অর্ধাঙ্গিনী
অর্ধাঙ্গিনী
পুরো বাড়িটাকে কত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, চারিদিকে আলোর ছড়াছড়ি, আর আমার হাতেও মেহেদী লাগানো হলো , কিছুক্ষন আগেই তাই আমার বাড়িটাকেই আর ছোয়া হলো না, একটুপর পাশের বাড়ির কাকিমা আসবে তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য, ও আমিতো বলতেই ভুলে গেছি আজ কী?
আসলে আজ গায়ে হলুদ বা আইবুড়ো ভাত (যা ইচ্ছে বলতে পারেন) ছিলো, আর কাল বিয়ে , আমাদের গায়ে হলুদের দিনের বেলা বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খাওয়া হয় আর রাত্রে বেলা অন্য কারোর বাড়িতে খেতে হয় তাই কাকিমার বাড়িতে নিমন্ত্রণ, আর মেহেদী ও কিছুক্ষণ আগেই লাগানো হলো।।
আমি নিজের পরিচয় তো দিলাম না, আমার নাম শ্রেয়া সিনহা, আমেরিকার নাম করা বিজনেস টাইকুন মি: সিনহা র মেয়ে, ছোট থেকেই বাবা মার অনেক ভালোবাসা পেয়েছি আর দাদার স্নেহ কিন্তু যেই দেশের গ্রীন কার্ডের জন্য লোকে কতো কী না করে আর আমার সেই দেশে জন্ম হওয়ার পরও আমাকে কাল বা দুদিন পরে চিরতরে ইন্ডিয়া চলে যেতে হবে।।
আমি আমার দেশ কে খুব ভালোবাসি কিন্তু আমার ইচ্ছে আমার মা বাবা কে ছেড়ে যাবোনা, তাই চেয়েছিলাম ক্যালিফোর্নিয়াতে বিয়ে করতে তা আর হলোনা, খুব খারাপ লাগছে নিজের জায়গা ছেড়ে যেতে , নিজর জায়গায় তো জন্ম থেকে আছি এখানে।।
আমার যার সাথে বিয়ে হবে তার নাম আকাশ চ্যাটার্জী , সেও নাকি আমাদের ইন্ডিয়ার আকাশ ছোঁয়া বিজনেসম্যান, শুনেছি হাতে মেহেদী লাল হলে স্বামীর ভালোবাসা বাড়ে, আমার মেহেদী র রং দেখি তারপর নাহয় বলা যাবে, যখন আমি জানি আমাকে সেই মানুষটার সাথে থাকতে হবে সারাজীবন তাহলে আমিও তার যোগ্য # অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার চেষ্টা করবো।।
অনেক কথা বললাম আমার মেহেদীও শুকিয়ে গেছে উঠিয়ে দিলাম, সত্যি অসম্ভব লাল হয়েছে, এতক্ষনে মাম্মা মানে মাও চলে এলেন,
মাম্মা- শ্রেয়া।।
শ্রেয়া- হ্যাঁ মা।।
মাম্মা- চল, তোর কাকিমা নীচে আছে ।।
শ্রেয়া- হুম চলো।।
মাম্মা- আর শোন
শ্রেয়া- হুম
মাম্মা- দিয়া কে নিয়ে যা,ওই তোকে খাইয়ে দেবে।।
শ্রেয়া- কেনো মাম্মা?
মাম্মা- যা বললাম কর, ওকে নিয়ে যা।।
শ্রেয়া- আচ্ছা।।
( অনেকে ভাববেন শ্রেয়া ক্যালিফোর্নিয়া তে থাকার পরও ইন্ডিয়ান মানুষ কোথায় পাচ্ছে তাই বলি, শ্রেয়া ইন্ডিয়ান কলোনি তে থাকে)
অতঃপর আমি , রিয়া কাকিমার সাথে এলাম।।
রিয়া- দি তোর মেহেদী টা দেখানা?
শ্রেয়া- (রিয়া আমার কাজিন,) হুমম ( হাতটা দেখিয়ে)।।
রিয়া- ওয়াও, জিজু তোকে অনেক লাভ করবে এত লাল হয়েছে মেহেদী।।
শ্রেয়া- জানিনা।।
কাকিমা- হ্যাঁ রে শ্রেয়া কথাটা সত্যি।।
শ্রেয়া- কি কথা কাকিমা?
কাকিমা- কিছুনা।।
কাকিমা তো অনেক কিছু করেছে, লুচি, মিষ্টি , তরকারি ( ডাল, বাঁধাকপি, ঘুগনি)।।
শ্রেয়া- কাকিমা এত কিছু কেন করলে?
কাকিমা- মা রে তুই একবার ইন্ডিয়া যাবার পর আবার কবে আসবি তাই করলাম, রিয়া সব খাইয়ে দে ,তারপর তোকে দেবো।।
রিয়া- ডোন্ট ওয়ারি আন্টি আমি দি কে খাইয়ে দিচ্ছি।।
রিয়াই আমাকে সব খাইয়ে দিলো, খুব মনে পড়বে এই দিনগুলো, জানিনা আবার কবে পাবো এই দিনগুলো?
শ্রেয়া- (আজ রিয়াই আমার সাথে থাকবে সারারাত, বাড়িতে যেয়ে দেখি দাদা বসে আছে,)
শ্রেয়া- দাদা।।
সূর্য( শ্রেয়ার দাদা) - বুনু ( শ্রেয়ার দাদা ডাকে) আয় বোস।।
শ্রেয়া- দাদা যদি ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকতাম তাহলে কি খুব বেশি অসুবিধা হতো?
সূর্য- না রে বুনু, আমিও ভেবেছিলাম তোকে এখানেই রাখবো কিন্তু পাপা ( শ্রেয়া আর সূর্যর বাবা) তো শেখর আঙ্কেলকে বলেছেন তার ছেলে মানে আকাশের সাথে বিয়ে দেবেন,তাই, চিন্তা করিস না আবার কিছুদিন পরে তো আসবি।।
শ্রেয়া- দাদা তুইও জানিস আমিও জানি বছরে একবার আসতে পারবো তাও প্রবলেম হলে হবে না।।
সূর্য- তুই ঠিক আসবি আর তুই না এলে আমি আছি না আমি যাবো তো।।
( আসলে বড়ো দাদারা এমনই হয়, তারা বোন দের খুব ভালোবাসে )
শ্রেয়া- দাদা খেয়েছিস?
সূর্য-( কি করে খাই কাল আমার বুনুর যে বিয়ে তারপর আবার কবে দেখা হবে) হুম।।
শ্রেয়া-আমি জানি তুই খাসনি, দাঁড়া।।
তারপর আমিই খাবার এনে দাদাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলাম।।
সূর্য- বুনু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা, সকালে উঠতে হবে।।
শ্রেয়া- হুমম,তুই ও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবি।।
সূর্য- হুম।।
চলে এলাম কিন্তু সারারাত ঘুম এলো না আমার সাথে রিয়াও জেগে ছিল।।
ভোর 4:25
সবাই আমাকে বলে গেল তাড়াতাড়ি করে স্নান , পুজো করতে তারপর দই চিড়ে খেতে হবে।।