গোটানো হাতা খোলা চুল..
গোটানো হাতা খোলা চুল..
- হ্যালো।।
- কেমন আছো?
- ভালো! তুমি?
- আজ একটু দেখা করবে?
- কেন? হঠাৎ করে দেখা করার কথা বলছ?
- এসো না একবার, তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
- কেন ? শেষ দেখা দেখবে নাকি?
- ধরে নাও না তাই।।
- কার শেষ ?? আমার না তোমার??
- আমারই হোক নাহয়। তুমি আসোনা একবার প্লিস।।
- হ্যা। অবশ্যই তোমারই হবে। কারন তুমি তো আমায় আগেই শেষ করে গেছো।
- তুমি কি আসছো? প্লিজ লক্ষীটি একটিবার এসো।
- ছেলের স্কুল আছে।
- ছেলেকে স্কুলে দিয়ে এসো। এখন তো সবে সকাল ন'টা।
- আমার কি সংসারে কাজ কর্ম নেই?
- একদিন কাজ না করলে কি হবে?
- অনেক কিছু হবে। শ্বাশুড়ির বকা শুনবো। ছেলেকে সময়ে খেতে দিতে পারব না। আর ওর জন্য সন্ধ্যার খাবারটাও বানাতে পারব না।
- বাহ্, কত খেয়াল রাখো তুমি সবার।।
- রাখতে হয়। তোমার ও রাখতাম এক সময়। ভুলে গিয়েছ হয়তো!
- না ভুলিনি।
- ভুলে যাও মনে রেখেই বা লাভ কি?
- চাইলেই কি সব ভোলা যায়??
- এটা তুমি বলছো??
- হ্যা আমিই বলছি। আমাকে ভুলতে পেরেছ তুমি??
একটু নীরবতা ফোনের দুপার থেকেই।।
- না পারিনি।তবে মনে করতেও চাই না। বেশ আছি স্বামী নিয়ে সংসার নিয়ে।
- হ্যা জানিতো।
- যে অবস্থায় আমাকে ছেড়েছিলে সেই অবস্থা থেকে যখন বেড়িয়ে আসতে পেরেছি। আগামী দিনগুলোও ভালোভাবেই কাটিয়ে দেব।
- একটা কথা বলবো??
- বলো।
- এখনো চুল খুলেই রাখো?
- আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ছেলেকে স্কুলে দিতে যেতে হবে।
- আজ ওকে বাড়িতে রেখে তুমি একটু এসো না প্লিস।
- না ওদের সেমিস্টার চলছে । স্কুল কামাই করাতে পারব না।
- আচ্ছা। তাহলে ওকে স্কুলে দিয়ে চলে এসো।
- আমি দেখছি। কথা দিতে পারব না যে sure যাবো।
- ওরকম বোলো না। একবার এসোনা প্লিজ।
- আমি ফোনটা রাখছি।।
ফোনটা রেখে দিল মধুমিতা।
ছেলেকে স্কুলের জন্য রেডি করে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে। মিনিট দশেকের হাঁটা পথ স্কুলের।
ছেলেকে স্কুলে ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো সে কি করবে, যাবে একবার অর্নবের কাছে; নাকি বাড়ি ফিরে যাবে।
মোবাইলটা আবার বেজে উঠলো।।
- হ্যালো।।
- আসছো তো?
- না । বাড়িতে কাউকে বলে আসিনি। সবাই চিন্তা করবে।
- লক্ষীটি একটিবার এসো। পাঁচ মিনিট থেকে চলে যাবে।
- একটুও বোঝার চেষ্টা করো না কোনদিনই তুমি।
- হ্যা বুঝব আমি। কিন্তু এখন তুমি এসো।
পাশ থেকে একটা হলুদ ট্যাক্সি এসে বিরক্ত করতে লাগল - ও দিদি কোথায় যাবেন? দিদিভাই যাবেন নাকি। ও দিদি বসুন না।
টাক্সির আওয়াজ কানে গেল অর্নবের।
- বসে যাও ট্যাক্সিতে প্লিস। আর না করোনা।
ট্যাকসিতে বসে গেল মধুমিতা।
- কোথায় যেতে হবে বলো।
- ড্রাইভার কে দাও, বলে দিচ্
ছি। তুমি বুঝতে পারবে না।
- বেশিদূর যাওয়ার সময় নেই আমার।
- বেশিদূর না।
ড্রাইভার কে ফোনটা দিলো মধু। ফোনটা ফেরত দিয়ে ট্যাক্সি চালাতে শুরু করল ড্রাইভার।
- কিসের এত জরুরি তলব তোমার?
- এসো না।
- কথাটা এত জড়াচ্ছে কেনো তোমার। মদ খেয়ে নিয়েছ নাকি সকাল সকাল?
- না না। আর সেই সুযোগ নেই।
- হ্যা। কেন টাকা শেষ নাকি?
- জীবন শেষ।
- কি যে বলছ? কি হয়েছে বলোতো তোমার?
- কিছু না। একটা কথা বলার ছিল তোমায়।
- বলো।
- sorry...
- কেন?
- মাঝপথে ওইভাবে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
- পাঁচ বছর পর মনে হল তোমার??
- কি করব। পাঁচটা বছর লেগে গেল লড়তে লড়তে।
- কিসের সাথে লড়াই তোমার??
- জীবনের সাথে...
- নেশা করে করে মাথাটা গেছে তোমার। এখনও...
- না না। আর নেশা করিনা। actually তখন আমি নেশাকে খেতাম আর আজ নেশা আমাকে খাচ্ছে।
- কি হয়েছে অর্নব? তুমি এসব কথা কেন বলছো??
- আরে এমনি, আজ এত বছর পর তোমার সাথে এত ভালোভাবে এতক্ষণ ধরে কথা হচ্ছে কিনা তাই।
- একটা কথা বলবো অর্নব?
- বলো।
- পাঞ্জাবির হাতাটা আজও গোটাও?
- কতদূর তুমি।।
- এইতো দেশপ্রিয়।।
- আর একটু, এসেই গিয়েছ প্রায়।
- কিন্তু তোমার বাড়ি তো চারু মার্কেটে ছিল!
- আমি বাড়িতে নেই।
- আচ্ছা। কোথায় তুমি?
- অপেক্ষায় তোমাকে দেখার....
- মনে পড়ে অর্নব সেই রাতটা।
- হ্যা।
- নেশার জন্য আমায় ছেড়েছিলে তুমি।
- না নেশার জন্য ছাড়িনিতো। তোমাকে বাঁচানোর জন্য ছেড়েছিলাম।
- মানে?
- তখনই বুঝে গিয়েছিলাম। আমার সাথে থাকলে তুমিও বাঁচতে পারবে না। তাই...
- অর্নব হাঁপাচ্ছ কেন তুমি??
- তাড়াতাড়ি এসো মধু। সময় বেশি নেই।
- আসছি....
- আমাকে ক্ষমা করো মধু।
ট্যাক্সিটা থেমে গেল। ড্রাইভার বলল - দিদি এসে গেছে। মধু গাড়ি থেকে বেরোল। ভাড়াটা মেটালো। ফিরে দেখল সামনে একটা বড় গেট। তার উপর লেখা - সিটি ক্যানসার হাসপাতাল। ফোনের ওপার থেকে আওয়াজ এল।
- বেড নং ৬...
ফোনটা কেটে গেল।
মধু দৌড়ে দুতলায় উঠল। বাঁ পাশের গেটটা দিয়ে ঢুকেই বেডের সারি।
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়....
বেডে শুয়ে জীর্ণকায় একটা বছর তিরিশের ছেলে।মাথায় একটাও চুলের চিহ্ন নেই। পড়নে একটা ছেঁড়া নোংরা পাঞ্জাবি। না না এ অর্নব হতেই পারে না।
ফোনটা হাতে নিয়ে অর্নবের নাম্বারটায় ফোন লাগাতে যাবে মধু। এমন সময় তার চোখে পড়ল বেড নং ৬ এর পাঞ্জাবির হাতাটা গোটানো। বসে পড়ল থপ করে মধু মেঝেতে। একজন সিস্টার এসে অর্নবের খোলা চোখটা বন্ধ করে দিল।
অর্নব দেখতেও পেল না মধুমিতা আজও খোলা চুলেই এসেছে। দুজনের অনেক স্বীকারোক্তি বাকি থেকে গেল। কিছুই বলা হয়ে উঠলো না।