Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller

ট্রেন যাত্রা (তৃতীয় পর্ব)

ট্রেন যাত্রা (তৃতীয় পর্ব)

8 mins
202


দিন তিনেক হলো ফিরে এসেছি কর্মস্থলে, বাড়িতে মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছি। ফোন করতে ইচ্ছে, সাহস কোনোটাই হয়নি। কেমন একটা অজানা অদেখা শক্তির উপস্থিতি আমার চারিদিকে রয়েছে, অনুভব করতে পারিনি আমি ঠিকই, কিন্তু আমার আশেপাশের মানুষের জীবনে প্রভাব লক্ষ্য করেছি।যেমন সেদিন ট্রেন না ধরে বাসে আসলাম, একটা ছেলে আমার সাথে কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, আমি কিছু বলিনি ঠিকই, কিন্তু যখন আমাদের বাস কৃষ্ণনগরে থামলো রাতের খাবার সারতে, কিভাবে যেন ছেলেটা পড়ে গিয়ে কপাল ফাটালো, কি করে কাণ্ডখানা ঘটালো কে জানে, ছেলেটা একটা কথাই বলে যাচ্ছিল কে নাকি পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে। তবে সেটা নিয়ে আমি তেমন কিছু ভাবিনি, তবে কালকে বাসে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে একটা মধ্যবয়সী প্রৌঢ়া আমার গায়ে হাত দিচ্ছিলো, আমি কিছু বলার আগে দেখি গাড়িটা এমন করে ব্রেক কষলো, কারো তেমন কিছু না হলেও লোকটার হাত কেটে গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করলো। আমি দেখে চুপ করে থাকতে না পেরে ব্যাগ থেকে আমার ফার্স্ট এইড বাক্সটা বের করে উনার হাতের ক্ষতটা পরিস্কার করে ব্যাণ্ডেজ় বেঁধে দিলাম, মুখ তুলে দেখি লোকটি নিজের যন্ত্রণা ভুলে লজ্জায় মাথা নিচু করে রয়েছেন। আমি এই স্টপেজেই নেমে গেলাম, আমার গন্তব্য পরের স্টপেজ। এতোটুকু হেঁটে চলে যাবো। কলকাতায় স্টপেজগুলো খুব একটা দূরে হয়না। তখনও এই বিষয়টা মাথায় আসেনি, কত কি ঘটে চলছে সারাদিন। তবে আজকে অফিসে এসে আমার বস যখন বিনা কারণে আমাকে অপমান করলো, আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি এই ডিপার্টমেন্টে সেলসে আছি। আমি এই কোম্পানিতে প্রথম থেকে আছি দেখে ছেড়ে যায়নি ভালো অফার পেয়েও। তাছাড়া আমার হাত ধরে আমাদের কোম্পানি সারা পঃবঃ -এ ছড়িয়ে গিয়েছে। সেই কোম্পানির নবতম মালিক আমাকে যারপরনাই বলে অপমান করলেন সামান্য একটা ছোট্ট অর্ডারের কারণে।এমনকি এটাও বললেন না পোষালে কাজ ছেড়ে, উনার বাবা আমাকে কতটা স্নেহ করতেন,আমিও করতাম। আমি আমার ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিজের কেবিনে চলে এলাম, চারিদিকে কেবলমাত্র আঁধারই মনে হলো। চুপ করে চেয়ারে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে রইলাম। ইদানীং আমার ঠিকমতো ঘুম হচ্ছেনা রাতে। সামান্য ঘুম এসে গেল হয়তো। এমন সময় আমার একজন সহকর্মী আমার কেবিনে ছুটে এসে আমার নাম ধরে ডাকাতে আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে বসি।

জিজ্ঞেস করি " কি হয়েছে?

" আপনি বাইরের সোরগোল শুনতে পাননি? বাইরে এসে দেখুন।"

আমি উনার কথা শুনে বাইরে এসে দেখি আমাদের নতুন বসের ঘরের সামনে ভীড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি অবাক হয়ে সেদিকে এগিয়ে যাই। ঘরের সামনে এসে দেখি উনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রয়েছেন। আমি তাড়াতাড়ি উনার মাথা উঁচু করে ধরি, তারপর জল আনতে বলি। চোখে জল দিয়েও জ্ঞান ফেরেনা। বাকিরা বলে তারাও চোখে জল দিয়েছে আগেই। আমি নার্ভের গতি পরীক্ষা করি, আমি এটা শিখেছি আমাদের স্কুলের স্যারের কাছে। উনি আমাকে বিনা পয়সায় পড়াতেন। জীববিজ্ঞানের শিক্ষকতার পাশাপাশি বাড়িতে হোমিওপ্যাথি চর্চা করতেন। আমি উনার প্রিয় ছাত্রী ছিলাম দেখে আমাকে লেখাপড়ার পাশাপাশি সাধারণ চিকিৎসা করা শিখিয়েছিলে। আমি দেখলাম উনার রক্তচাপ বেশ রয়েছে, অন্যের সাহায্য উনাকে বসিয়ে দিলাম। দেখলাম নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়েছে। সেটা আমি তুলো দিয়ে পরিস্কার করে দিলাম। তারপর হাতে পায়ে মালিশ করতে শুরু করলাম আর একজন সহকর্মীকে বললাম ডাক্তারকে খবর দিতে। তারা জানালো খবর দেওয়া হয়েছে, এসে পড়বেন। আমি বল্লাম কেউ উনার মাথায় ভিজে কাপড় ধরুক। উনারা শুনে তাই করলেন। এরই মধ্যে ডাক্তার বাবু এসে গেলেন, তারপর উনাকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে একটা ইনজেকশন দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন উনার প্রাথমিক চিকিৎসাটা কে করেছে। সবাই আমার কথা বলায় তিনি বললেন "খুব ভালো করেছেন না শুইয়ে। "

কিছুক্ষণ পরে উনার জ্ঞান ফিরলে আমি নিশ্চুপে ওই ঘর ছেড়ে আমার কেবিনে চলে এলাম। তারপর কি কথা হয়েছে জানিনা। আমার বিকেলে একটা নতুন ক্লাইন্টের সাথে মিটিং ছিল। তাই আমি বেড়িয়ে গেলাম, কলকাতার রাস্তা, এখন না বেড়ালে ঠিক দেরি হয়ে যাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে। কাজটা ভালো ভাবেই মিটলো। মনে হয় এই অর্ডারটা পেয়ে যাবে আমার কোম্পানি। আমি মেইল করে দিলাম আমার সম্পূর্ণ রিপোর্টটা। আমার ফোন করে জানতে ইচ্ছে করছিলো কেমন আছে উনি। তবুও করলাম না। আমি আমার কর্তব্য করে দিয়েছি, চাকরি ছেড়ে দেবো ভেবেও ক্লাইন্ট মিটিংটা সেরে অর্ডারটা এনে দিয়েছি কোম্পানিকে। আমি কয়েকটা কোম্পানিতে আমার সিভি পাঠিয়ে দিলাম, ফোন করে রাখলাম কয়েকজনকে। সাথে সাথে চাকরি পাওয়া কঠিন বটে, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সব কাজ সেরে যখন রান্নাঘরে গেলাম আলুভাতে চাপাবো ভেবে, গিয়ে দেখি জল নেই। এই একটা ঝামেলা, মালিকেরা সবসময়ই জল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা করে। ফোন করলাম, ফোন ধরলেন না। উনি উপরের তলায় থাকেন,গেলাম কলিংবেল বাজিয়ে বলতে। উনি নেমে এলেন, উনি বললেন " এখন পাম্প চালাতে পারবো না?"

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেম "কেন?"

" তুমি একা মানুষ থাকো, এতো জল খরচ কোথা থেকে হয় শুনি? আর একটা কথা তোমাকে অন্য বাড়ি খুঁজে নিতে বারবার বলেছি, একা যুবতী মেয়ে আমি রাখবোনা।"

বলে দরজাটা দরাম করে মুখের উপর বন্ধ করে দিলেন আমি কিছু বলার আগেই। আমি চলে আসছি দেখি ভেতর থেকে একটা আর্ত চিৎকার। ফিরে যেতে পারলাম না, বাইরে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম " কি হয়েছে আপনার কাকাবাবু? "

তিনি কিছু উত্তর দিলেন না, আমি যাব কি যাব না ভাবছি। এমন সময় দেখি উনার স্ত্রী আর পুত্রের ছোটাছুটি। আমি আবার বাইরে থেকে বললাম "কি হয়েছে? কোনো সাহায্য লাগবে?"

আমার গলা শুনে কাকাবাবুর বছর কুড়ির ছেলে দরজা খুলে আমাকে দেখে বললো "দিদি আপনি আছেন ভালোই হয়েছে, বাবা সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে। কি করব বুঝতে পারছি না।"

আমি ওর মুখে কথাটা শুনে ছুটে গেলাম ভেতরে। দেখিয়ে কাকাবাবু মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছে। নাড়ি ধরে জানালাম কিচ্ছু হয়নি। জ্ঞান হারিয়েছেন উনি। জল নিয়ে আসতে বললাম। চোখে মুখে জল ছিটিয়ে দিতেই উনি চোখ মেললেন। আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন। আমি বললাম " এই জলটুকু খেয়ে নিন।"

তিনি কথা না বাড়িয়ে এক চুমুকে সম্পূর্ণ জলটা শেষ করলেন।

আমি স্নেহ মেশানো গলায় জিজ্ঞেস করলেম " কাকাবাবু আপনার সাথে তো আমার এই কথা হলো,হঠাৎ কি হয়েছিল আপনার? "

তিনি উত্তর দিতে পারলেন না। আমি বললাম " থাক এখন উত্তর দিতে হবেনা, ভাই তুমি কাকাবাবুর ওই পাশে দাঁড়াও, আমি এই পাশে দাঁড়াচ্ছি। আমরা উনাকে উপরে নিয়ে যাই আগে। কাকিমা আপনি বরং গ্লাসখানা নিন।"

উনারা আমার কথা মতো কাজ করলেন। আমি উনাকে উনার বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে শোফায় বসালাম। উপরে আনবার সময় বুঝতে পেরেছি উনি পায়ে চোট পেয়েছেন।

আমি কাকিমার দিকে তাকিয়ে বললাম " কাকিমা কাকুর পায়ে মনে হয় চোট লেগেছে। আপনি উনার পায়ে মলম লাগিয়ে দিন।"

তারপর বাড়ির মালিকের দিকে তাকিয়ে বললাম "কাকাবাবু আমাকে সপ্তাহখানেক সময় দিন, আমি বাড়ি ছেড়ে দেবো। "

উনি কি উত্তর দেবেন প্রথমে বুঝতে পারলেন না, মনে হয় আমার সাথে ব্যবহার করে তিনি লজ্জায় পড়ে গিয়েছেন। আমি আর কিছু না বলে চলে এলাম। আসতে আসতে শুনলাম কাকিমা বলছেন " তুমি মেয়েটাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছ বুঝি? বেশী ভাড়ার কথা শুনেছ তাই চলে যেতে বলছ। বেশি ভাড়া পাবে,কিন্তু ভালো মানুষ পাবে কি?"

তারপর আর কি কথা হলো ওদের মাঝে জানিনা। ঘরে এসে দেখি আমার কলে জল আসছে।

আলুভাতে সাথে ডিম দিয়ে খেয়ে উঠলাম বেশ ভালো লাগলো।

তারপর মেইল খুলে বসলাম। দেখি আমি যে রিপোর্ট পাঠিয়েছি সেটা থেকে উত্তর এসেছে।আসলে আমি ওই মেইলে আমার চাকরি ছাড়ার আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। চিঠির উত্তর এমন এসেছে।

মিস মৃণাল,

প্রথমে আপনাকে জানাই অভিনন্দন ক্লাইন্ট মিটিংটার সফলতার জন্য, সাথে ধন্যবাদ জানাই আমাদের কোম্পানিকে এই প্রজেক্টটা দেওয়ার জন্য। আশাকরি আগামীতে আপনার সাথে কাজ করতে পারবো।

ইতি -

মিস্টার রায়

জুনিয়র C.E.O of Roy Cong.

আমি মেইলখানা দেখে রেখে দিলাম। আমার রাত জেগে গল্প বই পড়ার নেশা। সেজন্য আমি একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, দেখি একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ভাবলাম অনেক জায়গায় চাকরির জন্য মেইল করেছি, তাদের কেউ ফোন করেছে। আমি ফোন ধরে "নমস্কার "

" নমস্কার আপনি মিস মৃণাল তো।"

" হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন? "

" চিনতে পারলেন না? আমি বিবেক রায় বলছি।"

আমি চিনতে পারলাম উনি হলেন আমাদের কোম্পানির জুনিয়র CEO.

"স্যার আপনি এসময়ে ফোন করেছেন? শরীর কেমন আছে এখন? "

" এখন ভালো আছি, একটা দরকারে ফোন করেছি। কাল একবার অফিসে আসতে পারবেন।"

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না।আমি তো চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। কালকে কয়েকটি জায়গায় interview দিতে যাব বলে ঠিক করেছি।

আমি উত্তর দিতে দেরী করছি দেখে তিনি বললেন " কি আসতে পারবেন না?"

" না না যাব, কখন যাবো বলেন।"

" অফিসের সময়ে যখন আসেন।"

" কিন্তু.."

" কি কিন্তু? "

এবারে সংকোচ ছেড়ে বললাম "আমার অফিস টাইমে কয়েকটি জায়গায় interview আছে। "

" মানে কিসের interview? "

আমি এবারে নিরুত্তর হয়ে রইলাম।

" আপনি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন সত্যি? আমি সবে কাজ শুরু করেছি। বাবা আপনাকে বড্ড বিশ্বাস করে। এমন করে ছেড়ে দিয়ে যাবেন মাঝ রাস্তায়।"

আমি দৃঢ় স্বরে বললাম " আমি সাধারণ কর্মচারী মাত্র, আমি থাকলেই কি, না থাকলেই কি। অবশ্য আপনি যখন আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন কাল সকাল ১০টার মধ্যে অফিসে চলে যাব। আপনার আর কোনো নির্দেশ আছে স্যার? "

আমি হয়তো কথাটা রূঢ়ভাবেই বলে ফেলেছিলাম, উনি শুধু বললেন " না, আপনি আসুন আপনার সুবিধা মতো। শুভ রাত্রি। "

" ধন্যবাদ, শুভ রাত্রি "বলে ফোনটা রেখে দিলাম।

বই মুখে নিয়ে পড়তে পড়তে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলাম। খালি গুণীন জ্যাঠার কথাটা মনে পড়ছিলো। কেউ আমাকে ঘিরে রয়েছে। কে সে?

দিন তিনেকের বাকি ঘটনা মেনে নেওয়া যায়, ওর সাথে যারা খারাপ করতে চেয়েছে, তাদের ক্ষতি করেছে। কিন্তু ওর প্রিয় বান্ধবীর সাথে এমনটা কেন ঘটলো। একটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো, বন্ধবীর বৌদি এসে বললো " কি মিনু বিয়ে করবে কবে? এবার একটা বিয়ে করে নাও, একা একা থাকো, যদি কিছু ঘটে যায়।"

আমি হেসে চুপ করে মাথা নিচু করে নিলাম। হঠাৎ ওর দিকে চোখ পড়তে দেখেছিলাম ওর মুখে কেমন একটা হাসি। আমি ওর দিকে তাকাতেই বলে উঠলো "বিয়ে করে নে মিনু বিয়ে করেই নে।"

আমি কিছুক্ষণ পরে চলে এসেছিলাম, রীতম ভুল করে ওদের বাড়ির বারান্দায় ওর খেলনা গাড়িটা ফেলে গিয়েছিল, সেটা আনতে বাড়ির ভেতরে আমাকে আরেকবার যেতে হয়েছিল। ফিরে আসার সময় আমার বান্ধবী কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম "বৌদি তুমি পারো, মিনুকে কে বিয়ে করবে? মিনুর বংশ পরিচয় জানা নেই। আর কপালের মাঝখানটা যেভাবে কাটা, ওর দিকে কে তাকাবে শুনি?"

আমার খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যে বান্ধবী আমার দেখে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিল। ওর বিয়ের জন্য কম সাহায্য করিনি, সে কিনা আমার বিষয় এমন ভাবে। আমি চুপচাপ তবে কাউকে কিছু না বলে বেড়িয়ে এসেছিলাম।আচ্ছা এই জন্য কি সে শাস্তি পেয়েছিলো?

আমি জানিনা কি ঠিক কি ভুল, এই যুগে দাঁড়িয়েও এমন ঘটনা কি ঘটতে পারে? একটা না হয় সমাপতন, তাই বলে সব কয়টি?

হঠাৎ যেন মাথাটা যন্ত্রণায় ফেঁটে গেল, তারপর আমি জানিনা।


চলবে..



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror