STORYMIRROR

Rima Goswami

Tragedy Classics Inspirational

3  

Rima Goswami

Tragedy Classics Inspirational

স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম

স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম

5 mins
488


স্ত্রী চরিত্র বোঝা স্বয়ং ঈশ্বরের ও সাধ্যের বাইরে তো মানুষ কোন ছাড় ? মরসুমের মত পাল্টে যায় নারীর মনন । তাই কত যুদ্ধ , কত হুল্লোড় আর এই থেকেই সৃষ্টি হয়েছে দুই মহাকাব্য ... রামায়ণ ও মহাভারত । রামায়ণে এক মমতাময়ী মা কৈকেয়ীর মন বিষিয়ে দেয় এক কুচক্রী দাসী কুজি মন্থরা । তারই ফলে সতীনের পুত্র যাকে নিজ পুত্রের থেকেও বেশি ভালোবেসে এসেছিলেন এতদিন সেই রামকে নির্দ্বিধায় পাঠিয়ে দেন বনবাসে । এক দুই বছর নয় দীর্ঘ চোদ্দ বছর যা একপ্রকার বর্তমান কালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডর সমান । সেখানে উপস্থিত হয়েও আর এক নারীর প্রেমের খামখেয়ালির শিকার হতে হলো রামকে । সূর্পনখা লঙ্কাপতি রাবনের ভগিনী ছিল । তার পছন্দ হয়ে যায় রামকে । রাম নিজের স্ত্রীর দোহাই দিয়ে সূর্পনখাকে বিভ্রান্ত করে লক্ষনের দিকে এগিয়ে দেয় । লক্ষণ ছিল একটু মেজাজি সে যখন নাকচ করার পর সূর্পনখা সীতাকে হামলা করতে যায় তখন লক্ষণ তরোয়ালের এক কোপে সূর্পনখার নাক কেটে দেয় । আচ্ছা এটা কোন যুক্তি হলো ? স্ত্রীর অহংকার তার সৌন্দর্য অন্তত সেই যুগে তেমনই ব্যাপার ছিল । তবে লক্ষণ সূর্পনখাকে একদম মেরে ফেলতে পারত খামোখা নাক কেটে দেওয়া কেন বাপু ? এই নাক কাটার ফল হলো সুদুরব্যাপি । ঋষি বিশ্বশ্রবা ও রাক্ষসী কৈকেসির পুত্র রাবণ ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র ও প্রধান নায়ক। তিনি মহাকাব্য ও পুরাণে বর্ণিত লঙ্কা দ্বীপের রাজা। তার বোনের অপমানের বদলা নিতে সে মরিয়া হয়ে উঠলো । একদিন আবার স্ত্রী মনের খেয়ালে সিতা সোনার হরিণ দাবি করে বসলেন আর রাম ও ছুটলেন স্ত্রীর আবদার রাখতে । তাহলে দেখুন নারায়ণের অবতার ও বাধ্য ছিলেন স্ত্রীর আদেশ মানতে তা হলে আপনি তো তুচ্ছ মনুষ্য । লক্ষী অবতার সিতা যে বনবাসে এসেছিলেন তিনিও স্বর্ণের প্রতি ছিলেন আসক্ত তা হলে ভাবেন কি করে আপনার স্ত্রী মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা ভরি প্রতি সোনাকে ত্যাগ স্বীকার করবেন । যাই হোক প্রসঙ্গে আসি । তো রামের না থাকার সুযোগে লক্ষনকে ও সরিয়ে দিয়ে রাবন রামচন্দ্রের পত্নী সীতাকে হরণ করে তিনি লঙ্কায় নিয়ে যান। সীতার উদ্ধারকল্পে কিষ্কিন্ধ্যার বানরসেনার সাহায্যে রামচন্দ্র লঙ্কা আক্রমণ করলে রাবণের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। এই ঘটনা রামায়ণ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য। প্রসঙ্গত বলি মহাকাব্যে কামুক ও ধর্ষকামী বলে নিন্দিত হলেও রাবণকে মহাজ্ঞানী ও তাপসও বলা হয়েছে।

এবার আসি অপর মহাগাথা মহাভারতের কথায় । ব্যাসদেব রচিত মহাভারতের মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। তবে আমরা আজ বসেছি আরো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাতে তা হলো স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা না জানন্তি কুতো মনুষ্যা” - এভাবেই নারীহৃদয়ের বর্ণনা করা হয়ে এসেছে ।

শ্রী গণেশ কর্তৃক লিখিত ব্যাসদেব দ্বারা পরিচালিত মহাভারত রচনা করতে প্রায় তিন বছর লেগে যায়।ব্যাসদেব প্রথমে অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের জয় সূচক উপাখ্যান যুক্ত এক লক্ষ শ্লোক সমন্বিত আদ্য জয় গ্রন্থ রচনা করেন। সর্বশেষে তিনি ষাট লক্ষ শ্লোক সমন্বিত অপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যে গ্রন্থের ৩০ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, ১৫ লক্ষ শ্লোক পিতৃলোকে, ১৪ লক্ষ রক্ষোযক্ষ লোকে স্থান পেয়েছে এবং অবশিষ্ট মাত্র ১ লক্ষ শ্লোক এই মনুষ্যলোকে ‘মহাভারত’ নামে সমাদৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে মহাভারতেই বর্ণিত হয়েছে :

“ত্রিংশচ্ছতসহস্রঞ্চ দেবলোকে প্রতিষ্ঠিতম্॥পিত্রে পঞ্চদশ প্রোক্তং রক্ষোযক্ষে চতুর্দ্দশ।একং শতসহস্রন্তু মানুষেষু প্রতিষ্ঠিতম্॥”

মহাভারতের শুরু চন্দ্রবংসী রাজা হস্তী থেকে হস্তিনাপুরের সূচনা তারপর তার পৌত্রের পুত্র কুরু থেকে বংশের নাম কৌরব । কুরুর পরবর্তী কালে রাজা শান্তনু দ্বারা ঘটে গেছে এক ভুল । শান্তনু প্রথমে পছন্দ করেই বিবাহ করেন দেবী গঙ্গাকে । পুত্র দেবব্রতকে জন্ম দিয়ে গঙ্গা প্রস্থান করেন । কি দরকার ছিল স্বামীকে একা রেখে যাবার জানিনা ! সেই একা রেখে যাবার ফলে শান্তনুর বিক্ষিপ্ত মন করে বসলো একটা ভুল মন দিয়ে বসলেন সত্যবতীকে যে ছিল চেদীরাজ উপরিচর বসু এবং শাপগ্রস্তা মৎস্যরূপিণী অপ্সরা অদ্রিকার কন্

যা। ধীবরদের রাজা দাশ তাকে তার যমজ ভাইয়ের সাথে অদ্রিকার উদরে পান। রাজা বসু পুত্র সন্তানটিকে নিজের কাছে রেখে সত্যবতীকে দাশের কাছে পরিপালন করতে দেন। তার ভাই মৎস্যরাজ নামে এক ধার্মিক রাজা হন। তার গায়ে তীব্র মাছের গন্ধ থাকায় তার আরেক নাম 'মৎস্যগন্ধা'। এজন্য কেউ তার কাছে আসতে চাইত না। তাই পালকপিতার নির্দেশে তিনি যমুনার বুকে নৌকা চালানো আর জেলেনী হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে রাজা শান্তনু তার সৌন্দর্য ও গায়ের সৌরভে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েন এবং দাশরাজেরকাছে বিবাহের প্রস্তাব করলে দাশ বলেন যদি তার কন্যার সন্তানেরা রাজা হন তবেই তিনি কন্যাদান করবেন। এজন্য শান্তনুর জ্যেষ্ঠপুত্র দেবব্রত বাবার জন্য পন করেন তিনি বিবাহ করবেন না আবার রাজাও হবেননা কোনদিন । এই প্রচন্ড পনের জন্য তার নাম হয় ভীষ্ম । অবশ্য আজীবন বকলমে রাজত্ব ভীষ্মই করে গেছেন শুধুমাত্র সিংহাসনে বসেছেন অন্য কেউ । সত্যবতী শান্তনুর মাধ্যমে চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্যেরজন্ম দেন। মহাভারতের মহাযুদ্ধের আয়োজন এখান থেকেই শুরু হয়ে যায় । এর পর আসেন মাঝখানের এক প্রজন্ম বাদ দিয়ে দুই নারী চরিত্র যারা যুদ্ধের অন্যতম হোতা । তার হলেন কুন্তীভোজের পালিতা কন্যা ও পাণ্ডুর স্ত্রী কুন্তী এঁর তিন পুত্র – যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন। আর গান্ধারী যিনি ছিলেন গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা ও ধৃতরাষ্ট্রের ধর্মপরায়ণ পত্নী। মাঝে সত্যবতীর এক পুত্র চিত্রাঙ্গদ মারা যান গন্ধর্বদের সঙ্গে যুদ্ধে আর অপরজন বিচিত্রবীর্য বা রানী অম্বিকা আর আম্বালিকা তেমন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননি কেবলমাত্র ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্ম দেওয়া ছাড়া । কুন্তী আর গান্ধারী বরফ শীতল লড়াই চালিয়ে গেছেন সিংহাসন দখলের । কুন্তী তো অর্জুন পত্নী দ্রৌপদীকেও ইচ্ছা করে ভাগ করে দিয়েছেন পাঁচ পুত্রের মধ্য । যাতে সুন্দরী বিদুষী পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যার জন্য পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি না হয় । যাতে পাঞ্চালি কোনদিন অর্জুনের প্রতি দুর্বল হয়ে তাকে প্ররোচিত না করে । পরবর্তী কালে পাঞ্চালির সম্মানরক্ষাহেতু মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়। কে বলেছে নারী সুরাজনীতিবিদ হতে পারে না ? তার জ্বলন্ত প্রমান হলেন পুরানের এই নারীরা । নারী পুরুষের রূপ বা অর্থে মজে এ বাক্য ভুল প্রমাণিত করেছেন দ্রৌপদী । পঞ্চ পাণ্ডবের মধ্য সব থেকে কম গুরুত্ব পাওয়া সহদেবকে তিনি সেরা আখ্যা দিয়েছেন । দ্রৌপদীর উক্তি থেকে জানা যায়, কনিষ্ঠ পাণ্ডব সহদেব তার অন্যান্য ভ্রাতাদের মতো যুদ্ধে ভয়ংকর এবং নৈতিকতা সম্পর্কে সদা সচেতন। তিনি ছিলেন অসিচালনায় দক্ষ এবং নায়কোচিত, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সদা ভয়ংকর। প্রাজ্ঞদের সভায় বুদ্ধি ও বাকবৈদগ্ধে তাঁর সমতুল্য কেউ ছিল না। মনে করা হয় যে, সহদেব হলেন দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের অবতার। ভীষ্ম ও বিদুরের মতো তিনি সেই অল্প কয়েকজন ব্যক্তি যাঁরা কৃষ্ণের সমসাময়িক ছিলেন এবং কৃষ্ণকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলে বুঝতে পেরেছিলেন। অনেক রাজা কৃষ্ণকে আগে সম্মান প্রদর্শন করতে অস্বীকৃত হলে, তিনিই কৃষ্ণের অগ্রপূজা করেন। ভগবত পূরণে জানা গেছে কৃষ্ণ একবার সহদেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যুদ্ধ থামানোর জন্য কি করা যায়। সহদেব বলেছিলেন, কৃষ্ণকে বেঁধে বন্দী করে সকল পাণ্ডব ও দুর্যোধনকে বনে পাঠিয়ে এবং কর্ণকে রাজা করে যুদ্ধ থামানো যায়। কৃষ্ণ তাকে বেঁধে ফেলতে বললে, সহদেব তাকে শিশু রূপে ধ্যান করেন এবং বেঁধে ফেলেন। সহদেবের ধ্যানে সৃষ্ট বন্ধনাবস্থায় কৃষ্ণ নড়াচড়ার ক্ষমতা হারালে তিনি সহদেবকে দিব্যদৃষ্টি দিয়ে আশীর্বাদ করেন এবং সহদেব তার বন্ধন খুলে দেন। তো হলো কি না দ্রৌপদীর ধারণা ঠিক ? নারীই পারে সঠিক ব্যক্তি নির্বাচন করতে , সুক্ষ রাজনীতি পরিচালনা করতে , যুদ্ধ শুরু করতে আবার শেষ ও করতে । সমস্যা একটা জায়গাতেই সে ভালবাসে একটু নিজেকে আপডেট রাখতে । তাই একটু অপ্রয়োজনীও কেনাকাটি করতেই হয় । নেশা বলতে একটু অলংকার সে হীরেও হতে পারে আবার ঝুটা পাথর ও হলে চলে , সবই পরিস্থিতি নির্ভর । স্বর্ণের আকর্ষণ নারীর রক্তের সঙ্গে বয়ে যায় । কেন যে ঈশ্বর রক্ততে সোনার বদলে লোহা গুলে দিলেন তিনিই জানেন ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy