The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sonali Basu

Horror Romance Tragedy

2  

Sonali Basu

Horror Romance Tragedy

তাহলে কি?

তাহলে কি?

9 mins
715



মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেলো! শৌর্য এক্সিডেন্ট করেছে হাইওয়ের কাছে। মুখ থেকে এরপর ছিটকে বেরিয়েছিল একটাই প্রশ্ন “কখন?”

“এই তো মিনিট দশেক হল। ওকে কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে” তনুজার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। কি করবে, কাকে ডাকবে কাকে নিয়ে যাবে হাসপাতালে কিছুই সেই মুহূর্তে মাথায় এলো না। চৈতি বোধহয় তখনো ফোন ছাড়েনি, সে’ই হঠাৎ ওপাশ থেকে বলে উঠলো “হ্যালো হ্যালো তনু তুই কি এখনো ফোন ধরে বসে আছিস। আরে তাড়াতাড়ি শৌর্যর বাড়িতে ফোন করে সব জানা। আর তোর ভাই তনয়কে নিয়ে হাসপাতালে চলে যা। আমি হাসপাতালের ঠিকানাটা এস এম এস করে দিচ্ছি। ওকে একটু দেখিস”

চৈতির কথায় তনুর দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো। যান্ত্রিক গতিতে চৈতি যেমন যেমন নির্দেশ দিয়েছিল সেইভাবে সবাইকে ফোন করে জানিয়ে দিলো। শৌর্যর বাড়িতে ফোন ধরেছিল ওর বাবা, মানে তনুর শ্বশুরমশাই। সে ফোন ধরে কি হয়েছে শুনেই বললেন “শৌর্যকে আমাদের কাছে বহুদিন আগেই মৃত তাই তার খবর আর আলাদা করে আমাদের জানানোর দরকার নেই” বলেই ফোনটা রেখে দিলেন।

তনু খানিকক্ষণ ফোনটার দিকে তাকিয়ে থেকে তনয়কে ফোন করলো। বেশ খানিকক্ষণ পরে ঘুম ঘুম আওয়াজে তনয়ের প্রশ্ন “কি হয়েছে রে দি?”

“শৌর্যর এক্সিডেন্ট”

ঘুমঘুম আওয়াজ কেটে গিয়ে পরিষ্কার গলায় তনয় জিজ্ঞেস করলো “তোকে কে খবর দিলো?”

“চৈতি”

“চৈতিদি!... আর তুই সেটা বিশ্বাস করলি?” অবিশ্বাসের আওয়াজ তনয়ের গলায়।

“না করার কি আছে? নিজের স্বামী সম্পর্কে কি কেউ মিথ্যে কথা বলে”

“রাখ তোর...” তনয়ের কথা কেটে দিয়ে তনু বলল “শোন আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। তুই কি যাবি?”

“হ্যাঁ... আসছি...তুই অপেক্ষা কর আমি এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যাবো”

“ঠিক আছে... আয় তাহলে” তনু ফোনটা রেখে নাইটি ছেড়ে একটা সালোয়ার কামিজ গলিয়ে নিলো তারপর নীচের তলায় এসে সবে দাঁড়িয়েছে এমন সময় গাড়ির হর্ন শোনা গেলো। তনয় চলে এসেছে। তনুজা বেরিয়ে পড়লো।

গাড়িতে যেতে যেতে তনয় বলল “তোকে চৈতিদি ঠিক কি বলেছে বল তো দেখি?”

তনুজা সব বলল। তাই শুনে তনয় বলল “তা তোকে কেন ফোন করলো, তুই জিজ্ঞেস করিসনি”

“না রে সে সময় এসব প্রশ্ন মাথাতেই আসেনি”

“কিন্তু কেন রে? তোর সাথে শৌর্যদার যা সম্পর্ক তাতে তোকে খবর দেওয়ার কথাই নয়”

তা বটেঁ! মনে মনে ভাবলো তনুজা।

তনুজার স্কুল জীবনের বান্ধবী চৈতি যদিও এক পাড়ায় বাড়ি নয় ওদের। এক স্যারের কাছে পড়তে গিয়ে আলাপ। তনু তাই মাঝেমধ্যেই ওর প্রিয় বান্ধবীর বাড়ি যেতো গল্পগুজব করতে। চৈতিদের বাড়িটা দোতলা, ওদের ঠাকুরদার বানানো। একতলায় চৈতির পরিবার আর ওর কাকার পরিবার থাকতো। দোতলাটা ওর দুই পিসির নামে ছিল বলে তালাবন্ধ অবস্থাতেই পড়ে থাকতো। কখনোসখনো ওরা এলে তখন পুরোবাড়িটা গমগম করতো। তবে তনুজাদের গল্প করার বিশেষ জায়গাই ছিল চৈতিদের বাড়ির ছাদ। তনু গেলে ওরা দুজনেই ছাদে বসে গল্প করতো। তনুজার আবার চৈতিদের ছাদটা বিশেষ দুর্বলতার জায়গা কারণ ওখানে দাঁড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। ওর দূরান্তের দিকে তাকিয়ে তনু কল্পনা করতো ঐ দূরে মাঠের শেষে যেখানে আকাশ এসে তার বান্ধবী পৃথিবীর সাথে দেখা করে সেরকমই একদিন ঐ স্থানে ও ওর মনের মানুষের সাথে দেখা হবে। আর সে মানুষও সাধারণ হবে না হবে রাজপুত্র। নিজের সাদামাটা টালির ছাদের ওঠারই ক্ষমতা হবে না ওখানে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা। তাই সময় পেলেই চৈতিদের বাড়িতে ও আসতোই। দেখতে দেখতে স্কুল পেরিয়ে কলেজে পৌঁছালো ওরা। চৈতির মা অবশ্য ওদের এই বন্ধুত্বে অখুশি ছিলেন না। খুবই স্নেহ করতেন তনুকে। শৌর্যর সাথে তনুর আলাপ চৈতিদের বাড়িতেই। শৌর্য চৈতির খুড়তুতো ভাই বরুণের বন্ধু তাই ও প্রায়ই যাতায়াত করতো ওদের বাড়িতে। দুজনে একই বাড়িতে যাতায়াত করলেও এক অনুষ্ঠানেই দেখা হয়। অনুষ্ঠানটা হল বনভোজন।

শীতকাল এলে সব মানুষেরই একটু বেড়াতে ইচ্ছে করে। বাড়ি থেকে খুব দূরে কোথাও যেতে না পারলেও বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় তো ঘুরতে যাওয়াই যায়। চৈতিরা প্রায় শীতেই পিকনিক করতে যেতো। খুব কাছাকাছি জায়গা থেকে মোটামুটি দূরে বাড়ি থেকে আর প্রতিবারই তনু ওদের সাথে বনভজনে যেতো। তনুর বাবার ক্ষমতা ছিল না বাড়ির ছয়জন মানুষকে নিয়ে এইসব বনভোজনে যোগদান দেওয়ার। তাছাড়া ঠাকুমা ঠাকুরদা পালা করে অসুস্থ থাকতেন। ওদের ফেলে মায়েরও বেরোনো অসম্ভব ছিল। ভাই ছোট তাই মা ওকেও ছাড়তো না। তনুকে আটকানোর চেষ্টা করে লাভ হতো না কারণ ও ছিল ভীষণ একগুঁয়ে আর জেদি। তাই চৈতিদের সাথে তনুর যাওয়াটা প্রায় অবধারিত বলাই যায়। সেবার চৈতিরা ঠিক করলো ওদের বাড়ি থেকে একটু দূরে যে একটা ছোট্ট নদী বয়ে চলেছে সেখানে চড়ুইভাতি হবে।

শীতের এক রবিবার বেশ সকাল সকাল ওরা তৈরি হয়ে বেরিয়ে এলো গাড়িতে উঠবে বলে। চৈতিদের গাড়ি আছে তবে তাতে সব বড়রা যাবে ঠিক হল, বাকি ছোটরা যাবে হেঁটে হেঁটে। তনুর কোন আপত্তি হয়নি এ ব্যাপারে কারণ হেঁটে যেতে বেশ মজাই লাগে তাছাড়া হাঁটার দল বেশ ভারীও। গাড়ি যাওয়ার আগেই ওরা হাঁটা দিলো। চৈতি আর তনু গল্প করতে করতে এগোচ্ছে। ওদের আগে আগেই যাচ্ছে চৈতির খুড়তুতো ভাই বরুণ আর ওর বন্ধু কার্তিক। নানান ব্যাপারে গল্প করতে করতে বেশ তাড়াতাড়িই নদীর পাড়ে পৌঁছালো।

ওরা পৌঁছেই শুনতে পেলো “বাবাহ্ তোদের এতো দেরী কি ভাবে হল রে। আমি কখন এসে কাকিমাদের সাহায্য করতে শুরু করেছি। তনু বক্তার মুখের দিকে তাকিয়েই প্রেমে পড়ে গেলো। ও হাঁ করে তাকিয়ে রয়ে গেলো ওর মুখের দিকে, কি বলছে সেটা আর কানে ঢুকলো না। চৈতি বোধহয় খেয়াল করেছিল তনুর হাঁ করে চেয়ে থাকাটা তাই ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল “ও শৌর্য... বরুণের বন্ধু”

চৈতির কথা শুনে তনুজা ওর বান্ধবীর দিকে একবার তাকালো তারপর বলল “ও” ভাবটা এমন যেন শৌর্য সম্পর্কে ওর কোন আগ্রহ নেই। চৈতি অবশ্য তনুর ভাবান্তর খেয়াল করেনি। ও স্বাভাবিকভাবেই বলল “চল চল মা’রা টিফিন রেডি করে ফেলেছে। চল খেয়ে নিই। খুব খিদে পেয়েছে” বলেই তনুকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো খাবার জায়গায়।

চৈতির মা কাকিমা শালপাতার প্লেটে প্লেটে ততক্ষণে লুচি ফুলকপি আলুর তরকারি আর জিলাপি বেড়ে দিয়েছে আর ছেলেরা সেগুলো সবাইকে এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। তনু খেয়াল করলো শৌর্য এই কাজটা খুব তৎপরতার সাথে করছে। ও মনে মনে আশা করলো শৌর্যই যেন ওকে প্লেটটা দেয় তাহলে অন্তত একবার হলেও চোখাচোখি হবে। তা ওর কল্পনা পূর্ণ করে শৌর্যই ওকে খাবারের প্লেট দিতে এলো। তা নিতে গিয়ে চোখাচোখি শুধু হল তা নয় তনুর কেরামতিতে প্লেটের তলা দিয়ে হাতে হাতও ঠেকলো। হাত ঠেকার সাথে সাথেই চার চোখের মিল হল আর তনু খেয়াল করলো শৌর্যর মুখে এক অদ্ভুত রহস্যময় হাসি। ও ভাবলো শৌর্য কি বুঝে ফেলেছে ওর চালাকিটা। কিন্তু সেই ব্যাপারটা বেশি ভাবার আগেই দেখলো ছেলেটা সরে গেছে। যাইহোক খাওয়াদাওয়ার পর চৈতি ওকে টেনে নিয়ে গেলো নদীর পাড় ধরে হাঁটার জন্য। বড়রা তখন রাঁধুনির দুপুরের খাওয়াদাওয়ার তোড়জোড় তদারকি করছে তাই ওরা যে নদীর পাড়ে চলেছে কেউ খেয়াল করলেও বারণ করলো না। নদীর পাড়ে আসার পর খেয়াল হল বরুণ শৌর্য আর কার্তিক ব্যাডমিন্টন খেলার তোড়জোড় করছে কিন্তু র‍্যাকেট চারটে থাকলেও কর্ক একটাই তাই জোড়ায় জোড়ায় খেলবে ঠিক করছে কিন্তু তাতে খেলোয়াড় কম পড়ছে। চৈতিরা গিয়ে দাঁড়াতেই ওরা ওদের অনুরোধ করলো খেলার। দুজনেই রাজি খেলতে, তাই ঠিক হল প্রথমে তনু খেলবে তারপর চৈতি। তনুর মনে তখন আনন্দের ঢেউ বইছে শৌর্যর সাথে খেলতে পারবে ভেবে। সকালটা বেশ পেরিয়ে দুপুর এলো। দুপুরে পাঁঠার মাংস ভাত চাটনি খেয়ে বড়রা যখন গাছেরতলায় তাস খেলায় মগ্ন তখন তনুরা আবার গল্প করতে নদীর পাড়ে। ওখানে আগে থেকেই ছেলেরা উপস্থিত তাই সবাই মিলে বেশ অন্তাক্ষরী খেলা খেললো। বিকেল পড়ে এসেছে যেই ওমনি বড়দের হাঁকডাক শুরু হল “তাড়াতাড়ি ফিরে আয়। এবার বাড়ি ফিরতে হবে”

ওরা পাঁচজন উঠে পড়ে ফিরে চলল। হঠাৎ শৌর্য এগিয়ে তনুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল “এটা আমার ফোন নম্বর। আশা করবো ফোন করবে” বলে হাতের মুঠোয় একটা কাগজের টুকরো গুঁজে দিয়ে চলে গেলো। আস্তে আস্তে ফোনালাপ শুরু হল তারপর দুরন্ত প্রেম। এক সরস্বতী পুজোর সময় শৌর্য প্রস্তাব করলো “তনুজা তোমায় আমি বিয়ে করতে চাই”

ততদিনে তনুজা কলেজ পাশ করে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে আর শৌর্য ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। শৌর্যর প্রস্তাব শুনে তনু বলল “আমরা দুজনেই এখনো রোজগার শুরু করিনি শৌর্য, এখন বিয়ে করতে চাইলে আমাদের বাড়ির কেউ মেনে নেবে না। তার থেকে উচিত হবে দুজনেই আগে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত জমির ওপর দাঁড়াই তারপর একসাথে সংসার শুরু করবো”

শৌর্য বলল “আমি অপেক্ষা করতে রাজি”

কিন্তু তনুরই কথা রক্ষা করা দায় হয়ে উঠলো কারণ ওর বাবা মা এবার উঠেপড়ে লাগলো ওর বিয়ের তোড়জোড় করতে তাই সবাইকে জানিয়ে রাখলো ভালো পাত্র পেলেই সন্ধান দিতে। তনু শৌর্যকে বলল “তুমি কি এখনো এই মুহূর্তে আমায় বিয়ে করতে ইচ্ছুক?”

“আমি তো আগেই বলেছিলাম আমি এখনি বিয়ে করতে রাজি” 

“তোমাকে তো আগে তোমার বাবা মাকে তো আমার কথাটা জানাতে হবে তারপর আমার বাবা মায়ের কাছে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিতে হবে তো”

“চিন্তা করো না আমি এখনি যাচ্ছি বলতে” কিন্তু চিন্তার কারণটা রয়েই গেলো। শৌর্যর বাবা বলেই বসলো “তুমি তো এখনো নিজের পায়েই দাঁড়াতে পারোনি সেখানে বিয়ের চিন্তা করো কি ভাবে?”

মা বলল “তুই আর মেয়ে পেলি না, শেষ তোর থেকে বড় মেয়েকে পছন্দ করতে হল?”

শৌর্য তাতে দমে না গিয়ে তনুজার বাড়িতে চলে গেলো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। তনুর বাবা বলল “তুমি কি করো বাবা? ...... এ্যাঁ তুমি এখনো ছাত্র তার মানে তো বাবার হোটেলে এখনো নির্ভর। বিয়ে করলে স্ত্রীকে খাওয়াবে কি?”

মা বলল “সেকি তুমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছো, তোমার বাড়ির লোক রাজি তো এ সম্বন্ধে?”

শৌর্য জানালো ওর কোন উত্তরই হ্যাঁ নয়। তা শুনে তনুর বাবা মাও রাজি হল না এ বিয়েতে কিন্তু তাও ওরা কেউ দমলো না। বিয়ে করলো, নতুন সংসার পাতলো। কিন্তু এটা ঠিক যত তাড়াতাড়ি ওরা কাছে এসেছিল তত তাড়াতাড়িই ওদের ভালোবাসায় ফাটল ধরলো। শৌর্যর আগে তনু চাকরি পেয়ে গেলো। ঘরের কাজের সাথে বাইরের কাজে তাল রাখতে গিয়ে মাঝেমধ্যে ঘরের কাজে গাফিলতি হতে লাগলো। ততদিনে পড়া শেষ করে শৌর্য বেশ বড় কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে। সময়ে অফিসের জন্য বেরোতে হয় কিন্তু সেইসব সকালে প্রায়ই চা টিফিন জলখাবার চেষ্টা করেও অনেক সময়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে দিতে পারে না। সেইসব সকালে শৌর্য কখনোসখনো রেগেমেগে না খেয়েই বেরিয়ে যায়। এইসব ছোটখাটো ব্যাপারে দুজনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই হতে থাকলো মনমালিন্য। শেষ অব্দি একদিন মনমালিন্য এতো বেড়ে গেলো যে দুজনেই ঠিক করে নিলো ওরা আলাদা হয়ে যাবে। ডিভোর্স ফাইল হল তারপর শৌর্য তনুর ভাড়াবাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। একা পথ চলা শুরু হল তনুর। ভাড়াবাড়ি ছেড়ে ও লেডিস হোস্টেলে গিয়ে উঠলো কিন্তু বাপেরবাড়ি ফিরে যায়নি। বাবা মা যেখানে ওদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি সেখানে সেই সম্পর্ক ভাঙ্গার পর ফিরে যাওয়ার কোন মানে ছিল না তনুর কাছে। একা চলতে চলতে হঠাৎই এক বিকেলে অফিস ফেরত বাস ধরতে গিয়ে দেখলো চৈতিকে। একা চৈতিকে দেখলে যত না খুশি হত তার থেকেও বেশি অবাক হল ওর সাথে শৌর্যকে দেখে, দুজনে নিজস্ব চারচাকা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো। তবু একটা ব্যাপারে খুশি হল যে শৌর্য ওর কাছ থেকে সরে গিয়ে আরেকজনকে পেয়ে গেছে। কিন্তু তনু কাউকে আর কাছে টানতে পারলো না। ও জানতো ওর স্বাধীনচেতা স্বভাব যে কোন পুরুষের আত্মগরিমায় ধাক্কা দেবে আর সেটা সংসারের ভিত নড়বড়ে করে দিতে পারে।

সেদিন ও যেমন চৈতিকে দেখেছিল তেমনই চৈতিও ওকে খেয়াল করেছিল। হঠাৎই এক দুপুরে তনুর কলেজে গিয়ে হাজির ও। তনুজা খুশি হয়েছিল বান্ধবীকে দেখে। টিচার্স রুমের পাশে একটা ছোট্ট বারন্দায় বসে অনেক গল্প করেছিল দুজনে। সব শেষে যখন চৈতি চলে আসবে বলে উঠে দাঁড়িয়েছে তখন বলে বসে “আমি কিন্তু শৌর্যকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিইনি”

তনু উঠে দাঁড়িয়ে সহজ ভাবেই বলেছিল “তোকে সে ব্যাপারে দোষারোপ করলো কে শুনি? ভালোই তো হয়েছে তোরা এক হয়ে সংসার করছিস। যে সুখ দিতে আমি অক্ষম ছিলাম সেটা শৌর্য তোর কাছে পেয়েছে এটা কম নাকি! তুই ভুল বুঝিস না। আমি তোকে কোনদিন এ ব্যাপারে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো না”

এরপর দুই বান্ধবীর যখনই দেখা হয়েছে হেসে গল্প করে ভালোই সময় কাটিয়েছে দুজনে কিন্তু তনু কোনদিন শৌর্যর কথা তোলেনি। হয়তো ইচ্ছে করেই।

“দিদি আমরা হাসপাতাল পৌঁছে গেছি” তনয়ের ডাকে তনুজা অতীতের অলিগলি থেকে বাস্তবের মাটিতে এসে দাঁড়ায়। হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে খবর নিতে ওরা জানায় একটু আগে দুজন মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে এক্সিডেন্টের জায়গা থেকে। ট্রাকের সাথে ইন্ডিকা গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কার কেসে। তনুজা উদ্বিগ্নস্বরে প্রশ্ন করে “যারা ভর্তি হয়েছে তারা কে কে?”

রিসেপসনিস্ট জানায় “একজন পুরুষ, দ্বিতীয়জন মহিলা। তবে মহিলা মারা গেছে, পুরুষের অবস্থা ক্রিটিক্যাল”

পুলিশ এসে সব শুনে বলে “আপনারা যখন চেনেন তখন মহিলাকে আইডেন্টিফাই করে আমাদের সাহায্য করুন”

পুলিশের পেছন পেছন মর্গে গিয়ে বডি দেখেই তনু চিৎকার করে ওঠে। সামনে চৈতি শুয়ে, রক্তে স্নান করে প্রাণহীন। ও কোনমতে আইডেন্টিফাই করে বলে “এ কখন মারা গেছে?”

“স্পট ডেড”

“আর এক্সিডেন্ট হয়েছে কখন?”

“রাত তিনটে দশ। ওনারা দীঘা বেড়াতে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে ফিরছিলেন”

পুলিশ ইন্সপেক্টরের আর কোন কথা তনুজার কানে ঢুকছিল না। তিনটে পনেরোতে মারা গেছে কিন্তু ঐ সময়েই তো চৈতি ফোন করেছিল! তাহলে? একটু পরে তনুর ফোনে তো মেসেজও করেছিল হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে। তনু সাথেসাথে ফোন খুলে মেসেজ বক্স ঘাঁটতে থাকে কিন্তু কোথায় গেলো সেই মেসেজ? সব রয়েছে, শুধু ওটাই নেই! তনুজা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Horror