জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি - গীতা দে
জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি - গীতা দে
পর্দায় তিনি আসলেই মনে হত কোথা থেকে এক ডাইনি বুড়ি এসে গেছে। এবারে সোনার সংসারে আগুন লাগবেই। আমার মনে আছে ‘বাবা তারকনাথ’ সিনেমাটা দেখার সময় আমাদের সামনেই মা একবার গালাগাল দিয়ে ফেলেছিলেন তাঁকে। আমরা মায়ের মুখের দিকে তাকালে তিনি জিভ কেটে বলেছিলেন, “সামনে পেলে ঝেঁটিয়ে দিতুম। আমার নাম বদনাম করছে।” এখানে বলে রাখি আমার মায়ের নামও গীতা। তাই ওই নামে কোন ভিলেন চরিত্র দেখলে তিনি খুব রেগে যান।
ছোটবেলায় শুনেছিলাম কোন এক সিনেমা দেখে উৎপল দত্তকে পর্দায় জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলেন একজন দর্শক। আর সেই খবর শুনে দত্তবাবু বেজায় খুশি হয়ে বলেছিলেন, “এটাই তো আমার পুরষ্কার, আমার অভিনয় আজ সফল।” ঠিক তেমনি গীতা দত্তেরও একটি সিনেমায় তিনি প্রিমিয়ার শোতে দর্শকের মাঝে বসেছিলেন। কিন্তু বিরতির সময় হঠাৎ আলো জ্বলে উঠায় সামনে সবাই তাঁকে দেখে মারমুখীও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটাকে পুরস্কার হিসেবেই নিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, তিনি গীতা দত্ত। আমাদের বাংলা সিনেমার কুটনি বুড়ি। কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি এরকম ছিলেন না। খুবই সাদাসিধে একজন মানুষ হিসেবেই তিনি পরিচিত। আর সঙ্গে তিনি একজন সত্যিকারের প্রেমিকা। হ্যাঁ, প্রেমিকা এই কারণে বললাম দেখুন না এখনকার জীবনে যেখানে সংসার ভাঙাটা কোন ব্যাপারই না। সেখানে তিনি তাঁর স্বামীর পদবীটা আজও বহন করে আসছেন। আজও বললাম কারণ, শিল্পীদের তো মৃত্যু নেই। তাই না?
স্বামী অসীম কুমার দে যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেন তখন তিনি স্বেছায় বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন কিন্তু স্বামীর পদবীটা আজীবন নিজের করে রেখেছেন। সিনেমার পর্দায় ঘর ভাঙার মূল পান্ডার অভিনয় করতে করতে কখন যেন তাঁর নিজের ঘরটাই ভেঙে গিয়েছিল, তিনি বুঝতে পারেননি। তবে নিজের অভিনয়কে আঁকড়ে ধরে তিনি সারাটাজীবন কাটিয়ে দিলেন।
আজ তাঁর জন্মদিনে আমার তরফ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা। লেখাটি শেয়ার না করলে, “মুখে নুড়ো গুঁজে দেব।” ভয় পাবেন না, এটা ওঁরই বিখ্যাত ডাইলোগ।
