One Trip.. (পর্ব- সাত)
One Trip.. (পর্ব- সাত)
"যাই বল আমার কিন্তু ওড়িয়া ভাষা বেশ লেগেছে, মনে হচ্ছিল বাংলার ভাই।"
" তা ঠিকই বলছিস মালা, তবে এটা জানিস কি ওড়িয়ারা বাঙ্গালীদের ওদের উন্নতির বাঁধা হিসেবে মানে।"
শান্তার কথায় অবাক হয়ে সীমা বলে "কেন?"
" কেন জানিনা, তবে আগে এই চিন্তাধারা ছিল না, ইদানীং শুরু হয়েছে৷ বহু প্রাচীন কাল থেকে অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ অর্থাৎ বর্তমানের বিহার বাংলা উড়িষ্যা ত্রয়ীর মতো একত্রে থেকেছে। বর্তমানে বিহারে হিন্দি বলা হলেও, বিহারে প্রাচীন ভাষার মধ্যে মৈথিলী, ভোজপুরী, অঙ্গিকা এমন অনেক ভাষা রয়েছে, তাই কোনোটাই হিন্দির সাথে যতটা মিল, তারচেয়ে বেশি মিল ওড়িয়া আর বাংলা ভাষার সাথে। অনেক ভাষা বিজ্ঞানীর মতে মৈথিলী ভাষা থেকে নাকি বাংলা ভাষার উৎপত্তি, কারণ হিসেবে বলেছে হরফটাও নাকি এক। তবে অনেক গবেষকের মতে এই দুই ভাষা এক ভাষা গোষ্ঠী থেকে সৃষ্টি, তাই মিল রয়েছে। "
সীমা অবাক হয়ে বলে "তোর এই বিষয়ও বেশ জ্ঞান দেখছি।"
" ধুর কই আর, কথায় কথায় বলে ফেললাম। "
তারপর কথা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো "কেমন লাগলো তোদের বল? এখন তো ফিরে যাচ্ছিস, এখন উত্তর দে। এখানে আসার আগে আর বর্তমানের মানুষটা কি এক? নাকি...?"
স্বপ্না বললো "সত্যি বলছি শান্তা এমন আনন্দ জীবনে পায়নি, আর কি মনে হচ্ছে জানিস এমন ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা আমরা আগে কেন করলাম না।"
রুমা স্বপ্নার কথার জের ধরে বললো "আগে করিনি তো কি হয়েছে? এখন থেকে প্রতিবছর যাব। কি বলিস শান্তা।"
শান্তা উত্তর না দিয়ে কাষ্ঠ হাসলো।
মালা সাথে সাথে উত্তর দিলো "আমি রাজি, আর একটা কথা বলে রাখি টাকা নিয়ে কেউ শ্মশানে যাব না। তাই তো?"
শান্তা কেমন আঁতকে উঠে বলে "কিসব বলছিস.."
" আরে আগে শোন না কথাটা, তাই যাদের ক্ষমতা আছে তারা যাদের ক্ষমতা নেই তাদের ঘুরার জন্য স্পনসর করবে। কিন্তু যেতে সবাইকে হবেই। না বলা চলবে না। রাজি.. "
অর্চনা আর সীমা সংকোচ করলেও রুমা আর স্বপ্না দুইজনের হাত উঁচু করে উঠিয়ে বললো "রাজি সবাই রাজি। "
রুমা বললো "যাই বল মন্দামনীটা যেতে পারলে ভালো লাগত।"
" আরে একবারেই সব হবে নাকি, পরেরবার যাব, কি বলিস শান্তা। "
শান্তা শান্তভাবেই বললো "আমাকে জিজ্ঞেস করিস কেন সবসময়? "
" তুই আমাদের নেতা.."
বলে সবাই হিহি করে ওঠে।
আজ বিকেলে সবাই পাহারিয়া ধরে বাড়ি ফিরবে। এখন সবাই সবে বাজার ঘুরে কেনাকাটা করে এসে বসেছে স্মৃতি মন্থন করতে।
সবার খুশী মুখগুলো দেখে মনটা কেমন খুশিতে ভরে উঠে।
______
" কে সীমা তুই? এতোদিন পরে মনে পড়লো? ঘুরে আসার প্রথম প্রথম ফোন করতিস, এখন তো খোঁজই নিস না।" রুমা এতোগুলো কথা একদমে বলে গেল।
সীমা এবার হেসে বলল "তোর সময় কই বল? তুই এখন Celebrity। "
" তোরা অন্তত এমন করে বলিস না।"
" আচ্ছা বলছি না, তবে পারলে এই মাসের পঁচিশ তারিখ আসিস।"
" কোথায়? আমার তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা। "
" পারলে আসিস, আমরা ভেবেছি শান্তার জন্মদিন পালন করবো। রাখি রে বাকিদের ফোন করতে হবে। "
বলে ফোন রেখে দেয় সীমা। ফোন রাখতেই ভাবতে থাকে নিজের কথা।
ঘুরে আসার পরে তার অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। সে কাউকে পরোয়া করে না। কারো কথা ভাবেনা।কারোর জন্য অপেক্ষায় থাকে না। ও নাচের চর্চা শুরু করেছে, বহুদিনের ইচ্ছে ওর। স্বামী মেয়েরা তার এই পরিবর্তনে খুশী কি অখুশি তার ও জানেও না আর পরোয়াও করে না। নতুন নাচের স্কুল থেকে দুই একটা অনুষ্ঠানে নাচ করেছে, ওর বয়সী একজনের এমন পদক্ষেপকে সাহস হিসেবে নিয়েছে। শুরুটা যেহেতু ফেসবুক লাইভ থেকে হয়েছিল, তাই জনা তিন ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। বহু মানুষ প্রসংশায় ভরিয়ে দিয়েছে। online এ এখন অনেক প্রবাসী তার বয়সী নারীদের নাচ শেখায়, ওরাও সংকোচে অল্প বয়সীদের কাছে শিখতে লজ্জা পেতো।আর এখন অসংকোচে রুমার কাছে থেকে নাচ শেখে, ভুল হলে বা কোমড়ে টান লাগতে পারে সেসব স্টেপ করায় না। কারণ সে বোঝে কি কি অসুবিধা এই বয়সে, যা অল্প বয়সীদের পক্ষে বোঝা সম্ভব না। রুমার মোটামুটি হাত খরচের টাকা চলে আসে। এখন আর স্বামীর কাছে হাত পাততে হয়না। রুমাও আজকাল স্বামী মেয়েদের তেমন খোঁজ নেয়না, বাড়িতে থেকেও যেন বাড়ির কেউ না এমন। আগে মেয়েদের খোঁজ নেবার জন্য মন কাঁদত, এখন এসব ভাববার সময় পায়না রুমা।
স্বামীকে বেশ কয়েকবারে লক্ষ্য করেছে ওর নাচের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে।রুমা দেখেও দেখেনি, এতোদিনের অবহেলা অপমানের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে স্বামী সন্তানদের কাছে টেনে নেওয়া ওর পক্ষে আর সম্ভব নয়। মাস ছয়েক হলো Youtube এ "Ruma's Dance Class" নামে Channel খুলেছে। এই অল্প কয়দিনে এর বেশ জনপ্রিয়তা তৈরী হয়েছে। আর বসে থাকতে পারে না, উঠে দাঁড়ায়। একটা নাচের ভিডিও করতে হবে, Upload করতে হবে যে।
_________
"সীমা তুই? কেমন আছিস? কতদিন পরে ফোন করলি রে।"
" হ্যাঁ রে সময় হয়না। তুই কেমন আছিস বল?"
" আছি মোটামুটি, অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে রে। তুই কিছু জানিন না?"
সীমা বললো "হু শুনেছি তোর বিবাহ বিচ্ছেদের কথা।"
" ঠিকই শুনেছিস, তবে সবটা সত্যি না।"
" মানে? "
" মানেটা বলতে সময় লাগবে..আগে বল তুই ফোন করলি যে, কিছু বলবি?"
" হ্যাঁ, তা বলছিলাম এই মাসের পঁচিশ তারিখ পারলে রায়গঞ্জে আসিস।"
" কেন রে তুই বিয়ে করছিস নাকি?"
" আহ্ ঠাট্টা করিস না.." বললেও সীমা লক্ষ্য করল স্বপ্নার গলায় বেশ খুশীর সুর।
" আচ্ছা বল বল কি বলবি।"
" এই মাসের পঁচিশ তারিখে ভেবেছি শান্তার এবারের জন্মদিন পালন করবো। "
" এই মাসের পঁচিশ তারিখ, এমা রে আমরা যে সবাই মিলে সিমলা যাচ্ছি। টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছে। যাওয়া হবে না মনে হয়। এসে দেখা করে আসব। "
" যা ভালো বুঝিস। তা কে কে যাচ্ছিস। "
" ও ছেলেরা আর আমি।" বললো সজ্জভাবে।
" ও মানে? "
" ও মানে আবার কে বাবুদের বাবা।"
" তা তোদের বিবাহ বিচ্ছেদ?"
" বললাম না জানিস তবে অর্ধসত্য.. "
" ও আচ্ছা.. "
স্বপ্না বললো " তোর সময় থাকলে বলি।"
না বলেও কি ভেবে সীমা বললো "বল.. "
" দীঘা থেকে ফিরে বিশাল অশান্তি হয়, স্বামী আমাকে ধাক্কা দিতে গেলে আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে যাই, হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হতে হয়। এবারে ননদ বড় ক্ষেপে যায়। আমাকে হাসপাতাল থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়, ছেলেরাও পিসির বাড়িতেই থেকে যায়। আমাকে কাছছাড়া করে না। ননদ আমাকে Divorce File করতে বলে। আর কথা দেয় শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু একবারও আমার স্বামী আদালতে আসে না। শেষে সবাইকে লুকিয়ে একদিন দেখা করতে এসে পায়ে পড়ে যায়। বলে আমাকে ছাড়া ও বাঁচতে পারবে না। আমি যা বলব সেটা শুনে চলবে। ছেলেরা ওর চোখের মনি। ওদের থেকে দূরে থাকা কোনো দিনও সম্ভব না। ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে শেষবারের জন্য ক্ষমা করেছিলাম। মাস পাঁচ হয়ে গেল ভালো আছি৷ ও আমার এখন খেয়াল রাখে। ঘুরতে নিয়ে যায়। আমার নামে একটা Sugar and Spices এর Outlet খুলে দিয়েছে৷ আমি মাঝে মাঝে গিয়ে বসি। ও আমাকে বলে এটা তোমার দোকান। তোমার অধিকার কেবলমাত্র এই দোকানে। বিশ্বাস কর অনেক দিন পরে সত্যি ভালো আছি। "
সীমা শুনে বললো " খুব ভালো খবর, দেখ আসতে পারলে আসিস। আমি রাখলাম রে। ভালো থাকিস। "
বলে ফোনটা রেখে দেয়৷ বাকিদের সাথে যে তাকেই যোগাযোগ করতে হবে।
চলবে..
