শুষ্ক কুয়াশা
শুষ্ক কুয়াশা
পড়ার বইয়ের ভিতর চাঁদমামা লুকিয়ে পড়তাম।ফলে কারখানা থেকে সন্ধ্যায় বাবা পড়া ধরলে পাড়াতাম না। মারধর করতোনা ঠিকই কিন্তু কথা শুনাতো অনেক।মাও কথা শুনতে ছাড়তো না।পাড়ার লোকেরা বলতো "তোমার ছেলে তবু বই নিয়ে বসে দুই বেলা পড়তে। গরম কালে আমকুড়ানো, বর্ষা এলে মাছ ধরা। পূজার সময়তো ছেড়েই দে। বারো মাসে কোনো কোনো অজুহাত পড়াশোনা না করার।"
মা মুখ ঝামটা দিয়ে বলতো " হুঁ অতো পড়াশোনা করছে কাল দেখবি পেপারে নাম ছাপাবে ওর।'"
মা আজ তুমি খুশি তো পেপারে তো আমার নাম উঠলোই।
এই মাঠঘাট সব আমার প্রিয় । এর সাথে আমার ছেলেবেলা জরিয়ে আছে। ছেলেবেলা সবার কাছে প্রিয় সময়। দুষ্টুমি করে শাস্তি পাওয়া ছেলেবেলা। মা বাবা আদরের সেই ছেলেবেলা। মনে আছে আগে দেশ বলতে আমি ভারতবর্ষকে বুঝতামই না।দেশ মানে এই গ্রামের বাড়ি টাকেই বুঝতাম। জানেন সারা ভারত ঘোরা হয়ে গেছে আমার চাকুরীর কাজে। তবে এই গ্রামের চেয়ে মিষ্টি গ্রাম দেখেনি।
হয়তো বঙ্কিমচন্দ্রের " বন্দেমাতরম " গানটা। অনেক বার গেয়েছি। কিংবা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের " সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি" গানটাও অনেক বার শুনেছি । ভারত পাকিস্তান এর ম্যাচ নিয়ে লাফালাফি করেছি। দেশ আর দেশের বাড়ির পার্থক্য টা বুঝতে পারছি এই চাকরিতেই এসেই।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান চাকরি জোটাতে পারছিলাম না । তাই শেষমেশ যোগ দিতে দিলো এই চাকরি তে। কিন্তু ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেললাম কাজটাকে। এবার এসেই বিয়ে করতাম ছুটকি কে। কিন্তু হলো না। তিনরঙা কাপড়ে মোড়ানো বাক্স বন্দি হয়ে , ফিরলাম আমি আমার প্রিয় গ্রামে। দূরে শুস্ককুয়াসার ভিতর দাঁড়িয়ে থেকে দেখলো ছুটকি আমার শেষ ফিরে আসাটাকে। শিশির কান্নায় বিদায় দিলো আমার প্রিয় পথঘাট।