Nityananda Banerjee

Thriller

4.0  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

10 mins
658


পর্ব একশত এক

অনন্ত এবং আরণ্যক অর্থাৎ ' অ ' ও 'আ ' এঁরা দুজনে পাশাপাশি দুটি চালায় রয়েছেন ।যথাক্রমে বারো এবং তেরো নং চালায় । বর্ণমালার ক্রমানুসারে প্রথমে 'অ' পরে 'আ' পালা করে ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। এখন ' আ ' ঘুমিয়ে পড়েছেন । গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ' অ'য়ের ইচ্ছা করছিল এই সময় পালিয়ে যেতে। কিন্তু টাকাকড়ি সব ' আ'য়ের কব্জায় থাকার জন্য পালানো সম্ভব নয় । 

একবার তাঁর মনে হল এই ঘুমের মধ্যে তাঁকে গলা টিপে মেরে ফেলেন । কিন্তু আরণ্যককে তোপর্ব একশত


হালকা ডিনার করল ললন্তিকা। জানে আজ রাতে ঘুম আসবে না । সজ্জন সিং তা' লক্ষ্য করলেন । কিন্তু কিছু বললেন না । ললন্তিকা মাঝে মধ্যে এমন করে থাকে। কখনও বা না খেয়েই শুয়ে পড়ে । কিছু বলতে গেলে বলে

' গা গুলোচ্ছে , আজ খাবার ইচ্ছে নেই' ইত্যাদি। ভোর রাতে এনকাউন্টার। হয়তো সেজন্য ললন্তিকা চিন্তিত । আর তার বসল তার এই হালকা ভোজন ।

সজ্জন বলেন - এত লাইট খাবার খেয়ে রাত কাটবে ?

ললন্তিকার জবাব দিতে ইচ্ছে হল না । বলল - আর একটু চিকেন দিই ?

বেশ খাদুড় লোক সজ্জন , লোভীও । চিকেন হাণ্ডির পুরোটাই সাবাড় করে দিলেন । তন্দুরি রুটিও গোটা ছয়েক খেয়ে নিলেন । তারপর মস্ত ঢেকুর তুলে ঘুমের পিল খেয়ে শুয়ে পড়লেন । 

ললন্তিকা জানে এই পিলের কার্য্যকারিতা । আগামীকাল সকাল দশটার আগে সজ্জনের ঘুম ভাঙবে না । বড় নিশ্চিন্ত হল সে । ইচ্ছে করল মেয়েটাকেও যদি পিল খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় তো মন্দ হয় না । পরম নিশ্চিন্তে কাজে বেরোতে পারবে । 

পিল হাতে মেয়েকে দিতে গিয়ে পেটটা কনকন করে উঠল । যদি সে ঘুম কখনও না ভাঙে ! তবে সজ্জনের আপন বলতে কেউ রইবে না । বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে পিল খাওয়ানো থেকে বিরত হল ।

সে জানে, আজ রাতে তার ঘুম আসবে না । এ কাজে যে ভীষণ রিস্ক আছে সেটা তার অজানা নয় । বিশেষত কাজটা যখন আরণ্যক বিষয়ক। গত তিন বছরে সে হাড়ে হাড়ে চিনতে পেরেছে আরণ্যককে। যাকে বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী ভেবেছে ; দেখা গেছে সেইই আরণ্যকের গুপ্তচর । এভাবে চলতে গিয়ে একসময় নিজেকেও অবিশ্বাস করে আরণ্যকের সাথে পালিয়েছে। কপাল গুনে হয়ত সজ্জনের মত জীবনসঙ্গী পেয়েছিল ।

এবার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল । সজ্জনের কথা মনে পড়তেই ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল ললন্তিকা। বড় হতভাগ্য সজ্জন সিং। জন্মের পর থেকে আপন গর্ভধারিণীর চক্ষুশূল হয়ে ছিল সে । তারপর একটু বড় হতেই যখন দেখল তার মা বাবাকে মেরে ফেলে নিজের প্রেমিকের সাথে চলে গেল । সজ্জন ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা করে বসেছিল জীবনে মেয়েদের কাছ থেকে হাজার যোজন দূরে থাকবে।

কিন্তু ললন্তিকাকে দেখে --

কি আছে তার মধ্যে? ললন্তিকা নিজেকে নিয়ে চুলচেরা ব্যাখ্যা করতে লাগল । বিয়ে মানে যে দৈহিক মিলন - তা তো অনেকবারই অরবিন্দ বা আরণ্যক এমন কি কামাল ভাইয়ের সাথে হয়ে গেছে ; তা জানার পরও সজ্জন কেন তাকে সামাজিক ভাবে বিয়ে করেছেন , ভাবতেই অবাক লাগে । পাঁচ লাখ টাকা উশুল করার জন্য ? তা যে নয়; সে তার ভালবাসার মধ্য দিয়ে বোঝা গেছে । 

মেয়ে ? সে তো তারও প্রাণের প্রিয় । সজ্জনের জন্যই তো তার মুখ দেখা। যা এক নারীর চির আকাঙ্ক্ষিত ।

বড় মামা অনন্ত সরখেলের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে ললন্তিকা। গোপনে তাঁরই ছেলেকে প্রেম নিবেদন করে দু' দু'বার গর্ভপাত করিয়েছে। অরবিন্দ তার সিঁথিতে সিঁদুরও পরিয়ে দিয়েছিল । তবু কিসের লোভে সে আরণ্যকের মত পাপীর 

কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল ! ললন্তিকা জানত প্রাইমারি শিক্ষা নিয়ে লেখিকা হওয়া যায় না । তবূ টুকটাক যা লিখত ছাপার অক্ষরে দেখার জন্য সে এত উদগ্রীব হয়েছিল বলেই তো আরণ্যককে মেনে নিয়েছিল কঠিন শর্তে রাজী হয়েও । পরের গল্প তো সবার জানা।

রইল বাকি অরবিন্দ। অরবিন্দ সরখেল - বড় মামার ছেলে। ভাই-বোনের সম্পর্কটা কি ভাবে স্বামী-স্ত্রী হয়ে গেল ভাবতে পারছে না ললন্তিকা। এজন্য হয়ত বলে প্রেম ধর্ম মেনে চলে না । খুব দুঃখ হয় তার অরবিন্দের জন্য । মনে হয় তার এই অধ:পতন ওর জন্যই হয়েছে। নইলে দিব্যি তো পড়াশোনা করছিল । অযথা কেন বোনের প্রেমে পড়ল? সে তো তাকে বিয়ে করেছিল রাধামাধবের সামনে। তবু ললন্তিকা তাকে ছেড়ে আরণ্যককে আবার ধরল। তার মারা যাওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না । বাবাকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিল ভুল পথে ।শেষ রক্ষা হয়নি।

অরবিন্দের বাবার কথা ফের মনে হতেই ললন্তিকার হাবেভাবে কঠোরতা এনে দিল । দু'পুরুষে মামা ছাড়া আর কেউ নেই। ললন্তিকার মুখ কঠোর হয়ে গেল। যে ভাবেই হোক মামাকে বাঁচাতেই হবে । সেজন্য যদি তাকে মরতে হয়; মরবে ।

হঠাৎ নজর গেল সজ্জনের দিকে । ঘুমের বড়ি খেয়ে অকাতরে ঘুমোচ্ছে যেন দুনিয়ার প্রশান্তি তার মুখে। একবার সজ্জনের কাছে গেল । হাত ধরে বুকে রাখল। মনে মনে বলল - আর যদি না ফিরি , দুঃখ পেও না । সুখ মা লক্ষ্মীর মতই চঞ্চল। এই আছে এই নেই। মেয়েকে রেখে গেলাম স্মৃতিরূপে রেখে দিও।

বলে ঘুমন্ত মেয়েকে তার পাশে শুইয়ে দিল । ঘড়ি দেখে নিল । রাত দু'টো বেজে গেছে। সাড়ে তিনটায় অপারেশন আরণ্যক । 

টয়লেটে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল । এই ডাক এল বলে !

মিঃ ভৌমিক এবং মিঃ অভয়ঙ্কর সরকার আড়াইটের সময় এলার্ম দিয়ে রেখেছেন। এলার্ম বাজতেই উভয়ে উঠে পড়লেন । ঘুমের গ্লানি দূর করতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। দেখলেন মন্দির এবং মেলা প্রাঙ্গন আলোয় আলোয় ঝলমল করছে । দর্শনার্থীদের বেশির ভাগ জন নিদ্রিত । যে ক'জন জেগে আছেন তারা ভোরের স্নান করতে তৎপর । রাতভর জেগে থাকা পুলিশ প্রহরীগণ কেউ ঢুলছেন, কেউ টহল দিচ্ছেন, কেউ বা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা পান করছেন । 

- এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না । কি বলেন বেয়াই মশাই?

অভয়ঙ্করবাবু যেন সম্মতির প্রত্যাশায় ছিলেন। মিঃ ভৌমিক বললেন - তা যা বলেছেন । কিন্তু দোকানগুলো তো এখান থেকে দূরে । কফির মজাই আসবে না ।

- বলেন তো আমি ট্রাই করে দেখি।

মিঃ ভৌমিক বললেন - এই রাতবিরেতে ঠাণ্ডায় যাবেন কফি আনতে ?

অভয়ঙ্করবাবু হেসে উত্তর দিলেন - যেতে হবে কেন ! এখানেই তৈরি করে নেব। পাত্র পাত্রী সব তো রেডি আছে।

মি: ভৌমিক বললেন - আপনার সত্যিই অনেকগুলো গুন আছে। 

- হে হে হে ! কি যে বলেন না ! দশ বছর রেঞ্জারগিরি করেছি প্রত্যন্ত জঙ্গলে। সব কিছু নিজেকে করে নিতে হোত। আর আজ সামান্য দু'কাপ কফি বানাতে পারব না ?

- দু'কাপ নয় কাকাবাবু! তিন কাপ কফি এনেছি। এই নিন গরমাগরম কফি।

ভৌমিক সাহেব এবং রেঞ্জার সাহেব উভয়ে অবাক হয়ে দেখলেন একটা প্লেটে করে তিন কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি হাতে ললন্তিকা টেবিলে নামিয়ে দিল ।

তিনজনে তিন কাপ কফি হাতে নিয়ে পরিকল্পনার কথা আলোচনা করতে লাগলেন ।

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - জানো মা! জীবনে এই প্রথমবার কোন এনকাউন্টারে যাচ্ছি। রেঞ্জার ছিলাম তো ! জানোয়ার তাড়িয়েছি, দুর্বৃত্তদের পিছু ধাওয়া করেছি কখনও এই রকম বুদ্ধিমান জানোয়ারের সঙ্গে মোকাবিলা করিনি । আজ সেটাও হতে চলেছে। 

বলে কপিলমুনির মন্দিরের দিকে দু'হাত মাথায় ঠেকিয়ে বললেন - হে ঠাকুর! নির্বিঘ্নে যেন কাজ সমাধা করতে পারি।

মিঃ ভৌমিক বললেন - কপিলমুনি আপনার প্রার্থনা শুনেছেন । আশা করি মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবেন ।

ললন্তিকাও বলল - তাই যেন হয় দয়াময়।

ঘড়িতে রাত তিনটে বেজে কুড়ি। ওরা তৈরি হয়ে পুলিশ দলকে নির্দেশ দিয়ে নাগা সন্ন্যাসীদের বারো এবং তেরো নং চালাঘর দুটি দূর থেকে ঘিরে ফেলতে বললেন । শুরু হল পুলিশি তৎপরতা । 

এদিকে এঁরা তিনজন বেরিয়ে পড়লেন নি:শব্দে। 

( ক্রমশ )


বিশ্বাস করা যায় না । হয়তো ঘুমের ভান করে পড়ে আছেন । তাই সে চিন্তাতেও ছেদ পড়ল ।

এদিকে আরণ্যক বসুরায় সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছেন। এমনকি তিনি ঘুমের ঘোরে স্বপ্নও দেখে চলেছেন। ভয়ঙ্কর স্বপ্ন ।

কনকলতা ( তাঁর স্ত্রী ) এসেছেন । তারূ পাশে বসে আছেন।

ডাকলেন - কি গো ঘুমিয়ে পড়েছ নাকি ! আমাকে নিয়ে ভাবছিলে তো ? এজন্যই তো চলে এলাম । আহা রে ! পুলিশগুলো কি দশাটাই না করেছে তোমার !

আরণ্যক আড়ষ্ট স্বরে কিছু বলতে যাচ্ছেন, পারছেন না। যত বলার চেষ্টা করেন ততই গলাটা যেন কেউ চেপে ধরে।

কনকলতা বলছেন - আমি তোমাকে এত ভালবেসেছিলাম ; আর কি না তুমিই আমাকে খুন করিয়ে দিলে ? এ যে আমার কি কষ্ট ভাবতে পার ?আমি তো সারাজীবন দাসীর মত তোমার সেবা করছিলাম । পঙ্গু হয়ে যাবার পরও তোমার জন্য কি না করেছি - সে এই একলা হাতেই তো ! বদলে তুমি আমাকে এরকম পুরস্কার দিলে - মৃত্যু ? তাও আবার দুর্ঘটনা ঘটিয়ে? অপঘাতে? আমি তোমাকে ছাড়ব না । এই দেখো আমার নাকমুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে, চোখ দু'টো ঠিকরে বেরিয়ে গেছে। কোমর থেকে নীচের অংশ মাটিতে চটকে গেছে । একবার চোখ মেলে দেখ। এ দৃশ্য আর দেখতে পাবে না। 

 হ্যাঁ, আমি ঠিক বলছি। এই দৃশ্য আর দেখতে পাবে না। আজই আর কিছু পর থেকেই তোমার মরণের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাবে । ওরা না পারলে আমি অন্তত তোমাকে কোনমতেই বেঁচে থাকতে দেব না । প্রচুর কুকর্ম করে তুমি যে পাপ করেছ তা একটু পরেই বুঝে যাবে।

আরণ্যক বসুরায় পালাতে চাইলেন। তাঁর পা দুটো মাটিতে বসে গেছে । যেমন রথের চাকা বসে গিয়েছিল মহাবীর কর্ণের । আরণ্যক কনকলতাকে দেখছেন আর শিউরে উঠছেন । এক সময় ভয়ে তাঁর গোঙানির শব্দ ছাড়া কিছু শোনা গেল না । অনন্ত নড়েচড়ে বসলেন। তোরো নং থেকেই আওয়াজ আসছে । বাঁশের আড়ালে চোখ মেলে দেখলেন আরণ্যক হাত পা ছুঁড়ে গোঙাচ্ছেন । আর কাউকেই দেখতে পেলেন না । ইচ্ছে করেই সেখানে গেলেন না । 

কনকলতায় বলে চলেছেন ললন্তিকা মেয়েটির রূপে মুগ্ধ হয়ে আমাকে অবহেলা শুরু করলে। তবু কিছু বলিনি। ললন্তিকা মরতে চেয়েছিল আর আমাকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিল আমি যেন অপঘাতে মরি। মরেছিও সে ভাবে। তাই আজ তোমার শেষ দিনে দেখা করতে এসেছি । 

অরবিন্দ নামের ছেলেটি আমাকে মরণের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিল । সেও উপযুক্ত শাস্তি পেয়ে মরেছে। এবার তোমার পালা । বলে হা হা করে হাসতে লাগলেন ।

সেই বিকট হাসিতে আরণ্যকের ঘুম ভেঙে গেল । এই প্রচণ্ড শীতেও তিনি ঘামতে শুরু করলেন । ধড়মড় করে উঠে বসলেন । ভক্তদের আসার সময় হয়ে গিয়েছে। অনেকে নৈবেদ্য‌‌‌ হাতে আশীর্বাদ নিতে এসেছে। তিনি উঠে দাঁড়ালেন।

কেউ পা ছুঁয়ে , কেউ দূর থেকে প্রণাম জানিয়ে চলে যাচ্ছে।

অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ ভক্তদের সমাগম কম । তিনি মোবাইল বের করে সময় দেখে নিলেন সাড়ে তিনটে বাজতে চলেছে। তিনি কারও মাথায় হাত রেখে, কাউকে হাত তুলে আশীর্বাদ দিয়ে যাচ্ছেন ।

এক মুসলমান দম্পতি এসে সামনে দাঁড়াল। লোকটি একটু তফাতে থেকে মেয়েটিকে এগিয়ে দিল । সর্বাঙ্গ বোরখায় আবৃত মেয়েটিকে দেখা যায় না । সে এসে পা জড়িয়ে ধরল । আর দেখতে লাগল তার গোপনাঙ্গের লাল জড়ুলটি।

তার হাত ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে লাগল। একসময় পুরুষাঙ্গ মুঠোয় ভরে লাল জড়ুলটিতে সুড়সুড়ি দিতে লাগল । 

আরণ্যক চমকে উঠলেন। সেই মুহুর্তে তাঁর ললন্তিকাকে মনে পড়ে গেল । একমাত্র ললন্তিকাই আদিরসকালে এমনটা করত । তাঁর পুরুষাঙ্গে উত্তেজনা ছড়াতে লাগল। 

সম্বিত ফিরে পেয়ে আরণ্যক বলে উঠলেন - আহ্ কর কি ললন্তিকা ? ছেড়ে দাও বলছি । নইলে--

ললন্তিকা ছাড়ার পাত্রী নয় । সে বলল - মিঃ আরণ্যক বসুরায় ! আর কতদিন এভাবে চলবে? মুখে সার্জারি করিয়ে মনে করেছ কেউ তোমাকে চিনতে পারবে না ?

তারপর বোরখা সরিয়ে বলল - এই দেখ, আমি। ললন্তিকা সেন। তোমার যম ।

আরণ্যক বিদ্যুৎ গতিতে নীচে থেকে একটা পিস্তল বের করে গুলি করতে যাবেন মিঃ দেবেন্দ্র ভৌমিক পিছন থেকে সজোরে তাঁর হাতে লাঠির বাড়ি বসিয়ে দিলেন। পিস্তল ছিটকে চলে গেল অভয়ঙ্করবাবুর হাতে। তিনি সেটা লুফে নিয়ে তাক করলেন অরবিন্দের দিকে।

- কি বেয়াই মশাই! শেষ অব্দি আমার হাতেই মরবেন নাকি?

রাগে দাঁত কড়কড় করে আরণ্যক বললেন - আপনি গুলি করতে পারেন না । দেখবেন এক শিসে সব নাগাদের ডেকে আনব । আপনারাই ভস্ম হবেন । বলে জোরে দুই ঠোঁট ধরে শিস দিতে লাগলেন । 

মিঃ ভৌমিক তৈরি হয়েই ছিলেন - এই যে ভায়া ! স্বপ্নেও ভাবিনি তোমার হাতে হ্যাণ্ডকাপ পরিয়ে দিতে হবে । নাও হাত দুটো বাড়াও । অলঙ্কার পরিয়ে দিই।

এমন সময় সেখানে যত নাগা সন্ন্যাসী ছিলেন একযোগে হা রে রে রে করে তেড়ে এলেন । পুলিশের বাধা পেয়েও এগোতে চেষ্টা করলেন । 

পুলিশ মাইকে ঘোষণা করতে লাগল - আপনারা যে যেখানে যেমন অবস্থায় আছেন , থেকে যান। কোন ভয় নেই। অযথা সন্ত্রস্ত হবেন না। পুলিশ দুষ্কৃতি ধরেছে। 

বারো নং চালা থেকে অনন্ত বেরিয়ে এলেন। মিঃ ভৌমিককে বললেন - স্যার আমি অনন্ত মোহন সরখেল। এই বসুরায় আমাকে বাধ্য করেছে তার কথায় উঠতে বসতে। এবার আপনি আমাকে যে শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেব ।

ললন্তিকা নিজের বোরখা খুলে মামার হাতে ধরিয়ে দিয়ে

বলল - মামা, তুমি তো কিছু করনি। তবে শাস্তি পাবে কেন। দীর্ঘদিন পর মামা ভাগ্নীতে দেখা হল । ললন্তিকা মামাকে বুকে জড়িয়ে দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ল । আরণ্যকের হাতে পায়ে কোমরে বেড়ি পরিয়ে পুলিশ টানতে টানতে ওকে ভৌমিক সাহেবের নির্দেশে নিকটস্থ ফাঁড়িতে নিয়ে গেল। আর অনন্ত মোহন ললন্তিকার সঙ্গে লজে উঠলেন। পুলিশ হেলিকপ্টারে সন্তু মুখার্জী এবং পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যকে দিয়ে কলকাতায় নিয়ে গেল । 

যখন ওরা লজে এলেন তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। সজ্জন বাদে সকলেই ঘুম থেকে উঠে গেছেন ।

অভয়ঙ্করবাবু কপিলমুনির উদ্দেশ্যে অন্তরের কৃতজ্ঞতা নিবেদন করলেন । সজ্জনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সকলে মকর সংক্রান্তির সকালে মন্দিরে পূজো দিলেন ।

বনলতা দেবী, রজনী দেবী , গোপাল বাবু এবং সবাই ভীষণ খুশি হয়ে বললেন - আজ বড় শুভদিন। সব অশুভের আজ সমাপ্তি হল ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - আমাদের ফিরে যাবার সময় হয়ে গেছে। কপ্টার রেডি। চলুন উঠে পড়ি ।

একজন নাগা সন্ন্যাসী এসে বললেন - হমে শখ থা। ও আদমী নাগা হোইই নেহি সকতা । অগর হোতা তো কাম রিপুকো সম্ভাল সকতা থা । হমে উস লড়কিকো আশীষ ঔর বধাই দেতা হুঁ কি ও বহত সুখী হোয়ে ।

ললন্তিকা সেই সন্ন্যাসীর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করল। দেখাদেখি মিঃ ভৌমিকসহ সকলেই তাঁকে প্রণাম জানালেন।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller