STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

তানিশা

তানিশা

3 mins
183

তানিয়া বাবা চাইলেই বিয়ে করতে পারতো কিন্তু করে নি। কারণ যদি সৎ মা তানিয়াকে না দেখে তাই। কিন্তু তানিয়া আদরে আদরে বাঁদর হয়ে গিয়েছিল। ফলে মাধ্যমিকে ইংরেজি বেক পেলো। সেইদিন ওপর বাবা ওকে মারধর করে ঠিকই কিন্তু দিনের বেলায় অকন্ঠ মদ খেয়ে অনেক গালাগালি করে ধুমকি দিয়ে গিয়েছিল। ওর বিয়ে দিয়ে দেবে যাকে পাবে তার সাথে। তানিয়া ছিলো সুন্দরী ওর স্বপ্ন ছিলো নায়িকা হবার তাই ও বিয়ে করতে চাইতো না। 

আমি তানিয়ার কে? কেউ না। বিজয়ার সাথে প্রেম করি তখন আমি। ও ছিলো বিজয়ার বান্ধবী। বিজয়ার সাথে নিয়মিত দেখা হবার ব্যবস্থা হিসেবে। তানিয়া বাড়িতে আরো দুই চার মেয়েকে অঙ্ক আর ভৌত বিজ্ঞান , জীবন বিজ্ঞান পড়া যেতাম আমি। গৃহশিক্ষক হিসেবে এটা আমার জীবন প্রথম পেশাদার নিয়োগ হলেও, মাইনে হিসেবে যা আয় করতাম তারচেয়ে বেশি খরচ হতো ওদের পিছনে। লোকচক্ষুর অন্তরালে তাই ওদের শিক্ষক চেয়ে বন্ধুই বেশি ছিলাম আমি। তাই আমাকে দায়িত্ব নিতে হলো ওর বাবাকে বোঝানোর । ওর বাবা একটা সুযোগ দিলে ঠিক পরের বছর ও পাশ করে যাবে এ বিশ্বাস যদিও আমিও করতাম।

তানিয়ার জীবনে সেইদিন ঝড় উঠেছিল নয়, সেইদিন সন্ধায় কালবৈশাখী ঝড় উঠেছিল। ওর বাবা বাড়িতে ফিরলো না আর। রাতে ঝড় থামতে আমি ওর সাথে সব জায়গায় খোঁজখবর করে পেলাম না ওর বাবাকে। অসহায় ও আমাকে আকৃষ্ট আটকে রাখলো। ওকে ভরসা দিতে গিয়ে সেইদিন একটা ভুল ও হয়েছিলো আমার।

তাই তানিয়া যখন পাঁচ বছর পর কলকাতায় ফিরে এলো তখন। ঐ ভুল সংশোধন করতেই সব কিছু ঝুঁকি নিতে আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু ও কিছু নিতে চাইলো। ওর একটু অভিমান হওয়া কথাই ওর আজকের অবস্থার জন্য আমিও দায়ী। ওর বাবার সেই দিন আমি কথা বলি নি। আসলে সেই রাতে তানিয়া আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে সঁপে দিয়েছিলো। দুর্বল মুহূর্তকে ভুল করে ফেলেছিলাম ঠিকই। কিন্তু ঐ ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ওর বাবাকে বোঝাতে গিয়ে আমি যদি ওর সাথে কোন সম্পর্কে জরিয়ে যেতাম তাহলে আমার স্বপ্ন কেরিয়ার সব জলাঞ্জলি দিতে হতো। কারণ আমি তানিয়ার বাবাকে ওকে আর একটা সুযোগ দেওয়ার কথা বলতে, ওর বাবা আমাকে একটাই কথা বলেছিলো, " ওকে পাশ করানো দায়িত্ব তুমি নেবে বলছো , কিন্তু ফেল করলে তুমি ওর জীবনের দায়িত্ব নিতে পারবে কি?"

এ সমাজের কাছে ক্ষমা হলো একটা দায়। তানিয়া অমতে বিয়ে দিয়েছিলেন ওর বাবা ওকে অশোক নগরে। মেয়ে জামাইএর টাকা আর সাহয্য পেয়ে এ অঞ্চলের প্রমোটার ব্যবসা করে তানিয়া বাবা বেশে ফুলে ফেঁপে উঠছে। একটা বিয়েও করছে। তাই কলকাতা ফিরে তানিয়া ওর বাবা কাছে যাচ্ছে না। বন্ধু হিসেবে ও শুধু ওর মেয়ে তানিশা আমার কাছে রাখতে চাইলো। আপত্তি আমি করলাম না। আসলে তানিয়া বিয়ে পর চাকুরী উচ্চ মাধ্যমিকটাও পাশ করছে। কলেজ ভর্তি হতে ঝামেলা শুরু হয় ওর বাড়িতে। ওদের আরো একটা সন্তান চাই। তানিশা কন্যা সন্তান তাই সে ওদের কাছে অপ্রয়োজনীয় হলেও তানিয়া তানিশাকে অনেক ভালোবাসে।

ছোট তানিশাকে সবাই ভালোবাসতে বাধ্য । অন্ততঃ আমার বাবা মা আত্মীয় স্বজন কাছে কয়েক দিনের মধ্যেই প্রিয় হয়ে উঠলো। কিন্তু তানিশা আমাদের আশ্রিতা আমার বান্ধবীর মেয়ে শুনে নানা লোকে নানা কথা বলতে শুরু করল। এমনকি তানিশা তানিয়া মেয়ে জানতে পেরে বিজয়া আর ওর বাড়ি লোকজন আমাদের বিয়েটা ভেঙে দিলো। তানিশা তানিশাকে নিয়ে এ শহরের ভিড়ে হারিয়ে গেলো। তবে এ কথা সত্যি ওদের খোঁজার চেষ্টা আমি করি নি। 

তারপর গোটা কুড়ি বছর পর , আমার বন্ধুর ছেলের বিয়ে গিয়ে, একটা বিয়ের কনে দেখে আমি অবাক। ঠিক যেনো তানিয়া দাঁড়িয়ে আছে। প্রনাম করতে বাঁধা দিতে গেলাম। মেয়েটি বললো " প্রনাম নেবেন না কেন? আমি তো আমার বাবার মতো। যদিও আমার বাবা নেই... "

আমি বললাম " না মা আমি করো প্রনাম নিই না। কিন্তু তোমাকে আমার খুব চেনা লাগছে। তোমায় বাবা মায়ের নামটা বলতে পারবে?"

তানিশা বললো " বাবার নাম বলতে পারবো না। কারণ আমি তার জীবনের একটা ভুল কাজ ছিলাম। তবে মায়ের কাছে আমি তার প্রথম ভালোবাসার উপহার । তাই সেই আমাকে এ পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছে একা লড়াই করে। সেই বোধহয় আমার বাবা, তাই আমার কন্যাদান সেই করছে। ,,,,"

ওর কথাটা পুরোটা শোনার আগেই আমি তানিয়াকে দেখতে পেলাম। তানিশা কপালে চুমু খেয়ে আমি বেড়িয়ে এলাম বিয়ে বাড়ি থেকে। কারণ পুরুষদের লোক সমাজে চোখের জল ফেলতে নেই।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract