মঙ্গলগঞ্জের মঙ্গলকান্ড
মঙ্গলগঞ্জের মঙ্গলকান্ড
অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরছি বাসে।
কানে হেডফোন, হেডফোনে অরিজিৎ সিং এর ইলাহি মেরা জি আয়ে আয়ে গানটা। খুব ভালোবাসি গানটা। ভ্রমন প্রিয় মানুষগুলো এইসব গান পছন্দ করে বেশি। বাইরে তখন ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। ফেব্রুয়ারি এর শেষের দিকে। ঠান্ডা নেই বললেই চলে।
হঠাৎ অভীক দার ফোন। আমি ভাবলাম আবার কিছু এন্ট্রি ভুল করে এসেছি মনে হয়। ভয়ে ভয়ে ফোনটা তুললাম।
"হ্যা বলো!"
"আরে একটা ভালো জায়গার সন্ধ্যান পেয়েছি রে।" অভীক দা একদম উৎসাহের সাথে বলল।
আমি তো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। "কোন জায়গা?"প্রশ্ন করলাম।
"কাল অফিস আয় বলছি।" ফোনটা কেটে দিলো অভীক দা। আমি মনে মনে ভাবলাম এটা কি কাল অফিসে এলে বলা যেত না। বেকার টেনশন এ আমার হাল খারাপ হয়ে গেলো।
পরদিন সকালে অফিসে গেলাম। অভীক দা এসেই আগে আমার টেবিলে এলো।
"আরে কাজ রাখ। শোন জায়গাটা হলো মঙ্গলগঞ্জ।" অভীক দা বলল।
আমি প্রথম নাম শুনলাম জায়গাটার। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম "সেটা আবার কোথায়?"
অভিক দা হেসে বলল "বোকা মঙ্গলগঞ্জ তো মঙ্গল গঞ্জে।"
"উফফ লোকেশন টা কোথায়?" বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করলাম।
"তুই সবাই কে বল। আমি যেখানে নিয়ে যাব যাবি।"
অভীক দা বলল।
অগত্যা আর প্রশ্ন করলাম না।
আমাদের অফিসে অভীক দার কাজ ছিলো জায়গা ঠিক করা। আর আমার কাজ লোক জোগাড় করা থেকে শুরু করে বুকিং এমনকি সব খরচা করাও আমারই দায়িত্ত্ব ছিলো। পরে অবশ্য সবাই যে যার টাকা দিয়ে দিত। আবার আপনারা এটাকেই আমাদের মেন কাজ ধরবেন না। আমরা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি তে জব করি।
অফিসে আমাদের ডিজাইন ডিপার্টমেন্ট এ আমায় নিয়ে ছয়জন। আগে অনেকবার এই ছয় জন মিলে ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু এবারে জায়গার নাম শুনে কেউ যেতে রাজি নয়। এদিকে অভীক দা আমায় ছাড়বে না। আমি আর কি করি। আমার কয়েকটা বন্ধুকে বললাম। চার জনের মধ্যে একজন রাজি হলো। আমার ভাইকে বললাম, দেখলাম ও একবারে রাজি হয়ে গেল। ও আবার ওর এক বন্ধুকে বলল।
সেও রাজি। ঠিক হলো আমরা এই পাঁচ জনেই যাবো মঙ্গল গঞ্জ। আমি , অভীক দা, রতন ( আমার বন্ধু), রনি (আমার ভাই) আর কৌশিক (ভাইয়ের বন্ধু)।
পাঁচ জনের দুটো টেন্ট বুক করলাম।
যাওয়ার দিন ঠিক হলো 7 ই মার্চ ২০২০।
এসে গেল 7ই মার্চ। সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো বাইরে। তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল। আমি আগের দিন চলে গেছিলাম রতন এর বাড়ি। অভিক দা আসবে হাওড়া থেকে। ভাই আর কৌশিক আসবে বজবজ থেকে। সবাই বেলা 11 টায় শিয়ালদাতে মিট করার কথা।
সেই মতই ভাই কৌশিক পৌঁছে গেল। কিন্তু আমাদের আসতে প্রায় অনেকটা দেরি হয়ে গেল।
যাইহোক ভাইয়ের রাগে গজগজ করতে থাকা মুখটা দেখতে দেখতে ১:১০ এর কৃষ্ণনগর লোকাল ধরলাম। ট্রেনে সিট তো পেলাম না। গেটের ধারে পাঁচজন দাঁড়িয়ে পাড়ি দিলাম মঙ্গলগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর চাকদহ তে নামলাম।বলে রাখি পুরো journey টাই অভীক দার আদেশ অনুযায়ী। কোথায় যাচ্ছি কি দেখতে যাচ্ছি আমরা চারজন কিছুই জানি না।
চাকদহ স্টেশনে প্রাতঃরাশ সারলাম। ভাত ডাল সবজি আর ভেটকির একটা পিসে লাঞ্চটা পুরো জমে ক্ষীর। স্টেশন থেকে বেরিয়ে মিনিট পাঁচেক হেঁটে পৌছালাম বাসস্ট্যান্ড। একটা ছোট বাসে উঠলাম। অভীক দা টিকিট কাটল পাঁচটা নাটাবেড়িয়ার। চলতে শুরু করল বাস।
দুপাশে সবুজ ধানক্ষেত মাঝখান দিয়ে পিচ রাস্তা কেটে বাসটা ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যেতে লাগল।
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর পৌছালাম নাটাবেড়িয়া।
সবার মনে আনন্দ এই বুঝি পৌঁছে গেছি।
আমি সাহস করে অভীক দা কে জিজ্ঞেস করলাম
"পৌঁছে গেলাম অভীক দা?"
কোন উত্তর না দিয়ে অভীক দা হনহন করে এগোতে লাগলো। আমি তার পেছনে আর আমার পেছনে বাকি তিন জন।
হঠাৎ অভীক দা একটা টোটোকে গিয়ে বলল "দাদা যাবেন মঙ্গল গঞ্জ?"
বসুন ভাই টোটোওয়ালার উত্তর।
আমরা চারজন একবার একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি আর একবার অভীক দার দিকে।
"আরে বস টোটোতে । তোদের বিক্রি করতে নিয়ে আসিনি।" বিকৃত স্বরে অভীক দার কথাটা বিঁধল বুকে।
ভাবলাম আমায় আবার কিনবে কে! তারপর খেয়াল এল সর্বনাশ আমার তো দুটো কিডনি আছে ,দুটো চোখ আছে। ভগবান এ কোথায় এলাম।
হঠাৎ ভাই বলল আরে উঠবি তো। দেখলাম আমায় ছেড়ে বাকি চার জন টোটোতে উঠে বসেছে। অগত্যা আমিও উঠে বসলাম টোটোতে।চলতে শুরু করল টোটোকাকু।
টোটোতে একদম সামনে বসলাম আমি। যাওয়ার পথে চালক কাকুকে জিজ্ঞেস করলাম
"কাকু আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে কি আছে যানেন?"
কাকু মুখটা খানিকটা কুঁচকে উওর দিল "আপনারা ঘুরতে যাচ্ছেন,আপনারা যানেন না। কি আছে এখানে।"
মনে হল ঢুপ করে একটা ঘুসি মারি কাকুকে। সোজা কথায় উওর দিতে পারে না। কিন্তু পারলাম না।
হঠাৎ উওর ভেসে এল কানে "এখানে নীল কুঠি আছে। আর সেখানে থাকে কাটা সাহেব।"
উৎসাহের সাথে প্রশ্ন করলাম "এখনো নীল কুঠি আছে? আর কাটা সাহেব মানে? তার কি কাটা?"
কাকুর কিছু বলার আগেই পেছন থেকে উওর এল "চুপ করবি তুই? গিয়েই দেখিস কি আছে ওখানে।"
মিনিট পঁচিশ পর পৌঁছালাম গন্তব্যে। বেশ নির্জন পরিবেশ। চারিদিকে শিমূল পলাশ এর গাছে ভর্তি।ফুলে ফুলে লাল হয়ে আছে গাছগুলো। গিয়ে ঢুকলাম একটা বেড়ার ভেতর। আটটা ছোট্ট ছোট্ট টেন্ট । অসাধারণ ভাবে তৈরি বাঁশের চেয়ার টেবিল।সামনে বিশাল একটা বাঁশবাগান। নীচেটা শুকনো বাঁশপাতা ভর্তি। সব মিলিয়ে একটা মন ভালো করা পরিবেশ।
ভাই, রতন, কৌশিক খুব আনন্দ পেয়ে একেবারে রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দিল।
আমিও একবার ভাবলাম অভীকদাকে গিয়ে একটা চুমু খেয়ে আসি। কিন্তু তারপর নিজের ইমোশনটাকে কন্ট্রোল করলাম।
যাই হোক সেখানে আমাদের স্বাগত জানাল সোমনাথ দা। এখানকার ম্যানেজার।
খুব ভালো লোক। ছিমছাম চেহারা। গাল ভর্তি দাঁড়ি।
যাই হোক আমরা আমাদের বুকিং স্লীপটা দেখাতে উনি কল্লু বলে ডাক দিলেন। এলেন কল্লু মহাশয়।
রোগা পাতলা একখানা লোক। গায়ের রং এর কারনেই নামটা এরুপ দেখে বোঝা গেল।
সোমনাথ দা বললেন "যা ওঁদের ডাইনি আর গেছো তে দিয়ে আয়।"
প্রথম ঝটকা লাগল আমার।
"ডাইনি আর গেছো মানে?"
"কোথায় যাব?" ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম।
"আরে ঘাবড়াবেন না। ওগুলো টেন্ট এর নাম।" সোমনাথ দা হেসে হেসে বললেন।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম "আরে মশাই আপনারা আর নাম খুঁজে পান নি? আমার তো এক্ষুনি হার্ট ফেল হয়ে যেত।"
"আর বলবেন না। এখানকার থিম অনুযায়ী নামগুলো রাখা আর কি?" হাসতে হাসতে বললেন সোমনাথ দা।
"থিম? ভূতের নামে থিম মানে?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম। ততক্ষণে বাকি তিন জন ও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে অভীক দা মুচকি হেসে হেসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
"আপনি যানেন না? এখানে তো লোকে ভূত দেখতে আসে, মানে কাটা সাহেব কে দেখতে!"
সোমনাথ দা বললেন।
আমরা চারজন চুপ। অভীক দা মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। বাকি তিন জনের কথাটা শুনে কি হল জানিনা। আমার তো যায় যায় অবস্থা। কাঁদব হাসব না পালাবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কাঁদলে প্রেস্টিজ যাওয়ার ভয় আছে। কখনো ভাবিনি কলকাতা থেকে টাকা খরচ করে এত দূর ভূত দেখতে আসব।
যাই হোক, ঢুকলাম টেন্টে। ডাইনিতে আমি অভীক দা আর রতন আর গেছো তে ভাই আর কৌশিক।
নিজেকে ডাইনি ভাবতে একটুও ইচ্ছে ছিল না আমার। তবে ডাইনি তে ঢুকে অভীকদাকে ডাইনি রুপেই দেখছিলাম আমি।
চেঞ্জ করে টেন্ট থেকে বেরোলাম যখন তখন সন্ধ্যা হয় হয়। বাইরে দূরে সূর্য ডুবছে। দেখে একবার মুগ্ধ হতে ইচ্ছে করলেও মনে পড়ে গেল কি হবে আর মুদ্ধ হয়ে, রাতে হয় ডাইনি নয় ব্রম্ভদৈত্য এর পেটে যেতে হবে। আবার নিজের ইমোশনটাকে কন্ট্রোল করলাম।
বাইরে বাকি ছয়টা টেন্টের নামও সব বিভিন্ন ভূতের নাম অনুসারে। সবকটাতে আমাদের মতই ভূত দেখতে এসেছে প্রায় আরও জনা পনেরো লোক।
ভাবলাম না আমরা একাই পাগল নয় পৃথিবীতে আমাদের মত অসংখ্য পাগলের বসবাস।
যাই হোক সন্ধ্যা নামল। বাইরে কাঠের চেয়ারে গিয়ে বসলাম পাঁচজন। পাশে আরো এইরকম অনেকগুলো চেয়ার টেবিলে বাকি লোকেরাও বসে আছেন। টেবিলের মাঝখানে একটা করে মোমবাতি।আর টেন্ট এর বাইরে একটা করে লন্ঠন। সামনে বাঁশবাগান আর বাঁশবাগানের মাথায় চাঁদ মামার উঁকি। আমার আগাগোড়াই ভূত ম্যানিয়া আছে। তেঁনাদের নাম শুনলেই ভয় লাগে। কিন্তু এখানে নাকি তেঁনাদের সাথে দেখা করতে এসেছি।
যাই হোক, কিছুক্ষন পর কল্লু এলো চা নিয়ে। সাথে মুড়ি আর তেলেভাজা।
অভীক দা বলল "খা। অত টেনশন করিস না। ভূত তোকে নিয়ে যাবে না।"
টোটোকাকুকে ঘুসি মারার মত ইচ্ছে এবারেও হল কিন্তু আবার কন্ট্রোল করে নিলাম। পাশে রতন ভাই কৌশিক আমার এই অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে।
তারপর ভয়ের মধ্যেই বেশ ভালোই কাটল কিছুটা সময়। গান গাইল ভাই আর কৌশিক। পাশের ভদ্র লোকেরা মদ্য পানের সাথে সাথে বেশ ভালোই আনন্দ করতে লাগলো। ওদের মাতলামো আনন্দ দেখে আমারো একটু মনটা ভালো হয়ে গেল। রাত দশটায় কল্লু এসে ডিনার দিয়ে গেল। চিকেন কষা আর গরম গরম রুটি। বেশ আনন্দে খেলাম আর মনে মনে ভাবলাম এত রাত হয়ে গেছে তার মানে আর ওই কাটা সাহেবকে দেখতে কেউ ওই কুঠিতে যাবে না।
কিন্তু ধারনাটা ভুল প্রমাণিত হল। ১১ টা নাগাদ প্রথম দশজন কে নিয়ে কল্লু গেল কাটা সাহেবের কুঠি। এরপর আমাদের পালা।
প্রায় এক ঘন্টা পর শুকনো মুখে সবাই ফিরে এল। মুখের অবস্থা দেখে কাউকে আর জিজ্ঞেস করার সাহস হল না কিছু। কিন্তু চুপি চুপি সংখ্যাটা আমি গুনে নিলাম, না ঠিক আছে তার মানে ভূত বা ডাইনি কাউকে খায়নি।
ডাক এলো কল্লুর "চলুন বাবুরা।"
অভীক দা আমার হাতটা ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে চলল কল্লুর পেছনে। আমার পেছনে বাকি তিন জন আর তাদের পেছনে আরও বাকি দর্শনার্থী।দুপাশে ঘন হোগলা কেটে এগিয়ে চললাম আমরা। কল্লুর হাতে একখানা লন্ঠন আর এক হাতে বেশ মোটা একটা লাঠি।
ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল আমাদের ভূত দেখার টিম।
নদীর পার দিয়ে রাস্তা। কল্লু বলল এটাই ইচ্ছামতী। জোৎস্নার আলোয় ইচ্ছামতীর জল চকচক করছে আর তার সাথে আমার বুক ঢিপ ঢিপ করছে।
অবশেষে মিনিট বারো পরে এসে পৌঁছালাম নীল কুঠি বা কাটা সাহেবের কুঠি।
জীর্ণ প্রায় একটা বাড়ি । বেশ বড় ধরনের। চুন সুরকি গুলো খসে পড়েছে চারিদিকে। জোৎস্না থাকা সত্ত্বেও ভিতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভিতরে প্রবেশ করলাম আমরা। আমি অভীকদাকে জড়িয়ে ধরে আছি।
সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করল কল্লু। গল্প শোনাতে শুরু করল।
তখন ভারতে ইংরেজ রাজ। এখানে তখন নীলকর সাহেবদের অত্যাচার চরমে। শষ্য চাষ ছেড়ে সব চাষিদের তখন বাধ্য করা হচ্ছে নীল চাষ করতে।
অত্যাচারের মাত্রা তখন শীর্ষে। এসব সহ্য না করতে পেরে একদিন সব চাষীরা দলবদ্ধ হয়ে আক্রমন করে নীল সাহেবের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দিয়েছিল। তখন থেকে মুন্ডহীন একটা দেহ ঘুরে বেড়ায় এই কুঠিতে। অনেকেই পূর্নিমার রাতে তাকে দেখেছে এখানে ঘুরে বেড়াতে।
সবাই চুপ। একটা চাপা নিঃস্তব্ধতা চারিদিকে। ঝিঁঝিঁর ঝিঁ ঝিঁ ডাক আরও ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করেছে চারদিকে। বুকের ভেতরটা আমার খাঁ খাঁ করছে। এই মনে হয় মাথাহীন ধড়টা এসে ঘাড় মটকাবে।
হঠাৎ কিছু একটা অন্ধকারে লাফ দিয়ে আমার ঘাড়ে পড়ল। ব্যাস আমি আর কি,নিজেকে সঁপে দিলাম কাটা সাহেবকে । চারিদিকে যে যেদিকে পারল ছুটল। কল্লুর হাতের লন্ঠন একদিকে আর লাঠি আর এক দিকে। ভাই কৌশিক অভীকদা রতন সবাই ছুটে বেরিয়ে গেল নীল কুঠি থেকে। আমি রয়ে গেলাম কাটা সাহেবের অস্তিত্বের সাক্ষী হয়ে।
যখন ঞ্জান এল তখন দেখলাম টেন্ট এর বাইরে একটা খাটিয়াতে শুয়ে আমি। পাশে বসে বাকি চারজন, কিছু দূরে সোমনাথ দা আর কল্লু।
পাশে দু এক জন আরও ভূত দর্শনার্থী।
ভোরের সূর্য তখন উঠছে ইচ্ছামতীর গা ঘেঁষে।
ধরপরিয়ে উঠলাম আমি। প্রথমে নিজের পা থেকে মাথা অবধি একবার ছুঁয়ে দেখে নিলাম সব নিজের জায়গায় আছে কিনা। তারপর প্রশ্ন করলাম "আমি কি বেঁচে আছি? নাকি তোমরা সবাই আমার সাথে মারা গেছ?"
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। অভীক দা এসে মাথায় একটা চাঁটি মেরে বলল "বেঁচে আছিস তুই।কাটা সাহেব তোকে নেয়নি। ফেরত দিয়েছে।"
মনে মনে কাটা সাহেবের প্রতি খুব শ্রদ্ধা হল। মনে হল একবার নীলকুঠিতে গিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে আসি। তারপর নিজের ইমোশনটাকে আবার কন্ট্রোল করলাম।
সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে শুনলাম ওটা একটা বিড়াল ছিল। যাকে কাটা সাহেব ভেবে আমি ঞ্জান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশেপাশের দর্শনার্থী গুলো আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল মনে হচ্ছিল সত্যি কাটা সাহেব আমায় নিয়ে যেতে গিয়েও নিয়ে যায়নি।
বেলা ১১ টা নাগাদ বেরোলাম ওখান থেকে। সোমনাথ দা ও কল্লু বাইরে পর্যন্ত ছাড়তে এল।
টোটোতে উঠলাম। সোমনাথ দা আমার দিকে তাকিয়ে বলল "আবার আসবেন দাদা।"
আমি একটু হেসে মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম। মনে হল বেঁচে থাকার আনন্দে সোমনাথ দাকে একবার গিয়ে জড়িয়ে ধরি। তারপর আবার নিজের ইমোশনটাকে কন্ট্রোল করলাম। আর বাকি চারজন হো হো করে হেসে উঠলো।