রাতের অতিথি -৩
রাতের অতিথি -৩
পর্ব ৩
সোনালি গোমসের বলছেন...
অমাবশ্যার গভীর রাত, আজ কাল সন্ধ্যায় রাস্তাঘাট খুবই সুনসান লাগছে। আমি অনেকদিন ধরেই এই অভিশাপকে বাঁচিয়ে রেখেছি। আজ আবার যাবো, কেউ আটকাতে পারবে না। কেন মানুষ পাপ করে? সেই পাপের শাস্তি ভোগ করতে হয় যুগ যুগ ধরে। আমাকেও যে অন্যায়ভাবে মরতে হয়েছিল। কেউ কি শুধু শুধু মরতে চায়। সেদিন মরিয়া আমাকে মাশরুম খাওয়াল, এটা জেনেও যে আমার জন্যে এটা বিষ, আমার ছোটবেলা থেকে অ্যালার্জির কথা ওকে বলেছিলাম। আমার খাওয়ারে পুরো মিহি করে বেঁটে এমনভাবে মেসাল বুঝতেই পারলাম না। শুধু তিনদিনের মাথায় সব শেষ। তখনকার দিনে মানুষ অত বুঝতে পারতো না, আমার জ্বরের কোনো কারণ কেউ খুঁজে পায় নি।
আমি যখন মৃত্যুশয্যায় তখন বুঝতে পেরেছিলাম কি সাংঘাতিক মেয়ে মারিয়া, সেদিন ঠিক করেছিলাম মরিয়াকে আমি ছাড়বো না। ওকে শুধু না, ওর পরিবার এর সকল মানুষ এই অভিশাপ মাথায় নিয়ে বাঁচবে। মৃত্যুর খেলায় মেতে ছিলাম… আজ ও শেষ হয় নি। আমি সেদিন ঠিক করেছিলাম যেখানে যে প্রতিহিংসায় মানুষের ক্ষতি করবে তাকেই আমি শেষ করে দেব। প্রথম আমি এই হারের মাধ্যমে পিটারকে হত্যা করি। পিটার আর রবারট একে অপরের প্রতি অত্যন্ত প্রতিহিংসা পরায়ন ছিল। পিটার সব কিছু থেকে রবার্টকে সরিয়ে দিত তাই বন্ধু হয়ে শুধু কর্তব্য পালন করলাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে টোকা দিতেই খুলে দিল। আমার এক দৃষ্টিতেই জ্ঞান হারাল, বেচারা.. তিন দিনের জ্বরেই … হা হা হা হা .. খুব আনন্দ হল। মরিয়া আমার হার পড়লেই আমি এই ভাবে আরো অনেক খুন করেছি। কেউ আটকাতে পারে নি। মানুষ মানুষকে শাস্তি দিতে পারে কিন্তু আমি তো শুধুমাত্র এক শরীর ছাড়া আত্মা… হি হি হা হা হা হা হা হা হা … হা হা হা হা হা হা হা ।
কিন্তু ওই মহাপুরুষের কথা, একটু ভয় পেয়েছিলাম, তারপর যখন জানলাম সোনিয়া বিয়ে করেছে তখন ভয় কেটে গেল। কিন্তু মরিয়া মারা যেতেই রবার্ট আবার ভুল করল। নিজে তো বাঁচলই না, কিন্তু আমাকে ঠিক আর এক বংশের মানুষের হাতে তুলে দিয
়ে গেল। তারপর থেকে সব পরিবারের থেকে বিনা কারণে অন্যের ক্ষতি যারাই করতো তাদেরই আমি চরম পরিণতি দিয়েছি। কাজ আমারই শুধু শরীর বদল হয়েছে। চন্দনাকে আজ আমি অনেক খাটাবো কারণ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে মনে হয়।
আজ যাকে ডাকবো বলে এসেছি সে চন্দনার ক্ষতি করতে চায়, কালই যখন চন্দনা স্কুল থেকে ফিরছিল তখন ফোনে বলল শুনলাম, “ চন্দনাকে আমি ছাড়বো না। আজ ওর জন্যে আমার মেয়েকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।“ ঠিক করে ফেললাম দেখা দেব।
এই তো সেই মহিলা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, এবার খেলা শেষ। একি… এটা কি হচ্ছে… আমার দৃষ্টি কাজ করছে না কেন? না না .. এ হতে পারে না.. এই.. কে তুমি .. কে… না নননা …..ননননননননননননননননননা…….!!!!! আআআআআআআআআআআআআআআআ!!!
তিন দিন পর
মিতা আজ খুব খুশি হয়েছে, শতদ্রুদা এই বিপদ থেকে মুক্ত করতে পারবে সেটা ও ভাবতে পারে নি। সে বলল, “ সেদিন আমি ঠিক করেছিলাম মিসেস সোনালি গোমস অর্থাৎ যে আসল হারের অধিকারিণী ছিলেন তার বাড়ি যাবো। সেখানে গিয়ে আমি তার নাতনি রেবেকার ঠিকানা নি এবং জানতে পারি তার মেয়ে চন্দনার সাথে একি স্কুলে একি ক্লাস এ পড়ে। তখন আমি একটা রিস্ক নিয়েছিলাম। আমি শুনেছিলাম যে যখন কোনো আত্মা কোনো জিনিষে আটকে যায় তখন তার মুক্তির উপায় হল তার নিজের বংশধরকে তার সামনে নিয়ে আসা। অনেক সময় তার খারাপ দৃষ্টির প্রভাব তার নিজের পরিবারের উপর পড়ে না। যদি যথা বিধি মেনে তার শ্রাধ্য করা হয় সেই আত্মা মুক্তি পায়।
তা ছাড়া যে কারণে মিসেস গোমস খুন করতেন মানে এগুলো আমি চন্দনার ঘরে একটি ডায়েরি থেকে জানতে পারি যেটা সম্ভবত মিসেস গোমেজই লিখেছেন চন্দনার মাধ্যমে, সেই মতন উনি খুনগুলো করতেন শুধুমাত্র প্রতিহিংসাপরায়ণ লোকদের শাস্তি দিতে। তাই জন্যেই যেহেতু এইবার যেটা উনি শুনেছিলেন সেটা মিথ্যা ছিল তাই তার দৃষ্টি কোনো ক্ষতি করতে পারে নি এবং সে হেরে গিয়ে চলে গেছিল.. চন্দনাও সুস্থ হয়ে গেল .. অভিশাপ মুক্ত হল।
শেষ।