STORYMIRROR

আমি ফকির

Abstract Horror Classics

3  

আমি ফকির

Abstract Horror Classics

ওপরে কি

ওপরে কি

9 mins
225


এক


আজ বাড়ি যেতে বেশ ভালোই রাত হবে মনে হচ্ছে। পেছন ফিরে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে একবার দেখে নেয় রিমি। সাড়ে ন'টা বেজে গেছে। স্যার সেই তখন থেকে একভাবে কি যেন লিখছেন। রিমি শুধু বসেই আছে। স্যার কি ওর কথা ভুলে গেলেন নাকি! নিজে থেকেও বাড়ি যাওয়ার কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। যদি পরে কোনো দরকার লাগে, সেই জন্যই হয়তো ওকে এতো রাতেও বসিয়ে রেখেছেন স্যার। কালকের কেসটা মনে হচ্ছে খুব ভাইটাল। স্যারের আপাতত আর কোনো ইন্টার্ন নেই। ক্লার্ক ও নেই একটাও। কেবল রিমি আর আছে একজন জুনিয়র অ্যাডভোকেট।


রিমির স্যার অ্যাডভোকেট সুনীল দাসগুপ্ত, সিটি সিভিল কোর্টে প্রাকটিস করেন। তেমন নামজাদা উকিল নন, আর তাই এখানে কেসও কম। সেই জন্যেই রিমির ওনার কাছে আসা। কারণ রিমি কাজটা শিখতে চায়। বেশি বড় উকিল হলে আবার কেসের চাপে ইন্টার্নদের কথাই ভুলে যান তাঁরা। তখন কেবল সিনিয়র এর ব্যাগ আর ব্রিফ বয়ে বেড়ানো আর বই ঠাসা চেম্বারে কটা সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। রিমির তো ওসব করলে চলবে না। পাস করার পরই পুরোদমে প্র্যাক্টিসে নামতে চায় রিমি। আর তার জন্যে এখন থেকেই মন দিয়ে কাজ শিখতে হবে। 


রিমি এখানে নতুন জয়েন করেছে, আজকে নিয়ে তিনদিন। এখনও পর্যন্ত বিশেষ অসুবিধার মুখে পড়তে হয়নি। সমস্যা শুধু একটাই। সেটা হলো দূরত্ব। কোর্টের পর স্যার ওনার বাড়িতে চেম্বার করেন। স্যারের বাড়ি পার্ক সার্কাস আর রিমি থাকে তেঘরিয়ার একটা পিজিতে। রিমির নিজেদের বাড়ি মালদহ, কলেজের জন্য আজ চার বছর হলো কলকাতায় আছে ও। এই প্রফেশনে যে ফিরতে রাত হবেই, সেটা বলেই পিজির মালিকের থেকে রিমির জন্য স্পেশাল পারমিশন করিয়ে রেখেছেন ওর বাবা। নয়তো এখানে রাত ন'টার মধ্যে সব মেয়েদের পিজিতে ঢোকার নিয়ম। রিমি আগের দুদিন সন্ধ্যে ৬টা থেকে স্যারের বাড়িতে চেম্বারেই আসছে। স্যার এখনো কোর্টে যাওয়ার কথা বলেননি। মনে হয় কদিন দেখে নিয়ে তারপর কোর্টে নেবেন।


কিন্তু আজ সত্যি খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাস পাওয়া যাবে কিনা কে জানে। আজ স্যারের ওই আর একজন জুনিয়রও আসেনি। তাই রিমি চলে যাওয়ার কথা বলতেও পারছে না। তারওপর সবে সবে ভর্তি হয়েছে, জড়তা ভয় এসবের সাথে আর একটা কারণ ও রয়েছে। রিমি ওর বন্ধুদের কাছে শুনেছে প্রথম থেকে কাজের প্রতি নিষ্ঠা না দেখালে নাকি সেই সব ইন্টার্নদের সিনিয়ররা বিশেষ গুরুত্ব দেননা। না না, অনেক খোঁজার পর একজন সিনিয়র পেয়েছে রিমি। অবশ্য হঠাৎই এনার সাথে দেখা। 


সেদিন হাই কোর্টের সামনে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো রিমি ওর এক বান্ধবীর সঙ্গে। হঠাৎই পাশ থেকে ওর দিকে এক ভদ্রলোক একটা কার্ড বাড়িয়ে দেন। ভদ্রলোক যে একজন উকিল তা ওনার সাজপোশাকেই বোঝা যায়। রিমি বুঝতে পারে ফোনে ওর কথা শুনে ভদ্রলোক বুঝতে পেরেছেন রিমির একজন সিনিয়র দরকার। রিমি মনে মনে খুশিই হয়। এতদিন ধরে ও একজন সিনিয়রের সন্ধান করছে অথচ এইভাবে একজনকে পেয়ে যাবে রিমি ভাবতেও পারেনি। চেনা জানা আর কোনো উকিলও নেই। তাই ইনি তাড়িয়ে দিলে রিমিকে খুব সমস্যায় পড়তে হবে। তাই রিমি চুপ করে বসেই রইলো।  


স্যার এমনিতে ন'টার মধ্যেই রিমিকে ছুটি দিয়ে দেন। এইদুদিনই ন'টার বেশি ও থাকেনি। স্যারের বাড়িতে আর কে কে থাকে রিমি জানেনা। এখনো পর্যন্ত ওনার বাড়িতে আর কারোর সাথেই সাক্ষাৎ ঘটেনি রিমির। স্যারের ওই জুনিয়র টাও একটু কেমন জানি, চুপচাপ, যেন সবসময় কোনো গভীর চিন্তায় মগ্ন। এই দুদিনে রিমি একবারও ওকে কথা বলতে শোনেনি। সারাক্ষণ শুধু স্যারের পাশে পাশে মাথা নীচু করে চলে আর টেবিল এ মাথা গুঁজে কিসব লিখতে থাকে। স্যার ওকে কি করতে রেখেছে কে জানে! ছেলেটাকে রিমি একবার ওর নাম জিজ্ঞেস করেছিল। উত্তরে ছেলেটা রিমির দিকে ফিরেও তাকায়নি, ভাব করলো যেন শুনতেই পায়নি কিছু। প্রচন্ড অপমান বোধ অনুভব করে রিমি আর তাই ওই ছেলেটার সাথে দ্বিতীয় বার কথা বলার কোনো চেষ্টাই করেনি ও। কাল পরশু দুদিনই যে কখন চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেছে ছেলেটা টেরই পায়নি রিমি।


পেপার ওয়েইট টা হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে আরও বেশ কিচ্ছুক্ষন কেটে গেলো। এবার একটু অস্বস্তি হচ্ছে। স্যার কি এতো লিখছেন! আর যখন কোনো কাজ নেই রিমির জন্য তাহলে ওকে ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন নাই বা কেন। রিমি পেপার ওয়েইট টা রেখে পকেট থেকে মোবাইল ফোন টা বার করলো। একি! মাত্র ফাইভ পার্সেন্ট চার্জ! এতো এখুনি সুইচ অফ হলো বলে। বিরক্ত হয়ে মোবাইল টা টেবিল এর ওপর রাখতে গিয়ে ওর হাত লেগে পেপার ওয়েইট টা ছিটকে পড়লো মাটিতে। এই শীতের কালে পাখা বন্ধ ঠান্ডা নিস্তব্ধ ঘরটা হঠাৎ যেন বাজ পড়ার মতো কেঁপে উঠলো। রিমি লক্ষ করলো স্যার এই আওয়াজেও একবার মাথা তুললেন না,সেই একভাবে লিখে যাচ্ছেন উনি। রিমি হঠাৎ কেমন বিরক্ত হয়ে উঠলো, মনে মনে ভাবলো এনার মাথায় কোনো ছিট টিট আছে নাকি! কে জানে। রিমি নীচু হয়ে টেবিল এর তলা থেকে পেপার ওয়েইট টা তুলতে গিয়েই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। পেপার ওয়েইট টার পাশ দিয়ে একটা টিকটিকি শোঁ করে স্যার এর দু পায়ের ফাঁক দিয়ে দেওয়ালে উঠে গেলো। রিমি টিকটিকিতে ভয় পায়না, কিন্তু আচমকাই ঘটনাটা ঘটে যাওয়ায় ভয় পেয়ে গেছিলো একটু। নিজের মনেই হেসে উঠলো রিমি। পেপার ওয়েইট টা হাতে নিয়ে ওঠার জন্য মাথাটা তুলতেই হাত থেকে পেপার ওয়েইট টা আবার গড়িয়ে পড়লো মাটিতে, রিমির চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে উঠলো,নিঃশ্বাস আটকে এলো। পাখা থেকে ঝুলছে স্যারের সেই জুনিয়রের নিথর দেহ।


দুই 


রিমি চিৎকার করে উঠে দাঁড়িয়েই ঘরের দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে গেলো আর তখনি পেছন থেকে গম্ভীর গলার স্বর ভেসে এলো "কি হলো তুমি এরম করে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো? জানোনা স্যারের সামনে থেকে উঠে যেতে হলে পারমিশন নিতে হয়।" 


রিমি পেছন ফিরেই কাঁপা গলায় বারবার বলতে লাগলো "ওপরে ওপরে.....ওপরে"।


স্যার আবারও গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন "ওপরে কি?"


"ঐতো..ঐতো" বলেই আঙ্গুল তুলে ওপরে সিলিং ফ্যান এর দিকে তাক করতেই রিমি হতবাক। এ কি করে সম্ভব! সেখানে কেউ নেই। সেখানে কিচ্ছু নেই। কোথায় স্যারের সেই জুনিয়রের ঝুলন্ত দেহ? আর কোথায়ই বা সেই বন্ধ পাখা? পাখা ঝোলানোর আংটাটার চারপাশে ঝুল ভর্তি, সিলিং থেকে চলটা উঠে ভেতরের ইঁট বেরিয়ে পড়েছে। রিমি মাথা নামিয়ে স্যারের দিকে তাকাতে গিয়েই থমকে গেলো। কোথায় সেই কাগজ, পেন ,খাতাপত্র ভর্তি টেবিল, কোথায় বুকশেলফ, কোথায় এল ই ডি লাইট আর কোথায় স্যার? 


রিমি একটা আধো অন্ধকার ঘরের ভেতর একা দাঁড়িয়ে। দেওয়ালের কোনায় কোনায় মাকড়সার জাল ভর্তি। ডানদিকের দেওয়ালের বন্ধ জানালাটা কখন যেন খুলে গিয়ে চাঁদের আলো ঢুকে এসেছে ঘরে। সেই আলোতেই রিমি যেটুকু দেখতে পাচ্ছে। ঠান্ডা কনকনে একটা হাওয়া এসে রিমির সারা শরীর কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো। রিমি ঘরের চারিদিকে একবার পাগলের মতো চোখটা বুলিয়ে নিয়েই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো ওই ঘরের দরজা দিয়ে। ডাইনিং রুম টা ঘুটঘুটে অন্ধ

কার। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না রিমি। যে করেই হোক মেইন দরজা অবধি পৌঁছতে পারলেই এই ভূতের বাড়ি থেকে দৌড়ে পালাবে ও। 


হাতড়াতে হাতড়াতে অনেক্ষন এদিক ওদিক চলার পর কিসে যেন ধাক্কা খেলো রিমি। অন্ধকার টা এখন একটু চোখে সয়ে এসেছে। রিমি দেখলো ওর পায়ের কাছে সেই পেপার ওয়েইট টা। নীচু হয়ে ওটা তুলতে যেতেই হঠাৎ কানের পাশ থেকে কে যেন ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো "ওপরে কি ?"


জানুয়ারির এই শীতেও দরদর করে ঘামছে রিমি। "কে" বলে পেছনে ফিরতেই আবার কানের পাশ থেকে শান্ত সেই স্বর ভেসে এলো...."ওপরে কি?"


রিমি আরও কয়েকবার আশেপাশে তাকিয়ে "কে...কে " করে অবশেষে কাউকে দেখতে না পেয়ে হাঁপাতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে এবার সত্যিই রিমি ওপরে তাকালো। ওপরে মাথা তুলতেই কেমন একটা চ্যাটচ্যাটে তরল পদার্থ ফোঁটা ফোঁটা করে রিমির কপালে পড়ে সারা মুখে ছড়িয়ে গেলো। রিমি অন্ধকারেও পরিষ্কার দেখতে পেলো দুটো হাত সিলিং ভেদ করে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। আর সেই হাত দিয়েই তরল পদার্থটা গড়িয়ে পড়ছে। রিমি দৌড়াতে গেলো কিন্তু পারলো না। পা দুটো যেন কেউ চেপে ধরে রেখেছে, এগোতে পারছে না রিমি। এদিকে হাত দুটো ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। অসহায় এই পরিস্থিতিতে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো রিমি। তারপরেই সব অন্ধকার। 


তিন 


চোখ মেলে কিছুক্ষন ফ্যাকাসে ভাবে তাকিয়ে থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো রিমি। মনে পড়লো ধীরে ধীরে সব কথা। কিন্তু ও কি সত্যিই বেঁচে আছে? পরিষ্কার মনে পড়লো হাত দুটো ওর গলা চেপে ধরেছিলো। কিন্তু তারপর, তারপর কি হলো! আর কিছুই তো মনে পড়ছে না। মাথায় আর গলায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো রিমি। সামনে একটু এগিয়ে মেইন দরজাটা দেখতে পেলো ও। এক মুহূর্ত দেরি না করে দরজা খুলে সোজা বাইরে যেতে গিয়েই রিমির দুর্বল শরীরটা আর টাল সামলাতে না পেরে ওখানেই লুটিয়ে পড়লো।


অন্তিম 


ঘুম ভাঙলো একটা বৃদ্ধার কন্ঠস্বরে। ধড়ফড় করে উঠে বসতেই বৃদ্ধা তাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন "ভয় নেই তোমার,এখন একটু সুস্থ লাগছে?" রিমি হ্যাঁ বললে বৃদ্ধা আবার জিজ্ঞেস করলেন "মনে পড়ছে তোমার কাল রাতের ঘটনা?"


রিমি সবটা খুলে বলতে বৃদ্ধা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন। তারপর বলতে শুরু করলেন-

"ওই বাড়িতে থাকতেন অ্যাডভোকেট সুনীল দাসগুপ্ত আর তাঁর ছেলে সুনির্মল দাসগুপ্ত। ওনার মিসেস বহু বছর আগেই গত হয়েছেন। দুজনের ছোট্ট সংসার। ছেলেকেও ওকালতি পড়িয়েছিলেন। কিন্তু উঠতি বয়েসের ছেলে, কলেজে এক মেয়ের চক্করে পড়ে জীবনটাই দিয়ে দিলো।"


"জীবন দিয়ে দিলো মানে? মানে কি হয়েছিল?" রিমির প্রশ্নের উত্তরে বৃদ্ধা আবার বলতে শুরু করলেন-


"একটি মেয়েকে ছেলেটা ভালোবাসতো। কিন্তু হায় ভালোবাসা! মেয়েটা রেপ কেস এর মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছিল ছেলেটার বিরুদ্ধে। অমন ছেলে এই পাড়ায় দুটো ছিল না। যেমন দেখতে শুনতে ভালো তেমনি পড়াশোনায়, আবার তেমনি অমায়িক ব্যবহার। আর সেই জন্যেই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ওই ঘটনা সাজানো। এই অভিযোগ শোনা মাত্রই ছেলেটা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ওর বাবার চেম্বারে। সুনীল দাসগুপ্ত এই ঘটনার পর মানসিক ভারসাম্য হারান। বহুদিন ঘরে নিজেকে বন্দি করে রেখেছিলেন। ওপরে নিজের ঘরেই মারা যান তিনি।


অনেক ইচ্ছে ছিল ওনার ছেলের বৌ আনবে ঘরে। সেই সাধ তাঁর পূরণ হলোনা, উল্টে নিজের একমাত্র ছেলে, একমাত্র সম্বলকে এই ভাবে হারালেন তিনি।"- কথা শেষ করে আবার একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন বৃদ্ধা।


"কিন্তু আপনি এতো কথা কি করে জানলেন"- অবশ হয়ে আসা ঠোঁট দুটোকে কোনোভাবে নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো রিমি।


"আমি সব জানি। আমি যে সবটাই দেখেছি। এইসব আমার চোখের সামনেই ঘটেছে"।


রিমি চমকে উঠলো। "আপনি দেখেছেন মানে? আপনি কি ওনার প্রতিবেশী? আমি কি এখন ওই বাড়িটার পাশের কোনো বাড়িতে আছি?"


রিমির প্রশ্নে হালকা হেসে উঠলেন বৃদ্ধা। "তুমি ওনার পাশের বাড়িতে নয় ওনার নিজের বাড়িতেই আছো।"


রিমি ওর নিজের হৃদপিণ্ডের ধুকপুকুনি শুনতে পাচ্ছে পরিষ্কার। কাঁপা গলায় বললো "আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? সত্যি করে বলুন আপনি কে? আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন? বাড়ি যেতে দিন আমায়।"


বৃদ্ধার দুচোখ দিয়ে হঠাৎ জলের ধারা নেমে এলো। আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন "ছেলেটার বিয়ে দিয়ে ঘরে বৌ আনার অনেক শখ ছিল জানো তো। ওর বাবার চোখের মণি ছিল ও। কোথা থেকে যে কি হয়ে গেলো! কিন্তু সব কি কখনো শেষ হয় বলো? তাই তো আমরা আমাদের ছেলের জন্য নতুন বৌ নিয়ে এলাম।"


ইনি নিশ্চয়ই কোনো বদ্ধ পাগল হবেন। কি বলছেন উনি নিজেই জানেননা। যে করেই হোক এনার কাছ থেকে পালাতে হবে রিমিকে। 


বৃদ্ধা আবার বলে উঠলেন " ও মেয়ে কি ভাবছো তুমি? ভাবছো তো আমি পাগল। দাঁড়াও, দেখো তো ওনাদের চিনতে পারো কিনা?" এই বলে রিমির ডানদিকে দরজায় আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন বৃদ্ধা।


দরজার দিকে তাকাতেই শরীরের সব রক্ত হিম হয়ে এলো রিমির। এ যে সুনীল স্যার আর ওনার জুনিয়র! 


রিমির গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না। বৃদ্ধা বলে চললেন "এই যে উনি আর আমাদের একমাত্র ছেলে। আমার ছেলের বিয়ের বয়েস হয়েছে তো, তাই আমাদের দুজনেরই ইচ্ছে এবার ঘরের একটা বৌ নিয়ে আসি। তাই তো তোমাকে এনেছি গো মেয়ে। তুমি ভারী মিষ্টি। আমাদের দুজনেরই তোমায় খুব পছন্দ। আর আমার ছেলেটাও দেখো তোমায় দেখে কেমন লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।"


রিমি চিৎকার করে উঠলো "না এ কিছুতেই হতে পারে না! এ অসম্ভব!" বলেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনের পাশ দিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। ডাইনিং রুমে আসতেই চমকে উঠলো রিমি। ঐতো হ্যাঁ, রিমি ঠিকই দেখছে, রিমিই তো চিৎ হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে ওপর দিকে চাওয়া, সারা মুখে হলুদ রঙের কোনো পদার্থ লেগে রয়েছে, গলায় কালশিটের দাগ। 


তাহলে কি সত্যি, ওই বৃদ্ধার কথাই সত্যি! ভাবতে ভাবতেই সামনের দেওয়ালের ওপর থেকে রিমির কানে ভেসে এলো একটা শব্দ "টিকটিকটিকটিক"।

                                                                                                     সমাপ্ত



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract