আমি ফকির

Thriller

4  

আমি ফকির

Thriller

লুকোচুরি, তারপর?

লুকোচুরি, তারপর?

15 mins
400



"লুকোচুরি।"

পুতুলের কথায় সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো "হোয়াট?"

জানলার দিকে মুখটা ঘুরিয়ে বাইরেটা দেখতে দেখতে চুলের সামনেটায় ডানহাতের আঙ্গুলগুলো একবার চালিয়ে নিলো পুতুল। তারপর মুখে একটা একপেশে হাসি নিয়ে ফিরে তাকালো সবার দিকে "ইয়েস। লুকোচুরি। খেলবি নাকি?"

কয়েক সেকেন্ড সবার দৃষ্টি স্থির পুতুলের চোখের ওপর। লুকোচুরি! সবারই মুখের ভাবটা এমন যেন ওরা ভুল শুনেছে।

"আইডিয়াটা কিন্তু খারাপ নয়। আমরা কিন্তু লুকোচুরি খেলতেই পারি। বেশ মজাই হবে।"

সোমার হঠাৎ এই উত্তেজনা দেখে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলো পায়েল "লুকোচুরি আজকালকার দিনে আমাদের ছেলেমেয়েরাও খেলে না। আমার ছেলের তো এখন সবে কে. জি. ওয়ান, মোবাইল গেমস ছাড়া তো কিছুই খেলতে দেখিনা। আর আমরা কিনা এই বয়েসে এসে লুকোচুরি খেলবো! পুতুলের যত উদ্ভট আইডিয়া!" কথাটা শেষ করে মুখে একটা ভেংচি কাটলো পায়েল।

"আরে তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? আমরা তো ক্লাস নাইন টেন এ উঠেও লুকোচুরি খেলেছি। শুধু কি লুকোচুরি! কুমির ডাঙা, ছোঁয়াছুঁয়ি, লক অ্যান্ড কি আরও কত কি খেলতাম বল। আজও মনে পড়লে কত আনন্দ হয়। কি সুন্দর ছিল ছোটবেলার স্কুলের দিনগুলো। আজকাল মোবাইল ফোনের জন্যই বাচ্চাগুলো খেলাধূলা ভুলে যাচ্ছে। সেই জন্য তো আমরা বাবা মায়েরাও অনেকটা দায়ী বল। কিন্তু আমাদের নিচের বাচ্চা গুলোকে দেখি বিকেলে মাঝেমাঝেই খেলে এখনও। লুকোচুরি খেলাটা কিন্তু যাই বল দারুন।"

রক্তিমার কথা শুনে আরও বিরক্ত হয়ে উঠলো পায়েল "তাই বলে কি আমরা এখন লুকোচুরি খেলবো? ঢং যত!"

"একসময় তো আমরা সবাই খেলতাম লুকোচুরি একসাথে। সেই মনে নেই, তখন আমরা ক্লাস টু কি থ্রী। পুতুল একমাত্র লুকিয়ে। ওকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছেনা। চোর সোমার সাথে আমরাও সবাই খুঁজছি। শেষে কিনা দেখা গেলো আমাদের দলের হেড পুতুল বিশ্বাস টিচার্স রুমের ভেতর কান ধরে দাঁড়িয়ে। এস. এস ম্যামের টেবিলের তলায় লুকোতে গিয়ে ধরা পরেছে।"

রণিতার কথা শেষ হতেই সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। পায়েলও এবার না হেসে পারলোনা।

সকলের হাসির মাঝেই হঠাৎ একটা বিকট শব্দে গমগম করে উঠলো চারিদিক। এক নিমেষে থেমে গেলো হাসির হৈ হৈ রব। আচমকাই এই শব্দে সকলেরই চোখেমুখে একটা আতঙ্কের ছায়া ফুটে উঠেছে।

"খুব কাছেই পড়লো বাজটা। ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলো বাব্বাহ।" একটা হাঁফ ছেড়ে বলে উঠলো রণিতা।

"এই পরিবেশে লুকোচুরিটা কিন্তু দারুন জমবে। কিরে পায়েল খেলবি কিনা বল তাহলে গোনা শুরু করবো। সেই ছোটবেলার আমরা আর এই আমাদের সেই স্কুল! বছরে তো এই একটাই রিইউনিয়ন তাও কোনোবারই তো সবাই আসেনা। কেউ না কেউ বাদ পরেই যায়। ভাবতো কত্ত বছর পর আমরা সবাই একজায়গায় হয়েছি। তাও ভালো যে দুর্যোগটা হঠাৎই শুরু হলো। আগে থেকে আভাস পাওয়া গেলে তো এবারও কারোর আসা হতো না। আবার কবে দেখা হবে সবার কে জানে।"

সোমার এই কথার পর ওদের মধ্যে একটা নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সবাই ছোটবেলার স্মৃতির গভীরে ডুবে গেছে। তবে ওদের কথা থেমে গেলেও বাইরের বৃষ্টির তেজ ক্রমে বেড়েই চলেছে। ঘন কালো মেঘের গর্জনে মাঝেমাঝেই কেঁপে উঠছে চারিদিক। এই দুপুর বেলাতেও বাইরেটা বেশ অন্ধকার।

স্কুলের মাঠেই স্টেজটা করা হয় প্রতিবছর। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু বাধ সাধলো এই অসময়ি ঝড় বৃষ্টি। কেউই ভাবতে পারেনি হঠাৎই এমন দুর্যোগ শুরু হয়ে যাবে। তাই অনুষ্ঠান গুটিয়ে হলঘরের ভেতর আনা হয়েছে। ঠিক যেমনটা হওয়ার কথা ছিল তেমন ভাবে কোনোকিছুই আর হতে পারলোনা। খুবই যেমন তেমন করে সারা হলো সবটা। তবুও এই ব্যস্ত কঠোর জীবনটা থেকে কিছুক্ষনের জন্য বেরিয়ে আবার সেই ছোট্টবেলার স্কুল জীবনে ফিরতে পেরেই সবাই খুব খুশি। এই দুর্যোগ ছোটবেলার বন্ধুদের আনন্দে কোনোই প্রভাব ফেলতে পারেনি অন্তত আজকের দিনটায়।

"ঠিক আছে চলো তাহলে গোনা শুরু হোক" পায়েলের মুখে এই কথা শুনে সবার চোখ চিকচিক করে উঠলো।

"কিন্তু দাঁড়া, এক মিনিট। এখানে তো এতো লোকজন। এখানে খেলা যাবেনা। চল আমরা দোতলায় আমাদের সেভেন এ'র রুমটায় গিয়ে বসি। লুকোনোর জন্য শুধু দোতলাটাই ব্যবহার করা যাবে। চলবে?"

"দেখেছিস তো এই রক্তটার মাথায় কোনোদিনও বুদ্ধি শুদ্ধি হবেনা" রক্তিমার কথা শুনে মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলো রণিতা "দোতলায় গিয়ে যে একটু আগে ফ্রাইড রাইস আর চিলি চিকেনটা সাঁটালি এর মধ্যেই ভুলে গেলি?"

"কি বলছি সেটা শোন ঠিক করে। আমরা সেভেনের দিকটায় খেলবো। এই দিকে তো খাবারের জায়গা, সেভেনের দিকটা তো খালি।" দু হাত নাড়িয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো রক্তিমা।

"ঐটুকু জায়গায় খেলা যায়না। তারপর আবার ক্যাটারিঙের বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা দোতলা জুড়ে। এই বুড়িদের লুকোচুরি খেলতে দেখলে আর রক্ষে থাকবেনা। এই বয়েসে এসে মান খোয়াতে পারছি না বাপু।"

"তুই সব ব্যাপারে বেশি বুঝিস। এমন করছিস যেন কত্ত বুড়ি হয়ে গেছি আমরা! সবে তো মোটে তিরিশ পেরো..."

রক্তিমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বাকিরা হো হো করে হেসে উঠলো রণিতা আর রক্তিমাকে এরম ভাবে ঝগড়া করতে দেখে।

"ওসব ছাড় চল আমরা বরং চারতলায় যাই। যদিওবা অনেকে তিনতলায় ফোটো টোটো তুলতে উঠতে পারে, চারতলাতে কেউই যাবেনা।" পুতুলের এই আইডিয়াতে সবাই এবার রাজি হয়ে গেলো।

ছোটবেলার পাঁচ বান্ধবী একতলার হলঘর দিয়ে বেরিয়ে এলো করিডোরে। ভীষণ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। করিডোরটা জলে জলে একাকার। লাঞ্চের টাইমেও এতটা বৃষ্টি হচ্ছিলোনা। বৃষ্টির ছাঁট এসে লাগছে ওদের গায়ে। ওই অবস্থাতেই সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো ওরা। দোতলাটাও জলে ভিজে। রান্নার লোকেরা একদিকে সরঞ্জাম গোছাতে ব্যস্ত। তার পাশ দিয়েই পাঁচজন উঠে এলো তিনতলায়।

তিনতলাটা তুলনামূলক আলোকিত। এখানটা স্কুলের সবার ফেভারিট ছিল। বেশ ফাঁকা ফাঁকা। রোদ্দুরে ঝলমল করতো সবসময়, আর ফুরফুরে হাওয়া খেলে বেড়াতো চারিদিকে। ক্লাস টেন বসতো শুধু এই তলাতে। অন্য ক্লাসদের কখনোই এখানে আসতে দিতো না ক্লাস টেনের মেয়েরা। তিনতলাটা চিরকালই কেবল ক্লাস টেনের অধিকারে।

কিন্তু এখনও জায়গাটা ফাঁকা। কাউকেই চোখে পড়লোনা ওদের। বৃষ্টির জন্যই কেউ আর একতলার হলঘর থেকে বেরোয়নি বোধ হয়।

"এইখানেই খেলি চল। আর চারতলাতে যেতে হবেনা। এমনিই এই অবধি উঠতে আমার কোমর ধরে গেলো।"

রক্তিমার কথা শেষ হতে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো পায়েল "তা ঠিকই বলেছিস। কিন্তু আমরা তো ভিজে যাবো রে বৃষ্টিতে। যা জলের ছাঁট আসছে !"

"আরে ধুর অনেক ভালো ভালো লোকানোর জায়গা আছে এখানে। একটুও ভিজবো না। নে পায়েল তুই'ই গোন" কথাটা বলে সিল্কের শাড়ির আঁচলটা কোমরে গুঁজে নিলো পুতুল।

"কি যে ছেলেমানুষিতে পেলো আমাদের" বলেই গুনতে শুরু করলো পায়েল "দশ, কুড়ি, তিরিশ..... নে সোমা চোর। তুই নির্ঘাত আগের জন্মে চোর ছিলি। চিরকাল তুই'ই চোর হোলি রে।"

"হুম ঠিক আছে ঠিক আছে। আমি দশ গুনে আসছি।" বলেই দেওয়ালের দিকে এগিয়ে যেতে গেলো সোমা।

"কিন্তু চার তলাটাও ব্যবহার করা যাবে। শুধু তিনতলায় মজা হবেনা" সোমাকে থামিয়ে বলে উঠলো পুতুল।

"ঠিক আছে গুনছি তাহলে..এক....পাঁচ....নয়, দশ." দেওয়াল থেকে দুহাতের মাঝখান দিয়ে মুখটা সরিয়ে পেছন ফিরলো সোমা। বৃষ্টিটা আগের থেকে একটু কমেছে। কিন্তু হাওয়া দিচ্ছে খুব। বৃষ্টি আর হাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই কোত্থাও। মনেই হচ্ছে না নিচে এত্তো মানুষ রয়েছে।

শাড়ির কুঁচিটা ডানহাত দিয়ে হালকা তুলে নিয়ে এগিয়ে গেলো সোমা করিডোর ধরে। বাথরুমের সামনে পৌঁছতেই হঠাৎই চারপাশটা অন্ধকার হয়ে এলো। প্রচন্ড জোরে হাওয়ার দাপট এসে লাগলো সোমার চোখেমুখে। হাতদিয়ে মুখটা আড়াল করে বাথরুমের ভেতর ঢুকলো সোমা। খেয়াল করলো সেই পনেরো বছর আগে ক্লাস টেনে পড়াকালীন শেষবার যখন এই বাথরুমে ঢুকেছিলো ও ঠিক তেমনই রয়েছে সবকিছু। ভাঙা বেসিনটা বদলানো হয়নি এখনও। এমনকি সেই চিড় খাওয়া আয়নাটাও একই ভাবে দেওয়ালে ঝুলছে। শুধু পুরোনো আয়নাটার ওপর নতুন কালিতে প্রচুর অঙ্কের সমীকরণ লেখা। নতুন কালির লেখার নিচ দিয়ে পুরোনো হালকা হয়ে যাওয়া কালিগুলোও উঁকি দিচ্ছে। হাসি পেয়ে গেলো সোমার। আয়নার সামনে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ও। মনে হচ্ছে যেন আয়নায় সেই পনেরো বছর বয়েসের দুটো সাদা ফিতে দিয়ে বিনুনি করা নিজেকে দেখতে পাচ্ছে সোমা। চোখটা ওর ছলছল করে এলো।

হঠাৎই কিছু ফিসফিস আওয়াজে সম্বিৎ ফিরলো সোমার। আওয়াজটা বাথরুমের আরও ভেতর থেকে আসছে। ভেতর দিকটা অন্ধকার। কোনোদিনই ওই ভেতর অবধি বাইরের আলো পৌঁছতো না ঠিক করে। আজ বাইরেটাও বৃষ্টির জন্য অন্ধকার বলে আরও অন্ধকার লাগছে ভেতরটা। সোমা মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলো। হ্যাঁ ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ আসছে। আসতে আসতে এগিয়ে গেলো সোমা ঐদিকে। যে দরজারটার ভেতর দিয়ে আওয়াজটা আসছে ঠিক তার বাইরে দাঁড়িয়ে সোমা। আরও কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আর তারপর...

জোরে একধাক্কায় আচমকাই ঠেলা মেরে খুলে ফেললো সোমা দরজাটা। ফিসফিসটা হঠাৎই চিৎকারে পরিণত হলো। একজনের নয় একের বেশি চিৎকারের সংমিশ্রনে সোমাও হকচকিয়ে গেছে। তবে একটা চিৎকার সোমার পেছন দিক থেকে এলো। ঝট করে একবার পেছনে আবার সামনে তাকিয়ে কয়েক পা পাশে সরে গেলো সোমা।

"এরম করে কেউ দরজায় ঠ্যালা মারে! মেরেই ফেলতি আরেকটু হলে!" ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো রণিতা।

"একেবারে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। তারওপর আবার চোর হয়ে নিজেই চিৎকার করছিস এইভাবে! উফফ!!" রণিতার পেছন থেকে সোমা শুনতে পেলো রক্তিমার গলার স্বর।

"কিন্তু আমি তো চ্যাঁচায়নি। এই পেছনের দরজা দিয়ে এসেছিলো আওয়াজটা।" কাঁপা কাঁপা ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো সোমা।

তিনজনেই চুপ, বন্ধ দরজাটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে। আর কোনো শব্দ আসছে না দরজাটার ভেতর দিয়ে। খুব শান্ত জায়গাটা। বাইরের ঝড় বৃষ্টি থেমে গেছে হয়তো।

আরও কিছু মুহুর্ত কেটে গেলে রণিতাই প্রথম কথা বললো "চল এখান থেকে। আর তো কোনো শব্দ আসছে না। আমার আর খেলতে ভাল্লাগছে না। ওদের ফোন করে ডেকে নে। বৃষ্টি কমে গেছে এবার বাড়ি যাবো।"

রণিতার কথা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেলো সোমা দরজাটার দিকে। রণিতা তখনও পেছন থেকে সাবধান করে চলেছে সোমাকে। সোমা দরজাটায় হাত রাখলো। হালকা করে ঠেললো জীর্ণ দরজার পাল্লাটায়। সাথে সাথেই নড়ে উঠলো পাল্লা দুটো। হাতটা সরিয়ে নিলো সোমা। একবার ঢোক গিলে আবার হাতটা এগিয়ে দিলো দরজাটার দিকে। রণিতার সাথে রক্তিমাও এবার বলে চলেছে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সোমার সেদিকে কান নেই। ও এবার একটু জোরেই ঠেললো আর সাথে সাথেই হাট করে খুলে গেলো দরজাটা। একটু ভেতরের দিকে উঁকি দিতেই চমকে গেলো সোমা। অন্ধকারে দেওয়াল ঘেঁষে কে যেন বসে আছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। রণিতাদের জানাতেই ও দৌড়ে এলো দেখতে। তবে রক্তিমার কান্নার আওয়াজ আসছে পেছন থেকে। ভীষণ ভয়ে ফোঁপাচ্ছে ও।

মোবাইল ফোনটা বার করে টর্চটা জ্বালাতেই চিৎকার করে উঠলো দুজনেই "পায়েললললল!"

দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে পায়েল। মাথাটা সামনের দিকে নুইয়ে পরেছে।

রক্তিমাও এবার ছুটে এসেছে। তিনজনে ধরাধরি করে ওঠালো পায়েলের দেহটা। টেনে টেনে নিয়ে এলো দরজার বাইরে। এখানে অন্ধকার বেশ ঘন। তাই ওকে ধরে ধরে বাথরুমের একদম মেইন দরজার দিকে নিয়ে এলো ওরা। বাইরেটা আসতেই ঝড় বৃষ্টির উদ্দাম নৃত্য শুরু হলো আবার। অস্বাভাবিক জোরে ঝড় উঠেছে। সেই হাওয়ায় বাথরুমের সামনের দিকের একটা খোপের দরজা বারবার ভীষণ আওয়াজ করে খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। পায়েলকে দেওয়ালে হেলিয়ে কোনো রকমে বসিয়েই দৌড়ে গিয়ে সোমা বন্ধ করলো দরজাটা আগে। বড্ড বিকট ঠেকছিল কানে শব্দটা।

দরজা বন্ধ করে ফিরে এলো সোমা পায়েলের কাছে। রণিতা ততক্ষনে ভাঙা বেসিনটা থেকে জল এনে পায়েলের মুখে চোখে ছেঁটাতে শুরু করেছে। পায়েল পায়েল বলে কিছুক্ষন ডাকার পর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো পায়েল।

রক্তিমা তখনও কেঁদে চলেছে। পায়েলকে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য হা করতেই ওকে ইশারায় থামিয়ে দিলো সোমা। তিনজনে ধরে ধরে তুললো ওকে। তারপর আস্তে আস্তে নিয়ে চললো নিচের হলঘরের দিকে।

সন্ধ্যের অন্ধকার হয়ে এসেছে বাইরে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকালে হঠাৎই আলোকিত হয়ে উঠেছে চারিদিক। পায়েলকে নিয়ে নেমে এলো ওরা। দোতলায় আলো জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু রান্নার আর ক্যাটারিঙের লোকজন কেউ আর নেই এখানে। ওরা একতলায় নেমে এলো।

একতলায় হলঘরের কাছে আসতেই ওদের দেখে সবাই দৌড়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। সবাই মিলে পায়েলকে ধরে বসালো চেয়ারে। যে যেখানে ছিল সবাই এসে ঘিরে ধরেছে ওদের, জানতে চাইছে কি করে এমনটা হলো। পায়েল আধবোজা চোখে তাকিয়ে আছে কেবল ওদের দিকে।

সোমা ওদের জানালো হঠাৎই প্রেসার ফল করে এমনটা হয়েছে। সোমা, রণিতা, রক্তিমা তিনজনেই জানে ওপরের ঘটনা কাউকে জানানো যাবেনা। সবাইকে বলা যাবেনা যে তিনতলায় লুকোচুরি খেলতে গিয়ে এমনটা হয়েছে। তাই ওরা সবাইকে জানিয়ে দিলো যে ব্যাপারটা তেমন সিরিয়াস নয়, ওরাই সবটা সামলে নেবে।

পায়েলের পাশ থেকে ভিড়টা একটু কমলে পায়েল এবার কেঁদে ফেললো। দুহাত দিয়ে সোমার হাতটা ধরে বলতে লাগলো ওপরের বাথরুমে কেউ রয়েছে। ও ভয়ানক একটা আওয়াজ আর চিৎকার শুনেছে।

সোমা পায়েলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ওকে আস্বস্ত করলো যে ওপরে ঠিক কি হয়েছে। পায়েল ছোটো থেকেই ভীতু। সেই জন্যেই ওরম একটা পরিবেশে আচমকাই ওরম আওয়াজে প্রচন্ড ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছিল পায়েল।

"নিজে মা হয়ে গেলি আর এখনও এমন ভূতে ভয় পাস তুই, একেবারে অজ্ঞানই হয়ে গেলি। ছি ছি পায়েল, ছি! আর তুই'ই কিনা বড় হয়ে লুকোচুরি খেলা নিয়ে অতগুলো কথা শোনালি তখন। তুই তো এখনও সেই ছোটই রয়ে গেছিস রে" কথাটা বলে মিচকি হাসলো রণিতা।

বাইরে অসম্ভব জোরে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। যাদের সাথে গাড়ি আছে তারা বেরিয়ে পরেছে। দুর্যোগের কারণে ক্যাব এও টানাটানি। তাই বেশির ভাগই এখনও হলঘরে বসে, বৃষ্টি কমার অপেক্ষায়।

পায়েল এখন একটু সুস্থ, ওর বাকি তিন বন্ধু ওকে খুশ মেজাজে ফেরানোর চেষ্টা করছে হাসাহাসি করে।

হঠাৎই চেয়ার ছেড়ে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ালো সোমা।

"আমি আবার ভুলে গেছি। ধ্যাৎ! এসবের ঠ্যালায় পুতুলের কথা ভুলেই গেছিলাম। ও এখনও লুকিয়ে নিশ্চয়ই। আমি এখুনি আসছি।"

"আরে কোথায় যাচ্ছিস। ওকে একটা ফোন কর। পুতুলটাও বলিহারি! সেই ছোট্টবেলার মতোই এখনও শেষ পর্যন্ত লুকিয়ে। এতো দেরি দেখে তো নেমে আসবে নাকি!" বলে রক্তিমা নিজেই ফোনে পুতুলের নম্বর ডায়াল করে কানে ঠ্যাকাল ফোনটা।

পায়েলের হ্যান্ড ব্যাগের ভেতরে ফোনটা বেজে উঠলো। "ধুর! ফোনটা আমাকে দিয়ে তখন একবার ওয়াশরুমে গেছিলো পুতুল। এবার কি হবে? এই সন্ধ্যেবেলা কোথায় খুঁজবি ওকে? ওপরে গিয়ে আলো জ্বালালে তো সবাই বুঝে যাবে। তারওপর এত্তো বৃষ্টি হচ্ছে, করিডোর তো জলে জল!"

"না আমি জানি ও কোথায় লুকিয়েছে। পুতুলই তো বলছিলো চারতলাটাও খেলায় নিতে। ও চারতলাতেই আছে আমি শিওর। তোরা থাক এখানে আমি আসছি।" বলেই দৌড়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো সোমা। কাউকে কিছু বলার সুযোগই দিলোনা ও।

সোমা বেরিয়ে যেতেই "আমিও তোর সাথে আসছি" বলে ছুটলো রণিতা দরজার দিকে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হলঘরের বাইরে পা দিতেই টাল সামলাতে পারলো না রণিতা, বৃষ্টির জলে পিছলে পড়ে গেলো মাটিতে।

সাথে সাথেই হৈ হৈ পড়ে গেলো গোটা হলঘর জুড়ে। সবাই মিলে ব্যস্ত হয়ে পড়লো রণিতাকে নিয়ে।

সোমা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে এসে পৌঁছেছে তিনতলায়। চারতলায় উঠে যাওয়া সিঁড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওপরের দিকে তাকিয়ে বেশ জোরে দুবার পুতুলের নাম ধরে ডাকলো সোমা। কোনো সাড়া শব্দ এলো না ওপর থেকে।

ওপরটা অন্ধকার। তাড়াহুড়োয় মোবাইল ফোন সমেত ব্যাগটা নিচেই ফেলে এসেছে সোমা। খুব রাগ হলো ওর নিজের ওপর। সোমা জানে চারতলায় কোনো লাইট ছিলোনা। চারতলাটায় ক্লাস রুম তৈরী হতে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছিল আর ঐরকমই আন্ডারকন্স্ট্রাকশন অবস্থায় পড়েছিল। কিন্তু এতবছর পরেও স্কুলের শরীরের যেটুকু পরিবর্তন ও সকাল থেকে দেখছে তাতে ও একেবারে নিশ্চিত ওপরটাও একই রকম আছে, ভাঙাচোরা টেবিল চেয়ার আর আসবাবপত্রে ঠাসা। ঐজন্যই ওরা ক্লাস টেনে পড়াকালীন চারতলাতেও লুকোতে যেত। অবশ্য সেসব দিদিদের থেকে লুকিয়ে। ওখানে যাওয়ার কড়া বারণ ছিল।

সোমা কিছুটা উঠে গেলো সিঁড়ি বেয়ে। কিন্তু নেমে এলো আবার। যে যা ভাবে ভাবুক। পুতুলকে খুঁজে পেতে হবে এখন। তিনতলার আলো গুলো জ্বালিয়ে দিলো ও। এবার ওপরটা একটু দেখা যাচ্ছে। মনে মনে ভীষণ রাগ হলো পুতুলের ওপর। এতটা দেরি হয়ে গেছে, তবুও ও লুকিয়ে রয়েছে। চিরকালই ধপ্পা দেওয়ার জন্য শেষ অবধি লুকিয়ে থাকতো পুতুল। কিন্তু এতটা ছেলেমানুষি করা ওর উচিৎ নয়।

আবার "পুতুল....পুতুল" বলতে বলতে ওপরে উঠতে লাগলো সোমা। ওপরটা অন্ধকার। এবার একটু একটু কাঁপতে শুরু করলো সোমার গলার স্বর। বৃষ্টিতে পরিবেশটা ভীষণ ঠান্ডা হয়ে গেছে, তবুও সোমার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অন্ধকারেও আন্দাজ করতে পারলো সোমা জায়গাটা আগের থেকেও আরও বেশি ভাঙাচোরা জিনিসে ভরে উঠেছে। বারবার হোঁচট খেতে লাগলো ও।

কিছুটা এগোতেই ভীষণ জোরে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। দুকান চেপে ধরে চোখ দুটো বুজতে গেলো সোমা। চোখের নিমেষে বিদ্যুতের আলোতে দেখতে পেলো ও ওর থেকে কিছুটা দূরে কে যেন দাঁড়িয়ে। ঠিক করে বুঝে ওঠার আগেই আলোটা চলে গেলো আর তারপর অসম্ভব অন্ধকার ঠেকলো চারিদিক।

"পুতুল তোকে কিন্তু আমি খুঁজে পেয়ে গেছি। এবার আর এসব ছেলেমানুষি ভাল্লাগছেনা। শিগগিরি নিচে চল."

কোনো উত্তর এলোনা ঐদিক থেকে। সোমা আবারও ডাকলো কয়েকবার। হঠাৎই ঠিক সোমার পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো "ধপ্পা সোমা।" একটা ঠান্ডা স্পর্শ ছুঁয়ে গেলো সোমার ডানহাতটা।

থরথর করে কাঁপছে সোমার সারা শরীর। এখানে সব কিছু স্বাভাবিক নয়। এখুনি সামনে কেউ ছিল। তাহলে পেছনে কে ডাকছে। গলার স্বরটা তো পুতুলেরই। তাহলে পুতুল কোথায়?

আর কিছু ভাবার সময় নেই দৌড়ে চলে গেলো সোমা সিঁড়ির দিকে। কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়োতে লাগলো সোমা। ভেজা শাড়ি জড়িয়ে যাচ্ছে পায়ে। দু তিনবার হোঁচট খেয়েও সামলে নিলো নিজেকে। রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে নেমে এলো নিচে, একতলায়। এখুনি বাকিদের জানাতে হবে ঘটনাটা। ওরা যদি বিশ্বাস না করে! কিন্তু পুতুলকেও তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সবাই নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবে ওর কথা।

হলঘরের দরজার সামনে এসে সোমা প্রচন্ড হাঁফাতে লাগলো। একবার ডাকার চেষ্টা করলো "রণিতা" বলে, কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরোলো না। সোমা লক্ষ্য করলো হলঘরের সবাই ঘরের মাঝখানটায় জড়ো হয়েছে। ঠিক কি হয়েছে বুঝতে পারছে না সোমা।

হঠাৎই সোমার গা ঘেঁষে দুজন লোক আর রক্তিমা ঢুকলো হলঘরে। রক্তিমা বাইরে কোথায় গেছিলো? আর এই লোক দুটো কারা, এরা এখানে কি করছে?

ভিড়টা সরে জায়গা করে দিলো ওদের। রণিতা চেয়ারে বসে থরথর করে কাঁপছে। ওর বাঁ পা টা আরেকটা চেয়ারের ওপর সোজা ভাবে রাখা। লোকদুজন গিয়ে ওকে ধরে তুললো, পায়েলও সাথে আছে ওদের। রণিতা খোঁড়াতে খোঁড়াতে লোক দুটোর কাঁধ ধরে এগিয়ে আসছে দরজার দিকে। দেখে মনে হচ্ছে ভেঙে গেছে পা টা।

কিন্তু এসব কখন কি করে হলো! কিছুই বুঝতে পারছেনা সোমা। ভেজা এলোমেলো চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে ঠান্ডা জল বেয়ে পড়ছে সোমার কপাল দিয়ে। গলার কাছটা আটকে আসছে।

ওরা দরজার কাছে আরও এগিয়ে আসতে দরজা দিয়ে সরে দাঁড়ালো সোমা। কিন্তু, কিন্তু এ কি দেখছে সোমা। চোখদুটো আপনা থেকেই বিস্ফারিত হয়ে উঠলো ওর। হাত পা অবশ হয়ে আসছে। রণিতাকে দুদিক দিয়ে ধরে রেখেছে লোক দুটো। ওদের সামনে রক্তিমা। পায়েল হাতে নিজের আর রণিতার ব্যাগ ধরে হাঁটছে। আর পায়েলের পেছনে...হ্যাঁ ঠিক পায়েলের পেছনে বাকিদের ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে ওটা কে? এ কিভাবে সম্ভব! সোমা! সোমা! হ্যাঁ ঠিক দেখছে ও। ঐতো গতবছর অ্যানিভার্সেরীতে মিহিরের দেওয়া গোলাপি শাড়িটা যেটা পরে রিইউনিয়ন পার্টিতে এসেছে আজ ও। ঐটাই, ঐতো, ওটা সোমাই। কোনো ভুল নেই। সোমাই হেঁটে আসছে ওদের পেছন পেছন।

সবাই দরজার পাশে দাঁড়ানো সোমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো। কেউ খেয়াল করলোনা দরজার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটাকে। ভিড়ের সাথে সাথেই এগিয়ে এলো সোমার ছদ্মবেশী সেই নারীমূর্তি। সোমা স্পষ্ট দেখলো ওর দিকে তাকিয়ে একটা একপেশে হাসি হাসলো মেয়েটা। খুব চেনা সেই হাসি। খুব বেমানান ওই হাসি সোমার মুখে।

সবাই ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে স্কুলের মেইন গেট দিয়ে। সোমা ঠায় দাঁড়িয়ে হলঘরের দরজার পাশে। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে ও।

হঠাৎই "নাআআআ" বলে চিৎকার করে উঠলো সোমা। দৌড়ে "দাঁড়াও, দাঁড়াও" করতে করতে ছুটে গেলো ওদের দিকে। কেউই ফিরে তাকালো না একবারও। কেউ যেন শুনতেই পেলোনা ওর কথা।

দরজার সামনে আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ও। কাঁচের মেইন গেটের ওপর এ কার প্রতিবিম্ব? পুতুল!

নিজের শরীরের দিকে তাকিয়েই "না না" করে পরনের নীল সিল্কের শাড়িটা খামচাতে শুরু করলো সোমা।

হঠাৎই সব আলো নিভে অন্ধকার হয়ে গেলো চারিদিক। দরজাটা বন্ধ করে দিচ্ছে। স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি হবে এখন? সোমা কিভাবে বাইরে বেরোবে?

বৃষ্টি হয়েই চলেছে এখনও। হওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ আসছে। কাঁদতে কাঁদতে অন্ধকার হলঘরটার সামনে ফিরে এলো ও আবার। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা সোমা।

হঠাৎই মেইন গেট খোলার আওয়াজ এলো। আলো জ্বলে উঠলো আবার। ঐতো দারোয়ান গেটের মুখে। দারোয়ানের পাশ দিয়ে স্কুলের ভেতর ঢুকে এলো সোমার ছদ্মবেশী। ও এদিকেই এগিয়ে আসছে। সোমার সামনে এসে দাঁড়ালো ছদ্মবেশী। মুখে সেই একপেশে হাসিটা।

নিজে থেকেই একটু হেসে নিয়ে বলতে শুরু করলো ও

"আই অ্যাম ভেরি সরি সোমা। আমি কি করতাম বলতো আর? সকালে আসার সময় লরিটা ঐভাবে আমায় ধাক্কা মারবে আমি তো ভাবতেই পারিনি। কিন্তু আমি তো মরতে চাইনি। মরলে তো অনেকদিন আগেই মরতে পারতাম। ঠিক সেদিন যেদিন তুই আমার থেকে মিহিরকে কেরে নিয়েছিলি। তুই জানতিস তো আমি ওকে ভালোবাসি। আমার হয়ে চিঠি দিতে গিয়ে নিজেই জড়িয়ে গেলি ওর সাথে? তারপর সাত বছর আগে বিয়ে করে বিদেশ চলে গেলি। আমি আজ এতো বছর একা একা শুধু কেঁদেছি। আজ তুই আসছিস শুনেই তো আমি আসছিলাম তোকে জিজ্ঞেস করবো বলে, সামনাসামনি। কেন করেছিলি সেদিন ওরম। কিন্তু দেখ ভগবানের কেমন ইচ্ছে। এখন আর কিছুই জানতে চাইনা আমি। কারণ এবার থেকে তো আমি মিহিরের সাথেই থাকবো।" কথাটা বলেই হা হা করে হেসে উঠলো পুতুল "তবে তুই একদম ভাবিসনা। আমি ওদের বলে দিয়েছি পুতুল বাড়ি চলে গেছে দারোয়ানকে বলে। রণিতাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কেউই আর কারণ জিজ্ঞেস করেনি। এই দ্যাখ আমার ফোনটা থুড়ি পুতুলের ফোনটা, যেটা পায়েলের কাছে ছিল। আমি চেয়ে নিয়ে নিয়েছি দিয়ে আসবো বলে। এবার আমিই ওদের জানিয়ে দেবো পুতুল অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে, তবে স্কুলে আসার সময় নয়, ফেরার সময়। জানিসই তো পুতুলের কেউ নেই। পুতুল একা। তাই কেউ খোঁজও করবে না ব্যাপারটার আর। তাছাড়া ওই থেঁতলানো দেহটাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। তোকেও তো এবার থেকে একাই থাকতে হবে। কারণ অনাথ পুতুল তো একা, একদম একা" বলেই হলঘরে ঢুকে গেলো পুতুল। বেরিয়ে এলো চেয়ারে পড়ে থাকা সোমার ব্যাগটা নিয়ে। তারপর আবার একটা একপেশে হাসি হেসে চলে গেল মেইন গেটের দিকে। মাঝখানে একবার থেমে পেছন ফিরে আবারও বলে গেল শুধু "সোমা ধপ্পা।"

চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে গেলো সোমা গেটের দিকে। পুতুল দারোয়ানকে দরজা খোলার জন্য ধন্যবাদ জানালো তারপর বেরিয়ে গেলো দরজা দিয়ে সোজা বাইরে। ঐতো মিহির, নিশ্চয়ই দুর্যোগ দেখে গাড়ি নিয়ে নিতে এসেছে। উঠে পড়লো পুতুল সেই গাড়িতে।

আবার আলোগুলো নিভে গেলো। চিৎকার করে উঠল সোমা। সোমার চিৎকার ওর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানের কানে পৌঁছোলনা। বেরিয়ে গেলো দারোয়ান ওর সামনে দিয়েই। সোমার মুখের ওপর বন্ধ হয়ে গেলো স্কুলের মেইন গেটটা।

                                                             

                                                              সমাপ্ত

        



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller