STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

ইলিশেগুড়ি

ইলিশেগুড়ি

4 mins
128

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অতোটা পথ হেঁটে আসা ঠিক হয়নি। দুই টাকা বাঁচাতে গিয়ে লেট হয়েছিলো বেশ।বসে মেজাজ ভালো ছিলো।বস বকাঝকা করলেও চাকুরীটা ছাড়িয়ে দেওয়া হুমকি দেয় নি আজ। পরে বুঝলাম বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করে ইলিশ মাছের স্বাদ পেয়েছেন উনি। কিন্তু ভালো ইলিশ কিনতে জানেন না উনি , তাই আমাকে যেতে হবে তার সাথে ইলিশ কিনতে। বড়লোকের মেজাজ একই ইলিশ ১৫০০ টাকার জায়গা ২০০০টাকা বলতেই নিয়ে নিলো সেটাই নিয়ে নিলো আমার বস। দোকানদার আমার চেনা আসলে। তাই ইসারায় বলেন একটু পরে আসতে আমায়। কেনা দামে দিতে চাইলো আমাকে একটা মাছ। তাও কম দাম কোথায়? ৭০০টাকা। অনেকের কাছে কম হলেও আমার কাছে অনেক বেশি।


করোনা চলে গেলেও স্কুল খুলে নি। স্কুল মাইনে সাথে বাড়তি খরচ জুড়ে গেছে online ক্লাসের জন্য মোবাইল রিচার্জ। বাজারে সব কিছুর দাম আগুনের মতো, সংসার চালাতে হিম সিম খেয়ে যাচ্ছি। আট তারিখ হয়ে গেলো মাইনে দিলো না বস। ওনার শালির বিয়ে ছিলো তাই মাইনে বোধহয় আরো দুই চার দিন দেরী করবে। মুখ ফুটে মাইনে চাইতে পারলাম না। ভয় করে চাকুরী বাজারতো খুব খারাপ।


যাইহোক বসের গাড়িতে ফেরাতে বাস ভাড়াটা বেঁচে গেলো এটাই যা। কিন্তু খারাপ খবর। বোস বাবু ঘরে ডাকলেন। খয়রী খাম হাতে দিয়ে বলেন "রাজুকে উৎপল বাবু কোচিং ভর্তি করেদিলাম। আপনি পড়ান ভালো কিন্তু প্রাইভেট টিউটর রাখার আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। আপনি কিছু মনে করবেন না , স্যার। তবে রাজু বলছিলো ওর কিছু বন্ধু বান্ধব আপনার কাছে পড়তে চায়। আপনি যদি কোচিং সেন্টার খুলতে চান , তাহলে আমার ছাদের ঘরে পড়তে পাড়েন। আমার শালি উৎপল বাবুর ওখানে পড়ায়। ও এখানে কিছু সাবজেক্ট পড়িয়ে দেবে। কোচিং সেন্টার খুলে লাভ বেশি। অল্প সময়ের অনেক ছাত্রকে পড়ানো যায়..."


কিছু না বলে চলে এলাম। বৃষ্টি পড়ে ঝির ঝির করে এটা বলে বোধহয় ইলিশে বৃষ্টি বা ইলশাগুঁড়ি।গুঁড়ি গুঁড়ি বা ঝিরঝিরে বৃষ্টির ধারাকে বলে ইলশেগুঁড়ি বা ইলশাগুঁড়ি। 'ইলশে' বা 'ইলশা' শব্দ এসেছে ইলিশ থেকে। নদীতে যখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে, জেলেদের জালে তখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। সে থেকে শব্দটির উৎপত্তি। বর্ষা সময় সাগর থেকে নদীতে ইলিশ মাছ গুলো আসে নিরাপদে ডিম পাড়তে । আর ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরে যায় জেলেদের জালে। ঠিক আজকাল কার ছেলে মেয়েদের মতো ঝাঁক ঝাঁকে কোচিং সেন্টারে ভিড় করছে। নোট সাজেশান , পেয়ে বছর বছর পাশ করে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু কি শিখলো কি বুঝলো তার নিজেরই জানে না। ইলিশ মাছকে নাকি জলে থেকে উঠলেই জীবন চলে যায়। ঠিক আজকাল ছেলে মেয়েরা ও স্কুল কলেজ থেকে বেরিয়ে আর সব পড়াশোনা ভুলে যায়।


হঠাৎ দেখি কে একজন ঢিপ করে প্রনাম করলো। ও উৎপল। উৎপল বললো" চলেন মাষ্টার মশাই একটু চা খাবেন। "

অন্যদিন না করে দিতাম আজ না করলাম না। জানি ও আবার ওর কোচিং সেন্টারে আমাকে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করবে। শিক্ষক পেশা হিসেবে নিয়েছি ঠিকই কিন্তু বানিজ্য করণ করতে চাই না কখনো মন থেকে।

চা খেতে খেতে দেখলাম একটা মা একটা পাউরুটি কিনে চায়ে ভিজিয়ে বাচ্চাটাকে খাওয়াতে চাইছে। খাচ্ছিলো না দেখে একটু মারধর করতে খেয়ে নিলো বাচ্চাটা। মা জানে বাচ্চার খিদেটা মেটাতেই তাকে হবে যে করেই হোক। মাতো আমাদের প্রথম শিক্ষক চলতে শেখায় জীবনে‌। মনে পড়লো এইরকম বর্ষার দিনে গরম ভাত সাথে ইলিশ মাছ ভাজা খেতে দিয়েতো মা ।বছরে এক বার দুই বার ইলিশ মাছ হতো আমাদের বাড়িতে কিন্তু এই ইলিশ মাছ খাওয়া জন্য আমাকে প্রতিবছর ভালো রেজাল্ট করতে হয়তো। প্রতিবছর ভালো রেজাল্ট করে আমার ছেলেটাও কিন্তু ওকে ইলিশ মাছ দেওয়া হয় না কখনো।


" মাষ্টার মাশাই কি ভাবলেন , পড়াবেন আমার নতুন ব্রাঞ্চে " উৎপলের কথায় আমার জ্ঞান ফিরলো।

আমি হঠাৎ করে বললাম " আমার সাথে একটু বাজার যাবে উৎপল । তুমি যদি অর্ধেক ইলিশ কিনে নাও আমি অর্ধেকটা কিনে নিতে পারি।"

ও রাজী হয়ে গেলো কিন্তু ইলিশের দামটা ও নিতে চাইলো না। বললো গুরু দক্ষিণা হিসাবে নাকি ঐ মাছটা আমার উপহার। আমি বলেছিলাম তুমি তো আমাকে মাস মাইনে দিতে। ও বললো " কয়েকটা টাকা দিয়ে শিক্ষাকে কেন যায় না। জানি আমাকে আমাকে খারাপ ভাবেন কোচিং সেন্টার চালাই বলে। কিন্তু বিশ্বাস করুন যারা শিখতে চায় তাদের শেখাই , এখন আর কেউ শিখতে চায় না।"


মনে মনে ভাবলাম সত্যি আগে মাষ্টার মশাইরা সাথে কত সুমধুর সম্পর্ক ছিলো ছাত্রদের। ছাত্ররা কি পোশাক পরবো, কেমন চুল রাখবো তাও উনারা ঠিক করে দিতো। ছিপে মাছ ধরার দেখেছেন। অনেক সময় নিয়ে একটা মাছ ধরে। একটা ছাত্র তৈরি করতে অনেক সময় দিতেন, একটা মাস্টার মশাই তখনকার দিনে। আমার মাস্টার মশাই আমাকে একটা ঘড়ি দিয়েছিলেন আমি পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করায়। আমি ওটা দিয়ে দিলাম। আর বললাম " মোবাইলে যুগে হয়তো কেউ ঘড়ি ব্যবহার করে না কিন্তু শিক্ষক থেকে পাওয়া উপহারে চিহ্ন হিসেবে এর মূল্য অনেক।এটা তুমি পরো সব সময়,,,"। ও চলে গেল।


অন্ধকারের মধ্য চকচক করছে ইলিশ মাছের টুকরোগুলো । আকাশটা একটু মেঘ মুক্ত হয়েছে । তারা গুলো জ্বল জ্বল করছে আকাশময়। এই অন্ধকারে জাল নিয়ে নদীতে নামবে জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে, ইলিশ মাছ ধরা দেবে ওদের জালে। ঠিক আজ যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র ধরা দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। মনে মনে বললাম , মাষ্টার মশাই ঝাঁক ঝাঁক ইলিশ ধরা পড়লেও ইলিশের দাম বেশি। সারা জীবনের শিক্ষা দিয়ে লাভ নেই দাম পাবে না। ইলিশ মাছের দাম এতো কারণ বাজারে সে কম সময়েই থাকে। তাই শিক্ষা দাও ইলিশ মাছের মতো , স্বাদ গন্ধ ভরপুর। পুষ্টি গুণ নিয়ে মাথা ঘামাতে যেও না অতো আর এখন।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract