STORYMIRROR

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Tragedy Inspirational

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Tragedy Inspirational

One Trip (পর্ব - ছয়)

One Trip (পর্ব - ছয়)

5 mins
172

খাওয়ার শেষে সবাই গোল হয়ে বসলো, কাল কোথায় কোথায় যাবে সেটা ঠিক করা জন্য। ঠিক হলো দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র, উদয়পুর আর তালসারি সমুদ্র সৈকত যাবে। সময় থাকলে অমরাবতী পার্কে ঘুরে আসবে। সবাই ঘুমিয়ে পড় বলে একে ওকে খোঁচাতে লাগল। মালা হঠাৎ স্বপ্নার উদ্দেশ্যে বল্লো "তোর ছেলেরা কত বড় হলো? "

"ক্লাস এইটে রে.."

" কোন স্কুল? "

" মালদা রামকৃষ্ণ মিশন।"

" বাঃ ভালো স্কুলে দিয়েছিস।"

" তা ঠিক। "

" দুইজনেই এক ক্লাসে কেন রে?"

অর্চনার প্রশ্ন শুনে মালা হেসে বলল "যমজ দেখে।"

" ও তোর ছেলে যমজ? "

" তুই কেমন বোকা বোকা প্রশ্ন করিস আজকাল অর্চি। "

ছোটবেলার নামটা শুনে অর্চনা এক্কেবারে চুপ করে গেল। তারপর বলল " তোদের সেই অর্চি আর নেই রে, ওর পরিচয় বাড়ির বড় বৌ। আমিও তো খুব একটা লেখাপড়ায় খারাপ ছিলাম না, কিন্তু হলে কি হবে বাবার কারখানাটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ করে সবটা অন্ধকার মনে হলো। বাবার আয় খুব না হলে খারাপ ছিল না, তাছাড়া Over Time এও পয়সা ছিল। সব বন্ধ হয়ে গেল হঠাৎ করে। পড়াশোনায় ইতি টেনে টিউশনির সাথে সাথে একটা কাপড়ের দোকানে কাজ নিলাম। দুই ভাই ছোট, ওদের লেখাপড়া আছে। মা তখন বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করলো। আমরা রাতে সবাই মিলে ঠোঙা তৈরী করতাম,বাবা দোকানে দিয়ে আসতো। এর পাশাপাশি একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করত। বাবাই আমাকে এই কাপড়ের দোকানে ঢুকিয়ে দেয়। বাপবেটি এক দোকানেই ছিলাম। দুই ভাইয়ের একজন উচ্চমাধ্যমিক দিলো,অপরজন মাধ্যমিক। ওরা আর্মিতে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে লাগল। ততদিনে বছর তিন কেটে গিয়েছে। হঠাৎ গঙ্গারামপুর থেকে একটা সম্বন্ধ আসলো, গৃহস্থ ঘর ঘরোয়া মেয়ে চাই। বাবা দেখতে গেল ছেলের বয়স বেশ বেশি। কিন্তু কোনো দেনা পাওনা নেই। ভাত কাপড়ের অভাব হবে না দেখে বিয়ে দিয়ে দিলো। আমি বিয়ে করতে চাইনি, ভাই দুটো একটু দাঁড়াক তারপর না হয় বিয়ে করব। কিন্তু মা রাজি হলো না। খাটুনি করতে করতে আমার শরীর ভেঙে গিয়েছিল, ভালো পাত্র পাওয়া মুস্কিল। পুরুষরা তো নারী শরীরের মাংসটাই পছন্দ করে। যখন পছন্দ করেছে ওরা আর দেরি করলো না মা-বাবা।

বিয়ে হয়ে গেলাম বাড়ির বড় বৌ হয়ে। বাড়িতে কুড়ি একুশজন লোক। গোরু বাছুর মিলে ১০ টা। বাড়িতে ছাগল পর্যন্ত পোষে। তবে মুরগী খাওয়া বা পোষার চল নেই। তবে হাস আছে কিছু। জমি বেশি নেই, তবে আধি নিয়ে জমি চাষ করে। বাড়িতেই ধান সিদ্ধ করে। আমি ভোরে উঠে খেটে চলতাম, কাজ শেষ হতোনা। রাত সাড়ে এগারোটায় সব মিটিয়ে শুতে যেতাম। শরীর ভেঙে আসতো। তখন দেখি স্বামী জেগে আছে, আমার ইচ্ছে করত না এসবে। স্বামী রাগ করত অনেক সময়, অনেক সময় বুঝতে পারত। শরীর খারাপ হবারও উপায় ছিল না। এমনও হয়েছে জ্বরের শরীরে কাজ করে চলেছি। "

" ইস্, তোর স্বামী কিছু বলত না?"

" মানুষটা বাড়ি থাকত কতটুকু, ও যে বাড়ির বড় ছেলে। ওর কাঁধেই ভাড় সব। জমির চাষের পাশাপাশি, হাঁটে হাঁটে যেতো ধান বিক্রি বা ফসল বিক্রি করতে। কিন্তু হাতে টাকা আসার সাথে সাথেই সংসারের পেট ভরাতে হাওয়া হয়ে যেতো। মাঝে মাঝে আমার স্বামীর বুকের দিকে তাকিয়ে বুকটা ফেটে কান্না আসতো। এমন করে চললো বেশ কিছু বছর। আমি তখনও মা হতে পারিনি।এতো কিছু করার পরেও শুধুমাত্র আমাদের সন্তান হয়নি এই অজুহাতে আমাদের মাত্র বিঘা তিনেক জমি দিয়ে, বাকি আঠারো বিঘা জনি তিন ছেলেকে আর ২ বিঘা জমি আমার শ্বাশুড়ির নামে লিখে দিলেন শ্বশুর। উনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন, কোনো কাজ করতে চাইতেন না। আমিও জোর করতে পারতাম না। মনে হতো সব দোষ আমার , কারণ উনাকে আমাকে ছেড়ে নতুন একটা বিয়ে করতে বলেছিল ওরা। উনি রাজি হয়নি। জমি ভাগ করে দেবার পরেও আগের মতোই আমি একা হাতে বাড়ির সব কাজ করে যেতাম। বাকি তিন বৌয়ের বাবারা পণ দিয়েছিল আর ওদের ছেলে মেয়ে ছিল, তাই ওদের কিছু বলত না। আর ওদের বাবারা আসলে সম্মান পেতেন। কিন্তু আমি গরীব বাবার মেয়ে আর নিঃসন্তান তাই আমার পরিবারের লোকেরাও এই পরিবারে সম্মান পেতেন না৷ তাই ওরা আসাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমিও কাজের চাপে যেতে পারতাম না। উনি আগে বাইরে বাইরে বেশি থাকতেন। ইদানীং বাড়িতে থেকে সব লক্ষ্য করছিলেন। একদিন হঠাৎ সবার সামনে বলে দিলেন 'আমার স্ত্রী আর এতো কাজ করতে পারবেনা। যদি সবার স্ত্রী সমানভাবে কাজ করে তবে ঠিক আছে। '

কেউ রাজি না হওয়াতে উনি আমার হাত ধরে আলাদা হয়ে গেলেন। আর জানিয়ে দিলেন আমাদের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি চাইলে উনার সাথে থাকতে পারেন। বেশি দিন গেল না,দেখতে দেখতে এক সপ্তাহের মধ্যে সব ভাই আলাদা হয়ে গেল। যে বৌদের এতো মিল ছিল, এই এক সপ্তাহে ওদের কোন্দলে বাড়ি সবসময় মাথায় উঠে থাকত৷ আমি গিয়ে ওদের সাহায্য করব উপায় ছিল না,স্বামী দিব্যি দিয়ে রেখেছিলেন। এরপর আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির পালা, ওরাও সবার কাছে ভারী হয়ে উঠলো। কিন্তু শ্বাশুড়ির দুবিঘা জমির লোভে শ্বাশুড়িকে প্রথমে প্রাধান্য দিলেও সেটাও বেশিদিন চললো না। শ্বাশুড়ি-শ্বশুরের হাত ধরে আমার স্বামী আমাদের বারান্দায় এনে খেতে বসিয়ে বললো 'এখন থেকে তোমরা এখানেই খাবে।' তারপর থেকে আমাদের সাথে রয়েছে। এরপর সবাইকে অবাক করে আমি গর্ভবতী হলাম। শ্বাশুড়ি আমার এমন যত্ন শুরু করলেন আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। বাবা-মাকে উনি নিজে খবর পাঠালেন।বাবা-মা এতোটা খুশী হলেন, আগের অপমান সব ভুলে ছুটে এলেন এক ব্যগ খাবার নিয়ে। প্রথম সন্তান মায়ের কাছে হয়, মা নিয়ে আসলেন আমাকে। শ্বাশুড়ি মাও পাঠিয়ে দিলেন, উনি মনে মনে কেমন ভয় পাচ্ছিলেন ওখানে রাখতে।স্বামীকে প্রতি সপ্তাহে পাঠিয়ে দিতেন। সন্তান কোলে আসার খবর শুনেই উনি আগের মতো ব্যবসা শুরু করলেন। আমার কোল জুড়ে আসলো আমার মেয়ে অর্ণা, ভেবেছিলাম কেউ খুশী হবে না৷ কিন্তু ওর বাবা কোলে নিয়ে কি খুশী। অর্ণার পরেই কোল জুড়ে এলো অর্ণব আর অচিন্ত্য। তবে ভাগ্যে সুখ বেশি দিন সইলো না। আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লো। বাইরের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলো। বাড়ির সামনে মুদির দোকান চালু করেছি। চলে যায় কষ্টেশিষ্টে। মেয়েটার পুলিশ হবার ইচ্ছে আর ছেলে দুটো কি করবে বুঝতে পারিনা। আমার ভাই দুটো আর্মিতে চাকরি পাওয়ার পরে থেকে অনেক সাহায্য করেছে আমাদের। মেয়েটার পড়াশোনা বড় ভাই দেয়৷ছেলে দুটোর টুকটাক খরচ ছোট ভাই দেয় আর ছেলে দুটোকেও বলছে আর্মিতে চাকরির চেষ্টা করতে।ওরা কি করবে বুঝতে পারিনা৷ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে এবার ছোটটা আর বড়টা দেবে উচ্চমাধ্যমিক আর মেয়েটা কলেজে পড়ে। "

শান্তা এবারে হেসে বলল "এমন করে বলছিস যেন তারা কত্তো বড়। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েগুলো। ঠিক দাঁড়াবে চিন্তা করিস না। "

অর্চনা ছোট্ট করে শ্বাস ছেড়ে বললো "আশীর্বাদ কর।"

" সামনে পরীক্ষা তুই চলে এলি?"

" আমি লেখাপড়ার কি বুঝি? আর ওরা তো সবাই হোস্টেলে থেকে পড়ে। "

" ও তা বেশ, কিন্তু আসলি যে তোর স্বামী শ্বশুর বাড়ির কেউ কিছু বললো না?"

" বাকিরা কেউ কিছু জানেনা, অর্ণার বাবাই জোর করে পাঠালো। বললো 'তোমায় তো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারিনি, যাও ঘুরে এসো,এদিকটা আমি সামলে নেবো।' আমি আর কি বলি?"

স্বপ্না এবারে অর্চনার পাশে বসে বললো "তোর কথা শুনে বুঝতে পারছিনা আমি নিজেকে সুখী বলব কি দুঃখী। "

স্বপ্নার কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো।

স্বপ্না নিজের মনেই বললো " অর্থই কি সুখ আনে? আর অর্থাভাবে কি সুখ চলে যায়?"

চলবে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy