Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Abstract Inspirational Others

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Abstract Inspirational Others

One trip (পর্ব- চার)

One trip (পর্ব- চার)

8 mins
200


সীমার কথাগুলো শুনে সবাই চুপ করে থাকে, হাসি খুশী মেয়েটার মনে এতো দুঃখ কেউ ভাবতে পারেনি। রুমা নিজের মনেই বলে উঠলো "কি হবে স্বামী সন্তান দিয়ে, আমার সবই থেকে কিছুই নেই..."

সবাই ওর দিকে তাকালো। কেননা সবাই জানে রুমা ডাক্তার গৃহিণী, অর্থের প্রাচুর্য্য যথেষ্ট রয়েছে।

মালা একবার শান্তার সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে নিয়ে বলে "কি বলছিস রে রুমা?"

রুমা যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সেটা কেটে যায় মালার কথায়। "কই কিছু না, কিছু বলিনি তো..."

সীমা ওর হাত ধরে বলে " রুমা আজ মন খুলে সবটা বলে দে রে বন্ধু, দেখবি হালকা লাগবে। আর আমাদেরও নিজেদের কথা দিতে হবে এই কথা গুলো আমাদের আর দীঘার মাঝেই রয়ে যাবে..."

শান্তা রুমার কাঁধে হালকা হাতে স্পর্শ করে বলে "কথা দিলাম সখী তোকে এই কথাগুলো আমাদের মাঝেই রবে, তুই শুধু মন খোল, দেখবি হালকা লাগবে.."

রুমার চোখ জলে পরিপূর্ণ ছিল, সেটা মুছে নিয়ে বললো "ঠিকই বলেছিস, বলব তোদের সব বলব। তোরাই বুঝবি রে আমার কষ্টটা।"

সীমা ওর হাতে মৃদু স্পর্শ করে সমর্থন জানালো।

" তোরা জানিস আমি সুখী গৃহিণী, না তোদের ভাবাটা ভুল না, আপাতদৃষ্টিতে সবার সেটা ভাবাই উচিত। কিন্তু জানিস আমি কোনো দিনও গৃহিণীই হতে পারলামনা। না হতে পারলাম স্ত্রী, না মা। সন্তানের জন্ম দিয়েও সন্তানদের উপর কোনো অধিকার যেন আমার। আমি আমার মেয়েদের আয়া আর স্বামীর সংসারে বিনি পয়সার ঝি হয়েই রয়ে গেলাম। জানিস আমার মনে হয় সীমাই ঠিক করেছে, আমি পারলাম না সমাজ সংস্কার, তার চেয়ে বেশি আর্থিক সুরক্ষার কথা ভেবে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে। এতো বছর সংসার করার পরেও আমি স্বামীর কাছে দূরের মানুষ হয়েই রয়ে গেলাম। "

অর্চনা চুপচাপ ধরনের, কম কথা বলে, সে এবারে জিজ্ঞেস না করে পারলো না। "রুমা কিছু মনে করিস না একটা কথা জিজ্ঞেস করছি, দেখ তোর বিয়ের পরে পরে কাকিমার সাথে আমার মায়ের দেখা হয়েছিল, তিনি তোর শ্বাশুড়ি আর শ্বশুরবাড়ির খুব সুনাম করেছিল।"

রুমা ছোট্ট করে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো " ভালোই সবাই কাউকে খারাপ বলিনি আমি, শ্বাশুড়ি মা আমাকে সত্যি ভালোবাসতো। কিন্তু যার হাত ধরে আর যার পরিচয়ে সেই পরিবারে আমার পরিচিতি সেই যদি আমার পর থাকে তবে শ্বশুর বাড়ি কখনো আপন হয়?"

" তোর স্বামী তোকে ভালোবাসেনা? কি বলিস? তবে মেয়ে দুটো এলো কি করে? "

শান্তা অর্চনার এমন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বললো "আহঃ কি বলিস অর্চনা? ভালোবাসা ছাড়াও সন্তান হয়, সন্তান আসে, তোকে এই বুড়ো বয়েসে এসব বোঝাতে হবে? দেখ ভালোবাসা আর শারিরীক চাহিদা মেটানো এক নয়। তুই বলতো রুমা।"

রুমা একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে ওর সম্বন্ধ থেকে শ্বাশুড়ির মৃত্যু পর্যন্ত বলে বললো "জানিস প্রথম থেকেই এমন উচ্চশিক্ষিত স্বামীকে দেখে সমীহ করে চলতাম আর সত্যি বলতে ভয়ও পেতাম। তাই প্রথম প্রথম আমার প্রতি উদাসিনতা আমাকে স্বস্তি দিতো। শ্বাশুড়ি চলে যাবার পরে ভেবেছিলাম এবার হয়তো দুইজনের একাকীত্বতা আমাদের এক করবে। আমিও চেষ্টা করতে শুরু করলাম, কিন্তু ফল কিছুই হলো না।একদিন ও নেশা করে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরলো, আমি ওর অপেক্ষায় বসে ছিলাম। ওকে কোনো দিনও নেশা করতে দেখিনি, আজ নেশা করে আসতে দেখেও ওকে ধরে ধরে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে জুতো মোজা সব খুলে দিয়ে বালিশটা ঠিক করতে যেতেই ও কেমন একটা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে নিজের দিকে টেনে নিলো। আর ওই প্রথম আমাকে কাছে টেনেছিল। আমি বোঝার আগেই আমাকে চুমু খেতে শুরু করলো। আমি ভাবলাম হয়তো দূরত্ব কমাতে ও চায়, বলতে না পেরে কষ্টের কারণে হয়তো নেশা করে এসেছে। আমার বেশ ভালো লাগছিল। হঠাৎ স্বামীর কন্ঠে শুনতে পেলাম তিনি বলছে 'মনু তুমি এসেছ,জানতাম তুমি আসবে। আমাকে ভুলে গিয়ে, বিয়ে করে নেবে হতেই পারে না, আমি জানি তো তুমি কেবলমাত্র আমার। চুপ করে আছো কেন? অভিমান করেছ? বিয়ে করেছি সেই জন্য? বিশ্বাস করো মনু আমি শুধু তোমার। আমি তো আজও তোমাকে এক মূহুর্তের জন্য ভুলতে পারিনি, বিয়ে করেছি বটে তাকে মনে কিংবা জীবনে আমি স্থান দিইনি আর কোনো দিনও স্থান সে পাবেনা। আমার মন জুড়ে শুধু তুমি। মনু কথা বলো লক্ষ্মীটি।'

তোরা ভেবে দেখ আমার মনের অবস্থা, আমি কি ভুল ভেবেছি। তোরা হয়তো বলবি আমি কেন আমার স্বামীকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চলে যায়নি? বিশ্বাস কর আমি কয়েক মূহুর্ত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বুকটা ফেটে যাচ্ছিল আমার, মনে হচ্ছিলো অন্যের সংসার আমি করছি। পরেরদিন যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখনও আমি স্বামীর বাহুডোরে। উঠতে চেয়েও উঠতে পারলাম না, শুয়ে থাকলাম ঘুমের ভান করে, কিন্তু আমার চোখ দিয়ে জল অবিশ্রান্ত বয়ে চলেছে। স্বামীর ঘুম ভেঙে আমাকে ওর সাথে এমন ঘনিষ্ঠ ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে কেমন যেন চমকে যায়, ছিটকে উঠে বসে 'Sorry ' বলে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে যায়। আমার সেদিন মনে হয় নারীত্বকে অপমান করেছি আমি নিজেই। এরপর সব কাজ করি, কিন্তু সবসময়ই মনে হয় এই সংসার আমার না অন্যের সংসার করছি। তবে এরপর থেকে আমি উনার সামনে কম যাই, রাতেও ওর পাশে শুতে যাই মাত্র, তবে মাঝে মাঝে অনেক অজুহাতে যাইনা ওর ঘরে। ও কিভাবে জানিনা, আমার ব্যবহার লক্ষ্য করে সেটা একদিন বুঝতে পারি, আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বলে 'দেখুন সেদিনের ঘটনা একটা দূর্ঘটনা। আমি জানি এরজন্য আপনি কষ্ট পেয়েছেন, আমি সেজন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইছি।' আমি কি বলব সত্যি সেদিন বুঝতে পারিনি। ঠাকুরের খেলা বলব কি প্রহসন আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি। মানুষ বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়েও যেখানে সফল হয়না। আমি তবে বুঝতে পারি না। তবে একদিন হঠাৎ রান্নাঘরেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই, তখনও তিনি হাসপাতালে যাননি, এসে পরীক্ষা করে দেখে আমি মা হতে চলেছি। আমি খুশী হবো কি কষ্ট পাবো বিশ্বাস কর তোরা ঠিক বুঝতে পারিনি। তবে তিনি সেসময় উনার মাসতুতো দিদিকে বলে একজন আয়া রেখে দেন। আমার মনে অভিমান থাকলে অনাগত সন্তানের কথা ভেবে আশায় বুক বাঁধি।

মনে হতে শুরু করে হয়তো এই সন্তানই সব ঠিক করে দেবে। আবারও আমার মোহ ভাঙ্গে, একদিন আমি বাথরুমে পড়ে যাই, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তিনি পাগলের মতো করে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল হাসপাতালে, কষ্ট হলেও ভালো লেগেছিল আমার জন্য উনাকে চিন্তা করতে দেখে, কিন্তু জ্ঞান সম্পূর্ণ যাবার আগে শুনতে পাই তিনি ডাক্তারকে বলছেন 'আমি ওর উদাসীনতার জন্য আমার সন্তানকে হারাতে চাইনা, আপনি যে করে হোক আমার সন্তানকে বাঁচান।' আমি এতোটা আঘাত পাই মনে হয় উনাকে উনার সন্তানকে দিয়ে আমি মরে যাই। ঠাকুরের কি খেলা কোমায় যাই বটে কিছুদিন কিন্তু মরিনা। তারপর ফিরে এসে দেখি একজন বাবাকে, যে আমার স্বামী হতে পারেনি ঠিকই মেয়ের ঠিক বাবা হতে পেরেছেন। আমি যে কয়দিন হাসপাতালে ছিলাম উনি নাকি মেয়েকে কোলে নিয়ে বাড়িতেই কাঁটিয়েছে। মেয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলো। সবটাই ওর বাবাকে ঘিরে, গল্প, কথা, খেলা সবই। আমি যেন ওদের দুইজনের মাঝে ব্রাত্য। তবে মেয়েকে খাওয়ানো, স্নান করানো থেকে শুরু করে সব কাজই আমার। একদিন মেয়ে হাতে চোট নিয়ে বাড়ি ফিরলো, ফিরেই বাবাকে ফোন। আমি মেয়ের চোটে মলম লাগাচ্ছিলাম তখন। ছুটে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বলল 'কি হয়েছে আমার মনের, কি হয়েছে? ' আমি কিছু একটা বলতে যেতেই বললো 'একদম ছোবেনা ওকে, কি কাজ তোমার থাকে সারাদিন শুনি? মেয়েটার খেয়াল রাখতে পারোনা?' বলে মেয়েকে কোলে তুলে বেড়িয়ে গেল। তার যেন মনেই নেই মেয়েটা আমারও, আমি ওকে কষ্ট করে জন্ম দিয়েছি। সেদিন মেয়েকে সাথে নিয়ে ফিরে আমাকে ওর পোশাক বদলে দিয়ে খাওয়াতে বলে পোশাক ছাড়তে গেল। ফিরে এসে দেখে মেয়ের খাওয়া শেষের দিকে,মুখ ধুইয়ে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেল। রাতে সব কাজ সেরে আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেল। আমি শোবার ঘরে গিয়ে দেখি মেয়ে সেখানে নেই, আর উনি বসে রয়েছেন আরাম কেদারায় বই মুখে করে। মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন 'তোমার সব কাজ আজকের মতো শেষ তো? আর তুমি সুস্থ আছো তো?' আমার ভালোমন্দের প্রশ্ন কোনো দিনও সে করেনা, আমি অবাক হয়ে কেবলমাত্র মাথা দোলালাম। ' বলছি যে তোমার মাসিক হয়নি তো?' এই প্রশ্ন শুনে একদম সংকুচিত হয়ে গেলাম। শুনে তোদের অবাক লাগলেও এটা সত্য ছিল যে আমরা স্বামী-স্ত্রী হলেও আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্কই নেই, স্বাভাবিক হোক কি অস্বাভাবিক। আমি অসুস্থ হলেও কেউ জানতে পারেনা। আমি চুপ করে ছিলাম। 'আহ্ চুপ করে আছো কেন? যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও।' আমি মাথা দুলিয়ে নেই বলতেই তিনি বেশ খুশি হলেন বোঝা গেল, আমার দিকে তাকিয়ে বললো 'এইটাই ভালো সময় মনকে যে ওষুধ দিয়েছে ও আজ সারারাত ঘুমাবে। ' আমি বাধ্য হয়ে বললাম ' অসুস্থ মেয়েটা একা ঘুমোবে?' তিনি কেমন দাঁত খিঁচিয়ে বলল 'সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না,যখন ভাবার ছিল ভাবো নি কেন? আর আমার মেয়েরটা ভাবার জন্য আমি আছি, দেখো যেটা বলছি সেটা শোনো। মেয়েটাকে ওরা খেলতে নেয়নি, ও ওদের সাথে আর খেলতে যাবে না, ওর একটা ভাই বা বোনের দরকার বুঝেছো? আর মন আমার কাছে বায়নাও করেছে। ' আমি কি বুঝবো জানিনা, বোঝার সব বোধ বুদ্ধি হারিয়েছি, বুঝতে পারলাম মেয়ের ইচ্ছে পূরণের জন্য আজ আমাকে প্রয়োজন পড়েছে। তাই এতো আমার শরীরের খোঁজ, কোনোটাই আমার জন্য না, সবটাই ওদের প্রয়োজনে। আমি যে ওদের প্রয়োজন মেটানোর যন্ত্র নই, আমি একটা মানুষ, আমার ইচ্ছে অনিচ্ছা আছে, সেটা যেন ধাতব্যের মধ্যেই ধরে না উনি। আবারও ওদের প্রয়োজন ওদের ইচ্ছেই জয়ী হলো, বার তিনেকের চেষ্টায় দ্বিতীয় কন্যার জননী হলাম। আজ পর্যন্ত ওদের ইচ্ছের দাসী হয়েই রয়ে গেলাম। ছোট এখন কোটায় গিয়েছে, ওর বাবাও গিয়েছে ওর সাথে, একমাস পরে ফিরবে। বড় পুণেতে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে। উনার অবশ্য ইচ্ছে ছিল উনার কোলের কাছে রাখতে। কিন্তু বড়র ইচ্ছেতে ওই কলেজে ভর্তি করেছেন। মেয়েদের ইচ্ছেই সব উনার কাছে। আমি চলে এলাম এক সুযোগে একটু মুক্তির স্বাদ নিতে। এমনিতেও ওদের মাঝে আমি বাড়তি। এখন মাকে ওদের প্রয়োজন নেই, যতদিন কিছু করতে পারতোনা, ততদিন পর্যন্ত আমি ছিলাম দরকারি। এখন আমার আগাছা, মরে গেলেই হয়।"

সবাই প্রায় আর্তনাদ করে বলে "কিসব বলছিস?"

রুমা কেমন করে যেন হাসে।

অর্চনা এবারে ওর কাছে এসে ওর পাশে বসে বলে "আমাকে ক্ষমা করে দে রুমা। আমি না বুঝে বলে ফেলেছি, আসলে অভাব আমার স্বভাবটা নষ্ট করে ফেলেছে।"

" আরে ধুর বোকা মেয়ে আমি কিছু ভাবিনি।"

" সত্যি বলছিস তো.."

" একদম সত্যি.. "

সীমা দেখলো সবার মুখ থমথমে, ঘরের পরিবেশ হালকা করার জন্য বলে "তোরা কি ঘরে বসে কাটাবি দীঘায় এসে? দেখ কখন সূর্য অস্ত গিয়েছে। সূর্যাস্ত দেখা হলো না, সে না হয় কাল দেখবো। অন্তত রাতের সমুদ্র দেখতে যাই৷ শুনেছি খুব সুন্দর.. "

শান্তা বলে "ঠিকই তো, চল চল তৈরী হ, এরপরে দেরি হয়ে যাবে। "

রুমার ইচ্ছে ছিল না যারার, ও জানে ও না গেলে কেউই যাবেনা। তখন সবার আনন্দ মাটি হবে। তাই সে তাড়াতাড়ি করে হৈ হৈ করতে করতে ঘুরতে বের হলো... এই বেলায় সবাই শাড়ি পড়েছে সাথে হালকা প্রসাধনী। সবার ইচ্ছেতে মালাও অনেক বছর পরে সাজলো। দীঘায় এসে যেন তারা প্রাণ ফিরে পেয়েছে আর চিনতে পেরেছে নিজেদের নতুন করে।


চলবে...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract