স্মৃতিতে প্রিয় লেখক
স্মৃতিতে প্রিয় লেখক
জীবনের অনেকগুলো অধ্যায় এমনি এমনি কাটিয়ে এলাম। ভবঘুরের জীবন বাছার কথা ছিল কিন্তু হলনা, ভেবেছিলাম সন্নাসী হব অথবা বাউল। গান যদিও জানিনা। কিন্তু সেসব কিছুই হলনা। পরিবারের চাপে ন্যাচার কলিং এর চাপে নিজেকে আর রুখতে না পেরে সেই গিয়ে সংসারের যাঁতাকলে নিজেকে নিজে থেকেই সঁপে দিলাম।
আজকে যার কথা লিখতে বসেছি তিনি কিন্তু সেসব কিছুই করেননি। চিরটাকাল যা মন চেয়েছে , যেমন ভাবে চেয়েছে তিনি নিজের জীবনটাকে ঠিক সেভাবেই চালনা করেছেন।ছোটবেলায় তার গল্প তার অন্যান্য রম্যরচনা পড়ে হেসে হেসে গড়াগড়ি খেতাম। তখনও ভাবিনি, যে এত হাসির কথা লিখতে পারেন তার জীবনটা ঠিক কেমন হবে। তখন অতশত ভাবার সময়ও ছিলনা আর বয়সও ছিলনা।
লেখক একজনকে বলেছিলেন “আমার লেখা ছোটবয়সে ক্ষুদেরা পড়বে আবার বড় হওয়ার সাথে সাথে ভুলেও যাবে।“ হ্যাঁ আমিও ভুলেই গেছিলাম।একেবারেই ভুলে গেছিলাম। তারপর বড় হলাম, সংসার গড়লাম। টুকটাক লেখা শুরু করলাম। তখন একদিন “আনন্দবাজার পত্রিকায়” একটা লেখা পড়লাম সেই ছেলেটিকে নিয়ে।অসাধারন একটা লেখা পড়লাম সেদিন। বুকের ভেতরের অতীতটা যেন আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ সব একসাথে মিশিয়ে দিয়ে আবার নতুন করে ভাবাতে লাগলো।
না, লেখাটা কোনভাবেই আমার পেশা নয়। লেখাটা কেবলই আমার নেশা। তার জীবনের প্রতিটা অধ্যায়ে একটা করে ট্রাজেডি আছে। কেবল সংসার নামক ঘানিতে পিষে তিনি জীবন অতিবাহিত করেন নি।
এই ভবঘুরেকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার হাত বহুবার কেপেছে,কিন্তু মন এক জায়গায় স্থির ছিল।আমার সামনে তিনি কখনও আসবেন না জানি। কিন্তু তাকে সামনে না ভেবে লেখাটাও মুশকিল। তিনি নিজের জীবনী নিজেই লিখে গেছেন যদিও লেখক হওয়ার তার কোন স্বপ্ন ছিলোই না।তিনি বারবার বলেছেন তিনি আসলেই পেটের দায়ে লেখক হয়েছেন। যখনই তার টাকার টান পড়ত তখনি তিনি তার কলম ঘষতেন খাতার পাতায়।
জীবনে অনেক লেখকদের নিয়ে পড়েছি। অনেকে তাদের দুঃখের কাহিনী শুনিয়েছেন তার লেখার মাধ্যমে কিন্তু আমার এই ভবঘুরে সারাজীবন “একদম ফাস্ট-ক্লাস আছি” এই ডাইলগ দিয়েই কাটিয়ে দিলেন। এমনকি মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের ওই মেস বাড়ির একটা কামরায় মৃত্যু-শয্যাতেও তিনি নিজেকে “ফাস্ট-ক্লাস”বলেই মুক্তি নিয়েছেন। যে মানুষটার মরন আসন্ন সে কিভাবে নিজেকে “ফাস্ট-ক্লাস আছি” বলতে পারে আমার জানা নেই। কতটা মনের জোড় থাকলে একথা বলা যায় তার কল্পনা আমি আর আপনি দুজনেই হয়ত কোনদিন করতে পারব না। তার লেখার মতই এই ছেলেমানুষী গুলোই আমাকে তার প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট করে তুলেছে।
আজ তার জন্মদিনে অন্তর থেকে তাকে অনেক শ্রদ্ধা ভালোবাসা।