উড়ালপঙ্খী
উড়ালপঙ্খী


পুরো এলাকার লকডাউন। বাজার ঘাট সব বন্ধ। এলাকাটা থেকে বাজার অবশ্য অনেক দূরে। সেখানেই যেতে গেলে লোকজনকে সাইকেলে বা অন্য কোন মাধ্যমে যেতে হয়। তবে এখানকার লোকজন ভীষণ গরিব। বেশিরভাগ লোকজন হেঁটেই যায়। পাড়ায় একমাত্র সাইকেল রয়েছে রবিনের।
এরমধ্যে সকলে বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে। সবাই এক প্রকার গৃহবন্দী। সরকার থেকে অবশ্য সাহায্য আসছে। কিন্তু বাদবাকি জিনিসগুলো তো আনতে হবে। তার জন্য তো বাজারে যাওয়াই দরকার। তাই এখানকার লোকজন বিপদে পড়েছে।
এই সময় রবিনই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সে কোথায়? হরেন মাহাতো রবিনকে খুঁজতে বের হলো। তার বাড়িতে সে নেই।
'নেশা করে কোথাও পড়ে নেই তো?' হরেন ভাবল।
তারপর তাকে খোঁজার জন্য এদিক সেদিক ঘুরলো। অবশেষে তাকে পাওয়া গেল। বাঁশ বনের ধারে পড়ে আছে। শরীর থেকে এখনও গন্ধ বের হচ্ছে যাতে বোঝা যায় সে নেশা করেছে। হরেন মাহাতো তাকে অনেক ধাক্কাধাক্কি করল। তারপর একটু হুশ ফিরল যেন।
'ওরে রবিন ওঠ। কত নেশা করেছিস আজ? এদিকে আমাদের যে সর্বনাশ।' হরেন বলল।
নেশার ঘোরেই রবিন বলল,' কিসের সর্বনাশ?'
'আরে পাড়ার লোকেদের অনেক জিনিসপত্র দরকার। বাজারে যেতে হবে তো। তা তোর সাইকেলটা না হলে হবে কি করে?' হরেন মাহাতো বলল।
'সাইকেল, সাইকেল তো ফুস।' বলে উপর দিকে আঙুল তুলে দেখালো রবিন।
'তার মানে কি বলছিস তুই?' হরেন বলল।
'আরে সাইকেল দিয়ে কি হবে। নেশাই জীবনের সব। সাইকেল বেঁচে যে পয়সা পেয়েছি তাই দিয়েই তো নেশা করেছি।' নেশা জড়ানো কণ্ঠে বলল রবিন।
হরেন মাহাতো জানে রবিন নেশা করে। কিন্তু তার জন্য সাইকেল বিক্রি করবে সেটা ভাবতে পারে নি। কেননা সাইকেলটা তার কাছে উড়াল পঙ্খী। সাইকেলটা চালানোর সময় তার মনে হয় রাস্তায় উড়ে চলেছে। সেই প্রাণের প্রিয় সাইকেলটাকে সে বিক্রি করেছে। নেশার জন্য সে তার প্রিয় উড়ালপঙ্খীকে উড়িয়ে দিয়েছে কোথায়? হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো হরেন মাহাতো।