STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

তালের বড়া

তালের বড়া

2 mins
215

আজকের গল্পটা বুঝতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে হিন্দুদের পৌরাণিক কাহিনীতে। যেখানে দেখানো হয়েছিল, জন্মদাত্রী মায়ের থেকে পালন করি মায়ের গুরুত্ব বা অধিকার অনেক বেশি।তাই দেবকী নয় গোপালের আসল মা হলেন যশোদা। এ কথার কারণ হলো। আমার জীবনেও দুইটি মা ছিলো। দারিদ্রতা মানুষের জীবনে অভিশাপ। বাবার আয় ভালো ছিলো না বলে আমরা ঘর ভাড়া করে ছিলাম বসতি অঞ্চলে। আর এখানে থেকে আমার পড়াশোনা হবে না বলে, কিছুটা জোর করেই আমার দিদি তার কাছে নিয়ে যায়। এবং আমি আমার দিদি কাছে সযত্নে মানুষ হতে থাকি।


দিদিরও আহামরি বড়লোক ছিলেন না। তবে আমাদের ছোট বেলায় , কেক প্যাটিস চকলেট এর চল ছিলো না। আমাদের প্রিয় খাবার ছিলো, আমড়া , কতবেল, বাতাবিলেবু মাখা, পাকা কলা কিংবা তালের বড়া নানা ধরনের পিঠে। দিদি সব কিছুই করতো কিন্তু প্রিয় ছিলো তালের বড়া।


বাবা যখন সরকারী চাকুরী পেলেন তখন আমাদের গ্রামের বাড়ীতে আমাকে ফিরে যেতে হলো কারণ ওখানেই আমরা পাকা বাড়ি করে ছিলাম। ওখানে গিয়ে আমি প্রথমে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম কারণ ওখানে দুটো তাল গাছ ছিলো। বাবা তালের শাঁস খেতে ভালো বাসতেন কিন্তু মা কাঁচি তাল পড়তে দিতেন না। শুধু তালের বড়া খাওয়াবে বলে। কিন্তু দিদির মতো স্বাদ আনতে পারতেন না। আমি জানি মায়ের এ জন্য কষ্ট হতো। কারণ স্নেহ ভালবাসা দেবার ব্যাপারে মা ও দিদি র মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই হতো আর এই সামান্য তালের বড়া সেই লড়াইয়ে মাকে পরাজিত করে দিতো।


কিন্তু বোধহয় আজ প্রায় পোনের বছর পর মা জয়ী হলেন দিদির সাথে , তবু মা খুশী হলো না। আজ আমি স্ত্রীক এ বাড়ি থেকে ছেড়ে ভিন্ন রাজ্যে চাকুরী করতে পারি দিচ্ছি, বেশ কয়েকটি বছর হয়তো এখানে ফেরা হবে না। মাসিমা এসেছেন । আমাদের গ্রামটা এখন শহরে পরিণত হয়েছে,তাই, দেখেছিলাম ও তাল নিয়ে এসেছে দুইটো বয়ে, ভোর বেলা থেকেই ও রান্না ঘরে ঢুকে ছিলো। সবাইকে প্রনাম করে বেড়াতে যাবো তখন দিদি একটা বড়ো টিফিন সেট দিয়ে বললো " নে এতে তালের বড়া আছে ট্রেনে বসে বসে খাবি।"

আমার। তর সইছিল না আমি টিফিনটা নিয়ে খুলবো ভাবছিলাম । বাধ সাধলো নীলাঞ্জনা।ওর কড়া নজরের শাসন বলে দিলো ও টিফিন বক্স যেনো আমাদের সফর সঙ্গী না হয়। নিরুপায় আমি বললাম " এখন তেলে ভাজা জিনিস আমি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।"


মনে মনে কষ্ট হলো , যদি স্টেশানে এসে তালের বড়া গুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হতো। তাহলে দিদিকে হয়তো গোপনে চোখের জল ফেলতে হতো না। এবার দিদি রাখি দিতে আসেনি। জামাইবাবুর চাকুরী চলে গেছে। ও কিছু উপহার দিতে পারবে না বলেই আসে নি। কিন্তু ওর সাধ্যের মধ্যে ছিলো তালের বড়া সেটাও ও ভাইকে খাওয়া তে পাড়লো না। ও এতোটাই হত ভাগী। রাস্তা অনেক দূরে চলে গিয়েও আমাদের বাড়িটা দেখা যাচ্ছিলো। সব গাছপালা ডালপালা নেড়ে যেনো আমাদের বিদায় জানাছিলো। শুধু মাত্র তাল গাছ দুইটো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো । মন খারাপ হয়তো ওদের।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract