Ankita Chatterjee

Tragedy Others

4.5  

Ankita Chatterjee

Tragedy Others

সন্তান

সন্তান

11 mins
351


গল্প- #সন্তান

লেখিকা- #অঙ্কিতা_চ্যাটার্জী


১.

চোখে জল নিয়ে এক জায়গায় স্তব্ধ হয়ে বসে আছে রিদান, কথা বলতেও গলা কাঁপছে ওর। সবসময় জেনে এসেছে যে পুরুষ'রা নিষ্ঠুর হয় কিন্তু আজ প্রথম একজন মহিলাকে নিষ্ঠুর হতে দেখলো সে; আর সে সম্পর্কে তার স্ত্রী নাম নীলাঞ্জনা।


অনেক কষ্ট করে রিদান নিজের দুই হাত জড়ো করে নীলাঞ্জনাকে বললো," নীলা প্লিজ এমন করো না। আমি আমাদের সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি, তুমি সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিও না।"


নীলাঞ্জনা যথাসম্ভব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললো," দেখো রিদান আমি এই মুহূর্তে তোমার স্বপ্ন নিয়ে জানতে চাই না। আমিও আমার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি আর আমি এই মুহূর্তে আমার ক্যারিয়ারে সবথেকে শীর্ষে যাওয়ার রাস্তাতেই আছি আর তাই আমি চাইলেও বাচ্চাটাকে রাখতে পারছি না। এবোর্শন করতেই হবে।"


রিদান কাঁদতে কাঁদতে বললো," তোমার ক্যারিয়ার শেষ হবে না নীলা আমি তোমাকে এই গ্যারান্টি দিচ্ছি। তুমি শুধু একটা প্রাণকে হত্যা করো না। প্লিজ নীলা ও তো আমাদের বাচ্চা বলো? তুমি শুধু কষ্ট করে জন্ম দাও ওকে, তারপর থেকে আমিই ওকে দেখবো। ও তোমার ক্যারিয়ারের বাঁধা হবে না তার নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি তোমাকে।"


নীলাঞ্জনা এবার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম না হয়ে বললো," প্রাণ মাই ফুট। পেট আমার, শরীর আমার, ইচ্ছে আমার। আমি চাই না এই বাচ্চা জন্ম দিতে আর এমনিতেও দেড় মাসে এবোর্ট করলে কিছুই হবে না। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেই বাচ্চা নিয়ে ভাববো তার আগে আমার এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। অন্য কারো স্বপ্নর জন্য আমি আমার স্বপ্নকে হত্যা করতে পারবো না। আমি আজই গিয়ে এবোর্শন করিয়ে আসবো সাথে মা'ও যাবে।"


নীলাঞ্জনার কথা শুনে রিদান নিজেকে শান্ত করে বললো," আমি না গেলে এবোর্শন হবেই না। আমার সাইন প্রয়োজন হবে। আর আমি যাবো না।"


রিদানের কথা শুনে নীলাঞ্জনা হাসতে হাসতে বললো," দরকার নেই তোমার যাওয়ার। টাকা আছে আমার কাছে সেটাই এনাফ।"


এবার রিদান নীলাঞ্জনার পায়ে হাত দিয়ে বললো," দয়া করে আমার বাচ্চাটাকে মেরো না নীলা, আমি তোমার সব কথা শুনবো। তুমি যা চায়বে সেটাই হবে শুধু আমার বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আসতে দাও।"


রিদানের কথা শুনে নীলাঞ্জনা কিছু বলবে তার আগেই রিদানের মা এসে বললেন," রিদ এভাবে নীলাকে বিরক্ত করবি না। বাচ্চাটা জন্মালে তোর জীবনে কিছুই পরিবর্তন হবে না কিন্তু নীলার পুরো জীবনটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর এছাড়াও শরীরটা নীলার তাই বাচ্চা রাখবে কি না সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র নীলার আছে তোর নয়।"


নিজের মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শোনার জন্য রিদান প্রস্তুত ছিলো না, নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে বললো," তুমি এই কথা বলছো মা?"


রিদানের মা রিদের কথার উত্তর না দিয়ে নীলাঞ্জনাকে বললেন," নীলা দ্রুত চলো। আমি অন্য শ্বাশুড়ির মতো না, আমি সবার আগে তোমার ভালো চাই।" কথাটা বলেই তিনি চলে গেলেন এবং তারপরই নীলাঞ্জনা চলে গেলো। হাতে, পায়ে ধরেও রিদান কিছু করতে পারলো না, সত্যিই তো ওর কি অধিকার আছে বাচ্চার ওপর? বাচ্চা জন্ম দেবে তার স্ত্রী, সে কে হয়? যদি সে বলতো এবোর্শন করার ব্যাপারে তখন সেটা অন্যায় হতো। সত্যিই তো একটা বাচ্চার ওপরে বাবার কোনো অধিকারই থাকে না, তাই তো জন্ম দেওয়ার ব্যাপারেও কিছু করতেই পারলো না। রিদান চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো," আমাকে ক্ষমা করে দিস, পারলাম না আমি তোকে বাঁচাতে। আমার মতো মানুষের তো বাঁচারই অধিকার নেই যে নিজের অনাগত সন্তানকে রক্ষা করতে পারে না তার কী বাঁচার অধিকার আছে? না নেই কিন্তু আত্মহত্যা তো মহাপাপ, সেটাও করতে পারবো না নয়তো সেটাই করতাম।"


২.

একটা মানুষকে পরিবর্তন করতে একটা ঘটনাই যথেষ্ট। আজ দুদিন হয়ে গেলো নীলাঞ্জনার এবোর্শনের, এবোর্শনের পর থেকে নীলাঞ্জনা খুব খুশি সাথে রিদানের মা'ও; কিন্তু এই দু'দিন একটা অন্নর দানাও মুখে তোলেনি রিদান। সন্তানের মৃত্যুতে কোনো বাবা কি খাবার খেতে পারে যে রিদান খেতে পারবে? 


রিদান আজ সুহানীর সাথে দেখা করতে এসেছে, সুহানী তার ছোটবেলার বান্ধবী; একসাথে স্কুলে পড়েছে তারা। বর্তমানে সুহানী পেশাতে একজন জেনারেল ফিজিশিয়‍্যান।


রিদানের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে সুহানী আঁতকে উঠে বললো," কী হয়েছে তোর রিদ?"


রিদান কিছু একটা ভেবে মৃদু হেসে বললো," জানিস সুহানী আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট কিন্তু আমি এখনই বাবা হতে চাই না কিন্তু নীলা মা হতে চাই। তো এখন আমি কী করতে পারি?"


সুহানী তৎক্ষণাৎ বললো," পাগল হয়েছিস? নিজেকে প্রিপেয়ার কর বাবা হওয়ার জন্য, তুই কিছু করবি না। বাবা হওয়ার জন্য প্রস্তুত নোস যখন তখন বিয়ে না করলেই পারতি। ছিঃ"


রিদান তৎক্ষণাৎ বললো," আরে তুই ভুল শুনেছিস। আমি না আমার ওয়াইফ মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত না, আমি তো অনেক অপেক্ষা করে ছিলাম বাচ্চাটার জন্য।"


সুহানী রিদানের কথা শুনে বললো," শরীর নীলার, ইচ্ছে নীলার। তুই কে ওকে অর্ডার করার? বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনবে কি না সেটা সম্পূর্ণ নীলার ব্যাপার তোর না। নীলার জায়গায় তুই নেই তাই বুঝতে অক্ষম তুই। নীলা এবোর্শনের সিদ্ধান্ত যদি নেয় সেটাই বেটার হবে।"


সুহানীর কথা শুনে রিদান উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে বললো," উফঃ কতো কিছু যে বলিস তার নেই ঠিক। বাবার ইচ্ছে না থাকলে এবোর্শন করালে পাপ আর মায়ের ইচ্ছে না থাকলে সেটা তার স্বাধীনতা। যদি আমার ওয়াইফের কাজটা অন্যায় না হয় তাহলে সেই সব স্বামীরাও অন্যায় কাজ করে না যারা তাদের স্ত্রী'দের এবোর্শন করতে বাধ্য করে। একই তো ব্যাপার, বাচ্চার জীবনে তো বাবারও ভূমিকা থাকে। দারুন না?" কথাটা বলেই উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। রিদানের মনে হচ্ছে যে সবাই এক, এই সময় তার সবথেকে বেশি প্রয়োজন প্রেরণার কিন্তু তাকে কোথায় পাবে?


৩.

সময় নিজের স্রোতে অতিবাহিত হয়েছে, সেই সাথে অতিবাহিত হয়েছে রিদানের জীবন। রিদান আগের মতোই আছে শুধু এই চার বছরে বেশিরভাগ রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। এছাড়াও পরিবর্তন হয়েছে রিদান ও নীলাঞ্জনার সম্পর্কে, রিদান এখন নীলাঞ্জনার সাথে কথাও বলে না, বাড়িতেই থাকে খুব কম এছাড়াও নিজের মায়ের ও স্ত্রী'র হাতের রান্না তো খাই ই না। 

তবে এতোকিছুর মধ্যে একটা ভালো জিনিস হয়েছে যে প্রোমোশনের জন্য অর্থাৎ ক্যারিয়ারের যে শীর্ষে যাওয়ার জন্য নীলাঞ্জনা এবোর্শন করিয়েছিলো সেটা সফল হয়েছে। এবার ও নিজেও বাচ্চার নিয়ে ভাবতে চায় কিন্তু তার আগে রিদানের সাথে কথা বলতে হবে। 


৪.

বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে প্রেরণা, কিন্তু আজ যেনো বাসের দেখাই পাওয়া যাবে না। প্রেরণা বিরক্ত হয়ে সামনে তাকিয়েই দেখলো যে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রিদান ফোনে কারো সাথে কথা বলছে আর পাশেই ওর বাইক স্ট্যান্ড করা। প্রেরণা একপ্রকার দৌঁড়ে রিদানের কাছে গেলো।

হঠাৎ করে কাউকে এভাবে আসতে দেখে চমকে উঠলো রিদান কিন্তু প্রেরণাকে দেখে চমক অবাকে রূপান্তরিত হলো। 

রিদান কিছু বলবে তার আগেই প্রেরণা বললো," রিদ প্লিজ বাড়ি পৌঁছে দে, আমার মেয়েটা কাঁদবে আমার জন্য এবার। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে আমার।"


প্রেরণার কথা শুনে রিদ কল কেটে ফোন পকেটে রেখে বাইক স্টার্ট করে বললো," চল। আর এতোদিন কোথায় ছিলি?"


প্রেরণা বাইকে চড়ে বাড়ির এড্রেস দিয়ে বললো," এখন আমি ওখানেই থাকি তাই অন্য কোথাও নিয়ে যাস না। আর বলবো সব তার আগে এটা বল তো তোর এমন বিধ্বস্ত অবস্থা কেনো?"


রিদান বললো," আমার বাচ্চাটা চার বছর আগে মারা গিয়েছে, তারপর থেকে আমি আর ভালো নেই।"


রিদানের কথা শুনে চমকে উঠলো প্রেরণা, চার বছর আগে তো রিদানের কোনো বাচ্চা ছিলো বলে প্রেরণা জানে না। প্রেরণা অবাক হয়ে বললো," চার বছর আগে তোর কোনো বাচ্চা ছিলো?"


রিদান বাইক চালাতে চালাতে বললো," না রে প্রি কিন্তু আমার বাচ্চা হতো। নীলা প্রেগন্যান্ট ছিলো, কিন্তু প্রোমোশনের জন্য এবোর্শন করেছিলো। তাহলে আমার বাচ্চার মারা যাওয়া হলো না? এখন এটা বলিস না যে শরীরটা নীলার আর তাই ইচ্ছেটাও নীলার।"


প্রেরণা হালকা হেসে বললো," এই চিনলি তুই আমাকে রিদ? যার কারণেই এবোর্শন হোক না কেনো আল্টিমেট একটা বাচ্চার প্রাণ নেওয়াই।"


কথা বলতে বলতেই প্রেরণার বাড়ি পৌঁছে গেলো ওরা। বাইক থেকে নেমেই প্রেরণা বললো," চল আমার মেয়ের সাথে দেখা করাবো তোকে।"


বাচ্চা মেয়েটার সাথে দেখা করার লোভ সামলাতে পারলো না রিদান, তাই ও প্রেরণার সাথে গেলো।


প্রেরণাকে দেখে ওর মেয়ে রিয়া দৌঁড়ে আসলো। প্রেরণাও মেয়েকে পরম মমতাই কোলে নিলো, মেয়েটার বয়স আনুমানিক তিন বছর হবে। রিদান মেয়েটাকে দেখে বললো," প্রি বলছি যে তোর মেয়ে.."


রিদানের কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রেরণা বললো," আমার মেয়ের সাথে পরিচয় করবি না? ও রিয়া আর এক মাস পরই তিন বছরে পা দেবে। আর মামনি এই হচ্ছে রিদ আঙ্কেল।"


রিদান পরম স্নেহে রিয়াকে কোলে তুলে নিলো, ওকে কোলে নিয়ে মনে হলো যেনো নিজের সন্তানকে কোলে নিচ্ছে; চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। একটু পরই রিয়া নিজেই দৌঁড়ে অন্য রুমে চলে গেলো; এর মধ্যে প্রেরণাও ফ্রেশ হয়ে এসে গিয়েছে আর রিয়ার ন্যানিও চলে গিয়েছেন।


প্রেরণা রিদানের প্রশ্নবিদ্ধ চেহারা দেখে হেসে বললো," জানিসই তো যে পাঁচ বছর আগে আমি চাকরির জন্য অন্য শহরে গিয়েছিলাম। সেখানেই রোহন নামের একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। গভীর সম্পর্কের ফল আমার মেয়ে, রোহন পরিস্কার করে বলে দিয়েছিলো এবোর্শন করাতে কিন্তু আমি করিনি। হ্যাঁ এটার জন্য আমাকে আমার পরিবারের সাথে সম্পর্ক শেষ করতে হয়েছে। আমি না কি পরিবারের মুখে চুনকালি মাখিয়েছি। আমি রিয়াকে জন্ম দিয়েছি সবার বিপক্ষে যেয়ে। একটা ভুল করে এবোর্শন করে সেই ভুলকে মুছে ফেলা খুবই সহজ কিন্তু সবার বিপক্ষে যেয়ে নিজের সন্তানকে জন্ম দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেওয়াটা খুবই কঠিন। আমি ভুল করেছিলাম রোহনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে এটা আমি মানছি কিন্তু রিয়াকে জন্ম দিয়ে আমি কোনো ভুল করিনি। জানিস রিদ আমি এক্ষেত্রে কি মনে করি? একটা মেয়ে চায়লে তার সন্তানকে জন্ম দিতে পারে কারণ বাচ্চা তো মায়ের গর্ভে থাকে কিন্তু যদি একটা মেয়ে না চায় বাচ্চা জন্ম দিতে তাহলে সম্ভব হয় না খুব একটা সেই বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনা যেটা তোর ক্ষেত্রে হয়েছে। বাচ্চা তো বাচ্চাই হয়, জন্মের পর তাকে জীবন্ত মানুষ ভাবা আর গর্ভে থাকার সময় শুধুমাত্র একটা ভ্রূণ ভাবা কি উচিত? বয়স গর্ভে থাকা একমাস হোক কিংবা জন্মের পর এক মাস আমার কাছে ব্যাপারটা একই। তাই সন্তানকে ভালোবাসতে হলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর না, তার আগেই ভালোবাসা উচিত।"


প্রেরণার কথা শুনে রিদ বললো," প্রি তোর মেয়ের বাবা হওয়ার সুযোগ দিবি আমাকে? বিশ্বাস কর আমি ওকে কখনো অবহেলা করবো না।"


রিদানের কথা শুনে প্রেরণা বললো," রিদ আই থিংক তোর ঘর যাওয়া উচিত। আমি কোনো সম্পর্কে বিশ্বাস করতে পারবো না স্যরি। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ভালো আছি।"


৫.

"তুমি আমাকে আর ভালোবাসো না কেনো রিদান?" রিদান বাড়িতে প্রবেশ করামাত্র নীলাঞ্জনা কথাটা বলে উঠলো। 


রিদান মুচকি হেসে বললো," কারণ এখন তোমাকে দেখলেই আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয়। তাহলে তোমার প্রতি ভালোবাসা আসবে কী করে?"


কথাটা শোনা মাত্র রিদানের মা এসে বললেন," মুখ সামলে কথা বল রিদ। বাড়ির লক্ষ্মীর সাথে এভাবে কথা বলে কেউ?"


রিদান সরাসরি বললো," সবসময় অন্যের কথার মাঝে নাক কেনো গলাও তুমি? তোমার শ্বাশুড়িও কী সেটাই করতো? উপ্স স্যরি। ঠাম্মী অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।"


নীলাঞ্জনা জোর গলায় বললো," রিদান! মায়ের সাথে এভাবে কথা বলে কেউ?"


রিদান স্পষ্ট বললো," এই দেখো তোমাদের সাথে কথা বলার রুচি আমার অন্তত নেই। গায়ে পড়ে কথা বলতে আসলে আমি কী করতে পারি?"


রিদানের কথা শুনে ওর মা আর নীলাঞ্জনা নিজের নিজের ঘরে চলে গেলেন। 


রিদ রান্নাঘরে এসে নিজের জন্য রান্না করার সময় নিজের মনেই বললো," আমার সন্তান বেঁচে থাকলে ও আজ রিয়ার মতোই হতো শুধু কয়েক মাস বড়ো হতো। কিন্তু আফসোস আমি তোকে বাঁচাতে পারলাম না। আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করিনি কোনোদিন তাহলে আমার বাচ্চার সাথে এতোকিছু কেনো হলো?"


তারপর থেকে রিয়ার বাবা হওয়ার আগ্রহ অনেকবার প্রকাশ করলেও প্রতিবারই প্রেরণা সেটা রিজেক্ট করে দিয়েছে। আজ আবারও রিদানের এই কথা শুনে প্রেরণা বললো," আমি বিয়ের সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছুক না রিদ। আমি চাই না বিয়ে করতে, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে খুব ভালো আছি। তোর যখন ইচ্ছে হবে রিয়ার সাথে এসে দেখা করে যাস আমি তোকে আটকাবো না শুধু আমাকে কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ করতে বাধ্য করিস না।"


রিদান অশ্রুসজল চোখে বললো," প্লিজ প্রি। আমি রিয়ার মধ্যে আমার হারানো বাচ্চাটাকে খুঁজে পাই। আমি রিয়ার বাবা হতে চাই।"


প্রেরণা রিদানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বললো," মানুষ যা কিছু করে সেসব নিজেই ফিরে পায়। তোর সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার ন্যায় তুই ঠিকই পাবি। ভগবান ঠিকই তোকে ন্যায় দেবেন আর প্রকৃতির বিচার মারাত্মক হয়। তোর বাচ্চাটা ন্যায় পাবে। রিয়ার মধ্যে তুই নিজের বাচ্চাটাকে খুঁজে পাস আমি সেটাও বুঝতে পারি আর তাই তো আমি বলছি তোকে যখন ইচ্ছে আসবি ওর সাথে সময় অতিবাহিত করবি শুধুমাত্র ওর বাবা হতে হবে না। আমি জানি তুই নিঃসন্দেহে একজন ভালো বাবা হবি কিন্তু তাও আমি চাই না।"


প্রেরণার কথা শুনে রিদান বেরিয়ে গেলো ওর ঘর থেকে, সেদিকে তাকিয়ে প্রেরণা বললো," স্যরি রিদ। আমি আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারবো না।"


৬.

রিদ নিজের রুমে বসে বই পড়ছিলো ঠিক তখনই নীলাঞ্জনা রিদের কাছে এসে বললো," তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।"


রিদ হাতের বইটা পাশে রেখে বললো," আমারও তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো। আমি তোমার রুমে যেটা রেখে এসেছিলাম সেটাতে সাইন করেছো?"


নীলাঞ্জনা দৃঢ় কণ্ঠে বললো," না আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করিনি আর করবোও না। তুমি এবার আমার কথা শোনো। অনেক দিন ইনফ্যাক্ট অনেক বছর হয়ে গেলো আমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এবার সবকিছু ঠিক করার সময় এসেছে। আমি একটা বাচ্চা চাই রিদান।"


রিদান শান্ত স্বরে বললো," বাচ্চা চায় তো আমাকে বলছো কেনো নীলা?"


নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে বললো," কারণ সেই বাচ্চার বাবা তুমি হবে।"


রিদান আবারও শান্ত স্বরে বললো," শরীর তোমার, ইচ্ছে তোমার, বাচ্চাকে জন্ম দেবে তুমি তো আমার সাথে কী সম্পর্ক?"


নীলাঞ্জনা রাগত স্বরে বললো," এসব কী বলছো তুমি রিদান? আমি একটা স্বাভাবিক কথা তোমাকে বলছি তুমি সেটা এভাবে বলছো কেনো?"


রিদান এবার বললো," কারণ আমি চাই না আমার সন্তানের জন্ম হোক তোমার মাধ্যমে।"


নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে বললো," কী? কিন্তু কেনো?"


রিদান হেসে বললো," শরীর আমার, ইচ্ছে আমার। নিজের সন্তান প্রয়োজন হলে আমি সারোগেট মাদারের মাধ্যমে আমার বাচ্চাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসবো, কোনো প্রবলেম নেই। আর তোমার ক্ষেত্রেও তো শরীর তোমার, ইচ্ছে তোমার তো এসবের মধ্যে আমার প্রয়োজন নেই বলেই আমি মনে করি।"


নীলাঞ্জনা কিছু বলবে তার আগেই রিদান আবারও বললো," তুমি আমার সন্তানকে হত্যা করেছো নীলা আমি আর চাই না যে তুমি আমার বাচ্চার মা হও। আমি তোমার থেকে তো অনেকদিন আগে থেকেই ডিভোর্স চাইছি, তুমিই দিতে ইচ্ছুক না। কী লাভ এই সম্পর্ক'টা রেখে? এই বাড়িতে থাকা ছাড়া তুমি আর কী সুবিধা পাও? তুমি মডার্ন মেয়ে, বাঁচার জন্য আমার প্রয়োজন তো অন্তত তোমার নেই তাও তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও না। কিন্তু কেনো?"


নীলাঞ্জনা বললো," তুমি আমাকে কেনো ডিভোর্স দিতে চাও?"


রিদান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো," আমি আনার সন্তানের হত্যাকারীর সাথে সংসার করতে পারবো না তাই। আজ চার বছর হয়ে গেলো তাও তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও না, এটা উচিত না। তুমি আমার থেকে আর কিছুই পাবে না, কারণ তুমি আমার সন্তানের খুনী।"


রিদানের কথাটা শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো নীলাঞ্জনার, কাঁপা কাঁপা পায়ে বেরিয়ে গেলো রিদানের ঘর থেকে।


রিদান নীলাঞ্জনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো," এই মেয়ে ডিভোর্স দেবে বলে তো মনে হচ্ছে না, আমিই এই ঘর ছেড়ে চলে যাবো। তারপর এরা যা ইচ্ছে সেটাই করুক। আমার বিশ্বাস আমার বাচ্চা ন্যায় পাবে একদিন না একদিন।"


                সমাপ্ত 


( কিছুটা অসমাপ্ত গল্প, ছোটো গল্প বলেই এভাবে শেষ করলাম। এরপর কি হতে পারে সেটা পাঠকদের ওপর নির্ভর করছে। কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে গল্পটা লেখা নয়, এমনিই একটা টপিকে ইচ্ছে হলো লেখার তাই লিখলাম। ধন্যবাদ। )


©অঙ্কিতা চ্যাটার্জী (1.6.22)


নমস্কার 🙏🏻


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy