Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

রাজকুমার মাহাতো

Horror Tragedy Thriller

4.0  

রাজকুমার মাহাতো

Horror Tragedy Thriller

সমিধের সাসপেন্স বেসমেন্ট

সমিধের সাসপেন্স বেসমেন্ট

23 mins
404


  • মুখবন্ধ 


কখনও কি আপনার মনে হয় আপনার আশেপাশে কারা যেন চুপি চুপি কথা বলছে? বা‌ ধরুন রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল পাশ ফিরেই চোখটা তাকাতেই দেখলেন পাশে কোন একজন অচেনা লোক শুয়ে আছে। বা‌ ধরুন আপনার শোয়ার ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কে যেন আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। এইসব অলৌকিক ঘটনার স্বাক্ষী কিন্তু খুব কম মানুষই হন।

  

এরকম মনে হলে আপনি একজন তৃতীয় নেত্রের অধিকারী মানুষ। 


আমার গল্পের সমিধ ঠিক এরকমই একজন চরিত্র। যার‌ প্যারানরম্যাল রিসার্চ নিয়ে গবেষণা এখনও অব্যাহত। আর সেই সব কেসের কিছু কিছু ঝলক এখানে গল্প আকারে তোলা। 


হরর স্টোরির প্রথম সিরিজ এটি।   ,


সিরিজ : ১


বেসমেন্ট - প্রথম পর্ব



রাতে ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল। কিন্তু সমিধতো সাইলেন্ট করে শুয়ে ছিল ফোনটা শোয়ার আগে। যাই হোক উঠে ঘড়িতে দেখল ২ টো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট হচ্ছে। এত রাতে কে ফোন করল। ভেবে ফোনের দিকে তাকাল সে। একটা ল্যাণ্ড ফোনের আননোন নম্বর। তার সাথে যদিও এটা প্রথম বার নয়। যবে থেকে এই প্যারানরম্যাল রিসার্চটাকে প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছে তবে থেকে এসব সমিধের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কখনো রাতে ফোন আবার কখনো জানলার বাইরে এসে কে কথা বলে কখনো তো আবার বিছানায় তার পাশে এসে কেউ যেন শুয়ে থাকে বলে তার মনে হয়। এই কারনেই প্রিয়াও তাকে ছেড়ে চলে গেছে আজ বছর চারেক হল। বিয়ে হয়েছিল বেশ ধুমধাম করেই কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সমিধের কিছু এক্টিভিটি প্রিয়াকে ভয় পেতে বাধ্য করে। যদিও বিয়ের আগে প্রিয়া জানত সমিধ এসব নিয়ে থাকতে ভালোবাসে তাও সমিধকে ভালোবেসে বিয়ে করল কিন্তু সংসার করতে পারল না। কোন মেয়েই হয়ত পারত না। রাতে স্বামী উঠে জানলাম ধারে কার সাথে যেন কথা বলছে। ধীরে ধীরে ভয়ে ভয়ে জানলাম বাইরে তাকাতে প্রিয়া দেখত কিছুই নেই। আর সমিধকে জিজ্ঞেস করলে বলত "তুমি ওদের দেখতে পাবেনা। ওদের দেখতে থার্ড আই লাগে।"

প্রিয়া সমিধকে পাগলের মত ভালোবাসতো। উকিল বাবার অমতে পালিয়ে এসেছিল সমিধের কাছে । এক রাতেই কেঁদে বলেছিল " আজ যদি আমাকে বিয়ে না করতে পারো। আমি সুইসাইড করে নেব।" সমিধ‌‌ নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরেছিল প্রিয়াকে। মাথায় একটা আলতো চুমু দিয়ে বলেছিল " এসব কোনদিন যেন‌‌ না‌ শুনি। তবে প্রিয়া তুমি আমাকে আমার প্রফেশন দু'টোকেই জানো। থাকতে পারবে তো আমার সঙ্গে?"

প্রিয়া আগে পিছে কিছু না ভেবে হ্যাঁ বললে তাদের সেই‌ রাতেই বিয়ে হয় মন্দিরে।

তারপর থেকে মোটামুটি সব ভালোই চলছিল। প্রিয়া সমিধের কাজে বাধা দিতনা। তবে কতদিন? এইসব রিসার্চ নিয়ে সমিধ এত‌ই ব্যাস্ত হয়ে পড়ল যে প্রিয়াকে দেওয়ার মত সময় তার হাত থেকে ধিরে ধিরে কমতে লাগলো আর প্রিয়া আর সমিধের দূরত্ব টাও বাড়তে থাকল। আর তার মধ্যে এইসব কেচ্ছা তো ছিলোই।


এভাবে দিনের পর দিন চলার পর একদিন প্রিয়া সমিধকে বলল - আমি আর এগুলো নিতে পারছি না। তুমি যদি এই প্রফেশন টাকে চেঞ্জ করতে পারো তাহলেই আমি তোমার সাথে থাকতে পারি।

সমিধ বলল - এটা শুধু আমার পেশা নয় প্রিয়া এটা আমার নেশা।

অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও প্রিয়া তার জেদ ছাড়েনি আর সমিধ তার নেশা। ফলবশতঃ তারা আজ আলাদা।বলেনা ভালোবাসা একসময় জানালা দিয়ে পালায় সময়ের চাপে। তাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল হয়ত। 


যাই হোক সেসব কথা।

ফোনটা রিসিভ করে ভাঙা ভাঙা গলায় সমিধ বলল - হ্যালো।

ওপার থেকে একটা আওয়াজ - আমাকে বাঁচান প্লিস। এরা আমায় মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচান।

সমিধের ঘুম তখম মাথায় উঠে গেছে। উঠে বসে বলল - কে আপনি? কোথা থেকে বলছেন? কি হচ্ছে আপনার সাথে?

- আমাকে এরা বেঁধে রেখেছে। প্লিস এখান থেকে আমায় নিয়ে যান। প্লিস দয়া করুন আমার উপর প্লিস।

একটা মহিলার এভাবে কাকুতি বিচলিত করে দিল সমিধকে। ফোনটা কেটে গেল।

এতদিন তার কাছে থ্রেট এর ফোন আসত। আজ প্রথম বার কেউ বাঁচানোর জন্য বলছে। কি ব্যাপার ভাবতে লাগলো সমিধ।

ফোনটা পাশে রেখে আবার শুয়ে পড়ল সে। ভাবল সকালে টিমের সাথে একবার নাহয় আলোচনা করে নেবে। কিন্তু পাঁচ মিনিট পর আবার বেজে উঠল ফোনটা।

আবার সেই আননোন নম্বর। 

ফোনটা রিসিভ করল সমিধ - হ্যালো।

- আপনি বাঁচান আমায় প্লিস। আমাকে এরা মেরে ফেলবে। আবার সেই একই মহিলার আওয়াজ।

সমিধ উঠে বসে বলল। - কি চাও?

ওপার থেকে অনেকটা শান্ত সুরে আওয়াজ এল - মুক্তি। 

- কোথায় আছো? আমাকে কেন লাগবে?

- আমার নিজের বাড়িতে, তুমি পারবে তাই।

- কিন্তু.....

- ওই আসছে ও আসছে আবার আমাকে মারবে।আবার আমার উপর অত্যাচার শুরু করবে। আমাকে বাঁচাও। বাঁচাও আমায়। আঁ.....

ফোনটা কেটে গেল আবার। সমিধ নম্বরটা দেখে বুঝল কলকাতারই নম্বর।


ফোনটা রেখে ব্যালকনিতে এসে একটা সিগারেট ধরাল‌ সমিধ। ভাবতে লাগল কেউ তাকে বাঁচানোর জন্য ফোন কেন করবে। পুলিশ আছে,‌ প্রশাসন আছে। আর সমিধের নম্বর তার কাছে এল কোথা থেকে। 


সিগারেটটা শেষ করে ঘরে ঢুকল সমিধ।



সিরিজঃ ১


বেসমেন্ট ঃ দ্বিতীয় পর্ব 



তারপর দিন সকালে অফিসে বেড়িয়ে গেল সমিধ।

নিউ টাউনের পুরাতন একটা বিল্ডিং এ ঢুকে সমিধ লিফটের সামনে গিয়ে পাঁচ নম্বরটা প্রেস করল।

তারপর পেছন থেকে একটা আওয়াজ - লিফট খারাপ দাদা।

পিছন ফিরে দেখে সমিধ বলল - আরে রাকেশ তুমি। আমি বারবার ভুলে যাই এই লিফটটা গত তিনমাস ধরে খারাপ।

- চলো সিড়ি ভাঙি। 

দুজন চলতে শুরু করল। পাঁচ তলায় এসে দেখল অফিস অলরেডি খোলা।

গেটটা টেনে ভেতরে ঢুকে সমিধ বলল - কি ম্যাডাম কি খবর? এত সকাল সকাল।

- আরে সমিধদা এসে গেছ। এসো এসো খবর আছে। তনয়া বলল।

- কি খবর রে।এত কি ইম্পর্ট্যান্ট খবর যে এত সকালে আসতে বাধ্য হলি?

- সমিধদা একজন আসবে আজ, দেখা করতে চায় আমাদের সাথে। 

- কাজের খবর?

- হ্যাঁ মনেতো হচ্ছে।

- যাক অনেকদিন পর একটা কাজ আসবে তাহলে। রাকেশ দরজাটা বন্ধ করে দে। একটা ইম্পর্ট্যান্ট ডিসকাশান আছে।

রাকেশ দরজাটা বন্ধ করে এসে বসে বসে বলল - বলো।

সমিধ গতকাল রাতের ব্যাপারটা খুলে বলল তাদের। সব শুনে রাকেশ বলল সমিধদা ঘুমের অসুধটা নিয়েছিলে কাল?

- হ্যাঁ। কেন? সন্দেহ করছিস? আবার হ্যালুসিয়েশন। 

- না তবে তোমার সাথে দু বছরে প্রায় ছ'টা প্রজেক্ট করলাম। তুমি ছাড়া আমরা তো কোনদিন কিছু না দেখতে পেলাম না শুনতে পেলাম।

- স্যালারি প্রতি মাসে ঢুকছে তো? তাই এসব কথা বেরোচ্ছে তোর। তাদের দেখার জন্য থার্ড আই লাগে। সবার সেটা থাকেনা ভাই।

তনয়া বলল - দেখ রাকেশ এতই যখন অবিশ্বাস চাকরিটা ছেড়ে দে।

রাকেশ নিজের সিট ছেড়ে উঠে বলল - ছাড়তে তো চাই। কিন্তু কিছু ভালো না পেলে ছাড়ি কি করে বলত?

- আচ্ছা বাবা, বোস শান্ত হ। সমিধ রাকেশের হাতটা ধরে বসিয়ে দিল।

তনয়া মুখটা বেঁকিয়ে বসে গেল। 

পকেট থেকে একটা কড়কড়ে একশ টাকার নোট বেড় করে রাকেশকে দিয়ে সমিধ বলল - যা তিনটে কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আয়। মাথা ঠান্ডা করাতে হবে তোর।

রাকেশ বেড়িয়ে যেতে তনয়া বলল - সমিধদা কেন ওকে এত তেলিয়ে চলো বলোতো তুমি?

সমিধ একেবারে শান্তভাবে বলল - জ্বালা আছে রে তনয়া। আমার ইনভেস্টিগেশন এর হাফ টাকা ওর বাবার একাঊন্ট থেকে আসে। 

তনয়া ভ্রুটা কুঁচকে বলল - কেন?

- তুই তো জানিস ওর বাবা মিঃ পোদ্দার একজন বড় প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর। বোম্বেতে থাকে। উনি চায় ওনার ছেলেও ওনার মত হোক আর তাই আমার সাথে ওকে রেখেছে। আর ওর স্যালারি আমি নয় ওর বাবাই দেয়।ইভেন তোর আমার স্যালারিও উনিই দেয়। 

তনয়া আর কিছু বলল না। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল রাকেশ।

তিনজনে তিনটে কোল্ড ড্রিংকস শেষ করে সমিধ একটা সিগারেট ধরাল।

বাইরে নক হল। 

- আসতে পারি?

তনয়া সঙ্গে সঙ্গে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলল।

- আসুন মিঃ বোস।

ভেতরে একটা বেশ ইয়াং ছেলে ঢুকল।

- হায়। আমি সমিধ দত্ত। সমিধ হাতটা বাড়িয়ে দিল।

- হ্যালো আমি অর্নব বোস। 

- বসুন। বলুন কি সাহায্য করতে পারি আমি আপনাকে?

অর্নব শুরু করল - আসলে আমি সদ্য মানে গত একমাস আগে জাপান থেকে ফিরেছি দেশে আমার মিসেজ এর সঙ্গে।এখানে আমার যে বাড়িটা ছিল। সেটা একটু পুরানো আমলের ছিল আর একেবারে মধ্য শহরে। আর মা বাবাও বেঁচে নেই আর ওর ইচ্ছে ছিল শহর ছেড়ে একটু দূরে থাকবে তাই ওই বাড়িটা বিক্রি করে আমি গড়িয়া এলাকায় একটি বাড়ি কিনি। বেশ পুরানো আমলের হলেও বাড়িটা যেন আমায় খুব টানছিল। তাই কোন কিছু না ভেবেই বাড়িটা কিনে ফেলি। গত এক সপ্তাহ হল সেখানে সিফট হয়েছি। কিন্ত থাকতে পারছি মা একদম। প্রতি রাতে কারোর চলা ফেরার আওয়াজ আসে। কোন মহিলা যেন খুব অত্যাচারীত হয়ে চেঁচাচ্ছে বলে মনে হয়। একদম থাকতে পারছিমা বাড়িতে সমিধ বাবু। তাই আপনার কাছে এলাম। যদিও আমি এসবে বিশ্বাসী নয় তাও মিঃ পোদ্দার এর রেফারেন্সএ আপনার কাছে আসা। 

রাকেশ পাশ থেকে বলল - মিঃ পোদ্দার? পুরো নামটা বলুন তো।

অর্নব কিছু একটা বলতে যেত তার আগেই সমিধ বলল - সে থাক নামটাম। আগে বলুন আপনার বাড়িটা ঠিক কোন জায়গায়? আর এডভ্যানস এনেছেন?

অর্নব পকেট থেকে একটা খাম বের করে সমিধের দিকে বাড়িয়ে বলল - এনিন।ওনার সাথে যা কথা হয়েছে তাই নিয়ে এসেছি।

তাড়াতাড়ি খামটা নিয়ে পকেটে ভরে সমিধ বলল - তনয়া ফর্মটা দিয়ে দে অর্নব বাবুকে। আর ভালকরে বুঝিয়ে দে ওনাকে কি করতে হবে?

অর্নব বাবু চলবে নাকি? সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে বলল সমিধ।

একটা সিগারেট তুলে অর্নব বলল - থাঙ্ককস। তাহলে কাজটা কবে থেকে চালু করবেন?

- কবে থেকে কি। আজ সব ঠিক করে কালই আমরা আপনার বাড়ি গিয়ে হাজির হব। 

- আচ্ছা আজ তাহলে আসি।


সিগারেটটা ধরাল‌ না অর্নব। বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। সমিধ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো " যাক কতদিন পর ভান্ডারে কিছু এল। এবার বসকে বলা যাবে আমরাও কাজ করি। কি বলো রাকেশ?"

রাকেশ মুচকি হেসে বলল " এতদিন‌ কাজ করছি কে যে আমাদের বস এখনও সেটাই জানতে পারলাম না।"

তনয়া রাকেশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলল " কিছু জিনিস না জানাই ভালো। আর তাছাড়া এখনও অনেক বাচ্চা আছিস, এত জানার বয়স হয়নি তোর।"

রাকেশ তনয়ার মাথায় একটা চাঁটি মেরে বলল " ঠিক ঠাক বিয়ে হলে আমার তোর মত বয়সের একটা মেয়ে হত । সেটা কি জানিস?"

তনয়া আর সমিধ আর হাসি চাপতে পারল না। হো হো করে হেসে উঠলো।



সিরিজ ঃ ১


বেসমেন্ট ঃ তৃতীয় পর্ব 


রাত একটা পর্যন্ত দুজনে যন্ত্রপাতি গুলো একবার দেখে নিল। তনয়া আগেই বেড়িয়ে গেছিল।

রাতে রাকেশ সমিধের বাড়িতেই থেকে গেল। রাত দু টো পঁয়ত্রিশ নাগাদ আবার সমিধের ফোনটা বেজে উঠল। সমিধ দেখল কাল রাতের নম্বরটা ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে। 

 রাকেশ ততক্ষণে জেগে গেছে।

- এত রাতে কে সমিধদা?

- ওই তুই যাকে ঘুমের ওষুধ ভাবছিলিস? 

রাকেশ মুখটা ফোনের দিকে করে বলল - ফোনটা তুলে লাউড স্পিকারে দাও।

সমিধ রিসিভ করে স্পিকারে দিল।

- হ্যালো।

- সমিধ বাবু বলছেন?হাঁপানো ভয়ে জর্জরিত একটা চেনা পুরুষ কন্ঠস্বর ভেসে এল ফোনের ওপার থেকে। 

- হ্যাঁ বলছি। আপনি?

- আমি অর্নব দাদা। সরি এত রাতে এভাবে ডিস্টার্ব করার জন্য। 

- বলুন অর্নব বাবু।কি ব্যাপার? 

- আসলে মিসেজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা একসাথে শুলাম।হঠাৎ একটা আওয়াজে ঘুম ভাঙতে দেখি পাশে ও নেই। কিছু একটা করুন প্লিস সমিধ বাবু।আমার ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ ছিল। তাও...

- আচ্ছা আপনি আগে শান্ত হন অর্নব বাবু। পুলিশে ফোন করেছেন?

- হ্যাঁ করেছি। ওনারা চব্বিশ ঘণ্টার আগে মিসিং ডাইরি নেবেনা বলছেন। তাই আপনাকে ফোন করলাম। কি করব কিছু বুঝতে পারছি না।

- আপনি ব্যাস্ত হবেননা। আমি এখুনি আসছি। 

- হ্যাঁ প্লিস একটু আসুন। আমি একেবারে একা হয়ে গেছি।

ফোনটা কেটে গেল। সমিধ ভালোকরে নম্বরটা মিলিয়ে দেখল কাল রাতে যে নম্বরটা দিয়ে মহিলাটি ফোন করেছিল এটা সেই নম্বরটাই। 

- কি বুঝলে রাকেশ?

রাকেশ মাথাটা চুলকে নিয়ে বলল - মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে দাদা। কি করবে, যাবে?

- চলো। এডভ্যানস নিয়েছি কাজতো করতেই হবে।

রাকেশ বাথরুমে গেল। এদিকে সমিধের ফোনটা আবার বেজে উঠল।সমিধ দেখল অর্নবের নম্বর।

ফোনটা রিসিভ করে সমিধ বলল - হ্যাঁ, অর্নব বাবু বলুন।

- বাঁচান আমায় আপনি। প্লিস আমায় বাঁচান। অত্যাচারের মাত্রাটা আজ আরও বেড়ে গেছে। প্লিস আমাকে বাঁচান।

সমিধ অবাক হয়ে গেল। এখুনি এই নম্বর দিয়ে অর্নব ফোন করল আবার এক্ষুনি এই মহিলার ফোন। আসলে কি হচ্ছে।কিছু বুঝতে পারছে না সমিধ।

- প্লিস বাঁচান প্লিস।

সমিধ বলল - আসছি আমরা। আপনি কোথায় আছেন বলুন।

- আমি নি......ও আবার আসছে প্লিস আমাকে বাঁচান প্লিস। আবার হূল ফোটাবে। রক্ত খাবে ওই পিশাচটা।

ফোনটা কেটে গেল। 

ফোনটা রেখে রাকেশকে সমিধ বলল - আজ এমনি গিয়ে ঘুরে আসি। কাল নাহয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে যাব।

রাকেশ বলল - দুটো বাইক আছে তো। চলো যতটা নেওয়া যায়। তনয়াকে ফোন করব?

- না থাক। ওকে কাল নাহয় নিয়ে যাব। কি বলিস?

- ওকে, চলো তাহলে।

রাকেশ ব্যাগে ডিজিটাল অডিও রেকর্ডার বা ইভিপি আর ই এম এফ মিটারটা নিয়ে বলল - বাকিগুলো তোমার ব্যাগে দিচ্ছি।

বাইরে রাস্তার কালো কুকুরটা খুব জোড়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে অনবরত। এমনি খুব কুঁড়ে গোছের কুকুর ও। পাশ দিয়ে অন্য পাড়ার কুকুরেরা এসে এ পাড়ার মেয়ে কুকুরগুলোকে পটিয়ে পাটিয়ে সঙ্গে নিয়ে গেলেও বাবুর ঘুম ভাঙেনা। আর যদিও ভাঙে দু-এক বার ঘেউ ঘেউ করে আবার নিজের অবস্থায় ফিরে যায়। 

আজ তাকেই এত চেঁচাতে শুনে সমিধ ব্যালকনির দরজাটা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখল। তার বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়েই কেলো চেঁচামেচি করছে। একএক বার আবার ক্যাঁ ক্যাঁ করে করে দৌড়ে খানিকটা দূরে পালিয়ে যাচ্ছে। আবার এসে চেঁচাচ্ছে।

সমিধ একটা সিগারেট ধরিয়ে প্রায় চেঁচিয়েই বলল - ওহে রাকেশ আমাদের বোধহয় কেউ নিতে এসেছে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।

রাকেশ ভেতর থেকে রেডি হতে হতে বলল " কে আবার এত রাতে নিতে আসবে? আমি রেডি। তোমার ফোঁকা হয়ে গেলে রেডি হয়ে নাও।"


সমিধ সিগারেটটা শেষ না করেই ভিতরে ঢুকে প্যান্টটা গলিয়ে নিল।সমিধের ব্যাগে গেল ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা আর নাইট ভিশন ক্যামেরা।


নীচে এসে গেটটা খুলে বাইক দুটো বের করতে করতে সমিধ লক্ষ্য করল কেলো চুপ করে গেছে। 


বেরিয়ে পরল দুজন। দুটো বাইক ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলল শহরের বুক চিঁড়ে।


সিরিজ ঃ ১


বেসমেন্ট ঃ চতুর্থ পর্ব 


গড়িয়া স্টেশন থেকে বাঁ দিকে কুড়ি মিনিট যাওয়ার পর দুজনে আবার বাঁ পাশে বাঁক নিয়ে একটা কাঁচা রাস্তায় পড়ল। কাঁচা বলতে ওই কোনরকমে ইট পাতা। দুলতে দুলতে অন্ধকার চিঁড়ে এগিয়ে চলল দুটো বাইক।

সামনে একটা ডোবার পরে দুতলা বাড়িটার সামনে গিয়ে থামল সমিধ আর রাকেশ।


 চারিদিকে বড় বড় জলাশয় আর সেই জলাশয়ে বড় বড় হোগলা বন। রাকেশ বাইকটা দাঁড় করিয়ে সমিধকে বলল " সমিধ দা, বাড়িটা ফ্রিতে পেয়েছে নাকি? এই এলাকায় এখনকার দিনে কেউ থাকে?"

সমিধ একটা হালকা হাসি দিয়ে বলল " এই বাড়িটা উনি কিনেছিল বলেই আজ আমাদের দরকার পড়ল। আর দরকার না পড়লে ঠনঠনে গোপাল হয়ে বসে থাকতে হত। "


বাইরে দাঁড়িয়ে তখন তাদের অপেক্ষা করছে অর্নব। তাদের বাইক দাঁড় করাতে দেখে অর্নব ছুটে এসে বলল - কিছু একটা করুন সমিধ বাবু। পুরো বাড়িতে দেখলাম কোথাও পেলাম না। প্লিস ডু সামথিং। 

সমিধ বলল " শান্ত হন। আমি দেখছি। এই জায়গায় বাড়ি। পুলিশের হেল্প দরকার লাগতে পারে আমাদের। চারিদিকে যা জঙ্গল।"

অর্নব খানিকটা শান্ত হয়ে বলল " পুলিশ কিছু করতে পারলে আমাদের আজ এর অবস্থা হত'না সমিধ বাবু।"

কথাটা ঠিক বুঝতে পারলনা সমিধ। জিজ্ঞেস করল " ও, এর আগে আপনি পুলিশের কাছে গেছিলেন বুঝি?"

অর্নব বলল "হ্যাঁ অনেক আগে।"

সমিধ একটু চিন্তিত হয়ে বলল " কিন্তু আপনি তো বললেন আপনি কিছুদিন আগে বাড়িটা কিনেছেন। "

অর্নব ব্যস্ত হয়ে বলল " সব জানতে পারবেন সমিধ বাবু। আগে আমার মিসেস কে খুঁজে দিন প্লিস।"


সমিধ এতক্ষন বাইক থেকে না নেমেই কথা বলছিল। এবার বাইকটা স্ট্যান্ড করে বলল - চলুন।ভিতরে যাই।


দরজাটা খুলতেই একটা ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এল সমিধের।

- কিসের গন্ধ এটা?

- আসলে বুঝতে পারছি না। গত দুদিন থেকে এই গন্ধটা আসছে। বুঝতে পারছিনা কোথায় থেকে আসছে। 

পুরানো আমলের বাড়িটায় প্রায় সকল আসবাব পত্র গুলোই পুরাতন। আলো যথেষ্ট আছে ভেতরে।

- কি ব্যাপার অর্নব বাবু, এখানের আসবাবপত্র গুলো এত পুরানো কেন? আপনারা কি সঙ্গে কিছু আনেন নি? প্রশ্ন করল সমিধ।

- এগুলো সব আমাদেরই তবে অনেক দিনের তো তাই পুরানো মনে হচ্ছে আপনাদের।

রাকেশের উদ্দেশ্যে সমিধ বলল - রাকেশ ই এম এফটা বের করে অন করোতো।

রাকেশ যন্ত্রটা বের করে অন করতেই সে ডিটেক্ট করতে লাগলো তাদের আশেপাশে কিছু একটা অস্বাভাবিক আছে। 


আসলে এই যন্ত্রটির দ্বারা কিছু অস্বাভাবিক বোঝা যায় বলে মনে করেন প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটররা।

- বাবাহ এত তাড়াতাড়ি বুঝিয়ে দিলে হবে আপনারা আছেন....একটু খোঁজার সুযোগ দিন। সমিধ কৌতুকের স্বরে বলল।


সমিধের ব্যাঙ্গাত্মক উক্তিতে মুচকি হেসে উঠলো রাকেশ।

সামনের ডাইনিংএ রাখা একটা টেবিলের ওপর ডিজিটাল থার্মোমিটারটা অন করে সমিধ। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে সেটার দিকে পুরো বাড়ির তাপমাত্রা এত কম। এতো মানুষের বাসের যোগ্য হতেই পারেনা।


ডিজিটাল থার্মোমিটার হল সেই যন্ত্র যেটি দিয়ে জায়গাটির তাপমাত্রা বোঝা যায়। তাপমাত্রা একটা লিমিট এর নীচে নামলে বুঝতে হবে তেঁনাদের বাস সেখানে।


যাই হোক কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে তারা। সিঁড়ির পাশে থাকা একটা বড় বিদেশি চিনামাটির ফুলদানি ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে।

- এটা ভাঙলো কি করে মিঃ বোস?

অর্নবের থেকে কোন উত্তর শোনার আগেই সমিধের ফোনটা বেজে উঠল। রাকেশ সমিধের একেবারে পিছনে দাঁড়িয়ে। অর্নব তাদের পেছনেই আসছিল।

ফোনটা পকেট থেকে বের করে সমিধ বলল - হ্যাঁ বল তনয়া। এত রাতে?

- তোমরা কোথায় এখন?

- আমরাতো অর্নব বাবুর বাড়িতে এসেছি। আসলে ওনার স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

- ওহ মাই গড। যেটা ভাবলাম সেটাই হল।

- কেনরে কি হল?


ফোনের ওপার থেকে তনয়ার কোন কথাই হঠাৎ করে আর শুনতে পেলনা সমিধ ।হঠাৎ সারা বাড়ির আলোগুলো সব একবারে নিভে গেল। 


"হ্যালো তনয়া, হ্যালো। শুনতে পাচ্ছিস?" কোন আওয়াজ নেই ফোনের ওপার থেকে। 


আবার একবার সমিধ চেষ্টা করল। কিন্তু কোন রেসপন্স পেল না।


ফোনটা কেটে গেল। আর বাড়িটাকে একটা অজানা অচেনা অন্ধকার এসে ঘিরে ধরল। সমিধ ফোনের ফ্লাসলাইটটা জ্বেলে পিছন দিকে তাকিয়ে বলল " রাকেশ, ঠিক আছিস?"

রাকেশ বলল " হ্যাঁ আছি আপাতত। কতক্ষণ থাকব জানিনা।"

সমিধ রাকেশের কাঁধের উপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখে বলল " অর্নব বাবু, ঠিক আছেন তো?"


চমকে গেল সমিধ।



সিরিজ ঃ ১


বেসমেন্ট ঃ পঞ্চম পর্ব


পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই ঘটে যাও কোন ব্যাখ্যা আমরা পাইনা। হয়ত আমার আশে পাশে বা হয়ত আপনার আশেপাশে আমাদের অজান্তেই এরকম কত শত অজানা অচেনা অবয়াব ঘুরে বেড়ায়। তাদের যদি আমরা দেখতে পাই বলি "আত্মা দেখেছি বা ভূত দেখেছি!" আর না দেখতে পেলে আমরা মানতেই চাইনা যে তেঁনারা আছেন।


সমিধ রাকেশের কাঁধের উপর থেকে ফ্লাস লাইটটা জ্বেলে বলল " অর্নব বাবু। ঠিক আছেন তো?"

কিন্তু অবাক হল সে যখন দেখল পুরো বাড়িটাতে কেবলমাত্র দুটি প্রানিই আছে। সমিধ আর রাকেশ।

একেবারে চমকে সমিধ বলল " রাকেশ অর্নব তো তোমার পেছনেই ছিল। কোথায় গেল? "

রাকেশের মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিল না। সমিধ রাকেশের দিকে তাকাল। তার চোখে মুখে এত ভয়ের চাপ সমিধ আগে কখনও দেখেনি। রাকেশের চোখ দুটো লাল হয়ে এসেছে। জল গড়িয়ে পরছে দু চোখ বেয়ে। রীতিমতো কাঁপছে রাকেশ। সমিধ রাকেশের হাতটা ধরে বলল " রাকেশ আর ইউ অল রাইট? ঠিক আছো তুমি?"

রাকেশ কোন কথা বলতে পারল না। তার হাতের যন্ত্রটা বারবার সিগন্যাল দিতে লাগলো যে এখানে কেউ আছে। 


সমিধ রাকেশের অবস্থা বুঝতে পেরে বাইরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে এমন সময় তার ফোনটা আবার বেজে উঠল। কেঁপে উঠল রাকেশ। সমিধ ফোনটা রিসিভ করে বলল "হ্যাললো।"

ফোনের ওপার থেকে তনয়া বলল " ঠিক আছো তোমরা? তোমার গলাটা ওরকম লাগছে কেন?"

সমিধ নিজেকে সামলে এক হাতে ফোন আর এক হাতে রাকেশের কাঁধে হাত রেখে বলল " না না, বল।"

- সমিধদা অর্নব বোস ও তার স্ত্রী প্রিয়া বোস আজ দু বছর ধরে গায়েব আছে। 

সমিধের পায়ের তলা থেকে সিঁড়ি গুলো যেন সরে যেতে লাগলো। কিছুটা অবাক আর অনেকটা ভয় নিয়ে প্রশ্ন করল - কি বলছিস? তুই কি করে এত সিওর হলি?

- আরে সকালে ওনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে ওনাকে আমি কোথাও দেখেছি। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। তাই বাড়িতে এসে ল্যাপটপে পুরানো পেপার দেখতে লাগলাম।

গত ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ওরা গায়েব।

সমিধের হাতপা ঠান্ডা হয়ে এল।

রাকেশ এদিকে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে। 


তনয়া আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সমিধের ফোনটা হঠাৎ সুইচ অফ হয়ে গেল।

সমিধ ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করে সামনের দিকে মারতেই আঁতকে উঠলো। সামনে কতগুলো সিঁদুর মাখানো পুতুল ঝোলানো সিলিং থেকে।রাকেশ এবার চেঁচিয়ে উঠল - সমিধদা সামথিং রং প্লিস চলো এখান থেকে বেড়িয়ে যাই।

সমিধ টর্চটা চারিদিকে ঘোরাতেই চমকে উঠল। পুরো বাড়িটার মধ্যে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে সব জিনিসপত্র। ধুলোতে একটা আস্তরন পরে গেছে চারিদিকে। 

সমিধ রাকেশের দিকে তাকিয়ে বলল - ওনারা আমাকে কিছু বলতে চায় রাকেশ। তার মানে আমাকে যে মহিলাটি ফোন করছিল তিনি আসলে প্রিয়া বোস।


রাকেশ আর কিছু না বলে দৌড় লাগাল বাইরের দিকে। সমিধ রাকেশের পেছনে। দৌড়ে তারা বাড়িটার বাইরে বেড়িয়ে এল। আসার সময় দেখা বাড়িটা এখন যেন মৃত্যুপুরীর মত আকার ধারন করেছে। 


মাটিতে আছড়ে পড়ল রাকেশ। সমিধ এসে তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে জল বের করে ওর মাথায় মুখে দিল। রাকেশ চোখ মেলে তাকাল। 


"সমিধ দা, আমার পিঠ।" অনেক্ক্ষণ পর রাকেশের মুখ থেকে কথা শুনে সমিধ নিশ্চিত হল। তবে বুঝতে পারল ওর পিঠে কিছু একটা হয়েছে। রাকেশকে তুলে ওর জামাটা খুলল সমিধ। পিঠের দিকটাতে টর্চ মারতেই চমকে উঠলো সমিধ।


রাকেশের পিঠে একটা গভীর ক্ষত। নখ দিয়ে আঁচড়েছে কেউ বলে মনে হল তার। কাঁচা রক্ত ঝড়ছে সেখান দিয়ে। সমিধ ব্যস্ত হয়ে বলল " আরে এতো অনেকটা ক্ষত হয়েছে। ইউ নিড আ ডক্টর।চলো আমাদের বেরোতে হবে।"

রাকেশ বলল " নো সমিধ দা। দে নিড ইউ। আমরা এভাবে পালাতে পারিনা। ওই টুকু ক্ষততে কিছু হবেনা। আমি ঠিক আছি। আর তাছাড়া তুমি তো আছো সঙ্গে। "

সমিধ বলল " পাগলামি কোরোনা। সেপটিক হয়ে যেতে পারে। "

রাকেশ সমিধের দিকে তাকিয়ে বলল " ২৪ ঘন্টার মধ্যে টেটব্যাক নিয়ে নিলে আর কিছু হবেনা। আর আমাদের হাতে সে সময় থাকবে। চিন্তা কোরোনা। আমি ঠিক আছি। এর শেষ দেখেই যাব আজ।"


সমিধ যেন অন্য এক রাকেশকে দেখছে আজ। আজ অনেক বেশি ম্যাচুরিটি এসেছে তার মধ্যে। অনেক বেশি পরিপূর্ণ লাগছে আজ তাকে। 


রাত এখনও কিছু বাকি। আর ভোরের আলো ফুটে গেলে তারা আর কিছুই করতে পারবে না তারা যানে। 

সমিধ রাকেশের হাতটা ধরে ওকে তুলে কষে জড়িয়ে ধরল। "প্রাউড অফ ইউ ব্রাদার।" বলে দুজনে আবার ঢুকে গেল বাড়িটায়।


সিরিজ ঃ ১


বেসমেন্ট ঃ ষষ্ঠ পর্ব



রাত তখনও কিছু বাকি ছিল।


রাকেশ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সমিধকে প্রশ্ন করল।

- কি করে বুঝলে তুমি? ওটা প্রিয়া বোস। 


তনয়ার মুখ থেকে শোনা পুরো ব্যাপারটা খুলে বলল সমিধ। 

রাকেশ কিছু বলল না। সমিধ বলল " আমদের পুরো বাড়ি খুঁজে দেখতে হবে রাকেশ।"

রাকেশ মাথা নেড়ে সায় দিল।

সমিধ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে যাবে এমন সময় আবার সমিধের ফোনটা বেজে উঠল। সমিধ ফোনটা তুলতে গিয়ে ভাবল তনয়ার সাথে কথা বলাকালীন ওর ফোনটা অফ হয়ে গেছিল। আবার এখন নিজে থেকেই অন হয়ে গেছে।

রুখে গেল রাকেশ।

মুখটা শুকনো করে ফোনটা তুলল সমিধ - হ্যালো। 

- আমাকে বাঁচাও সমিধ। আমি আর পারছি না। প্লিস আমাকে বাঁচাও। 

- কোথায় এখন আপনি?আমাকে বলুন।

- ওপার থেকে একটা ভীষণ ভয়ভীত শব্দ..........আবার আসছে আমাকে আবার মারবে। বাঁচাও প্লিস আমাকে বাঁচাও।

সমিধ ফোনের এপার থেকে চিতকার করে বলল "কোথায় আছেন আপনি? "

ফোনটা কেটে গেল।


শুরু হল তাদের অভিযান।

পুরো বাড়ির কোনা কোনা খুঁজে দেখল সমিধ আর রাকেশ। কিন্তু কোথাও কোন কিছুর খোঁজ পাওয়া গেলনা। না পাওয়া গেল প্রিয়ার খোঁজ আর না পাওয়া গেল রাকেশের খোঁজ।  


কোনরকম কোন হিন্টস পেলনা সমিধ। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। " বাঁচাতে পারব না রাকেশ। হেরে যাব আমরা।" সমিধ একপ্রকার ভেঙে পড়ল। রাকেশে সমিধের দিকে পিঠ করে সিঁড়ির উপর বসে পড়ল। 


এভাবে প্রায় মিনিট দশেক তাদের কারোর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেলনা। পুরো বাড়িটাতে একটা অচেনা নিঃস্তব্ধতা, শুধু ঝিঁঝি পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা গেলনা।


হঠাৎ রাকেশ বলল " সমিধ দা পিঠটা খুব ব্যাথা করছে তো। চলো সব বেকার হয়ে গেল।"

সমিধের মন না চাইলেও তাকে যেতে হবে। রাকেশও এদিকে কষ্টেই আছে। তাও যাবার আগে সমিধ টর্চটা মেরে রাকেশের পিঠটা আর একবার দেখতে গেল।

ক্ষতগুলোতে রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে। 


দেখতে দেখতে হঠাৎ সমিধ চমকে উঠে বলল " পেয়ে গেছি রাকেশ।" 

রাকেশ অবাক হয়ে সমিধের দিকে তাকিয়ে বলল " কি পেলে?"

সমিধ রাকেশের দিকে তাকিয়ে বলল " সে আমাদের অনেক আগেই সূত্র দিয়ে দিয়েছে। তোমার পিঠের আঁচড়ে লেখা বেসমেন্ট।"


সিঁড়ি দিয়ে নিচে এসে টর্চ মেরে চারিদিকে দেখতে লাগল তারা। কিন্তু বেসমেন্টে যাওয়ার রাস্তা কোথাও দেখতে পেলনা। 

হঠাৎ করে সমিধ রাকেশকে বলল - ইভিপি টা অন করো তো রাকেশ।

রাকেশ ইভিপিটা অন করে ফোনের সাথে কানেক্ট করল। 

সমিধ জোড়ে চেঁচিয়ে বলল - অর্নব বাবু। আমাকে সাহায্য করুন। আপনার সাহায্য ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না। আমাকে বলুন বেসমেন্টে যাওয়ার রাস্তা কোথা দিয়ে। অর্নব বাবু আমি জানি আপনি এখানেই আছেন।প্লিস রিপ্লাই করুন।

ইভিপির দিকে তাকিয়ে থাকল দুজনে।

- না কোন রিপ্লাই নেই। রাকেশ বলল।

- তার মানে ওনাকে কেঊ আটকে রেখেছে। আমাদেরই খুঁজতে হবে।

রাকেশ বলল ঘরের জিনিসপত্র গুলো সরিয়ে একটু দেখা হোক দা। 

- চলো তাই হোক। 

একে একে প্রায় সব জিনিস সরিয়ে দেখে নিল দুজন কিন্তু কোথাও কিছুর খোঁজ পাওয়া গেলনা। 

আর কোন ফোনও এলনা।

হঠাৎ করেই রাকেশ কিছুর একটা শব্দ পেল। রাকেশ বলল সমিধকে - শুনতে পেলে?

- হুম। ইভিপিটাতে কেউ রিপ্লাই করার চেষ্টা করছে। ভালো করে শোনো।

একটা অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসছে ইভিপি দিয়ে। অস্পষ্ট "এক্সিট" শব্দটা শুনতে পেল সমিধ। 

- শুনলে?

- হ্যাঁ। এক্সিট বলল মনে হয়।

- মানে আমাদের এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে বলছে নাকি?

- বুঝতে পারছি না। 

- আশেপাশে একবার ভালো করে খুঁজে দেখোত কোথাও যদি ওই শব্দটা পাও।

আবার খোঁজা চালু হল "এক্সিট " এর। কিন্তু কোথাও ওই রকম কোন শব্দ পাওয়া গেলনা।

ইভিপিটাও আর কোন সাউন্ড করছে না।

কিছু ভেবে পেলনা সমিধ। আবার মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। রাকেশ এদিক ওদিক দেখতে দেখতে মেন দরজা ছাড়া আর একটা দরজা দেখতে পেল।

- সমিধদা ওখানে একটা দরজা আছে। চলোতো ওটা দিয়ে গিয়ে দেখি কি আছে বাইরে।

দুজনে ওই দরজাটা খুলল। বাড়িটার পেছনে যে এরকম একটা বাগান থাকতে পারে। কোন আইডিয়া ছিল না তাদের। যদিও সে বাগানের চারিদিকে আগাছার বাসা এখন। 

চারিদিকে টর্চ মেরে ভালো করে দেখল সমিধ হঠাৎ তার নজরে একটা জায়গা এল যেখানের আগাছা গুলো কেউ মারিয়ে গেছে বলে মনে হল তার।

- রাকেশ পেয়ে গেছি মনে হয়। এসো।


হয়ত তারা তাদের লক্ষ্যের অনেক কাছে ছিল। বাইরের চাঁদটাও নেই আজ। অমাবস্যা মনে হয়।


সিরিজ ঃ ১


বেসমেন্ট ঃ সপ্তম পর্ব


রাকেশ সমিধের পিছু নিল। জায়গাটা দেখে মনে হতেই পারে একটা বেশ বড় গর্ত। তবে সেটা আসলে গর্ত নয়। এক হাত খোঁড়ামাত্র বোঝার জন্য। আগাছাগুলো সরিয়ে সমিধ বলল - আসবে তুমি? নাকি আমি একাই যাব?

রাকেশ প্রথমটা একটু ভেবে নিল। তারপর বলল - এতটা যখন এলাম আর একটু গিয়েই দেখি কি হয়।

সমিধ গর্তটার একহাত নিচে একটা কাঠের পাটাতন পেল। কিন্তু ওপরটা একটা বেশ বড় ধরনের তালা দিয়ে বন্ধ।

সমিধ রাকেশকে বলল - তার মানে এখানে কেউ আসে।

রাকেশ মাথা নেড়ে বলল - কি করবে? ভাঙবে?

সমিধ বলল - আর তো উপায় দেখছি না। 

পাশ থেকে একটা বড় ধরনের পাথর এনে রাকেশ বেশ জোড়ে জোড়ে দুচার ঘা দিতেই তালাটা ভেঙে গেল। টেনে তুলল রাকেশ পাটাতনটা।


ভেতর থেকে একটা বিদঘুটে ভ্যাপসা গন্ধে প্রায় বমিই করে ফেলল রাকেশ।

সমিধ হেসে বলল - এতেই বমি হচ্ছে। মানুষের পেট কেটে সোনা বের করেছি একসময়।

- আমি যেতে পারবনা ভেতরে তুমি যাও।

- সিওর তো?

আবার রাকেশ চিন্তায় পড়ল। 

- সেই যাবে তাও নাটক। চলো।

পাটাতনের নিচের সিড়িটা দিয়ে সোজা নিচে নামল সমিধ, পেছনে রাকেশ।


ভিতরে এতটাই স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেটা যে সমিধ প্রায় পিছলে পড়েই যাচ্ছিল।রাকেশ ধরে নিল তাকে। ভেতরে বেশ কয়েকটা রুম। পাশের সুইচ বোর্ডটাতে একটা সুইচ টিপতেই একটা ১০০ ওয়ার্ডের বাল্ব জ্বলে উঠলো। 

- আরে আলো আছে। রাকেশ বলল। 

সমিধ টর্চটা নিভিয়ে বলল - বলেছিলাম না এখানে কেউ আসে।

এগিয়ে গেল দুজন।সামনে চার পাঁচটা ঘর। একটাতে উঁকি মেরে দেখল সমিধ। চমকে উঠল সে। মেঝেতে পড়ে রয়েছে দুটি কংকাল। কঙ্কাল দুটিই কোন মেয়ের কারন তাদের হাতের ও গলার গয়না গুলো এখনও রয়েছে।

- কি বুঝলে সমিধদা? রাকেশ জিজ্ঞেস করল।

- কিছু মাথায় আসছে না জানো। যদি কেউ গয়নার লোভে খুন করে তাহলে গয়না গুলো ওদের শরিরে থাকত না।

- হ্যাঁ তা ঠিক বলেছ। কিন্তু....

পাশের ঘর থেকে একটা কিছু পড়ার আওয়াজে রাকেশের কথাটা আর শেষ হলনা। 

দৌড়ে গেল দুজন পাশের ঘরে। 



দরজাটা খুলতেই অবাক তারা। একটা পচাগলা দেহ পড়ে বিছানার উপর। তার মুখের উপর টর্চটা ফেলতেই চমকে উঠলো সমিধ। মুখের একপাশে বড় বড় সাদা সাদা পোকা কিলবিল করছে। দেহের অনেক অংশে পচন ধরে পোকা ধরে গেছে।  


রাকেশ টর্চ জ্বেলে সুইচ বোর্ডটা খুঁজল তারপর সব কটা সুইচ মেরে দিল।

আলো জ্বলতেই চেঁচিয়ে উঠলো পাশের বিছানা থেকে একটা মহিলা। 

- না না প্লিস আর না। প্লিস প্লিস।পায়ে পড়ি তোমার আর না। প্লিস।

সমিধ তার দিকে তাকাতেই অবাক। একি চেহারা মহিলাটার। পরনে একটা সামান্য কাপড়ও নেই। শরীরে হাড়ের উপর কেবল মাংসের একটা প্রলেপ দেওয়া। চোখ গুলো কোটরে ঢুকে গেছে। আর সব থেকে বিস্ময়কর তার শরীরের অর্ধেক জায়গায় কামড়ানোর দাগ।যেন কেঊ মনের আনন্দে তাকে দাঁত ফুটিয়েছে তাকে কামড়ে তার শরীরের মধ্যে দিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছে।

চমকে উঠল রাকেশ। - এটা কি সমিধ দা?

সমিধ কিছু না বলে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল - চিন্তা করবেন না। আমরা এসে গেছি।

সমিধের দিকে তাকাল মেয়েটা তারপর বলল - সরি সমিধ। আমাকে বাঁচাও।


সমিধকে সরি বলতে দেখে চমকে গেল সে।

- আমাকে সরি কেন বলছেন? কে আপনি?

মেয়েটি আসলেই কথা বলতে পারছিল না। কারন তার গালের একপাশে সদ্য কামড়ানো হয়েছে। সেই ক্ষতটা এখনো দগদগ করছে। 


তাও মেয়েটি খুব ক্ষীণ স্বরে নিজের মনেই বলতে চালু করল। সমিধ কানটা তার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে শুনতে লাগলো

 - যখন তোমাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি এলাম। ডিপ্রেশনে চলে গেছিলাম কিছুদিন। তারপর আমার জীবনে এল অর্নব। জাপানে থাকত ও। ফেসবুকে আলাপ হয় ওর সাথে। বছর দুই আগে ভারতে এসে আমায় বিয়ে করে আর তারপর চাকরিতে বদলি নিয়ে ও এখানেই সেটেল হয়। আমার জন্য শহর থেকে দূরে এই বাড়িটা কেনে ও। আমরা সিফট হই এ বাড়িতে। দু দিন ঠিক থাকার পর হঠাৎ তিন দিনের রাতে একটা আওয়াজে ঘুম ভাঙে আমার। অর্নবকে ডেকে বাগানের দিকে আসি। দেখি একটা মানুষ পাটাতন তুলে ভেতরে ঢুকল। আমি আর অর্নব কিছু না ভেবে তার পিছু পিছু বেসমেন্টে ঢুকি। অবাক হই দেখে যে তিনি এই দুটি খাটে দুটো মেয়েকে বেঁধে রেখেছেন।কিছু বোঝার আগেই পেছন থেকে মাথায় জোড়ে আঘাত করে সেই ব্যাক্তি অর্নবের।লুটিয়ে পড়ে অর্নব মাটিতে।আমাকে জোড় করে ধরে বেঁধে দেয় এই বিছানায়। আর সেই দুটি মহিলাকে বন্দি করে পাশের ঘরে। অর্নবকেও বেঁধে দেয় পাশের বিছানায়। আর চলতে থাকে দুজনের উপর অকথ্য অত্যাচার। প্রতিদিন একবার করে এসে আমদের শরীর কামড়ে কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করে দেয় সেই নরপিশাচ। কিছু খাবার মুখে গুঁজে দেয় আমাদের। গত ক'দিন আগে অর্নব আর সহ্য করতে না পেরে আমার চোখের সামনে মারা যায়।আর আমার মৃত্যু বেঁধে রাখে সেই রাক্ষস। এমনিতেই মেয়েদের জীবন তো কই মাছের। তাই অর্নবের মত সহ্য না করতে পেরে মরে যেতেও পারিনি। সেই থেকে অর্নব আমাকে ওর হাত থেকে মুক্তি দিতে তোমার সাহায্য নেয়। এবার চিনলে আমি কে।


হতবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে সমিধ।কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারেনা সে। চোখের কোনে জল আসে সমিধের। যে প্রিয়াকে সে এতটা ভালোবেসেছিল কোনদিন, আজ তার এই অবস্থা। রাগে ক্ষোভে পুরো শরীরে একটা শিহরণ খেলে যায় তার। অত সুন্দর চেহারার এ কি হাল। তাও নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করল সমিধ - তাহলে ফোন কে করত আমায়?

প্রিয়া আস্তে করে আঙুলটা তুলে দেখাল তাদের পেছন দিকে। সমিধ পিছন ফিরে দেখল সটান অর্নব তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে। রাকেশ তো অজ্ঞান হয়ে যায় যায় অবস্থা। সমিধ ওকে ধরে নিল।

সমিধ বলল - একটা আত্মার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব কিন্তু তাহলে ওই নরপিশাচটাকে মারতে কেন পারলনা অর্নব?

পিছন থেকে অর্নব বলল - ওকে মারলে আমরা কোনদিন মুক্তি পেতাম না। কারন ও নিজেও এখানে বন্দি হয়ে থাকত আর প্রিয়াকেও আমার মত মরতে হত। ওকে বাঁচিয়ে নিও প্লিস।


ভোর হতে আর বেশি বাকি নেই। সমিধ শুনেছিল অতীত যেন বারবার ফিরে ফিরে আসে।কিন্তু এভাবে অতীত তার জীবনে আবার ফিরে আসবে ভাবতে পারেনি সে। 


সিরিজ ঃ ১


বেসমেন্ট ঃঅষ্টম পর্ব 



অতীতকে চাপা দেওয়া মাটি‌ ধীরে ধীরে চোখের জলে ধুয়ে যাচ্ছিল। প্রিয়ার সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে ঠিকই কিন্তু মন থেকে প্রিয়ার ক্ষতি কোনদিনই চায়নি সমিধ। যাকে ভালোবাসা যায় তার ক্ষতি কি চাওয়া যায়? না, হয়ত যায়না। সমিধের মুখের কথা উধাও তার শিকারী চোখদুটো লাল হয়ে ভেঙে পড়েছে। তার গলার‌ কাছে দলা‌ পাকিয়ে রয়েছে একগুচ্ছ অভিযোগ অভিমান।


উপরের পাটাতন খোলার আওয়াজে চমকে উঠল সমিধ। ঢক করে একটা আওয়াজ। 

রাকেশ বলল - লুকিয়ে পড়ো। কেউ আসছে।

সমিধ আর রাকেশ দুজন দরজার দুদিকে লুকিয়ে গেল।


ধীরে ধীরে নিচে নামল সেই জীবন্ত নরপিশাচ।সে তালা ভাঙা দেখে বুঝতে পেরেছিল নীচে কেউ নেমেছে। হাঁটু অবধি একটা বেশ দামী কোর্ট।মাথায় একটা বিদেশি টুপি।মুখে চুরুট টানতে টানতে নীচে নামল সে।হাতে একটা পিস্তল তাক করা।একবার এদিক একবার ওদিক। ধীরে ধীরে দরজার পাল্লাটা খুলে ভেতরে ঢুকল সেই মানুষটি। 


এক... দুই .....তিন....


পেছন থেকে সমিধ ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর।মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সে।হাত থেকে পিস্তলটা ছিটকে গিয়ে পড়ল বেশ খানিকটা দূরে। 

- শয়তান আজ তোকে ছাড়ব না। সমিধ চেঁচিয়ে উঠল।রাগে ক্ষোভে তার হাত দুটো ছিঁড়ে নিয়ে গলাটায় একটা গভীর কামড় বসিয়ে টুঁটিটা‌ ছিঁড়ে নিতে ইচ্ছে হল সমিধের। কিন্তু ভুললে চলবে না সে একজন মানুষ।হাত দুটো পেছনে করে টুপিটা খুলল সমিধ।


মুখটা দেখতেই চমকে উঠল সে আর রাকেশ। রাকেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল - বাবা তুমি?

মিঃ পোদ্দার মুখটা তুলে ছেলেকে এখানে দেখে আরও বেশি অবাক হল। 

- তোমারা এখানে কি করছ?সমিধ তুমি?

একদৌড়ে আবার পিস্তলটা নেওয়ার চেষ্টা করতে গেল মি: পোদ্দার।

সমিধ জোড়ে একটা নাকে ঘুসি মেরে বলল - আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল আপনি বোম্বেতে নেই। কেন স্যার এসব কেন?

পিস্তলটা নিতে পারল না মিঃ পোদ্দার।

মাথাটা নিচু করে মিঃ পোদ্দার বলল - শমোক্স বোঝো? যেখানে মানুষের তাজা রক্ত দিয়ে তুমি তোমার পিপাসা মেটালে শয়তানেরা তোমায় আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলবে। প্রত্যেক দিকের একটা বিপরীত দিক থাকে। মোক্স এর বিপরীত শমোক্স। শয়তানের দ্বারা যে মোক্স পাওয়া যায় সেটাই শমোক্স।

রাকেশ বলল - ছিঃ বাবা তোমার এই বিকৃত মস্তিষ্কের জন্য মা তোমায় ছেড়ে চলে গেছে।মানুষ মেরে কিসের মোক্স? 

পেছনে দাঁড়িয়ে তখন অর্নবের আত্মা প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষায়। 


হঠাৎ রাকেশ শিউরে ঊঠল। মাথাটা নিচের দিকে করে এগিয়ে গেল‌‌ মিঃ পোদ্দারের দিকে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল সমিধ। অর্নবের গলায় বলল রাকেশ - ছাড়ব না তোকে আমি। তোর ছেলের হাতেই তোকে মারব। দেখ কেমন লাগে।

ঝাঁপিয়ে পড়ল রাকেশ মিঃ পোদ্দারের উপর। 

- আমি তোর‌ বাবা‌ রাকেশ। ছেড়ে দে আমায়। চিৎকার করে উঠল মিঃ পোদ্দার। 

সমিধ রাকেশকে ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু রাকেশের এক হাতের ঝটকায় সমিধ পাঁচ সাত হাত দূরে গিয়ে পড়ল। 


কারন তখন‌ রাকেশের আত্মা অর্নবের কবলে‌।

ঘাড়ে কামড়ে মুখটা তুলতেই ফিনকি দিয়ে রক্ত ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল মিঃ পোদ্দার। ছটফট করতে করতে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে শেষ হয়ে গেলেন তিনি।

পাশে লুটিয়ে পড়লো রাকেশ। সমিধ স্পষ্ট দেখতে পেল অর্নবের অবয়াব বেরোল তার ভিতর দিয়ে।

প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে অর্ণব বলল - মুক্তি দিও আমায়।

ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল অর্নব। প্রিয়া কেঁদে উঠলো আর বলল " ভালোবাসি তোমায় অর্নব। আজীবন বাসব।"


হঠাৎ সমিধের ফোনটা বেজে উঠল - কোথায় আছ তুমি? আমি পুলিস নিয়ে এসেছি! তনয়া বলল।

- পেছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে বেসমেন্টে আয়।


পুলিশ মিঃ পোদ্দার এর দেহটা ময়না তদন্তের জন্য পাঠালো। আর প্রিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে। রাকেশকে একটু জলের ছেটা দিতে তার জ্ঞান এল। সবটা শুনল সে সমিধের কাছে। 

এত দিনের কেসটা সলভ করার জন্য পুলিস সমিধকে অনেক ধন্যবাদ জানালো।


সব কঙ্কাল উদ্ধার করে বাড়িটাকে সিল করে দেওয়া হল। অর্ণবের দেহটাকে সমিধ দাহ করল। 

তারপর আর প্রিয়ার খোঁজ নিল না সমিধ।তবে কিছুদিন পর তনয়ার মুখে শুনল ওর বাবা ওকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে।


একটা সিগারেট ধরিয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সমিধ ভাবতে লাগলো। পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু হয় যাদের কোন ব্যাখা নেই।


Rate this content
Log in

More bengali story from রাজকুমার মাহাতো

Similar bengali story from Horror