্দুমাত্র বুঝতে দিই নি আমার ভিতরে প্রচণ্ড একটা ঝড় উঠেছে। সেও বোধহয় কিছুটা অবাক হয়েছিল। আসলে অমরকে আমি নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতাম, ওর সহধর্মিণীর থেকে বড় পরিচয় ছিল আমি ওর বাচ্চার মা, তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না" এতগুলো কথা একটানা বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো বিনা। ঘরের সব চোখ গুলো তখন বিনার মুখের ওপর। বিনা আবার শুরু করলো "স্যার, তারাপদ আমাকে কথা দিয়েছিল আমি ফাইনাল না বললে ও কিছু করবে না, কিন্তু কথা রাখে নি। আমি তাকে একবার বলেছিলাম এটা স্বীকার করছি, তবে পরদিন বারণও করেছিলাম। আসলে আমার চেয়ে বেশি তারাপদ চাইতো পথের কাঁটাকে সরিয়ে আমাকে নিজের করে পেতে। হ্যাঁ স্বীকার করছি তারাপদকে বিশ্বাস করা আমার চরম ভুল হয়েছিল আর তাই এখন তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে, আমার ছোটো বাচ্চাটার কথা ভেবে আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার, আমি ছাড়া ছেলে আর আমার শাশুড়ি কি করবে আমি চিন্তাও করতে পারছি না" বিনা শেষের কথাগুলো বলে আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বড়বাবু পাশের অফিসারকে টেপ রেকর্ডার বন্ধ করতে বলে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর বিনার দিকে তাকিয়ে শুধু বলে উঠলেন "আগুন নিয়ে খেলা করতে গেলে পুড়তে তো হবেই ম্যাডাম"। বিনার দু চোখে তখন শুধুই দুঃস্বপ্ন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics