Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Inspirational Thriller

4  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Inspirational Thriller

একটি মেয়ে (পর্ব দশ)

একটি মেয়ে (পর্ব দশ)

9 mins
461


একটি মেয়ে..

চঞ্চল এতোক্ষণ চুপ করে শুনছিল ঘটনাগুলো। খেয়া শুনতে পায়না শুনে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে, কি মায়াময় মুখখানা। সবসময় মুখে হাসি লেগেই আছে। চঞ্চল ওদের সময় দিলো কিছুক্ষণ, তারপর জিজ্ঞেস করলো, " আচ্ছা মাসিমা কেয়া দেবী এখন কোথায়? "

এই কথাটা শুনে সুবলা দেবী মুখে কাপড় দিয়ে কেঁদে উঠলো। হরকিশোর বাবু ছলছল চোখে প্রায় ঢুকরে কেঁদে উঠে বললেন " নেই বাবা নেই, আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে। "

চঞ্চল বুঝতে পারলো না, জিজ্ঞেস করতেও সংকোচ হচ্ছে, আবার না জিজ্ঞেস করেও পারছেনা। শেষে সে বলেই ফেললো " আমাকে খুলে কি বলা যায়না।"

হরকিশোর বাবু নিজেকে সংযত করে চোখ মুছে বললো " বলা যায় কি যায়না জানিনা,তবে কেন জানিনা তোমাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।"

চঞ্চল আর কিছু বললো না, সময় দিলো কিছুটা। হরকিশোর বাবু বেশ কিছুক্ষণ পরে বলতে শুরু করলেন," কেয়া অনেক কষ্টে বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করলো, কি করে করলো ঠিক জানিনা। আমি আর কেয়া গেলাম ওই বাড়িতে, গিয়ে দেখি অবস্থা সেরকম না, আমাদের সাথে তখনকার বিশ্বস্ত পাহারাদার অর্জুনকে নিয়ে গিয়েছিলাম। দরজায় ধাক্কা দিতে একজন মহিলা বেড়িয়ে এলো, তার পরিচয় জিজ্ঞেস করতে বললো সে সাহেবের স্ত্রী, আরো দুটো বাচ্চা পিছু পিছু এসে দাঁড়ালো। কেয়ার মাটি দুলে গেল, এখানেই শেষ না।এমন সময় সাহেব একজন সালোয়ার পরনে একটি মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এলো। আমাদের দেখে তো সামান্য কিছু ভড়কে গেলেও, নিজেকে সামলে নিলো। সে সাথে থাকা মেয়েটিকে ভেতরে যেতে বললো, এবারে আমি সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম 'এসব কি?'

সে একটা কেমন হাসি দিলো। আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিলো, এবারে কেয়া এগিয়ে গিয়ে সাহেবের কলার ধরে বললো 'তুমি বিবাহিত, দুটো বাচ্চা রয়েছে। ' সাহেব ওর হাত ছাড়িয়ে ব্যঙ্গ হেসে বললো 'এমন করছ কেন ওরা তো তোমাকেও আম্মি বলবে।' 

কেয়ার মাথা দুলে উঠল,হরকিশোর বাবু,মেয়েকে শক্ত করে ধরলেন। এমন সময় একজন বয়স্ক লোককে আসতে দেখা গেল, তিনি এসে জিজ্ঞেস করলো ' ডাক্তার কি বললো? তোর বাচ্চা আর ছোট বিবি সালামত আছে তো?' সাহেব বললো 'হ্যাঁ আব্বা চিন্তা করোনা।' কেয়া সাহেবকে গিয়ে খালি একটা জোরে চড় কষিয়ে সম্মোহিতের মতো চলতে লাগলো। সাহেব অবশ্য আমাদের ছেড়ে দিতো না অর্জুন না থাকলে। অর্জুনের হাতে ছুরি দেখে সে রাগটা সংযত করলো। বাড়ি এসে কেয়া দোর দিলো, আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম নিজেকে শেষ না করে দেয়, কিন্তু সেটাকে ভুল প্রমাণ করলো কেয়া।অনেক করে দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরে দরজা খুললো কেয়া, খুলেই বললো 'বাবা আমি একজনকে ভালোবেসেছি, বিশ্বাস করেছি, আমি মনে করিনা এটা কোনো ভুল। কিন্তু সে আমাকে ঠকিয়েছে। আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলছে। আমি ছেড়ে দেবোনা ওকে।' কেয়াকে কিছু বলেই আটকানো গেল না। আইনি লড়াই শুরু করলো। লোকে প্রথম প্রথম অনেক অপমান আর কটু কথা বললেও সে থামলো না। ওর এই আইনী লড়াইয়ের ফলে সাহেবের মুখোশ খুলে গেল। সে এমন করে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে, কারো সাথে বিয়ে করে মাত্র বছরও সে সংসার করেনি। সে বেঁছে বেঁছে ভালো পরিবার আর ধনী পরিবারের মেয়েদের বিয়ে করতো বা সম্পর্ক করতো৷ তারপর ভয় দেখিয়ে টাকা লুটতো। এমন দুই একটা হত্যারও অভিযোগ রয়েছে ওর বিরুদ্ধে। জানা গেল কেয়ার সহকর্মীও সাহেবের প্রেমের জালে জড়িয়েছে। তাই ও আমাদের বাড়িতে থাকবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এখনো বিভিন্ন স্থানে পাঁচ ছয়জন সাহেবের স্ত্রীর খোঁজ পাওয়া গেল। তারা সাহেবকে এতোটাই বিশ্বাস করে যে প্রথমে বিশ্বাসই করেনি এরকম কাজ তাদের স্বামী করতে পারে। ওর নাম এমন হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান যে কোনো সম্প্রদায়ের বলে সহজে চালিয়ে দেওয়া যায়, আর ও এই সুযোগটাই নিতো। ওর কোনো কোনো স্ত্রীর কাছে সে হিন্দু ধর্মাবলম্বী, কারো কাছে মুসলমান ধর্মাবলম্বী আবার কারো কাছে খ্রিষ্টান। এমনকি শিখ ধর্মাবলম্বী দুইজনকে বিয়ে করেছিল। তাদের একজন জীবিত, একজন মৃত। মামলাটা জোর কদমে চলছিল, ততদিনে কেয়া একটা পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। ও কারো কথা শুনে নিজের সন্তানকে হত্যা করতে রাজি হয়নি। চলছিলো বেশ, মামলা আমাদের পক্ষে। একদিন কোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওকে শাসিয়ে গেল, বলে গেল মামলা বন্ধ করে দিতে। কেয়া ভয়ও পেলো না, বন্ধও করলো না। বরং ওরা যা যা করেছে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে জানালো, পুলিশ গিয়ে সাহেবের সঙ্গী সাথীদের শাসিয়ে এলো, সাহেব তো তখন পুলিশি হেফাজতে। বেশ কিছুদিন কোনো উৎপাত দেখা গেল না। আমরা ভাবলাম সব মিটেছে।এদিকে কেয়া একাকী মা হবার জন্য আদালতে আবেদন করলো। কোর্ট মেনেও নিলো, কারণ কেয়া উচ্চশিক্ষিতা আর স্বাবলম্বী। এটা সাহেবের পুরুষ অহংকারে আঘাত হানলো। আর সাহেবের মুখোশ খুলে দিয়েছে কেয়ার মতো একটি শান্ত স্বভাবের মেয়ে। এটা সাহেবকে শান্তি দিচ্ছিলো না। পরের দিন ছিল আদালতের সাজা ঘোষণার দিন। সেসময় সারা এলাকা সহ সম্পূর্ণ বাংলা তাকিয়ে রয়েছে আদালতের দিকে। আগের দিন স্কুল থেকে ফিরছে এমন সময় দশবারো জন ছেলে মোটরবাইকে এসে কেয়ার পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে। কেয়ার কিছু বোঝার আগে ছুঁড়ে দেত অ্যাসিড। কেয়া চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সেসময় দুপুর ছিল তাই রাস্তায় লোক তেমন ছিলো না, সেই সুযোগটা নেয় তারা। কেয়ার চিৎকারে সবাই ছুটে এসে কেয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রথম প্রথম কেয়াকে সবাই মন্দ কথা বলতো, চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলতো। ওর সব টিউশনি চলে গিয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে দিন বদলাতে থাকে, কেয়ার লড়াইয়ের কাছে সবাই হার মেনে নেয়। আর কুর্ণিশ জানায় ওর সাহসকে। তাই বুঝি সেদিন ছুটে এসেছিল সবাই, তাই কেয়া সেযাত্রায় বেঁচে যায়। তবে প্রায় পনেরো দিন কোমায় চলে যায়, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় লড়াইটা করে গেল ও এতোদিন ধরে, কিন্তু সাজা ঘোষণার দিনটিতে থাকতো পারলোনা। আমরা সবাই ওর ফাঁসি চাইলেও ও সশ্রম কারাদণ্ড পেয়েছিল। কেয়া যখন বাড়িতে ফিরে এলো তখন চুপ হয়ে গিয়েছিল। সুবলা আগে থেকেই ওর ঘরের সব কাঁচ খুলে দিয়েছিল। তবুও শেষ রক্ষা হলো না।" বলে আর কিছু বলতে পারলেন না হরকিশোর বাবু। সুবলা দেবী জলের গ্লাস এগিয়ে দিতে তিনি এক চুমুকে সবটা জল শেষ করলেন।

এবারে সুবলা দেবী বললেন " কেয়ার ছেলে পিকলু তখন বছর দুয়েকের, এই দেশের আইনি লড়াই তো এতো সোজা নয়। দুই বছরের উপর লড়তে হয়েছিল কেয়ামাকে। এবারে একদিন কেয়া ছেলেকে কোলে নিতে যায়, পিকলু মাকে দেখে ভয় পেয়ে মাসির পেছনে লুকিয়ে যায়। তারপর হলো কি কেয়া ছুটে ওর মায়ের ঘরে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠে, সামনে থাকা ফুলদানি আয়নাখানির উপর ছুড়ে দেয়, ঝনঝন শব্দে সব কাঁচ ভেঙে পড়ে। অ্যাসিড আক্রমণের পরে প্রথম সে নিজের প্রতিবিম্ব দেখলো। তারপর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়

আমি তখন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম আর ওর দাদাও আমার সাথে ছিল। ডাক্তারের ওখানে ফোন করে খবর দেওয়ার সাথে সাথে আমাদের সাথে ডাক্তারকে নিয়ে আসি।

ডাক্তার সব দেখে শুনে চোখে চোখে রাখতে বলে। তবুও আর ধরে রাখতে পারলাম কই?" কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, দেখে মনে হলো তিনি সেই অতীতের যন্ত্রণাময় সময়ে পারি দিয়েছেন। শেষে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও বলতে শুরু করলেন, "সেদিন আমরা সবাই পালা করে ওর মাথার কাছেই বসেছিলাম, রাত্রিতে আমি থাকবো বলে ঠিক করলাম, কিন্তু হায় সেদিন যেন আমাকে মরণ ঘুমে পেলো। সারাদিনের খাটুনি উত্তেজনায় কখন চোখ বুজে এসেছিলো জানিনা, চোখ খুললো খেয়ার ধাক্কায়, খেয়া হাত দিয়ে ইশারা করছিলো দরজার দিকে। কেয়ার ঘরে দিয়ে তোমার ঘরে যাওয়ার দরজা ছিলো। সাহেব আসার পূর্বে ওই ঘরটা লেখাপড়ার ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর কোনো আত্মীয় আসলে ওদের ওখানে থাকতে দেওয়া হতো, এখন অবশ্য সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খেয়ার ইশারায় সেই দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে বুঝি ভেতর থেকে বন্ধ।আমি ছুটে যায় বারান্দা দিয়ে ঢুকার জন্য। কিন্তু সেই দরজাও আঁটা।আমি পাগলের মতো ধাক্কা দিতে থাকি আর কেয়ার নাম ধরে ডাকি। আমার চিৎকারে বাড়ির সবাই ছুটে আসে, সাথে পিকলুও আসে দিদার পিছু পিছু। অর্জুন শেষ পর্যন্ত দরজা ভাঙার পড়ে ঘরে গিয়ে দেখি যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমাদের কেয়া গলায় দড়ি দিয়েছে। জিভ ঝুলে পড়েছে। সেই দৃশ্য দেখে বৌদি সাথে সাথে জ্ঞান হারায়,তারপর থেকে আজও স্বাভাবিক হতে পারেনি।আর পিকলু মা বলে চিৎকার করে উঠে তারপর থেকে আর কথা বলেনি।খেয়া আর অর্জুন মিলে কেয়াকে বিছানায় এনে শোয়ায়। অর্জুন ডাক্তারকে আনে, পরে জেনেছি ডাক্তার আসতে চায়নি, অর্জুন প্রায় জোর করেই তুলে এনেছে। ডাক্তার এসে জানায় সব শেষ, আর কিছুই করার নেই। থানা পুলিশ হয়, ওরা যা করার করে। আমরা আর আগ্রহ দেখাইনি। আমরা যা হারানোর তো হারিয়েই ফেলেছি। আর ওসব করার শক্তি আমাদের ছিলো না।"

চঞ্চল চুপ করে রইলো, ও আশা করতে পারেনি, এই পরিবারের উপর দিয়ে এমন একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে।

চঞ্চল বললো " একটা কথা বলব কিছু মনে করবেন না, অর্জুন আপনাদের সবসময় পাশে ছিল, ওকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন কেন? কোনো ঘটনা ঘটেছিল? " চঞ্চল এই প্রশ্ন করতে চায়নি। কিন্তু বোকার মতো করে বসলো। আসলে অর্জুন ওকে বাড়ি ছাড়তে বলেছিল তখন ওর চোখে মুখে ভয় দেখেছিল চঞ্চল।

হরকিশোর বাবু বললেন " আমরা কেউ অর্জুনের কাজ ছাড়ায়নি, ও নিজেই ছেড়ে দিয়েছিল। জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেনি। তবে ও নিজে থেকে না ছাড়লে আমাকে নিজে থেকে ছাড়াতে হতো। আমার আগের মতো অবস্থা ছিল না।আমাদের বাড়িতে আগে গাড়ি ছিল, সেটাও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম কেয়ার চিকিৎসা করানোর সময়। আইনী লড়াইয়ে সর্বশ্রান্ত হওয়ার জোগাড় হয়েছিল, তাই দারোয়ান রাখাটা বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের কাছে। এবারো ঘরটা ভাড়া দিতে চাইনি,কিন্তু অর্থের প্রয়োজন হয়ে যাওয়াতে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। "

চঞ্চল চুপ করে বসে রইলো, একটা পরিবারের এমন সর্বনাশ কি কেউ যেচে করতে পারে? তাছাড়া একটা পরিবার নয় কত পরিবারকে শেষ করেছে। আর কত জীবন নষ্ট করেছে তার ইয়াত্তা আছে?

এমন সময় বাইরে চঞ্চলের নাম ধরে ডাকাডাকি করাতে হরকিশোর বাবু আর চঞ্চল বেড়িয়ে এলো। চঞ্চল দেখে জামাইবাবু আর বাবা দরজায় দাঁড়িয়ে।

চঞ্চল এগিয়ে গিয়ে বললো " তোমরা? বাড়ি চিনলে কি করে? "

"হ্যাঁ আমরা, এই উনাদের কাছে থেকে ঠিকানা নিয়ে এসেছি। এখানে এসে ওদের নাম বলতেই দেখিয়ে দিয়েছে। তুই কেমন আছিস আগে বল।"

" আমি ঠিক আছি বাবা।"

হরকিশোর বাবু বুঝতে পারলেন এরা চঞ্চলের বাড়ির লোক। তিনি বললেন " ভেতরে এসে বসেন।"

" না না ঠিক আছে, আমরা দেরী করবো না, বাড়ির গাড়িতেই এসেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে চাই।" বললেন চঞ্চলের জামাইদাদা।

জামাইদাদার ব্যবহার বড় ভালো, কিন্তু চঞ্চলের আজকে অন্যরকম মনে হলো। আসার পথে কিছু শুনেছে কি? কে জানে।

চঞ্চল এবার বলল " তোমরা আমার ঘরে চলো।" বলে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালো।

ঘরে এখন কেবলমাত্র তারা তিনজন। ঘরে এসে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন তারা। ঘরখানা মন্দ লাগলো না।বেশ সুন্দর।

" এমন করে বলতে গেলে কেন জামাইদাদা, বসতে পারতে ওদের বসার ঘরে গিয়ে। বড় ভালো মানুষ ওরা। ওরা না থাকলে আমি বাঁচতাম কি না কে জানে? "

" দেখো চঞ্চল যা খোঁজ নেওয়ার আমি নিয়েছি আর যা জানার জেনেছি। তোমাকে এক মূহুর্ত এখানে রাখবো না।"

চঞ্চল বুঝতে পারলো না কার কাছে থেকে কি শুনেছে তিনি।

এমন খেয়া সরবত আর মিষ্টি নিয়ে ঘরে এলো, সুবলা দেবী পাঠিয়ে দিয়েছেন।

" এসব আমরা কিছু খাব না, নিয়ে যাও।" খেয়া বুঝতে পারেনি,তাই খাবারটা রেখে যেমন মাথা নিচু করে এসেছিল,তেমনি করে চলে গেল।

চঞ্চলের বাবা অসন্তুষ্ট হলেন, বললেন " দেখছো কেমন মেয়ে, কথা বললেও শুনলো না।"

চঞ্চল বিরক্ত হয়ে বললো " উনি শুনতে পারেন না।"

"মানে?"

" মানের কিছু নেই। যা খেতে দিয়েছে খেয়ে নাও তোমরা, না খেলে আমি তোমাদের সাথে যাবো না। এবার ভেবে দেখো কি করবে? " বলে চঞ্চল ঘরের বাইরে বেড়িয়ে এলো।

বাইরে দেখে হরকিশোর বাবু ওর ঘরের দিকে আসছেন, চঞ্চলকে দেখে বললেন " তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম বাবা, সুবলা পাঠালো উনারা কি খান জানতে।"

" কাকাবাবু মাসিমাকে বলেন কিছু করার দরকার নেই, এখুনি বেড়িয়ে যাব। "

" এখুনি বেড়িয়ে যাবে বাবা? কিছু খেয়ে যেতে কম তো পথ নয়।"

চঞ্চল প্রণাম করে বললো " একদিন পাত পেরে খাবো কথা দিলাম, আজকে আজ্ঞা দিন। তাছাড়া এতোদিন আপনার বাড়ির খাবার খেয়েই তো বেঁচে রয়েছি। "

" কিন্তু.. "

" কোনো কিন্তু নয় কাকাবাবু, মাসিমাকে একটু ডেকে দেবেন। "

" কাকে? সুবলাকে? এখুনি ডেকে দিচ্ছি।"

বলে তিনি সুবলাকে পাঠালেব, চঞ্চল পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললো " মাসিমা জেনে না জেনে অনেক ভুল করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। "

" না বাবা আমিও ভুল করেছি, অন্যের রাগ সন্দেহ তোমার উপর দেখিয়েছি,আর কথায় বলে না 'ঘর পোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।আমাদের সেই দশাই হয়েছিল। ভালো থেকো তুমি।"

" না মাসিমা, আমি আপনার ছেলের মতো বকতেই পারেন। আর একটা অনুরোধ ছিল এই মাসের বাড়ি ভাড়াটা রাখুন, কাকাবাবুকে দিতে হতো জানি। কিন্তু মানুষটা বড় মানী, দিতে সংকোচ হচ্ছে। আপনি দিয়ে দেবেন।"

সুবলা নিতে রাজি হচ্ছিলো না, চঞ্চল বললো " না নিলে মনে কষ্ট পাবো খুব।"

সুবলা আর না বলতে পারলোনা।

ঘন্টা খানেকের মধ্যে চঞ্চল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বিদায় নেওয়া সময় একজনকে চঞ্চলের চোখ খুঁজছিলো। কিন্তু দেখতে পেলোনা তাকে, শুধু পর্দার ফাঁকে কেশরাশি চোখে পড়েছিল মাত্র.


চলবে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational