রাতের অতিথি -২
রাতের অতিথি -২
পর্ব দুই
শতদ্রুদার কথা শুনে মিতা একটু চমকাল তারপর জিজ্ঞেস করল, “তুমি ওই হারটা পৌঁছতে গিয়েছিলে? ওই চিঠিতে কি লেখা ছিল, পড়ে দেখনি?”
শতদ্রুদা আবার শুরু করল, “সেদিন আর কাউকে কিছু বলি নি। বাড়ি ফিরে অনেকদিন সেই হারের কথা খেয়াল হয়নি।এই ঘটনার এক মাস পর একদিন খুব বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হয়। আমার বাড়িতে আমি আলাদা ঘরে শুই। বউ আর মেয়ে এক সাথেই পাশের ঘরে থাকে। সেদিন বাড়ি ফিরতেই লীনা আমায় বলল যে মেয়ের খুব জ্বর। ঘরে গিয়ে দেখি ওখানেই শুয়ে আছে।
পরের দিন সকলে উঠে দেখি মেয়ে একদম ঠিক হয়ে গেছে। সুন্দর উঠে সব কাজে করছে। আগের দিন রাতে যার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল আজ সে একদম সুস্থ। একটু খটকা লাগলেও ভেবেছিলাম কিছুদিন ওকে চোখে চোখে রাখবো যদি আবার জ্বর হয় তাহলে ডাক্তার দেখাবো।“
এই অবধি বলে দাদা থামলেন, মিতা বলল,”তুমি কি বলতে চাইছ বলো তো। একবার হারের কথা বলছ, একবার বলছ মেয়ের জ্বর। তুমি কি বলতে চাও যে…”। একটা হালকা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো মিতার শিরদাঁড়া দিয়ে।
“মিতা! আমার কথা শোন… আমি জানি! আমি জানি!.. আমার ওই হারটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনেক দেরি.. আমার মেয়েটা সেদিন এর পর থেকে প্রতি আমাবস্যার রাতে কোথায় চলে যায়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও.. কাউকে কিছু বলতেও পারছি না আবার নিজেরাও মেনে নিতে পারছি না রে! কি করে আটকাবো। আমাদের সাহায্য কর মিতা। কেউ আমাকে বিশ্বাস করবে না।“
“অফ! দাদা দাড়াও! একটু শান্ত ভাবে কথা বল। মাথা ঠাণ্ডা করো।“
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তারপর দাদা বলল, “ এই ঘটনার চার দিন পর থেকেই শুরু হয়ে গেল রাতের অতিথির মৃত্যুখেলা। প্রতি অমাবস্যার রাতে একের পর এক মানুষ পেত ওই ডাক। কোন মেয়ে মানুষ বাড়ির বাইরে থেকে ডাকে বাইরে বেরিয়ে কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারায় আর তার ঠিক তিন দিনের মাথায় অবধারিত মৃত্যু।
প্রথম প্রথম আমি কিছু বুঝতেই পারি নি। আমার মেয়ের জ্বর সেরে ওঠার পর থেকে প্রতি আমাবস্যার রাতে আমি আর আমার স্ত্রী অঘোরে ঘুমই। অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমালেও ঘুম ভাঙত দুপুর একটার পর। এতক্ষণ ঘুমালে কাজে যেতে দেরি হয় যায়। অনেক বার অনেকভাবে চেষ্টা করেছি আগে উঠার। কাজের লোককে ডাকতে বলেছি, পাশের বাড়ির লোককে ফোন করতে বলেছি এমনকি আমার মা, আমার শাশুড়ি সবাইকে ফোন করতেও বলেছি কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।
“তোমার এটা কেন সন্দেহ হচ্ছে যে চন্দনা মানে তোমার মেয়েই এই অজানা জ্বরের কারণ এবং রাতের অতিথি হতে পারে? তুমি অমাবস্যার রাতে অনেক ঘুমাও কিন্তু উঠে কি দেখ? তোমার মেয়ে ওই সময় ঘরেই থাকে?”
“না। আমি উঠে দেখি ও ঘরে নেই তবে দরজার বাইরে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। ভিতরে নিয়ে এসে চোখে মুখে জল দিতেই তাকায় আর তারপর ওর কিছুই মনে থাকে না।“
“হুঁ .. বুঝলাম। দেখ এভাবে কিছু বলা মুশকিল। আমি নিজে এইবার অমাবশ্যার রাতে তোমাদের বাড়িতে থাকবো এবং পুরো ব্যাপারটা দেখবো তারপর বলতে পারি এর সমাধান কি হতে পারে।“
সেইদিন বাড়ি ফিরে মিতা প্রথমে ওই চিঠিটা পড়তে শুরু করল,
“প্রিয় বন,
এই চিঠিটা তোমার হাতে যখন পড়বে আমি হয়তো আর আর পৃথিবীতে থাকবো না। এই মৃত্যু খেলা একমাত্র শেষ হবে যদি তুমি কোনো উপায় করতে পারি। আমি এক অভিশপ্ত হারের শিকার। অনেক চেষ্টা করেও মুক্তির কোনো উপায় যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন আমার দেখা হয় একজন মহাপুরুষের সাথে।উনি আমাকে বলেছিলেন,”তোর জীবন শেষ হলেও তোর পরিবার এই হার থেকে মুক্তি পাবে না। একমাত্র যদি অন্য কোনো বংশের কেউ এটি পড়ে মৃত্যু বরণ করে এবং সে যদি তার বংশের শেষ মানুষ হয় তবেই তোর বংশধরেরা মুক্তি পাবে।“
তোমাকে আমি এই হার পাঠালাম হাতে তুমি সযত্নে তুলে রাখো এবং মৃত্যুর আগে পড়ে চিরকালের মতন এর শক্তি কমিয়ে দাও। যেহেতু তুমি নিঃসন্তান তোমায় দাহ করার পর তোমার সাথে ওই হারকেও পুড়িয়ে দিতে হবে তবেই এই অভিশাপ শেষ হয়ে যাবে।
ইতি মরিয়া।“
চিঠিটা পাশে রেখে গভীর চিন্তায় পড়ে গেল মিতা, সতদ্রু দা যে মহা বিপদে পড়েছে এটা বুঝতে আর বাকি নেই। এর পরের দিন সকালে মিতা সোনিয়া ব্রাউনের বাড়ি সেই চিঠির ঠিকানা দেখেই গেলেন। ওখানে তার দেখা হলো ক্রিস্টিনা অর্থাৎ সোনিয়া নাতনির মেয়ের সাথে।
“মা আমাকে বলেছিলেন আমাদের বংশের অভিশাপের কথা। কিন্তু এই চিঠিটা ঠাকুমার মার হাতে পড়লেও ওনার কিছু করার ছিল না।তাছাড়া ওনার বংশধর যে ছিল সেটা মরিয়া ব্রাউনের জানতেন না কারণ উনি অনেক দেরিতে বিয়ে করেছিলেন। মরিয়া ব্রাউনের এর বংশের আর কেউ বেঁচে নেই কিন্তু আপনি এই হারের কথা কি করে জানলেন?”
মিতা সব খুলে বললেন ক্রিস্টিনাকে, শুনে সে বলল,” দেখুন মিস্টার বর্ধন সে চিঠিতে কি লেখা ছিল জানতেন না। সম্ভবত মিস্টার ব্রাউন মৃত্যুর আগে খবর পান যে বোনের সন্তান হয়েছে তখন তিনি ভাবেন যদি কোনোভাবে হারটা অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় তাই তিনি তার স্ত্রীর ভাগ্নিকে দিয়ে গিয়েছিলেন। এটাও হতে পারে যে উনি মিস্টার বর্ধন কে ইচ্ছা করেই বলেন নি যাতে মিস্টার ব্রাউন এর বংশ শাপ মুক্ত হয়ে যায়।“
মিতা আর কিছু না বলে বাড়ি ফিরে এসেছিল। কিছুই বুঝতে পারছিল না কি করবে তারপর অনেক ভেবে ঠিক করল শতদ্রুদার সাথে দেখা করে সব বলবে।
মিতা শেষে বলল,” দেখ দাদা, তোমাদের চন্দনাকে বাঁচানোর জন্যে একটা উপায় আমি বার করেছি কিন্তু কতটা কি করতে পারবো জানি না ।“