STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

সুপুরুষ

সুপুরুষ

4 mins
46

ছেলেবেলায় ভালো পড়াশোনায় ছিলো সুমন। তাই এমনিতেই মহিলা মহলের প্রিয় ছিলো সমুন। কিন্তু আজকাল , সুমন পাড়ায় জিমে ঘাম ঝরাচ্ছে। পাড়ায় লোকজন যদিও টন টিটকারী না করলেও, মা বোন টোন টিটকারী করতে ছাড়েছে না। এ বয়সে সুপুরুষ হতে চাইছে সুমন সংসার বাঁচাতে। বিয়ের এতো বছর পরও সংসার বাঁচাতে এমন লড়াই করতে দেখে একটু দুঃখ হওয়ার কথা যদিও সুমনের জন্য সবার।

সুমন সুপুরুষ কিংবা হ্যান্ডসাম না হলেও খুব ভালো ছেলে। কোন নেশাভানহীন, নির্বিবাদী চরিত্রবান পুরুষ। বিয়ের দশ বছর পরেও, বৌ অন্ত প্রাণ। তবে মহিলা মহল এখন তাকে পছন্দ করে সে নিরাপদ, আর মহিলাদের সন্মান করে।

সমস্যা শুধু একটাই দিনে দিনে সে বৌর অপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। আসলে সমস্যটা অর্থনৈতিক । টিউনার আর একটা কাপড়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে বৌয়ের সব দাবি দাবা মেটানো সম্ভব নয়। এ বয়সে সেলসম্যানের কাজ ছাড়া কোন চাকরিও জুটছে না, মাইনে তেমন জুতের নয় তাই সমস্যা টা দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে।

ওর বউ লিলি'র চক্ষুশূল আরো একটা বিষয়।সেটা হলো ওর নাটক করার নেশা। টিভি পর্দায় অভিনয় করতে গেলে তবু হতো। কিছু পয়সা পেতো। অনেক ই পাড়ায় নাটক করে সখে সেটাও সমস্যা নয়। সুমন ছোট থেকে মেকআপএর কাজ শিখেছে। বিনামূল্যে মেকআপ করানোর কাজটা ওর বৌএর অপচ্ছন্দের।

কিন্তু সুমনের এটা অদ্ভুত নেশা।ওর অদ্ভুত লাগে কেমন ভাবে একটা মানুষ সম্পূর্ণ অন্য মানুষ হয়ে যায় কিছু চুল দাড়ি গোফ ও প্রসাধনে। নেশার সাথে সাথে ও দক্ষও বটে। সুতরাং প্রায়ই এদিক সেদিক ডাক পড়ে। তবে যারা ডাকে, তাদের নিজেদেরই বিশেষ সঙ্গতি নেই, সুতরাং ওখান থেকে সুমনের রোজগার টু টু উল্লটো খরচ হয়।।

লিলির বিয়েটা হয়েছে প্রেম করে। ও আগে নাটক দলে অভিনয় করতো। এখন সব ছেড়ে দিয়েছে।ওর বয়স সবে তিরিশ ছুঁয়েছে। অসামান্য রূপসী না হলেও, চেহারায় কিছু একটা আছে, পুরুষেরা চুম্বকের মতো আকৃষ্ট হয় , তাছাড়া ওর কন্ঠ স্বরের যাদু আছে।

সুমনের আজকাল লিলিকে নিয়ে চিন্তা।ফেসবুকে প্রায়শই মেসেঞ্জারে উৎপাত, ব্লক আর আনফ্রেন্ড রোজের ব্যাপার। সুমন এ ব্যাপারে পুরো অনভিজ্ঞ এমনটা নয়। যদিও ওর নিজের কোন দামী ফোন নেই। তাই হোয়াটসঅ্যাপও ফেসবুক কিছুই নেই। কিন্তু ছাত্র ছাত্রীদের , বন্ধু বান্ধব দের মোবাইল থেকে মাঝে মাঝে বৌ প্রোফাইল ওপর নজরদারি করে।তবে লাভ হয়নি বিশেষ,কয়েকবার বলতে গিয়ে বেমক্কা ঝামেলা হয়েছে।

এদিকে লিলি এখন নিজের ব্যাপার নিজেই সামলাতে শিখেছে নিয়েছে। এখন কিঞ্চিৎ হেসে কথা বলে। সব  ওর সাথে কথা বলে ভাবে শিকারী পুরুষেরা ভাবে সহজ রাস্তা বোধহয়। এদিকে সুমন আর কোনকিছু বলতে সাহস করেনা ওকে।ত ওর ভোলেভালা বরকে নিয়ে সে দিব্যি আছে।

কিন্তু বিপদ ঘনিয়ে এলো সংসার চালানোর জন্য লিলি যখন একটা কাজ খুঁজলো। কম্পিউটার জানে, ভাষাতে চোস্ত, তার ওপরে মোহময়ী চেহারা, বিশেষ দেরী হলো না রিসেপশানিস্টের কাজ পেতে। মাইনে দশহাজারের কাছাকাছি, সুমনের থেকেও বেশি আয় করবে ও।

চাকুরীর খবর পেয়ে সুমনের র খুশি হওয়া উচিত ছিলো। ও এমনি তে উদার মনের মানুষ। কিন্তু হতে পারলো না খুব খুশি। আসলে ওকে খুশী হতে দিলো না একটাই নাম অভিজিৎ গুপ্ত। অভিজিৎ গুপ্ত স্থানীয় রাজনৈতিক দলের বিজয়ী কাউন্সিলর। গুপ্ত এন্টারপ্রাইজের মালিক। যদিও অনেক মানুষের প্রেরনা তিনি।নিজের চেষ্টায় এক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করছে। বয়েস পঞ্চান্ন ওপর। বড়লোক মানুষ তাই দেখতে চল্লিশের মতো লাগে। অগস্ত্য সমাজসেবী, বহু সাহায্য প্রকল্পের সাথে যুক্ত, পরিশ্রমী এবং সৎ নাগরিক বলে পরিচিত।

সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু সকলেই জানেন শুধু তার একটাই দোষ, নারী। অবিবাহিত ধনী পুরুষ মানুষের ঐ দোষটা থাকা দোষের নয়। প্রেমিকার অভাব নেই তার।লিলি এই গুপ্ত এর মেইন অফিসে চাকরী পেয়েছে। আবার গুপ্তের পিএ হিসাবে।

সুমনের ঘরে ফিরে আজকাল অসহ্য লাগে ।রাতে ফিরে লিলির মুখে বসের অকুন্ঠ প্রশংসায় ম্লান মুখে শুনতে হয়। সবাইকে নাকি তিনি সম্মান দেন, সবার খোঁজ রাখেন, এমনকি তিনি অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আর ফেসবুক গ্রুপ খুলেছেন।ওর জন্মদিন নাকি সেলিব্রেট করার হয়েছে অফিসে কেক কেটে।সুমন মুখ বাঁকাতেও পারে না ।মনে মনে ভাবে শিকার শিকারী জালে এর চেয়ে ফেঁসে আছে। কি করে মুক্তি করবে সে লিলিকে??

শেষ অভিজিৎ এর জন্মদিনে দামী হোটেলে পার্টিতে নিমন্ত্রণ পেলো লিলি । সুমনের যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আসলে লিলি নেয়নি, ও বললো অ্যালাউড নয় নাকি। কিন্তু সোমাদির বর গেছে পার্টিতে। চোখ ধাঁধানো শাড়িতে লিলিকে ওইদিন দেখলে মহাঋষিরও ধ্যানভঙ্গ হতো। শাড়িটা অভিজিৎ দিয়েছে।মাঝরাত ছুঁই ছুঁই সময়ে সেদিন স্বয়ং অভিজিৎ নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো লিলিকে। ক্রমে লিলির আজকাল ফেরার সময় মাঝরাত হয়ে যাচ্ছে।

একদিন অভিজৎ গোপনে ওর মোবাইল চেক করতে গেছিলো, লিলি ধরে ফেলার পরে প্রবল ঝামেলা। মোবাইল তো পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড হলোই, তারপর থেকে যেন একটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হলো স্বামী স্ত্রীতে। পুজোর ঠিক আগে আগে লিলি ভাববাচ্যে ঘোষণা করলো 'স্যার' ওকে মার্কেটিংয়ে নিয়ে যাবেন। ঘুরতে নিয়ে যাবেন বলেছে, ওনার গ্রামের বাড়ির পূজায়।

সুমন সুপুরুষ হবার চেষ্টা করছিল জিমে গিয়ে। কিন্তু আজ ওর চরিত্র দোষ হয়েছে। আজকাল নেশা ভান করছে। ওখানে আলির সাথে। পরিচয় ওর ।আলি সব কিছু বলে ও। আলি বুদ্ধি দিলো ভব লিলা সঙ্গ করে দে। ও একটু এক নালা জোগাড় করে দিলো।

ও নিজেই মেকাপ করলো নিজের। অফিস থেকে মার্কেটিং গেলো অভিজিৎ আর লিলি। মার্কেটিং শেষ একটা রেস্টুরেন্টে বসলো ওরা। ও ওদের পিছনের চেয়ারেই বসলো। সুযোগ মতো মাথার খুলি উরিয়ে দেবে।

লিলি খুব খুশি আজ। অভিজিৎ বললো " টিশার্ট মানবে তো তোর সুমনের"

লিলি বললো " তোমার জামাই এর আবার পছন্দ অপছন্দ আছে নাকি। আমি যা দেবো তাই পড়বে। তবে ও গোলাপি রঙটা পচ্ছন্দ করে।"

অভিজিৎ বললো " ওর ভালো জামা কাপড় নেই বলে আমার জন্মদিনে ওকে আনিস নি আমি কিছু বলি নি। কিন্তু পূজার সময় কিন্তু জামাইকে নিয়ে যাবি আমার গ্রামের বাড়ি। মেয়ে জামাই মিলে আনন্দে কাটাবো পূজাটা।"

সুমন বুঝতে পারলো হ্যান্ডসাম চেহারা সুন্দর হয় । সুপুরুষ হতে লাগে অনেক টাকা। কিন্তু মেয়ে মানুষের প্রিয় পুরুষ মানুষ হতে গেলে ভালো মন থাকলেই যথেষ্ট।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract