Rajkumar Mahato

Drama Crime Inspirational

4.4  

Rajkumar Mahato

Drama Crime Inspirational

শেষ চিঠি

শেষ চিঠি

2 mins
199


পূজনীয় বাবা,


আমার প্রনাম নেবে। আশা করি তুমি আর মা নিশ্চয় ভালো আছো। এ মাসের টাকাটা পাঠাতে পারলাম না। অফিস বন্ধ আজ ৭২ দিন। লকডাউন আরও বাড়বে হয়ত। তুমি আর মা দাদার কাছেই থেকো।ওরা যাই বলুক ওখান থেকে আসবে না। জানি বাবা তোমার আত্মসম্মানে লাগে, কিন্তু আমি খুব নিরুপায় হয়ে তোমায় এই চিঠি লিখছি।

কাজের সন্ধানে সেই সাত মাস আগে কলকাতা আসার দিনটা আজও মনে পড়ে জানো মা। তুমি আমার বুকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলে আর বাবা পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কি করার ছিলো বলতো আমার? দাদা নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে রাঁচিতে থাকে।ওর আমাদের তিনজনকে বোঝা মনে হয় কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কিছু করার ছিল না তাই তোমাদের কয়েক দিনের জন্য ওর কাছে পাঠিয়েছিলাম। বৌদির থেকে তোমায় অনেক কথা শুনতে হয় জানি মা। কি করবো বলতো? মাসে চার হাজারের বেশি আর পাঠাতে পারি না। এখানে যে মেসটায় থাকি সেটার ভাড়া খাওয়া সব মিলিয়ে বেশ অনেকটাই খরচ। বিশ্বাস করো তার মধ্যেই এডজাস্ট করে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু এই অকাল মহামারীর জন্য আজ ৭২ দিন ঘরে বসে। একটুও কাজ নেই। যা জমিয়েছিলাম তোমাদের কিছু পাঠিয়েছিলাম। ফোনে যে কথা বলবো তার ও উপায় নেই। পরশু ঝড়ে সব বিধ্বস্ত হয় গেছে। ইলেকট্রিক জল কিছুই নেই। দু-দিন না খেয়ে পড়ে আছি রুমে, একা। আমার সাথে যারা তিনজন থাকতো তারা মোটা টাকা খরচা করে বাড়ী চলে গেছে আগেই। আমার কাছে অতো টাকা নেই, তাই বাড়িও যেতে পারিনি আর তোমাদের আনতেও পারিনি। এ দেশে আমাদের কোনো দাম নেই মা। পুঁজিপতি ছাড়া আর কেউ বাঁচবে না এই দেশে।

যখন তোমরা এই চিঠিটা পাবে আমি হয়ত পৃথিবী ছেড়ে তখন অনেক দূরে। আমি না থাকলে দাদা হয়তো তোমাদের ফেলতে পারবে না। আমি চলে গেলাম মা। হেরে গেলো তোমার ছেলে। আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও। তোমাদের দায়িত্ব থেকে পালালাম আমি। তোমরা ভালো থেকো মা বাবা। তোমাদের খুব ভালোবাসি খুব।।


                    ইতি

             তোমাদের হেরে যাওয়া ছেলে


পলাশের ঝুলন্ত লাশের পাশ থেকে পুলিশ যখন চিঠিটা পেল। তখন আর সেটা তার বাড়িতে পৌঁছাল না। সরকার পুলিশ তাদের খামতি ঢাকার জন্য পলাশের লাসটা হাসপাতালে পাঠিয়ে করোনাতে মৃত্যু বলে চালিয়ে দিল। লাস দেওয়ার দায়িত্ব আর র‌ইল না তাদের। খবরে করোনাতে মৃত্যুর লিস্টে আর একটা সংখ্যা যোগ হল। চিঠিটার ছাইগুলো উড়ে শহরের কোনে কোনে ছড়িয়ে পড়ল।


সাধারন মানুষের মৃত্যুর অত দাম থাকে নাকি??

দাদার বাড়িতে খবর গেল করোনাতে মৃত্যু হয়েছে তার ভাইয়ের। তার দাদা হয়ত সত্যিই ফেলতে পারবে না বাবা মাকে। নয়ত কোন ফুটের ধারে জায়গা হবে তাদের। চিঠিটা না বলাই রয়ে গেল পলাশের। এরকম কত চিঠি হয়ত বলা হয়ে ওঠে না, না বলাই থেকে যায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama