Sharmistha Mukherjee

Thriller Others

3.1  

Sharmistha Mukherjee

Thriller Others

রুম নাম্বার ৯ ( অন্তিম ভাগ )

রুম নাম্বার ৯ ( অন্তিম ভাগ )

9 mins
437



 কয়েকদিন পর তৃণার শ্বাশুড়ি ও স্বামী রাতে বাড়িতে ফিরে তার দ্বিতীয় বিয়ের কথা আলোচনা করছিল সেই সময় আচমকা স্বামীর পায়ে একটি কাঁকড়াবিছে কামড় দেয় এবং সেই রাতেই মারাত্মক বিষক্রিয়ায় দুজনেরই প্রাণ কেড়ে নেয় । পরের দিন সকালে আর কেউ সেখানে কোনো প্রাণীর কোনো চিহ্নমাত্র দেখতে পায়নি তবে তাদের দুজনেরই কাঁকড়াবিছের কামড়ে মারা গেছে বলেই মনে হয় । কারণ যে সময় তারা দুজন মারা যাচ্ছিল তখন হাসপাতালের ৯ নম্বর কক্ষের বাইরের দেয়ালে বৃশ্চিক রাশির কাঁকড়াবিছের চিহ্নটি ছিল না । 


 সময়ের সাথে সাথে বিশেষ দুটি নার্স এবং ডাক্তার যারা কন্যা শিশুহত্যার ক্ষমার অযোগ্য পাপের সাথে জড়িত ছিল তারা একদিন হাসপাতালে নাইট ডিউটি করাকালীন কিছু খাবার পার্সেল অর্ডার করেছিলেন । তারা এখন এক কোণে রাখা টেবিলের সামনে বসে আছে খাবার আসার অপেক্ষায় । 


 নার্স পার্সেল খুললে একটি কাঁকড়া লাফ দিয়ে তাকে আহত করে । অতর্কিত হামলায় সে চমকে ওঠে এবং ভয়ে চিৎকার করে কয়েক পা পিছিয়ে যায় । এইসময় ডাক্তারটি পার্সেল খুললে দুটি জীবন্ত মাছ বেরিয়ে আসে এবং তারা তাদের ধারালো দাঁত দিয়ে ডাক্তারের ঠোঁট ও জিভ কামড়ে তার মুখে ছুরিকাঘাত করতে থাকে । এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে সেও হাত থেকে খাবার মাটিতে ফেলে লাফ দিয়ে পিছনে গিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে । ওনাদের চিৎকার শুনে আশপাশে থাকা অন্যান্য নার্স ও ডাক্তারেরা ছুটে এসে দ্যাখে ঘরের ভিতরে থাকা ডাক্তার ও নার্স আতঙ্কে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে । নার্সের হাত এবং ডাক্তারের মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে । কি করে এই রক্তারক্তি কান্ড ঘটলো তা জানতে চাইলে ওনারা যা বললেন তাতে সবাই অবাক হয়ে যায় । অথচ ঘরের ভিতরে কোথাও কোনো কাঁকড়া বা মাছের দেখা পাওয়া যায় না । 

পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় যে হঠাৎ করে পার্সেলে থাকা খাবার দেখেই আতঙ্কিত চিকিৎসক ও নার্সটি ভয় পেয়ে চিৎকার করে পালিয়ে যান । কোনো কাঁকড়া বা মাছের আক্রমণ করার কোনো ফুটেজ 

নেই । এদিকে সেই সময় ৯ নাম্বার রুমের বাইরের দেওয়ালে আঁকা রাশিচক্রের মধ্যে কর্কট রাশির কাঁকড়া ও মীন রাশির মাছ দুটির চিন্হ ছিল না । 


এরপর মাস খানেক কেটে যায় । আবারও একদিন রাতে নয় নাম্বার ঘরে নার্সিংস্টেশনে টেবিলের উপর মাথা নীচু করে বিশ্রাম করছিল সেই নার্সটি ঠিক তখনই তার কানে আসে কোনো এক হিংস্র পশুর গর্জনের শব্দ । হঠাৎ করে মাথা তুলে সামনে তাকিয়েই সিংহ সিংহ বলে প্রচন্ড ভয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়তে শুরু করে । দৌড়ানোর সময় সে এতটাই আতঙ্কিত ছিল যে ঘরের জানালার কাচ ভেঙে লাফ দিয়ে নিচে পড়েই প্রাণ 

হারায় । নয় নাম্বার ঘরে থাকা একটি গর্ভবতী মহিলা আচমকা এই দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারায় । সেই মহিলার আকস্মিক শুনে সবাই ছুটে এসে ঐ মহিলাকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে । এদিকে ততোক্ষণে হাসপাতালের নীচে নার্সটির মৃতদেহটি ঘিরে একটা জটলার সৃষ্টি হয় । মহিলাটির জ্ঞান ফিরতেই নার্সটির সাথে কি হয়েছিল , সিংহ সিংহ বলে চিৎকার করে ভয় পেয়ে জানলা থেকে লাফ দিয়ে পড়ার কথা সবাই জানতে পারে । সবাই এই আকস্মিক মৃত্যু এবং মহিলাটির মুখে সব কথা শুনে যারপরনাই বিস্মিত হয় । অথচ আগের বারের মতো এই বারেও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে কোথাও কোনো প্রাণী দেখা যায়নি । আশ্চর্যজনক ভাবে নার্সটির মৃত্যু হওয়ার সময় হাসপাতালের ৯ নম্বর কক্ষের বাইরের দেয়ালে সিংহ রাশির চিহ্ন ছিল খালি । 


 ৯ নম্বর কক্ষের কাছে করিডোর শেষ হওয়ার পরে, কোণে একটি বড় ডেস্ক ছিল । সেখানে রাতে তিনজন নাইট শিফটের নার্সের মধ্যে দুজন কম্পিউটারের সামনে বসে তাদের অর্পিত কাজ করছিল । তাদের ঠিক মাথার পিছনের দিকে একটি গোলাকার টুপি আকৃতির আবরণ সহ একটি লাইট ছিল । করিডোরের মাঝখানে অল্প দূরত্বে এরকম বেশ কিছু লাইট রাখা হয়েছিল । একজন নার্স যখন দূরের দেয়ালটি লক্ষ্য করলেন তখন তিনি অস্পষ্টভাবে কিছু একটা অনুভব করলেন এমনকি তার পাশের নার্সকেও বললেন, " এই দ্যাখ রাশিচক্রের আঁকাটির মধ্যে কাঁকড়া এবং মাছটি নেই ! কোথায় গেল ? আর এটা কি করে সম্ভব । "

অন্য নার্সটি দেয়ালের দিকে না তাকিয়ে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন এবং বললেন, " এই যে ম্যাডাম, মাথা কি গেছে ? বলছি ঘুমের চোখে ভুল দেখে কি সব আবোল - তাবোল বলছো । ওঠো তো,একটু কফি মেশিন থেকে কফি নিয়ে আসো । কফি খেলে একটু ফ্রেশ লাগবে ।"


 নার্সটি কফি হাতে ফিরে আসার সময় রাশিচক্রের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে সেখানে কাঁকড়া আর দুটো মাছকে দেখতে পায় । নিজেই নিজের মনে হেসে উঠে বলে, " সত্যিই বোধহয় তখন ঘুমের চোখে ভুল দেখেছি । আজ যেন একটু বেশিই ঘুম ঘুম পাচ্ছে । "


সোনোগ্রাফির জন্য হাসপাতালে আসার সময় অদ্রিকার প্রায়ই মনে হতো কেউ তার আশেপাশে আছে । দুবার সে তার স্বামীর সাথে কথা বলেছিল এই ব্যাপারে কিন্তু তিনি ততোটা গুরুত্ব না দিয়ে শুধু তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন, " এটি শিশুর চিন্তার কারণে কখনও কখনও হয়েই থাকে, এই নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই ।" এমনকি তিনি সোনোগ্রাফি রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও, রুমে কেউ না থাকলে সোনোগ্রাফি মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায় এবং নড়াচড়া করে । শুধু তাই নয়, আরও কিছু মহিলার ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে শুরু করে । কিন্তু আলোড়নটি খুবই সূক্ষ্ম হওয়ায় এটি সিসিটিভি প্রহরীদের নজরে পড়েনি যারা চব্বিশ ঘন্টা নজরদারি করে ।


ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটে বেলা গড়াতে শুরু করে । অদ্রিকার প্রসব বেদনা শুরু হয়নি কিন্তু নির্ধারিত তারিখে যখন সে হাসপাতালে পৌঁছায় তখন তৃতীয় তলার ৯ নম্বর কক্ষটি খালি ছিল এবং তাকে সেখানেই ভর্তি করা হয় । অদ্রিকার স্বামী রণিত, মেয়ে রিয়া সহ অদ্রিকার বোন, শাশুড়ি, ননদ ও মা সবাই এসেছিলেন । ভোর তিনটার দিকে তার ব্যথা শুরু হলে তাকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়ার তাড়া শুরু হোলো................... 


 এখানে ডেস্কের উপরে কোণে যেখানে নার্স বসতেন, যেখানে বাতিটি ছিল তার কাছাকাছি সাদা শাড়ি পরা দুই মহিলা উল্টো হয়ে ঝুলে রয়েছে সিলিং থেকে । তাদের চুল খোলা , মুখ ভয়ানক রকমের ফ্যাকাশে ,চোখের মনিসহ সম্পূর্ণ চক্ষুগোলকের রঙ কুচকুচে কালো । তারা একে অপরের সাথে প্রচণ্ড লড়াই করতে করতে ক্রমশঃ ক্ষিপ্ত হয়ে

 উঠছে । তৃণার আত্মা ক্ষিপ্ত হয়ে অদ্রিকাকে হত্যা করতে ৯ নম্বর রুমে যাচ্ছিল । সিলিং থেকে উল্টো ঝুলন্ত অবস্থায় দেয়াল ভেদ করে ঘরে ঢোকার পরিকল্পনা করছিল । কিন্তু অন্য একজন মহিলা অর্থাৎ মিতালীর আত্মা অনবরত তার পথ রোধ করে বাধা দিচ্ছিল । 


" এই আমার পথ থেকে সরে এখনি সরে যা বলছি । গত কয়েক মাসে আমি সোনোগ্রাফি মেশিনের সাহায্যে দেখেছি এবং আমি জানি যে অদ্রিকার একটি ছেলে হবে । এখানে যেইসব মহিলার ছেলে হবে আমি তাদেরকে মেরে ফেলবো ছেলে জন্ম দেওয়ার আগেই ।আমার মেয়েকে আমার স্বামী ও শাশুড়ি মেরেছে । আমি তাদেরকে আমার মেয়ের কাছেই পাঠিয়ে দিয়েছি শুধু বাকী ছিল ডাক্তার ও নার্সটি । নার্সটিকে আমি তিনতলা থেকে ফেলে মেরেছি । এখন থেকে যে মহিলা এই ৯ নম্বর ঘরে এসে ছেলের জন্ম দেবে তাকে আমি মেরে ফেলব , কাউকে বাঁচতে দেবো না ।আমার প্রতিশোধ নেবো , এই সরে যা 

বলছি , আমার সামনে থেকে সরে যা । "


 " সাবধান, তুই যদি আর একপাও এগিয়ে আসিস তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে । ৯ নম্বর রুমের ঐ মহিলার কারণেই আমার সন্তানটি আজও বেঁচে আছে । আমি তার কিছু হতে দেব না । " তাই সে তৃণার চুল চেপে ধরে তাকে দ্রুত টেনে ধরে সিলিংয়ে তাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে । তাই তৃণা খুব উত্তেজিত হয়ে মিতালীর গলা টিপে ধরলো । 

তৃণাকে প্রবল টানে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে মিতালী আর ক্রমাগত বলতে থাকে, " শান্ত হও তৃণা , শান্ত হও প্লিজ । তোমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য তুমি কেন অন্য কাউকে শাস্তি দিতে পারো না । তোমার শ্বাশুড়ি, স্বামী, নার্স এবং ডাক্তার মিলে তোমার সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে হত্যা করেছে , অন্য কেউ না । তুমি তোমার শ্বাশুড়ি , স্বামী আর ঐ নার্সকে মেরে ফেলেছো এখন বাকী শুধু ঐ শয়তান ডাক্তারটা । ঐ রাক্ষসটাকে শেষ করে তুমি তোমার আর তোমার মেয়ের সাথে ঘটা অন্যায়ের প্রতিশোধ নাও । শুধু শুধু নিরপরাধকে বিরক্ত করছ কেনো ? তাদের কে হত্যা না করে আমরা দুজন কন্যা সন্তান হবে এমন মায়েদের আর তার কন্যা সন্তানদের রক্ষা করার চেষ্টা করবো । কন্যা সন্তান হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত এই হাসপাতালে অনেকেই আছে , আমরা দুজন তাদের শাস্তি দেবো যাতে আর কোনো মাকে তার কন্যা সন্তানকে হারাতে না হয় । "


মিতালীর সব কথা শুনে তৃণা বলে, "আমি মারা যাওয়ার আগে শপথ করেছিলাম যে ৯ নম্বর কক্ষে যে মহিলা ছেলের জন্ম দেবেন, এবং যখন আমি তা জানতে পারব তখনই আমি সেই মহিলা এবং অনাগত সন্তানকে হত্যা করবো । আপনি জানেন যে মৃত্যুর আগে হৃদয় থেকে করা প্রতিজ্ঞা সত্য হয় ? 

এতো মতভেদের কি কোনো প্রয়োজন

 আছে ? "


মিতালী বলে, " আহ! তোমার তো দেখছি ভীষণ জেদ । আমিও মরার আগে আপনি যেভাবে শপথ করেছিলেন, আমিও সেইভাবে শপথ নিয়েছি । এই অদ্রিকা এবং এই ৯ নম্বর ঘরে থাকা প্রতিটি মহিলার নিরাপদ প্রসব যাতে হয় সেই দিকে সর্বদা দৃষ্টি রাখবো, তাতে যাই হোক না কেন । এখন দেখা যাক, কার শপথ বেশি শক্তিশালী ? কাউকে হত্যা করা না কারো জীবন বাঁচানো । "


 মিতালীর কথা শুনে তৃণা ক্রুর ভাবে হাসতে লাগল আর রাগে , তেজে ক্রমাগত ফুঁসে লাগলো । 


সেইসময় ডেস্কের নার্স হঠাৎ আরেকজন নার্সকে ডেকে বললো, "শশশশশ ! এই ঐ মহিলা কি নাক ডাকছে ? কী জোরে জোরে ফোঁস ফোঁস শব্দ করছে সে । আওয়াজটা কিন্তু বেশ ভীতিজনক লাগছে । কি জানি বাবা, আমি কখনো এইধরনের নাক ডাকার আওয়াজ কোনোদিনও শুনিনি । আরেকজন নার্সও তার কথা শুনে কান পেতে ভালো করে শোনার চেষ্টা করতে লাগলো । 


 তৃণা মিতালীর হাত ধরে সামান্য নাড়া দিয়ে বললো,"এখন দ্যাখো সামনে ঐ বৃশ্চিক রাশির কাঁকড়াবিছে আমার নির্দেশে কেমনভাবে নিজের শক্তি দেখায় । "


 তৃণা তখন অঘোরি মন্ত্র বলে বৃশ্চিক রাশির চিহ্নে বৃশ্চিকের দিকে চোখ স্থির করল আর চোখের নিমেষেই কাঁকড়াবিছেটি নড়াচড়া শুরু করে দিল । তার বড় মোটা কালো পা দুটো নড়তে লাগলো ধীরে ধীরে । 


 কাঁকড়াবিছেটি ছবির বৃত্ত ছেড়ে দেওয়ালের ওপর কিছুক্ষণ হাঁটলো তারপর ছাদ বেয়ে মিতালীর দিকে আসতে লাগল । এই দৃশ্য দেখে একটি অতৃপ্ত আত্মা হয়েও কেমন যেন মিতালীর বুক কেঁপে উঠলো । পাশের ডেস্কে বসে থাকা নার্স দুটিও ঐ কাঁকড়াবিছেটিকে দেখে ভয়ে চিৎকার জুড়ে দিলো । চিৎকার শুনে দুটো ওয়ার্ডবয় ছুটে আসে এবং একটা বড়ো লাঠি দিয়ে কাঁকড়াবিছেটিকে ছাদের থেকে মাটিতে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে । 


 এই হট্টগোলের মধ্যে হঠাৎ করেই ঘরের ও কড়িডোরের সমস্ত লাইটগুলো নিজে থেকেই ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে গেল এবং অন্ধকার হয়ে গেল । নার্সরা তাড়াতাড়ি কিছু ইমার্জেন্সি লাইটের ব্যবস্থা করে ওয়ার্ডবয়দের ডেকে ঘর ও কড়িডোরের সব কাঁচ ঝেড়ে পরিস্কার করে ফেলার আদেশ দিল । তারা আধো অন্ধকারে কিছুই স্পষ্ট দেখতে না পেলেও ঝটপট কাজে লেগে পড়লো । 


এমন সময়ে অদ্রিকাকে নিয়ে সবাই লেবার রুমের দিকে যাচ্ছিলো । তৃণা ছাদে উল্টো হয়ে ঝুলতে ঝুলতে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছিলো অদ্রিকার দিকে । অন্যদিকে তখন মিতালী কাঁকড়াবিছেটিকে আটকাতে ব্যস্ত । মিতালী অনেকক্ষণ ধরে কাঁকড়াবিছেটিকে আটকানোর চেষ্টা করেও সফল না হওয়ায় অবশেষে নিজের শক্তি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় । মিতালী একটি নির্দিষ্ট অঘোরি সম্মোহনী মন্ত্র উচ্চারণ করে এবং দেওয়ালে সিংহের দিকে চোখ রাখে । সে অবশ্য নিশ্চিত ছিল না যে আদৌও এই মন্ত্রটি সফল হবে কি না । 


 কিন্তু সিংহটি সম্মোহিত হয়ে তার দৃষ্টিতে আবদ্ধ হয়ে দেয়ালের ওপর দিয়ে হেঁটে উল্টো ঝুলে গেল এবং মিতালীর আদেশে সে কাঁকড়াবিছেটির উপর লম্বা লাফ দিয়ে প্রাণভরে গ্রাস করে তারপর তৃণার পিছনে তাড়া করল । ঘর ও কড়িডোরের আলোআঁধারিতে এসকল দৃশ্য কারো দৃষ্টিগোচর হোলো না । 


 যাইহোক, সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে যে একটি খুব ভিন্ন চেহারার কীট ছাদে আঁকড়ে ধরে প্রবল গতিতে লেবার রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । 


 তৃণা যখন লেবার রুমের দরজা দিয়ে দেয়ালে ওঠার চেষ্টা করছিল, তখন সিংহটি তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয় । এসব ঘটনার একটা ধোঁয়াশা চিত্র ছাড়া আর কিছুই সিসিটিভিতে রেকর্ড হয়নি । বিচ্ছু আর সিংহকেও দেখা গিয়েছিল দুটি আলাদা ধরনের কীটের আকৃতিতে । 


 পরের দিন দেওয়ালে রাশিচক্রের সমস্ত চিহ্নগুলি যেমন ছিল তেমনই ছিল । 


 ৯ নম্বর ঘরে অদ্রিকা তার ছেলের সাথে এবং রিয়া তার ভাইয়ের সাথে আনন্দে খেলছিল । সাদা শাড়ি পরা মিতালীর অতৃপ্ত আত্মা এক পরম তৃপ্তি ঘরের ছাদ থেকে উল্টো ঝুলে এই দৃশ্য দেখে আনন্দে কাঁদছিল । সেদিনই তৃণার সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের হত্যার সাথে জড়িত ডাক্তারটিকেও তার নিজের কেবিনে তীরবিদ্ধ অবস্থায় মৃতরূপে উদ্ধার করা হয় । 



    

   🔸🔸🔸🔸 সমাপ্ত 🔸🔸🔸🔸


       


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller