Jagori Sarkar

Horror Tragedy Thriller

2.4  

Jagori Sarkar

Horror Tragedy Thriller

পরিচয়

পরিচয়

5 mins
256


                               

মুখের উপর জলের ঝাপটায় ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে কিছুক্ষন ভাবার পরে প্রদীপের মনে পড়ল সে বাসেই বসে আছে। বাইরে মুসুলধারাই বৃষ্টি পড়ছে, কোনো ভাবে নেমেই মেট্রো স্টেশন এ ঢুকে যাবে। অফিসের কাজ শেষ করে বেরোতে একটু দেরি হয়েছিল তাই বৃষ্টিতে ফেঁসে গেল নইলে অনেক আগেই বাড়ি পৌঁছে যেত। 


যেমন ভাবা তেমন কাজ, প্রদীপ মেট্রো স্টেশন এ তাড়াতাড়ি ঢুকে গেল। মেট্রোর প্ল্যাটফর্ম আজ খুব ফাঁকা লাগছিল। এত বৃষ্টির দিনে কেউ বিশেষ বাড়ি থেকে বেরোই নি। দুর্গা পুজোর সময় এই জায়গায় লাইন দিয়ে ঢুকতে হয়। পুজোর পর মন কেমন করতে শুরু করে দেয়, ঘুরে বেড়ানো, প্যান্ডেল দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ইত্যাদি। যাই হোক, ট্রেন যতক্ষণ না আসে অপেক্ষা করতেই হবে। এই সব ভাবতে ভাবতে একটা বেঞ্চ এ সে বসে পড়ল। 


ব্যাগ থেকে ফোন বার করে মেসেজ ইনবক্সটা চেক করতে যাবে ঠিক তখনই কেউ পেছন থেকে ডাকল।

“আরে! প্রদীপদা!”

প্রদীপ পেছন ফিরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। 

"সরমা.... তুই ?"

কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে তাকিয়ে রইল। প্রদীপ সরমাকে অনেকদিন আগে সেই কলেজে শেষ দেখেছিল। তারপর থেকে কোনো যোগাযোগ ছিলোই না। এতদিন পর এভাবে দেখা হবে দুজনেই ভাবতে পারে নি। 

"আমি আজ একটু ছেলের বাড়ি যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম মেট্রোতে যাই। আমার ছেলে পার্কস্ট্রীটটে থাকে। ভিতরে এসেই তোমায় দেখলাম তাই ভাবলাম একবার ডাকি।"

"খুব ভালো করেছিস। বস্ বস্..... তারপর বল কেমন আছিস? কোথায় থাকিস?"

ওদের কথা শুরু হল। সরমা বলল কলেজের পর ও বিয়ে করে নিয়েছিল এবং একটা কল সেন্টারে অনেক বছর কাজ করেছে। বিয়ের দুবছর পর ওর স্বামী কার অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়, ছেলেকে একাই মানুষ করেছে। প্রদীপ অনেকদিন পর সরমাকে দেখছিল আর একটু অবাক হচ্ছিল। সে কেমন যেন শুকিয়ে গেছে, মুখে বয়সের ছাপ সময়ের আগেই যেন পরে গেছে। 

প্রদীপ বলল সেও একাই থাকে। বাড়িতে মা আছেন আর একজন কাজের লোক। এই সব কথা বলতে বলতে কতক্ষন সময় পেরিয়ে গেছিল খেয়াল ছিল না দুজনেরই । হঠাৎ, প্রদীপ ট্রেন এর টাইম এর বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে দেখল যে ট্রেন আস্তে পনের মিনিট দেরি হবে।


" প্রদীপদা, বসুধার ব্যাপারে একটা কথা বলার ছিল।"

বসুধার নাম শুনে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল প্রদীপের শিরদাঁড়া দিয়ে। ওই দিনগুলোর কথা এখনও ভোলেনি সে, কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে শুধু একবার শেষ বার তাকে দেখবে বলে। সেই যে বসুধা পাহাড়ে ঘুরতে গেল আর ফিরে এলো না। ওর গাড়িটাও কোথাও পাওয়া যায় নি। দশ বছর পর হঠৎ ওই নাম শুনে প্রদীপ যেন শুকিয়ে গেল । 

"হ্যা ...... মানে ও তো..."

" আমি আজ তোমায় যে কথাগুলো বলব জানি না তুমি বিশ্বাস করবে কি না। তবে যাওয়ার আগে একবার বলে যেতে চাই রে দাদা। আমি জানি তুই আমায় অনেক খুজেছিস কিন্তু আমার কাছেও কোনো উপায় ছিল না।"

"দাদা? .... সরমা? তুই.... মানে আমি কিছুই ..."

সরমা জল ভরা চোখে তাকিয়ে রইল প্রদীপের দিকে। তারপর বলতে শুরু করল।

" আজ থেকে দশ বছর আগে সরমা আর বসুধা এক সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে যায়। বসুধা বাড়িতে বলে যায় কিনজল ও বিজন ওদের সঙ্গে যাচ্ছে কিন্তু শেষ বেলায় কিছু কাজে আটকে পরে কিনজল ও বিজন যায় না। সরমা গাড়ি চালাচ্ছিল আর পাশে বসুধা বসে ছিল। কিছুক্ষন চালানোর পর বসুধার গাড়ি চালাতে খুব ইচ্ছা হয়। সরমা কিছুতেই রাজি হয় না তাই একরকম জোর করেই বসুধা গাড়ি চালাতে দিতে বাধ্য করে তাকে। গাড়ির স্টিরিং ভুল দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যে গাড়ি একটা গাছে লেগে খাদে পড়ে যায়। অনেক দিন পর বসুধার যখন জ্ঞান ফিরে আসে সে দেখে সে এক আশ্রমের কোন ঘরে শুয়ে আছে। সে পরে জানতে পারে যে সরমা সেদিন অ্যাক্সিডেন্টের পরেই মারা যায় কিন্তু বসুধা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠে।"

এবার প্রদীপ হঠাৎ বেঞ্চ থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠে দাড়াল। "সেকি! তাহলে তুমি কে? বসুধা কোথায়?"

কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ওর দিকে তাকিয়ে সরমা বলে, "আমি বসুধা।"

"কিন্ত..... বসুধাকে তো এইরম দেখতে না।"

সরমা আস্তে আস্তে প্রদীপের দিকে এগোতে থাকে। ওর চোখ যেন জ্বলছে তবুও অশ্রুধারা যেন সব বাঁধা অতিক্রম করে বয়ে চলেছে।

"কে তুমি?", প্রদীপের এবার ভয় করছিল। 

" দুর্ঘটনার পর আমার মুখ দেখে চিনতে পারা যাচ্ছিল না। ওই আশ্রমের ডাক্তাররা কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে আমার মুখের গঠন সরমার মতন করে দেয় কারণ ওরা সরমার ব্যাগে শুধু ওর ছবি পায়। আমার জ্ঞান ফেরার পর থেকে আমার চেহারাও বদলে যায় এবং অনেক বছর নিজের পরিচয় আমি বুঝতেই পারি না। আমার স্মৃতিশক্তি সব হারিয়ে গেছিল তাই সরমা ভেবেই এতদিন কাটিয়েছিলাম। "

"কিন্তু তোর মনে পড়ল কবে যে তুই বসুধা ..... সরমা না?"

এইবার চোখ নামিয়ে পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করল সে। তারপর একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলল,

" হয়তো বেচে থাকলে মনে পরতই না রে দাদা.... আমাকে ক্ষমা করে দিস। এবার আমায় যেতে হবে। পারলে একবার আমার ছেলের বাড়ি গিয়ে বলে আসিস।"

প্রদীপ হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, গলা দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, "কি বলব?"

পেছন ফিরে দেখে বসুধা বলল,

" যে..... আমি আর ..... নেই।" 

খুব জোর একটা আলো প্রদীপের চোখে ধাক্কা দিল। কিছুক্ষন সব অন্ধকার তারপর অনেক লোকজনের কোলাহলে ওর চোখ খুলল। ও দেখল ও মেট্রো স্টেশনের সিড়িতে শুয়ে আছে। আস্তে আস্তে উঠে বসতেই আসে পাশের একটা লোক বলল, " কি ব্যাপার দাদা আপনি কাল মেট্রো স্টেশনে ঢুকলেন কি করে?"

"মানে? আমি বাড়ি যাব তাই কাল রাতের ট্রেন ধরতে এসেছিলাম।"

লোকটাকে একটু সরিয়ে উঠে দাড়াল প্রদীপ।

" আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কাল সন্ধ্যাবেলা একজন মেট্রোতে কাটা পড়েছিল। সুইসাইড কেস, কোন একজন মহিলা, তাই কাল বিকেল ছটার পর থেকে মেট্রো বন্ধ ছিল। আপনি জানতেন না?"

প্রদীপ অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে কি বলবে ভেবে পেল না। কালকের সব ঘটনাই যেন প্রশ্ন হয়ে চোখের সামনে ভাসছিল। বসুধা এতদিন জানতোই না যে অ্যাক্সিডেন্টে সরমা মারা গেছিল আর বসুধা বেঁচে ছিল সরমা হয়ে। সেইবার সরমা ফিরে এসেছিল অ্যাক্সিডেন্টের এক বছর পর। দার্জিলিংয়ের মেলে একটা রেস্টুেন্টে কাজ করতে দেখেছিল পুলিশ তারপর বাড়ি ফিরেও অনেক প্রশ্ন করেও কোন কিছুই সে বসুধার ব্যাপারে বলতে পরে নি। 

"কে সুইসাইড.... করেছে?"

"সেটা তো বলতে পারব না। নামটা ঠিক জানি না। পুলিশ ব্যাপারটা দেখছে।"

প্রদীপ ফোনটা বার করে অফিসে ফোন করে বলল তার একদিন ছুটি চাই। তারপর একটা উবের নিয়ে বাড়ির দিকে এগোল। চোখ যেন ভেসে যাচ্ছিল জলে। ফোনটা হাতে নিয়ে হোয়াটসঅযাপ খুলতেই দেখতে পেল কলেজ রিউনিয়ান গ্রুপ এর পোস্টটা। বিজন লিখেছে," সরমা আর নেই। আজ বিকেলে মেট্রোর নিচে প্রাণ ত্যাগ করেছে। অনেকদিন ধরে ব্রেইন ক্যান্সার এর পেসেন্ট ছিল। শেষ রক্ষা আর হল না ..... আমাদের ছেড়ে সে চলে গেছে বহু দূরে।"


প্রদীপ ভাবছিল কাল রাতে এই মেসেজটাই পড়ার আগে এসেছিল সরমা.... না মানে বসুধা। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror