স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক?
স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক?
অফিসে বিশাল চাপ। রীতিমতো বিষফোঁড়াতে খোঁচা দেওয়ার মত ব্যাবস্থা। সবকিছু সামলে সবেমাত্র লাঞ্চ বক্সটা খুলেছে সন্দীপ। মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো।
মিনা'র ফোন। মিনা সন্দিপের স্ত্রী। ফোনটা রিসিভ করল সন্দীপ।
মিনা : (ঝাঁঝালো স্বরে) তুমি কি আমায় বিয়ে করেছ নিজের মায়ের দাসী ভেবে? সারাদিন কাজ আর কাজ, আমি আর থাকতে পারছি না তোমার মায়ের সঙ্গে। এক্ষুনি এসো তুমি, আজ কিছু একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।
সন্দীপ : মাথাটা ঠাণ্ডা করো মিনা,আমি রাতে গেলে কথা হবে, অফিসে বিশাল চাপ, বেরোতে পারব না।
মিনা : ঠিক আছে,কাজ নিয়ে থাকো আমি চললাম বাপের বাড়ি ( পাশ থেকে মায়ের চিৎকার যাও যাও বাপের বাড়ি, আমি আর আমার ছেলেটা শান্তি পাই)।
সন্দীপ : মিনা শান্ত হও।
মিনা : না এক্ষুনি এসো।
সন্দীপ : আচ্ছা শান্ত হও ,আমি আসছি।
লাঞ্চ বক্সটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে সন্দীপ ম্যাডামকে বলে "বাড়িতে একটু প্রবলেম হয়েছে ম্যাম, একটু ছেড়ে দিলে ভালো হয়।"
ম্যাডাম এর তারস্বরে চিৎকার : প্রতিদিন আপনার প্রবলেম থাকে। বেড়িয়ে যান। ওয়ার্নিং দিলাম আর এইভাবে ছুটি দেওয়া সম্ভব নয়।
বেড়িয়ে পড়ল সন্দীপ। অফিসের এর সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে মেন রাস্তায় এল বাসের জন্য। রাস্তাটা পেরোতে হবে হাওড়া মুখী বাস ধরার জন্য।
রাস্তাটা পেরোতে শুরু করলো সন্দীপ। হঠাৎ মনে হল বাঁ পাশে মা দাঁড়িয়ে " খোকা আমাকে এই বয়সে একা ফেলে যাসনা অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি তোকে।"
সঙ্গে সঙ্গে ডান দিক থেকে মিনার আওয়াজ " সেকেলে মহিলাটার সঙ্গে আমি থাকতে পারব না সন্দীপ,আমার প্রতি তোমার কোন দায়িত্ব নেই? হয় মা নয় বৌ। বল কাকে চাও তুমি ? বলো বলো।"
সামনে আবার একটা স্বর । সন্দীপ তাকিয়ে দেখলো এ তো ওর বস " সন্দীপ তোমার চাকরিটা আর নেই,কাল থেকে আর এসো না অফিসে। You are rusticate সন্দীপ।"
বলো সন্দীপ মা না বৌ?
খোকা আমাকে ছেড়ে দিবি?
You are rusticate সন্দীপ।
বলো সন্দীপ মা না বৌ?
খোকা আমাকে ছেড়ে দিবি?
সন্দীপের চারপাশটা কেমন অন্ধকার হয়ে গেল।
হঠাৎ একটি আওয়াজ জোরে ব্রেক কসার। সন্দীপ এর বুকের উপর দিয়ে বাসটা বেড়িয়ে গেল। ট্রাফিক এসে সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ফেলল জায়গাটা। মিনিট দশেকের মধ্যে শব্দ করতে করতে একটা অ্যাম্বুলেন্স সন্দীপের ছিন্ন ভিন্ন দেহটা নিয়ে গেল হাসপাতালে।
যেখানে একটা মৃত মানুষকে তার মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেওয়া হল।
বাড়িতে যখন সন্দীপের লাসটা এল তখন না মিনা নিজের অভিযোগ শোনাতে পারল, না তার মা নিজের কাঁদুনি। শুধুই খানিক কান্নার রোল।
অফিসে তার পরদিন দশ সেকেন্ডের নিরবতা পালন করে আবার আপন গতিতে অফিস চলল।
খবরের কাগজে বেরোল " রাস্তা পেরোতে গিয়ে বছর আঠাশের যুবকের অ্যাকসিডেন্ট এ মৃত্যু।"
কেউ জানলোই না আসলে ওটা অ্যাকসিডেন্ট এ মৃত্যু ছিল না। ওটা একপ্রকার Murder ছিল।