প্রার্থনা
প্রার্থনা


ইংরেজি ক্যালেন্ডারে বিশেষ বিশেষ উৎসবের তারিখগুলোতে চোখ বোলাচ্ছিল গার্গী আর ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিল। নতুন বছরের ক্যালেন্ডার আসার পরই ও সব ছুটির তারিখগুলো কলম দিয়ে দাগিয়ে রেখেছে; কোন ছুটিতে কোথায় যাওয়া যায় এই ভাবনায়। ওর স্বামী তন্ময় স্কুলে চাকরি করে তাই ছুটি ভালোই পায়। তাছাড়া ওরা চারজনেই ঘুরতে খুব ভালোবাসে তাই ছুটির দিনগুলো গুনে আগেভাগেই ঠিক করে ফেলে কোন ছুটিতে কোথায় যাবে। এবারও তাই করেছিল কিন্তু সব ওলটপালট করে দিলো এক অদ্ভুত মহামারি এসে। যেমন নাম তেমনই কাম। পাশাপাশি লোক বসলেই ছড়িয়ে যাচ্ছে আর এতো ছড়িয়েছে যে মুড়িমুড়কির মতো লোক মরছে। তাতে দেশের সরকার দেশের মানুষকে মড়কের হাত থেকে বাঁচাতে সব লকডাউন করে দিয়েছে; স্কুল কলেজ অফিস কারখানা বাজারঘাট রেস্তোরাঁ সিনেমাহল, গাড়িঘোড়া সব, রাস্তায় অদরকারে বেরোনো যাবে না আর বেরোতে হলে নিজেকে পুরো ঢেকে বেরোতে হবে; আর ফিরে নিজেকে ভালো করে ধুয়ে সব ময়লা বার করে দিতে হবে। এর কারণে পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া সব নিঃশব্দে পেরিয়ে গেলো। প্রতিবার জামাইষষ্ঠীতে বাপেরবাড়ি রানিগঞ্জে যায় ওরা, এবার তো যাওয়াও হল না। মা বাবাকে ফোনেই প্রণাম জানাতে হল। দুষ্টু আর মিষ্টু তো ভীষণ বিরক্ত বাড়িতে আটকা থেকে থেকে। মঝে মাঝেই বলে পাড়ার বন্ধুদের বাড়ি যেতে দাও না মা একটু খেলে আসি। কিন্তু পরিস্থিতি যা গার্গী যেতে দিতে পারে না যদিও লকডাউন উঠতে শুরু করেছে।
আজ ক্যালেন্ডার দেখতে গিয়ে ওর চোখে পড়লো সপ্তাহ শেষে রথযাত্রা। এবারও তো আড়ম্বর করে রথযাত্রা পালন হবে না কিন্তু ও করবে। প্রতিবারই করে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর দুই মেয়েকে ডেকে নিলো ওদের পড়ারঘরে তারপর ওর ইচ্ছেটা বলল। প্রতিবার মেয়েরা খুব একটা সাহায্য করতে পারে না স্কুল টিউশনি আর পড়ার ঠেলায়। এবার দুজনেই খুব খুশি মাকে সাহায্য করবে ভেবে। ঠাকুরঘরের ওপরের তাকে তুলে রাখা কাঠের রথ পেড়ে আনে গার্গী। তারপর সেটাকে ধুয়েমুছে রাখলে মেয়েরা কাগজে নক্সা কেটে রথের গায়ে সেগুলো লাগিয়ে সাজিয়ে তুলল। এদের কাজের মধ্যে তন্ময় একবার মাথা গলিয়ে দেখে নিয়ে বলেছে – আমি কি তোমাদের কাজে আসতে পারি?
গার্গী হেসে উত্তর দিলো – পুজোর আসল কাজটাই তো তোমার, পুজোর বাজার
সাজানো শেষ হলে মিষ্টু জিজ্ঞেস করলো – কবে পুজো মা?
- পরশু সোনা
- রাস্তায় টানতে পারবো তো?
- না সোনা, ঘরের ভেতরেই ঠাকুরকে ঘুরিয়ো
রথের আগের দিন গার্গীর লিস্ট অনুযায়ী যেটুকু পেলো সেটুকু নিয়ে এলো তন্ময়। পরেরদিন ভোরে উঠে স্নান সেরে গার্গী রথের মেলায় কেনা জগন্নাথ সুভদ্রা বলরামের মূর্তি রথে বসালো। রথটাকে ফুল দিয়ে সাজালো। অনেক সাধ্যসাধনা করে পুরোহিতমশাইকে ডেকে আনলো তন্ময়। উনি যখন পুজো শেষ করছেন তখন গার্গী চোখ বুজে প্রার্থনা করছিলো ‘ঠাকুর এই মহামারি থেকে সবাইকে রক্ষা করো। সবাই যাতে সুস্থ থাকে ভালো থাকে সেই আশীর্বাদ করো’