যেদিন ছেলেটা ফিরলো
যেদিন ছেলেটা ফিরলো
সোমনাথের বিয়ের বৌভাত। আমার বড় শালীর ছেলে সোমনাথ। অনেক আলো , অনেক সাজ। গিন্নি সেজেছে ,খোঁপায় বকুল ফুলের মালা ,একটা হালকা গোলাপি টিসু বেনারসী। কে বলবে ছেলে বিলেতে মেয়ে কলেজে। আমিও সেজেছি , পাঞ্জাবি পায়জামা , একটু সেন্ট গায়ে।
আমার কাজ শান্তি রক্ষা। ভায়রাভাই দিলদরাজ , তবে একটুতে চটে যান। বাজার করতে ভালোবাসেন তাই সব বাজার একাই করেছেন। ঠাকুর জানালো ফিশ ফ্রাই এর জন্যে লেড়ো বিস্কুট আসেনি। আমি একটু আগে কুরুক্ষেত্র আটকিয়েছি। বাজার থেকে কিনে। কিন্তু খবরটা দাদার কানে পৌঁছলো ,আর সে কী উত্তেজনা। প্রায় ১০০ মিটার রেস করে তিনি বার করলেন দুটো বড়ো ঠোঙা লেড়ো বিস্কুটের গুঁড়ো। আমিও রেডি , ডিফেন্সে খেলতে। কেনা লেড়ো পাশের ফ্ল্যাটএ চালান। শান্তি আবার আসিল ফিরিয়া।
এত আনন্দের মাঝে একটা শূন্যতা। ছেলেটা ম্যাট্রিক করে সেই যে বিলেত গেল , কিছুদিন আগে ডক্টরেটটাও শেষ। কদিন আগে জানালো ,ভালো কাজের দুটো অফার পেয়েছে , ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সে। মেনে নিয়েছি ওখানেই থাকবে। মাঝে মাঝে দেখা হবে।
আজ সকালেই গিন্নী বললেন ,"দ্যাখো সোমনাথকে , সেই ছোট্ট ছেলে আজ নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে। মা বাবা বোন ভাই নতুন বউ , সুন্দর পূর্ণ জীবন।" ওর না-বলা কথা মনটাকে উদাস করেছিল। সামলে নিয়েছি আমরা দুজন।
প্রথম ব্যাচে কনের বাড়ীর যারা দূর থেকে এ
সেছেন তাদের বসানো হয়েছে। আমরা দুজনে তদারক করছি। আমাদের হাসিমুখ, মাঝে মাঝে একটু চুটকি , মন দিয়ে সবাইকে যত্ন করছি।
হটাত শুনি বেশ হুল্লোড় , বুঝলাম আমার দাদা-বৌদি ,ছোট ভাই -বৌ হাজির। হুল্লোড় আর দাদা-বৌদি একাত্মা। আমাদের চোখে আনন্দ , কথা বলতে হয় না, একটু গর্ব। আবার মন দিলাম সামনের অতিথিদের দিকে।
পেছন থেকে মজায় ভরা গলা,
" আমাকে বাদ দিয়ে সোমনাথদাদার বিয়ের ফিশ ফ্রাই ? এটা কী উচিত হচ্ছে ?"
গলাটা কাছের, কানটা অবিশ্বাসের। সাহস করলাম না পেছনে তাকাতে। গিন্নি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সাহস চাইলো।
আবার সেই গলা ,"আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা এখানে পরে আর বিদেশে চাকরি করে। তাই ভাবলাম আমিতো বিদেশে পড়া শুনা করলাম , চাকরিটা নাহয় দেশেই করি।"
অজান্তে, সব লজ্জা ভুলে গিন্নি আমার হাতটা আঁকড়ে ধরলো। আমরা কেমন ছোট্টো বাচ্ছার মতো হাত ধরাধরি করে ঘুরে দাঁড়ালাম।
সামনে একগাল হাসি, সাহেবের মত রং ,পায়জামা-পাঞ্জাবি গায়ে , ঝলমল বুদ্ধি দীপ্ত মুখ , চোখ দুটো বহু বছর আগের দুস্টুমিতে ভরা।
বিয়ে বাড়ীর হৈ চৈ অনেক দূরে সরে গেছে , আলোগুলো কেমন ঝাপসা -আমরা দুই মধ্য বয়সী শিশু হাত ধরা ধরি করে দাঁড়িয়ে।