STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational Thriller

4  

Manab Mondal

Abstract Inspirational Thriller

টায়ার পাংচার

টায়ার পাংচার

4 mins
469

বর্তমান যুগের ব্যস্ততা সর্বস্ব জীবনের ইঁদুর দৌড়ে আমাদের শরীর ও মন যখন রোজকার একই পরিবেশের ক্লান্তি এবং একঘেয়েমিতে ভরে ওঠে, তখন নিত্যদিনের সেই চেনা চারপাশ থেকে আমাদের মন একটুখানি মুক্তির আনন্দের জন্য ছটফট করে। সেই সময় মনকে কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম দিতে এবং নিজের ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করে জীবনের পরবর্তী ব্যস্ততার জন্য তৈরি হতে প্রয়োজন ভ্রমণের।

প্রাচীন যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত চিকিৎসকেরা বহু রোগ থেকে সেরে ওঠে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পূর্বে ভ্রমণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া ভ্রমণ মানুষকে চিন্তাশীল হতে শেখায়। শেখায় জীবনের প্রতিকূল অবস্থার সাথে যুঝে নিতে। প্রাচীনকালে রাজারা রাজ্য চালনার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হলে মৃগয়ায় যেতেন। এই মৃগয়াতে শিকার অপেক্ষা ভ্রমণের গুরুত্বই বেশি থাকত।



পাহাড়ের সমুদ্র ঘুড়লে বন ঘোরাঘুরি আমার হয় নি।ঘন বনের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছে মাটিতে।বিভিন্ন নাম না জানা গাছ, পাখিদের আওয়াজ আর অদ্ভূত এক মায়াবী নিস্তব্ধতা সমগ্র প্রকৃতিকে যেন ঘিরে রেখেছে। গায়ে গা ঘেঁষে গাছগুলি পরিবেশকে আরো মায়াবী করে তুলেছে। পথে চলতে চলতে চোখে পড়ল বিভিন্ন ধরনের অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর সব ফুল আর লতা গুল্ম। এ বনে হিংস্র পশু নেই তাই একাই বেড়িয়ে পরলাম। নতুন বাইক চালাতে শিখেছি আলাদা উৎসাহ তো থাকবেই।

গেস্ট হাউস থেকে বেরোতেই একটা ভিজে সকালের সঙ্গে মোলাকাত হয়ে গেল। মধুর। এমন সকাল যে কতদিন দেখিনি! তখন সূর্য সবে আড়মোড়া ভেঙেছে। কিন্তু চোখ খোলেনি। ফলে ভিজে মাটির রস শুকোতে শুরু করেনি। টাওয়ারের সামনের মোরাম ফেলা রাস্তাটা আরও বেশি লাল। চারপাশের গাছগুলো প্রবল গরমের পরে ধারাস্নানে জল ছিটিয়ে চান করা শিশুর মতো সজীব। পাখিগুলো ডেকে চলেছে একটানা। সেই মনভরানো সকালে ক্লান্তি-ক্লেদ-মনখারাপ-প্রিয়জনের দেওয়া আঘাতের ক্ষত থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্ত— সব ধুয়ে যেতে লাগল। সজীব হয়ে উঠছিলাম গাছগুলোর মতে।যত গভীরে যাচ্ছিলাম ততই জঙ্গল আচ্ছন্ন করছিল। সবে বসন্ত পার করেছে। জঙ্গলের দেহে এখন কিশোরীর লাবণ্য। একে কচি পাতা, তার ওপরে বৃষ্টির জলে লালধুলোর আস্তর ধুয়ে গেছে। জঙ্গল যেন সেই শাড়ির বিজ্ঞাপনের মতো, ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক আর…। ঘুরতে ঘুরতে কখন বিকাল হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। গ্যেস্ট হাউজ ফিরবো তখনই টায়ার পাঞ্চার।

কি করব বুঝতে পারছি এমন সময়।তখনই দেখা হল এক মেয়ের সঙ্গে। জঙ্গলে কাঠ ভাঙছে। কত বয়স হবে? খুব বেশি হলে আঠেরো। সুন্দর একটা লালছাপা শাড়ি পরেছে। কানে ঝুমকো দুল। চোখে-মুখে ঘুমের আলতো রেশ। এমন শাড়ি পরে জঙ্গলে কাঠ ভাঙছে? হয়তো এটাই ওর একমাত্র শাড়ি। হয়তো কাল কোনও আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিল। আজ কাচার পরে তুলে রাখবে।

মেয়েটা জিজ্ঞাসা করলো, ‘হরিণ দেখতে এসেছিস বাবু" ।

আমি বললাম "এখানে হরিন আছে নাকি"

উত্তর এল, ‘গাদা। ক্যানেলে পাশে মিলবে।"

আমি গাদা হরিণ দেখতে চাই না। একটি হরিণ হলেও চলবে। উৎসাহ নিয়ে বললাম" হরিন এখন দেখা মিলবে"

ও বললো " আজতো পূর্নীমা দেখতে পাবি বাবু, হরিন অনেক "

বাইক দিকে তাকিয়ে বললাম" না আজ থাক, বাইকের চাকা খারাপ হয়ে গেছে"

ও বললো " বাবু বন বাংলো তো অনেক দূর তুই যাবি কি করে? তুই থেকে যা আমাদের ঘর। কাল মোর বাপ তোকে, তোর বাইকে দিয়ে আসবে গরুর গাড়ি করে।"

রাজি হয়ে গেলাম। কারণ বেহিসাবি এসে পড়েছি এ জঙ্গলে এদিকে। মোবাইল ও কাজ করছে না। হরিন দেখলাম। রাতে যত্ন করে খাওয়ালো ও। ও বিছানা করে দিলো। ঘরের মেঝেতে নিচে বিছানা করলো। ওর বাবা ফেরেনি ,এক ঘরে একটা যুবতী মেয়ে র সাথে শুতে আপত্তি থাকলে ও থাকতেই হবে। ঘরটা নিরাপদ বারন্দাটাতো নয়। লোকালয়ে অনেক দূর আমরা তাই লোক লজ্জার ভয় করে লাভ কি?



বেশ ঘুম এসেছিল , একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম। একটি মশার কামড় হাতুড়ি মেরে যেনো ঘুম ভাঙ্গলো। তারপর আর চোখ ঘুম আসলো না আমার চোখে, আসলে আমার চোখ পড়ল ওর ওপর। প্রদীপের আলোয় মাটির ঘর টায় একটা মায়াজাল করে রেখেছে রূপকথা র মতো। অসতর্ক কাপড় সরে গিয়েছে ওর শরীর থেকে। ফর্সা উরু, একটা কালো জরুল, একটা কালো তিল নিভির খুব কাছাকাছি, ব্লাউজ এর হুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে যৌবন। আমার উসপাশ ওর ঘুম ভাঙ্গলো। ও আমার কাছে এসে গায়ে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল " ভয়ের স্বপ্ন দেখেছিস নাকি" ওর ছোঁয়ার অজুহাত খুঁজতে আর দেরি হলো না। বুঝতে পেরেছিলাম আমি ওর জীবনের প্রথম পুরুষ। আমার জীবনের ও প্রথম নারী ছিলো না, তবু যেনো উৎসাহ শেষ হতে চায় না। কোনো কথা বাঁধা না মেনে বিয়ে করে ফেলাম , ওকে পাহাড়ের উপর মন্দিরে। তিন দিন কেটে গেলো ওর বাবা ফিরলো না। আমাকে ওকে না নিয়ে ফিরতে হলো বাড়িতে।

চাকুরী বাকুরি করতে হবেই , আমি বলেছিলাম " বিদেশে থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো , তোমাকে। মাঝখানে শুধু মাস তিনেক ।একটু কষ্ট করো।"

কথা মতো, তিন মাস পরে আবার গেলাম ওর কাছে, মা বাবা উপহার গুলো দিলাম ও খুশি । তবু ও এলো না। খুশির খবর ছিলো ওর বাপ সেদিন বাড়ি নেই বাবা এলেই ফিরবে। ও আমাকে বললো ওদের ঐ মাসে কি একটা ব্রত আছে তাই ওর যাওয়া হবে না। 

 আবার চার মাস পর নিজের গাড়ি নিয়ে হাজির হলাম জঙ্গলে। আগের বার ও অজুহাত দেখিয়ে ছিলো প্রেগন্যান্ট অবস্থায় গাড়ি ছাড়া, ওর অসুবিধে হবে। কিন্তু গাড়ি নিয়ে যাবার পথ জানিনা। তাই গ্যেস্ট হাউজ এর ছেলেটা যেতে বললাম আমার সাথে। ও সব শুনে বলল" ও জায়গায় গেলে সবার গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে যায়। ওখানেই গল্প শেষ হয়ে যায়। আপনার গল্পের গাড়ি বিনা টায়ারে অনেক দূর চলছে। এবার ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যান। সকালে যাবেন না হয় পাহাড়ের উপর ? সেখানে কোন মন্দির খুঁজে পাওয়া গেলে , না হয় আপনি নিয়ে যাবেন আপনার বৌকে । তবে আপনার এ ঘটনা নতুন নয় , নতুন এটাই আপনি জীবিত। "

,,,,,,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract