আয়...
আয়...
এক
দোতলার বসার ঘরটা দক্ষিন খোলা। অন্যান্য বাড়িঘরগুলো এখান থেকে অনেকটাই দূরে। তাই বাতাসের অবাধ বিচরণ। এমনিও এই পুরোনো দিনের বাড়িগুলো ঠান্ডা হয়। এখানে থেকে বোঝার উপায় নেই যে বাইরেটায় বৈশাখের সূর্য ঠিক কিরূপ লীলা দেখাচ্ছে। হাওয়ার শব্দটুকু বাদ দিলে চারিদিক বেশ শান্ত, নির্জন। সেই নিমগাছটার গন্ধ মিশ্রিত হাওয়াটা ঢেউয়ের মতো মাঝেমাঝে আছড়ে পড়ছিলো আমার ওপর। কি যেন এক মাদকতা আছে এই হাওয়ায়! আমার মাথায় তার ঠান্ডা হাতটা বুলিয়ে দিচ্ছিলো। আপনা থেকেই বুজে এসেছিলো চোখ দুটো। শরীর জুড়ে শান্তি অনুভব করছিলাম। ডুবে যাচ্ছিলাম কোন এক স্বপ্নের অতল সমুদ্রে।
হঠাৎই একটা প্রচন্ড শব্দে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ালাম চেয়ার ছেড়ে। একটু চমকেই গেছিলাম। একটু বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে। ওই দিকের বন্ধ দরজাটা হাওয়ায় খুলে গেছে। পাল্লাটা দেয়ালে ধাক্কা খেতেই অমন বিকট শব্দ! দরজার পাল্লা দুটো ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে কয়েকবার দুলে থেমে গেলো। প্রকান্ড বসার ঘরটা আগের থেকেও বেশি নিস্তব্ধ মনে হতে লাগলো তারপর। দরজার হালকা গোলাপি পর্দাটা বাঁধা নেই। স্থির ঘরটায় অস্বাভাবিক ভাবে উড়তে লাগলো পর্দাটা। বাতাসটা হঠাৎ কেমন ভারী হয়ে আসছে। একবার ঘরের ভেতরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিতে গেলাম। পারলাম না। পর্দাটা আমায় দৃষ্টি সরাতে দিলো না। পর্দাটা যেন আমায় ডাকছে। দু হাত বাড়িয়ে আহ্বান করছে আমায় ওইদিকে।
দরজাটা আমার থেকে বেশ কয়েক হাত দূরে। কাঠের পাল্লাদুটোর শ্যাওলা রংটা পুরোনো হয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। দরজার ওপারে বারান্দা। ওইদিকে ভালো করে তাকাতেই রেলিংটার দিকে চোখ চলে গেলো। রেলিংটা যেন একটা সবুজ চাদরে ঢাকা। সূর্যের সোনালী আলো এসে পড়ে চিকচিক করছে ওপরটা। আর সেই সবুজ চাদরের গায়ে একটা লাল রঙের ছিটে! টকটকে লাল! একদম রক্তের মতো।
"কিসের আওয়াজ হলো এতো জোরে?"
আমি নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম বারান্দার দিকে। ঘেমে গেছিলাম। প্রশ্ন শুনে ফিরে তাকালাম। আমার চোখে যে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট তা নিশ্চয়ই বৃদ্ধা বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তাঁর মুখের অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন হলোনা। বারান্দার দিকে ইশারা করে কাঁপা কাঁপা গলায় কেবল বললাম, "দরজাটা..."
বৃদ্ধা মিচকি হেসে বললেন, "ওহ! হাওয়ায় দরজাটা খুলে গেছে! আসলে এই ঘরটায় প্রচন্ড হাওয়া। পাখাও চালাতে হয়না। আমি মনে হয় সকালে দরজাটা খুলতে আজ ভুলে গেছি। যাক ও নিজে থেকেই খুলে গেছে।" বৃদ্ধা আবারো হাসলেন। তারপর এগিয়ে গেলেন বারান্দার দিকে। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তখনও আমার গলা দিয়ে আর একটাও কথা বেরোয়নি।
বৃদ্ধা বারান্দার সামনে পৌঁছে পেছনে ফিরলেন। বললেন , "কি হলো দাঁড়িয়ে কেন এসো।" বৃদ্ধাকে আমায় আরও একবার ডাকতে হলো। তারপর ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালাম বৃদ্ধার পাশে। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো জায়গাটায় আমার। বৃদ্ধা নিজে থেকেই বললেন, "আমি একা থাকি এতো বড় বাড়িতে। এরাই আমার একমাত্র সঙ্গী।" বলে এগিয়ে গেলেন রেলিঙের কাছে। বৃদ্ধাকে খানিক উদাস দেখালো। বললেন, "এতো যত্ন করি তবুও ফুল ফোটেনা কিছুতেই জানো। তাও আমি ওদের খুব ভালোবাসি। আজ এটা ফুটেছে দেখো। কতদিন পর আমার বারান্দায় ফুল ফুটলো। রক্ত জবা। কি সুন্দর লাগছে তাই না?"
ফুলটা দেখে ঢোক গিললাম। হাত দিয়েই কপালটা মুছে নিলাম একবার।
বারান্দার ওদিকটায় একটা গোল টেবিলের দুদিকে দুটো বেতের মোড়া রাখা। বৃদ্ধার হাতে একটা ট্রে তে দুকাপ চা। এতক্ষন খেয়াল করিনি। বৃদ্ধা টেবিলে ট্রে টা রেখে একটা মোড়া টেনে দিলেন আমার দিকে। অপর পাশে নিজে বসলেন। সারি সারি টবে গাছগুলো রেলিঙের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চলে গেছে। গাছের মাথাগুলো বেশ যত্ন সহকারে সমান মাপ করে ছাঁটা। আমি মোড়ায় বসলাম।
বৃদ্ধা চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। একটা তৃপ্তি ছেয়ে গেলো তাঁর সারা মুখে। জবা ফুলটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা। এবার আমি কথা বললাম। "আপনার জিনিসটা.." বলেই তাড়াতাড়ি আমার পকেট থেকে মাঝারি সাইজের কাপড়ের পার্স ব্যাগটা বার করে এগিয়ে দিলাম বৃদ্ধার দিকে।"একটু চেক করে নিন সব ঠিক আছে কিনা।" আমার গলার স্বর স্বাভাবিক হলোনা। এতো সুন্দর খোলামেলা বাড়িতে, এমন সুন্দর পরিবেশেও আমার দম বন্ধ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাড়িটা থেকে বেরিয়ে পড়ি। আমার এখানে আসা ভুল হয়েছে। খুব বড়ো ভুল হয়েছে।
"আহা তুমি এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেন? আর দেখার কি আছে? তুমি আমার এতো বড় উপকার করলে।"
"আপনার পরিচয় জানতে ব্যাগটা আমায় খুলতে হয়েছিল। অতগুলো নোট! একবার মিলিয়ে..."
আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই বৃদ্ধা হেসে উঠলেন, "পার্সটা যে আবার ফিরে পাবো সেই আশাই আমি করিনি। আমি তো ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই ওটা পকেটমার হয়েছে। সেখানে তুমি, যে কিনা বাড়ি বয়ে আমায় জিনিসটা ফেরত দিতে এলে, তাকে আমি সন্দেহ করবো?"
"ঠিক আছে আমি এবার উঠি তাহলে?"
আমি মোড়া ছেড়ে উঠতে যেতেই বৃদ্ধা হৈ হৈ করে উঠলেন, "আরে আরে যাচ্ছো কোথায়? তোমার তো আজ দুপুরের খাবার নেমন্তন্ন আমার বাড়িতে। ফোনে কিন্তু তেমনটাই কথা হয়েছিল।"
"কিন্তু আমার একটা জরুরি কাজ আছে।"
"না না আমি কোনো কথাই শুনবো না। তুমি চা টা শেষ করো আমি রান্নাটা দেখি।" বৃদ্ধা আমার কোনো কথাই শুনলেন না। উঠে চলে গেলেন বারান্দা পেরিয়ে পাশের কোনো একটা ঘরে। বুঝলাম বৃদ্ধা একা মানুষ। অতিথি পেয়ে সহজে ছাড়বেননা।
আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না। বারান্দাটা দেখার পর থেকেই জায়গাটা আমার ভালো লাগছেনা। বারান্দার নিচটা আগাছায় ভরা। পাঁচিলটা ভেঙে গেছে। মেরামত করানো হয়নি বহুদিন। পাঁচিলের গা থেকে ইঁটের এবড়োখেবড়ো টুকরো বেরিয়ে এসেছে। বাড়ির এই পেছন দিকটা যথেষ্ট ফাঁকা। বেশ সবুজ। দূরে কয়েকটা আন্ডারকন্স্ট্রাকশন বিল্ডিং দাঁড়িয়ে। কি ভীষণ রকমের নিস্তব্ধ! থমথমে! কিছুতেই আর আমার মন টিকতে চাইছে না জায়গাটায়। মাঝে মাঝে হাওয়ার শোঁশোঁ শব্দটা যেন কি একটা বলছে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে। শিরশির করে উঠছে আমার শরীরটা। কারোর যেন উপস্থিতি টের পাচ্ছি আমার আশেপাশে। সত্যি বলতে আমার খুব ভয় করছে।
দুই
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে এলাম দরজার কাছে। এখানটায় ভালো লাগছেনা একদম। বসার ঘরে গিয়ে বসবো। কিন্তু দরজাটার কাছে আসতেই উড়ন্ত পর্দাটা আচমকাই আমার মুখে এসে লাগলো। কিছু না ভেবেই নিমেষে পর্দাটাকে একপাশে সরিয়ে গুঁজে দিলাম দরজার ফাঁকে। আমার নিশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। আমার সামনের বসার ঘরটাকে পুরোটা দেখে নিলাম একবার। ফাঁকা ঘরটায় আসবাব বলতে পুরোনোদিনের সোফা সেট, একটা টেবিল, তিনটে আলমারি আর জানালার সামনে চেয়ারটা। সিলিঙে একটা বন্ধ পাখা আর দেয়ালে একটা মামুলি ঘড়ি। ঘড়িটাতে ছ'টা বাজে। সেকেন্ডের কাঁটা টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হালকা ডানদিক বাঁদিক কাঁপছে।
বাড়িতে এসে থেকে বৃদ্ধা ছাড়া আর কাউকেই দেখিনি। এমনকি কোনো সহকারীকেও না। বৃদ্ধা এই বয়েসেও একাই সব কাজ করেন ভেবে অবাক লাগলো। আমি আবার আগের মতোই ওই চেয়ারটায় গিয়ে বসলাম।
আমার অস্বস্তিটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অজান্তেই বারবার আমার চোখটা ঘরটার চারপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। আর ওই বারান্দাটা! অসহ্য লাগছে। বৃদ্ধা গেলেন কোথায়? অনেক্ষন হয়ে গেছে উনি গেছেন। ভাবলাম একবার গিয়ে দেখবো নাকি। চকিতেই মনে হলো কী দরকার! এই সুযোগ। আমার ওনাকে ওনার হারানো পার্স ফেরত দেওয়া হয়ে গেছে। আমার কাজ শেষ। উনি যা ভাবেন ভাবুন। আমি সোজা সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাই।
হ্যাঁ! উনি আসার আগেই আমাকে যেতে হবে। কিছু খারাপ, অশুভ অপেক্ষা করছে আমার জন্য এই বাড়িতে। অনুভব করতে পারছি আমি। উঠে পড়লাম চেয়ার ছেড়ে। সাথেসাথেই একটা দমকা হাওয়া এসে আবার বারান্দার পর্দাটাকে উড়িয়ে দিলো। আমার সারা শরীরের সমস্ত ক্ষমতা নিমেষে উধাও হয়ে গেলো। অবশ হয়ে গেছে হাত পা গুলো। নড়তে পারছি না। হালকা গোলাপি পর্দার সাথে উড়ছে এক গোছা কালো চুল! রেলিঙের ধারে লাল জবাটার সামনে কে দাঁড়িয়ে ও?
তিন
আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না। দম আটকে আসছে , আমি শ্বাস নিতে পারছিনা। কোনোমতে অনেক কষ্টে শরীরটাকে নাড়িয়ে পেছন ফিরে দৌড়ে দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়েই থমকে গেলাম। বৃদ্ধা দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন। থরথর করে কাঁপছে আমার সমস্ত দেহটা। প্রচন্ড হাঁপাতে লাগলাম।
"ওমা অমন দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমার রান্না হয়ে গেছে। খেতে দেবো যে।" বৃদ্ধা এবারেও আমার ভয় পাওয়া মুখটাকে গ্রাহ্য করলেন না।
"ওখানে...ও...ওখানে কেউ আছে। ওই বারান্দায়।"
"কাকে দেখেছো তুমি? এই বাড়িতে যে আমি ছাড়া কেউ থাকে না।" বৃদ্ধার স্বর শান্ত। "দেখো তাকিয়ে দেখো। কেউ নেই ওখানে। শুধু আমার ফুল গাছগুলো...আঃ কী সুন্দর লাগছে জবাটা!"
"আপনি বুঝতে পারছেননা আমার অবস্থাটা? আমি ওখানে একজনকে স্পষ্ট দেখেছি। ওই জবাটার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আপনি কেন বুঝতে চাইছেননা? আপনি মজা করছেন আমার সাথে?" চিৎকার করে উঠলাম বৃদ্ধার ওপর।
বৃদ্ধা নিচু গলায়, অনেকটা ফিসফিস করে বললেন, "কাকে দেখেছো তুমি? কে দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে?" বৃদ্ধার মুখের অভিব্যক্তি এবার পাল্টে গেছে। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
আমি ওই দৃষ্টি সহ্য করতে পারলাম না। দুহাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে কেঁদে উঠলাম। চিৎকার করে বলে ফেললাম "মল্লিকা...মল্লিকা দাঁড়িয়েছিল ওখানে। মল্লিকা। আমি দেখেছি ওকে।
হাওয়াটা হঠাৎ থেমে গেছে। বৃদ্ধা কোনো কথা বলছেননা। আমি কথা গুলো বলে ভীষণ রকম হাঁপাচ্ছিলাম। হঠাৎই বৃদ্ধা বীভৎস ভাবে হেসে উঠলেন। "হা হা....হাহা...হাহাহা হা....." বৃদ্ধার সাথে সাথে ঘরের প্রতিটি দেয়াল, আসবাব, দরজা জানলা সব কিছু যেন হাসতে শুরু করেছে। সারা ঘর জুড়ে আমার চারপাশ থেকে হাসির শব্দ ধ্বনিত হতে লাগলো, "হাহাহা হা হা .......হাহাহাহাহা"। তারই মাঝে বৃদ্ধা বললেন, "টাকা! টাকা! তাই না? সেই লোভেরই তো শিকার হতে হলো বিধবা মেয়েটাকে?" বৃদ্ধা কখনো হাসছেন আবার কখনো ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলছেন, "কি? হ্যাঁ? আমি ঠিক বলছিনা? মেয়েটাকে একা পেয়ে তুই...."
ঘরটা যেন আমার চারপাশে ঘূর্ণির মতো ঘুরতে লাগলো। ওলোটপালোট হয়ে যেতে লাগলো সবকিছু। চারিদিক দিয়ে কেবল পৈশাচিক হাসির আওয়াজ আমাকে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরলো। আবারো চিৎকার করে উঠলাম, "হ্যাঁ। হ্যাঁ আমি...আমি টাকার জন্য মল্লিকাকে খুন করেছি। আমি আমি আমি। কিন্তু না... না আমি ওকে মারতে চাইনি। আমি বলেছিলাম টাকা পয়সা গয়না সব...সব যদি ও আমায় দিয়ে দেয় তাহলে ওকে আমি কিচ্ছু করবোনা। মল্লিকা তো বলতো ওর স্বামীকে হারানোর পর আমিই এখন ওর একমাত্র সম্বল। আমাকে ছাড়া ও বাঁচবেনা। আমার প্রতি ওর নাকি এতো বিশ্বাস! কোথায় গেলো সব? শুধু মুখেই বড়ো বড়ো কথা! টাকা গুলো দিতে চাইলো না কেন ও? মেয়েমানুষের এতো জেদ কিসের। চড় মেরেছিলো ও আমায়! সহ্য করতে পারিনি আমি। মল্লিকার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে গেছিলাম ওই বারান্দায়। তারপর থেঁতলে দিয়েছিলাম ওর মাথাটা রেলিঙে ঠুকে। হাহাহা..হা হা!! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি মেরেছি মল্লিকাকে।" কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে মাথা নিচু করে হাঁপাতে লাগলাম।
কতক্ষন ওইভাবে মাটিতে বসেছিলাম আমি জানিনা। একটা হাওয়া এসে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিলো আমায়। মাথা তুললাম আমি ধীরে ধীরে। ঘরটা একেবারে শান্ত! কোনো হাসির শব্দ নেই! আগের মতো সুন্দর নিমের গন্ধ মাখা হাওয়া বইছে। আর বৃদ্ধা! ওই বৃদ্ধা কোথায় গেলেন? কেউ তো নেই আমার সামনে! মাটি থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। সারা ঘরে এদিক ওদিক তাকিয়ে চিৎকার করতে লাগলাম, "কোথায় গেলেন আপনি? আপনি কে? আপনি কোথায়?"
হঠাৎই ঘরের প্রবেশ দরজাটার সামনে আমার চোখ পড়তেই থমকে গেলাম। আবারো আমার রক্ত ঠান্ডা হয়ে এলো। আপনা থেকেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, "মল্লিকা!!!"
চার
"সত্যি কখনো চাপা থাকেনা। সেটা সামনে আসবেই। সে আজ হোক বা বিশ বছর পর।" রাগে অশ্রুতে মিলেমিশে গেছিলো মল্লিকার চোখ দুটো।
"মল্লিকা! মল্লিকা! তুমি...তুমি...." আমি কথাটা শেষ করতে পারলাম না। মনে হলো কথাটা নিজেই থেমে গেলো আমার গলার কাছটায়।
মল্লিকা দুদিকে হালকা মাথা নেড়ে মিচকি হাসলো। আমি বুঝলাম না ও কি বোঝাতে চাইলো। খানিক পর বললো, "কাজটা খুব কাঁচা হয়ে গেছিলো আসলে। লোভ যে বড়ো সাংঘাতিক। মানুষকে পাগল করে তোলে। তার ওপর আলমারি ভর্তি এত্তো টাকা পয়সা গয়নাগাটি!! হ্যাঁ মল্লিকা সেদিন মারা যায়নি।"
খানিকক্ষন সব নিশ্চুপ। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মল্লিকার দিকে। হঠাৎই দু হাত বাড়িয়ে ছুটে যেতে গেলাম মল্লিকার দিকে অমনি মল্লিকার তীব্র কণ্ঠস্বর আমায় থামিয়ে দিলো, "দাঁড়ান। ভালো করে তাকিয়ে দেখুন। আমি মল্লিকা নই।"
একের পর এক বিস্ময় আমাকে আরও পাগল করে তুলছিলো। "তুমি...তুমি..."
"আমি কেয়া"
বিড়বিড় করে বললাম, "কেয়া মানে তো...কেয়া...কেয়া... কিন্তু কিন্তু..." অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম মেয়েটার মুখের দিকে। এ কিভাবে সম্ভব!
"হ্যাঁ আমিই কেয়া। আমারই পার্স ব্যাগটা আপনি এটিএম এর সামনে থেকে কুড়িয়ে পেয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন।"
"কিন্তু কিন্তু....তাহলে ওই বয়ষ্ক মহিলা....না...না...আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। সব...সব" আবার মাথার চুলগুলো দুহাতে খামচে ধরে চিৎকার করে উঠলাম।
কেয়া ঘরে ঢুকে এসেছে। দক্ষিনের জানালাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাওয়ায় চুলগুলো ওর মুখের ওপর এসে পড়ছিলো বারবার। কেয়া চুলগুলো সরাতে ভুলে গেলো।
বেশ কিছুক্ষন বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর কেয়ার ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো, "আপনি যেদিন মল্লিকাকে মেরে সবকিছু হাতিয়ে পালিয়েছিলেন সেদিন বোধ হয় টাকার লোভে এতটাই বিভোর হয়ে ছিলেন যে ভুলে গেছিলেন মল্লিকা সেদিন একা ছিলোনা। সেই জন্যেই মল্লিকা স্বামী মারা যাওয়ার পর আপনাকে জীবনে পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলো। কিন্তু আপনি তার দাম দেননি।"
আমি বুঝতে পারলাম কেয়ার চোখদুটোর রহস্য।
কেয়ার গলা আটকে আসছিলো। একবার ঢোক গিলে আবার শুরু করলো কেয়া, "সেই রাত্রেই আমাকে জন্ম দিয়ে মা মারা যায়। আমি একটা অনাথ আশ্রমে বড়ো হয়েছি। অনেক কষ্টে সেই হসপিটালে গিয়ে দিনের পর দিন খোঁজ নিয়ে আমি মায়ের পরিচয় পাই। সেদিন হয়তো মাথায় আঘাতের ফলে মা ওই মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে গেছিলো। আপনি মাকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যাওয়ার পর নিশ্চয়ই মায়ের জ্ঞান ফেরে। মা ওই অবস্থায় রাস্তায় বেরিয়ে এলে মাকে লোকাল কিছু মানুষ দেখতে পেয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। আপনার জন্যেই, মাথার আঘাতের কারণেই মায়ের মৃত্যু হয়েছে। শুধু আমার কপালে সেদিন মৃত্যু ছিলনা।" কেয়া আবার চুপ।
হঠাৎ হোহো করে হেসে উঠলো কেয়া। বললো, "যাক আমার যেটুকু জানার বাকি ছিল সেটুকু আপনার নিজের মুখেই শুনতে পেলাম।" কেয়া আবার হাসলো। ওর হাসির মধ্যে তিরস্কারের ভাব স্পষ্ট।
আমি মাটিতে বারান্দার দিকে মুখ করে বসেছিলাম। এতো কথার মাঝে হারিয়ে গেছিলাম এতক্ষন। বুঝিনি আমার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করেছিল। হঠাৎ মাথাটা তুলতেই আবার থমকে গেলাম। ভয়টা আবার চেপে ধরলো আমায়। আঙ্গুল দেখিয়ে ফোঁপাতে শুরু করলাম, "ওইটা ওইটা..."
পাঁচ (শেষ)
হাওয়াটা থেমে গেছে। পর্দাটা স্থির। কেয়া আমার আঙ্গুল অনুসরণ করে তাকালো বারান্দার দরজাটার ওপরে। মুখ থেকে একটা আওয়াজ বার করলো "হুম।" তারপর বললো "আমার দিদার ছবি।" একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো কেয়া। "দিদা মাকে খুব ভালোবাসতেন। মায়ের বিয়ের আগে একমাত্র দিদাই ছিল নিজের বলতে। দিদা এই বাড়িতে একা থাকতেন। ফুল ভালোবাসতেন। দিদাই মায়ের নাম রাখেন মল্লিকা। মায়ের বিয়ের এক বছরের মধ্যে বাবা মারা যেতে মা শশুরবাড়ি ছেড়ে এই বাড়িতে চলে আসেন।"
আমি নিস্পলক তাকিয়ে ছবিটার দিকে। মনে পড়ছিলো আমার কুড়ি বছর আগের দিনগুলোর কথা। মল্লিকা তো কত কথা বলতে চাইতো। হয়তো ওর মায়ের কথা, ওর পরিবারের কথা। আমি বারবার ওকে থামিয়ে দিয়েছি। বলেছি অতীত ভুলে যেতে, আমরা নতুন জীবন শুরু করবো। তারপর দুহাতে মল্লিকার মুখটা কাছে টেনে নিতাম। আদর করতাম ওকে। মল্লিকা আমার কথা মেনে নিতো।
আসলে সব মেয়েমানুষের ওই এক ঘ্যানঘ্যান অসহ্য লাগতো আমার। আমার শুধু ওদের টাকাটা দরকার। মাত্র দুমাসের আলাপেই ওর মনে আমার প্রতি বিশ্বাসটা তৈরী করে ফেলেছিলাম। বিধবা, প্রেগনেন্ট, একা, অসহায়, আর সাথে অগাধ টাকা - সেই মুহূর্তে এইটুকুই তো যথেষ্ট ছিল আমার জন্য।
আজ এই ঘরে এসেও ছবিটা আমার নজরে পড়েনি ঠিক কুড়ি বছর আগের মতোই। সেদিন রাতের পুরো ঘটনাটার সময়ও ওই ছবিটা ওখানেই ছিল! দেখেছিল সব কিছু! কিন্তু তাহলে সেদিন বৃদ্ধা কেন বাঁচালেননা নিজের মেয়েকে? নাকি অশরীরির সেই ক্ষমতা নেই!
আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকেই বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি এতো কথা জানলে কি করে? তোমার তো আর কেউ নেই!"
"বাবা মারা যাওয়ার পর মা যখন এই বাড়িতে চলে আসে তখন থেকে ডায়রি লেখা শুরু করেছিল মা। দিদা খুব ফুল ভালোবাসতেন। খুব যত্ন করতেন ফুল গাছগুলোকে। মা এইবাড়িতে ফিরে আসার পর মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে করতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন উনি। মানসিক ভারসাম্যও কিছুটা হারাতে শুরু করেছিলেন। কথা বলতেন কম। ঐসময় মায়ের শরীরও খারাপ হতে শুরু করে। ফলে পরিস্থিতির চাপে মা আর দিদার মধ্যেও একটা ক্ষীণ দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। সারাদিন বারান্দায় ওই ফুল গাছের সামনে বসে থাকতেন দিদা। একদিন গাছে ফুল না ফুটলেই প্রলাপ বকতেন। তারপরই একদিন হঠাৎ দিদা চলে গেলেন। আমার বাবা মারা যাওয়ার এক মাসের মধ্যে। মা লিখেছে, তারপর থেকে নাকি ওই গাছে ফুল ফুটলেই মা দিদাকে গাছগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতো। ভয় পেয়ে একদিন সব ফুলগাছ উপড়ে দেয়। তারপর থেকে দিদা আর আসেননি। আসলে মাও একা থেকে থেকে অবসাদে ভুগতো। তাই হয়তো এসব কল্পনা দানা বেঁধেছিলো মনের ভেতর।"
আবার একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো কেয়া। "আমিও খুব ফুল ভালোবাসি তাই দিদার কথা জানার পর আবার ঢেকে দিয়েছি রেলিংটা ফুলগাছে। আজ প্রথম ফুল ফুটলো।"
আমার মনে পড়লো আমি ওই বারান্দায় কুড়ি বছর আগে কোনোদিন কোনো ফুলগাছ দেখিনি। তার মানে.... তার মানে..... আজ এতবছর পর ফুল ফুটেছে আবার আর তাই আজই ওই বৃদ্ধা.....মাথাটা ঝিমঝিম করছে আমার।
"কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কি বলুন তো" কেয়া আবার বললো, "মা ডায়রিতে আপনার সম্পর্কে একটা কথাও উল্লেখ করে যায়নি। তাই আমার মূল জায়গাটাই এতদিন অধরা রয়ে গেছিলো। মা মনে হয় আপনাকে জীবনে পাওয়ার পর ডায়রি লেখা ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ মায়ের মৃত্যুর আগের শেষ দুমাস মা ডায়রিতে কিছু লেখেনি। হয়তো আপনাকে পেয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল আবার। একাকিত্বটা কেটে গেছিলো।" এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো কেয়ার গাল বেয়ে।
"ছেড়ে দাও আমায়। আমি ভুল করেছি আমি জানি। অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছি আমি। কিন্তু... কিন্তু আমি এখন পাল্টে গেছি সত্যিই পাল্টে গেছি। বিশ্বাস করো আমায়। নাহলে কি....."
"নাহলে কি আপনার মতো একজন চোর, বিশ্বাসঘাতক, খুনি কখনো টাকায় ভরা পার্সটা কুড়িয়ে পেয়ে আবার ফেরত দিতে আসে! এটাই বলবেন তো আপনি? আসলে আপনার নিয়তি আপনাকে এখানে ডেকে এনেছে। নাহলে বাড়ির ঠিকানাটা শুনেও আপনার কিচ্ছু মনে পড়লো না!এই বাড়িতে আসার পর আপনার অতীত আবার আপনাকে ছেঁকে ধরে। আর তাই নিজের মুখেই সবটা স্বীকার করে ফেললেন। আর আমিও সেই মুহূর্তেই এসে পড়লাম। নিয়তির ডাক যে অগ্রাহ্য করা যায়না কিছুতেই।"
হাত জোর করে কাঁদতে লাগলাম, "কেয়া তুমি দয়া করে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিওনা। ছেড়ে দাও আমায়।"
কেয়া চিৎকার করে উঠলো "এতগুলো মানুষের ক্ষতি করার আগে আপনার মনে ছিলোনা? আপনি একজন খুনি। আপনার....."
কেয়ার কথা শেষ হলোনা। তার আগেই ভয়ানক হাওয়া বইতে শুরু করলো। এটা সাধারণ হাওয়া নয়। ঝড় আসছে। কালো মেঘে বাইরেটা খানিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। আমি মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বারান্দার পর্দাটা আবার অস্বাভাবিকভাবে উড়তে শুরু করেছে। আবার পর্দাটা ডাকছে আমায় হাতছানি দিয়ে। এবার আমি স্পষ্ট দেখলাম পর্দার ওপারে....দুটো ছায়ামূর্তি! আমার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। সাথেসাথে সারা ঘরে ফিসফিসানি শুনতে পেলাম...."আয়...আয়...আয়...."
কি অসহ্য এই ডাক! না আমি শুনতে পারছিনা। দুহাতে কান চেপে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলাম ঘরের ভেতর।
"কি হলো আপনার? আপনি এরম করছেন কেন? কেয়ার কথাগুলো অগ্রাহ্য করে ছুটতে ছুটতে কখন যেন বারান্দায় পৌঁছে গেছি। প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়া দিচ্ছে। ছায়ামূর্তিদুটোকে আবার দেখতে পারছি। না আর ছায়ামূর্তি নয়। ওইতো ওইতো ওরা.... বৃদ্ধা... আর তার পাশে মল্লিকা! থ্যাতলানো মাথাটা দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে ওর পরনের সবুজ শাড়িটার ওপর। ঠিক সেই রাতের মতো। কানের কাছে তখনও আমার "আয়...আয়...আয়.."।
পারলামনা সহ্য করতে আর। ঝাঁপ দিলাম রেলিং দিয়ে। ভাঙা পাঁচিলটার ওপর আমার মাথাটা আছড়ে পড়লো। ঝড় থেমে গেল। আমার চোখদুটো বুজে আসার আগে শেষবারের মতো বারান্দায় দেখলাম... কেয়া... চিৎকার করে একবার শুধু বললো "একি করলেন আপনি....?"
"কেমন লাগলো?"
"হুম বুঝলাম।" খাতাটা বন্ধ করে নার্স বললো, "এই তাহলে তোমার গল্পের মল্লিকা!" খিলখিল করে হেসে উঠলো নার্স।
"না না গল্প নয় সত্যি সত্যি। আমার মাথার পেছনটায় এখনও খুব ব্যাথা করে। কিছুতেই মনে পড়েনা তারপর কি হয়েছিল।" বলতে বলতে মাথার পেছনে একবার হাত বুললো রাজদীপ। সেলাইয়ের জায়গাটা অনুভব করলো ও আঙুলে।
"ঠিক আছে ঠিক আছে। তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছো কিন্তু। এই গল্পটা আমি ডক্টরকে দেখাবো। উনি খুব খুশি হবেন দেখে যে তুমি এমন সুন্দর করে একটা গল্প লিখেছো।"
"না না না। গল্প নয় গল্প নয়। রাজদীপ নার্সের হাতদুটো চেপে ধরে, "আমি পাগল নই। তোমরা কেন আমায় এখানে আটকে রেখেছো? আমায় যেতে দাও। দয়া করে ছেড়ে দাও আমায়। ওই ওই আবার...আবার ডাকছে আমায়। আমি এই ডাক সহ্য করতে পারিনা। তোমায় তো কতবার বলেছি আমায় যেতে দাও। না না নাআআআ।" দুহাতে কান চেপে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে রাজদীপ।
"কিন্তু কোথায় যাবে তুমি? সেই যে তিন বছর আগে তোমায় একটা মেয়ে এখানে দিয়ে গেছিলো। তারপর থেকে তো আমরাই তোমার নিজের লোক। কোথায় যাবে তুমি আমাদের ছেড়ে?" রাজদীপের কাঁধে হাত রাখে নার্স।
রাজদীপের শরীরটা কাঁপছে। "তোমরা কেউ বুঝতে চাওনা আমাকে। আমি পাপ করেছি আমার ক্ষমা নেই। ক্ষমা নেই। কেয়া বলেছিলো নিয়তির ডাক অগ্রাহ্য করা যায়না।" রাজদীপ ঢোক গিললো।
পরক্ষনেই নার্সকে বললো তুমি একবার চোখ বন্ধ করোনা। "
নার্স জানে কথা না শুনলে রাজদীপ কিছুতেই ওকে যেতে দেবেনা। নার্স চোখ বন্ধ করলো।
রাজদীপ নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল নার্সের কানের কাছে। ধীর কন্ঠে ফিসফিস করে বললো, "কার নিয়তি কাকে কখন কোথায় ডেকে নিয়ে যাবে কেউ জানেনা। আমি ওর ডাক শুনতে পাই। কিন্তু ও যে আমায় কোথায় নিয়ে যেতে চায় আমি আজও জানি না। তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। ভালো করে মনোযোগ দিয়ে শোনোতো তোমাকেও কেউ ডাকছে নাকি.... আয়.... আয়.... আয়......"
সমাপ্ত

