সুইজারল্যান্ডের অনুপমা
সুইজারল্যান্ডের অনুপমা
হঠাৎ আজ ভেন্ডার কামরায় উঠলো সৌগত।
-সৌগত!
-অনুপমা তুমি! তুমি তো দু বছর…..
নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে সৌগতর ঠোঁটে হাত দিয়ে সৌগত কে চুপ করালো অনুপমা
-দু বছর সুইজারল্যান্ডে ছিলাম। আবার তোমার কাছে ফিরে এলাম এই ট্রেনের কামরায়।
কথাটা বলেই সৌগতকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো অনুপমা । ঠোঁট দুটো আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে গেল ও।
-----------
আড়াই বছর আগে ফেরা যাক একটু।
----------------
- ষোলো
-আছি
-সতেরো
-পাস, ডাবল
-রিডাবল।
সেদিন প্রচন্ড ভিড় লোকালটায় অন্য কামরায় ওঠার জায়গা না পেয়ে অগত্যা ভেন্ডারের কামরায় উঠে পড়েছে সৌগত।
-দাদা, আমাদের বন্ধুটা নেমে গেল। তো 29 খেলছিলাম। আপনি যদি ।চলবে?
-চলবে মানে! দৌড়বে।
সৌগত ধীরে ধীরে হয়ে উঠলো এক নতুন পরিবারের সদস্য। ট্রেনের ভেন্ডার কামরার সদস্য।
রমা মাসি, ফুল বেচে। তারপর রামু কাকা,ঠেলা গাড়ি চালায়।
শুধু একজন মাসি কিংবা একজন কাকা নয়। এরম শ’ শ’ কাকা আর মাসি।
সৌগত আই.টি সেক্টরে চাকরি করে।
রঞ্জন কোন একটা ক্যাটারিং কোম্পানির মালিক।
অরূপ বড়বাজারে কোন একটা কোম্পানি তে কাজ করে।
সন্দীপ একজন business man।
এরম আরো কত।
29, আড্ডা, গল্প, মস্তি, বেশ ভালোই কেটে যায় ট্রেনের সময় টুকু।
একদিন অনুপমা বলে একটি মেয়ে হঠাৎ করেই ওদের পরিবারের সদস্যা হয়ে উঠলো।
ভারী মিষ্টি মেয়ে অনুপমা। কলেজে পড়ে। সুন্দর ওদের সাথে মিশে গেল দুদিনে।
রাহুল বলে একটি ছেলেও ওদের পরিবারের সদস্য হলো। ও নাকি আবার সিনেমার জুনিয়র আর্টিস্ট।
এরকম ভাবেই পরিবার ক্রমশ চারাগাছ থেকে বিশাল মহীরুহে পরিণত হলো।
গল্পে প্রেম না থাকলে সেই গল্প ঠিক জমে না, কি বলেন!! তো এই গল্পেও প্রেম হলো।
সৌগতর
সাথে অনুপমার। বসন্তে প্রেমের জোয়ারে ট্রেনের ভেন্ডার কামড়া তখন মাতোয়ারা। আর কি অদ্ভুত ব্যাপার জানেন! ওরা ঠিক করলো ওদের বিয়ে টা ট্রেনের মধ্যেই ওরা করবে। ভারী মজার ব্যাপার না!
বিয়ের দিনক্ষণ সব ঠিক। কিন্তু অনুপমার কোনো পাত্তা নেই। তবে কি অনুপমা বিয়ে করবে না! কেউ কিছু বুঝছে না,হাওড়া পৌঁছানোর আগেই রাহুল ট্রেনের সবাইকে ট্রেন থেকে নামতে বললো।
মানে টা কি! হঠাৎ করে কি ব্যাপার!!
কেউ কেউ ভাবলো হয়তো অনুপমা কোনো সাসপেন্স দেবে। নির্ঘাত তাই হবে।
-অনুপমা আসবে না। ও জেলে।
-মানে?
- একটা নারীচক্রে ওকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কাল পুলিশ রেড করেছে।তাই।
-মানে? ও তো কলেজ যেত।
- সে তো সৌগত ও নাকি আই.টি সেক্টরে যায়। কিন্তু লিফলেট বিলি করে ও।রঞ্জন কোনো ক্যাটারিং কোম্পানির মালিক নয়। থালা বাসন মাজে ওখানে।অরূপ বড়বাজারে যায় চায়ের দোকানে কাজ করতে। সন্দীপ মাথায় করে কাপড় বয়ে নিয়ে যায়। আমিও কোনো জুনিয়র আর্টিস্ট নই। শিব সেজে লোকের থেকে পয়সা চাই। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াই। এই ট্রেনের মধ্যে এই মিথ্যে পরিচয় টুকু গুলো নিয়ে আমরা থাকি শুধু কিছু মুহূর্ত সুখে থাকার জন্য। আর কিছু নয়। ট্রেন থেকে নেমেই আবার বাস্তবের মুহূর্ত গুলোর মুখোমুখি হতে হয় যেগুলো খুব নিষ্ঠুর।
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো রাহুল।
--
আজ ভেন্ডার কামরায় উঠলো সৌগত।
-সৌগত!
-অনুপমা তুমি! তুমি তো দু বছর…..
নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে সৌগতর ঠোঁটে হাত দিয়ে সৌগত কে চুপ করালো অনুপমা
-দু বছর সুইজারল্যান্ডে ছিলাম। আবার তোমার কাছে ফিরে এলাম এই ট্রেনের কামরায়।
কথাটা বলেই সৌগতকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো অনুপমা । ঠোঁট দুটো আস্তে আস্তে সৌগতর কানের কাছে নিয়ে গেল ও।
- আমাদের সম্পর্ক টা বেঁচে থাক না ট্রেনের কামরায়।অন্তত এই ছোট্ট জায়গাটায় সত্যি মিথ্যার বিভেদ মুছে গিয়ে শুধু হাসি, সুখ এগুলোই বেঁচে থাক।
সৌগত আর অনুপমা একে অপরের আলিঙ্গনে আবদ্ধ। দুজনের মুখেই অনাবিল হাসি।ফিসফিস করে সৌগত বলল “ তোমায় ভালোবাসি অনুপমা”।