শুরুতেই শেষ

         

               একটা মাস্তান মার্কা ছেলে আমার বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িতে থাকা ১৮ বছরের মেয়েটিকে নাম ধরে ডাকতে থাকে । সেই সময় আমি পড়ার একটা কল থেকে জল ভরছি । খুব একটা বিদ্যা আমার পেটে নেই তাই বাবুদের বাড়িতে কাজ করেই দিন কাটে আমার , শুধু আমার বললে ভুল হবে , এই অঞ্চলের বহু মেয়েরাই লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ করে থাকে । আমিও তাদের মধ্যে একজন । ছেলেটা এতটাই খারাপ ভাবে চাপাকে ডাকতে লাগলো যে আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছিলো। চাপা ঘর থেকে বেরোতেই ছেলেটি বলল দাদা দু দিনের জন্যে তোকে ডেকেছে , ইতি মধ্যে চাপার মা কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছে সে ছেলেটিকে দেখে বলল “ কি চাই তোমার “ ? ছেলেটি লোফারের মত বলল “ মাসিমা আপনার মেয়ের তো কপাল খুলে গিয়েছে , দাদার ওকে হেব্বি লেগেছে তাই দুদিনের জন্যে ওকে নিয়ে যেতে এসেছি । আমাদের পার্টি আছে ওখানে তোমার মেয়ে নাচবে , গাইবে দাদাকে একটু খুশি করবে , তাহলেই দেখবেন আপনাদের সব অভাব অভিযোগ দুর হয়ে গিয়েছে । মহিলা বলেন আমি যাচ্ছি ওকে ছেড়ে দাও । ছেলেটি আবার বলে ও মাসিমা আপনিতো শুকিয়ে ঝুনো হয়ে গিয়েছেন আপনার মধ্যে সেই রস কোথায় ? মহিলা বললেন এসব তুমি কি বলছো ? আমি মেয়েকে নিয়ে যেতে দেবনা । এবার ছেলেটা আরো একটু উগ্রতার সাথে বলল দেখ বুড়ি এটা দাদার এলাকা আর দাদার যেটা পছন্দ হয় সেটাকে কিন্তু দাদা ছাড়েন না । 2 দিনের বেপার একটু আনন্দ ফুর্তি করবে তারপর আবার নিজের মত বাঁচবে আর দাদাতো খালি হাতে ফুর্তি করবেনা টাকা দেবেন । এবারনাটক বন্ধ করে মেয়েকে ছাড়ুন । এবার আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না জলের খালি বালতি নিয়ে তেরে গেলাম ছেলেটার দিকে । “ এই দাদার চামচা তোরা আমাদের কি ভাবিস ? আমরা কি বেস্বা? আমরা গরীব , লোকের বাড়িতে গতর খাটিয়ে খাই , আজ তোদের জন্যে এই গ্রামে একটাও ভালো স্কুল নেই , একটা ভালো হসপিটাল নেই । আমরা চুরি সারি পড়ি মনে এই নয় যে আমরা অবলা কিছু করতে পারিনা । এই এলাকা থেকে একটাও মেয়ে কোথাও যাবেনা । ছেলেটি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল খুব বুলি ফুটেছে দেখছি সালি আগে তোকেই নিয়ে যাবো । আমার দিকে এগিয়ে আসতে আমি খালি বালতিটা দিয়ে বসিয়ে দিলাম তার কপালের উপরে , ছেলেটির কপাল ফেটে সামান্য রক্ত বেরিয়ে এলো , এক হাত দিয়ে কপাল ধরে অপর হাতদিয়ে আমার একটা হাত চেপে ধরলো সে , ইতি মধ্যে অঞ্চলের বহু মেয়ে বউ সেখানে জড়ো হয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেকে ঘিরে ধরলো তাকে , একসাথে বলে উঠল ওর হাতটা ছার নইলে তোর লাশ পৌঁছাবে তোদের দাদার কাছে । ছেলেটা হয়তো বুঝতে পারলো গতি ভালো নয় , সে আমার হাত ছেড়ে বলল , এখন আমি যাচ্ছি কিন্তু এর ফল ভালো হবেনা । সকলে মিলে বলল ঠিক আছে দেখা যাবে । 

                            ছেলেটি চলে যেতে আমরা সকলে মিলে ঠিক করলাম আর আমরা চুপ করে থাকবোনা এবার প্রতিবাদ হবে । আমরা থানার সরানা পন্ন হলাম , লাভ কিছু হলনা । কোন একজন বিষয়টা ভিডিও করেছিল , তার নামটা না জানাই ভালো , সে আমাদের যথেষ্ট সঙ্গ দিলো । তার উদ্দগে ঝড়ের বেগে ভাইরাল হয়ে গেলো ভিডিওটা , ঘরে ঘরে যখন ভিডিওটা পৌঁছে গেলো , তখন একটা আগুন জলে গেলো সারা এলাকাতে । আমাদের অঞ্চল তখন অগ্নিগর্ভ , আমাদের দাবি ওই স্বেচ্ছাচারী দাদার শাস্তি চাই । লাগাতার আন্দোলনের ফলে আমরা সফল হলাম । ওদের সকলকে অ্যারেস্ট করতে বাধ্য হল পুলিশ । 

                               এখানে হয়তো আমার থামার কথা ছিলোনা কিন্তু থামতে হলো । আমি আটকে পড়লাম রাজনৈতিক জলে । আমি জানিনা এটা আমার অগ্রগতি না , শুরুতেই আমার যাত্রা শেষ হতে চলেছে । যখন আমি শাসক হয়ে উঠবো তখন হয়তো আমিও ওদের মতোই হয়ে উঠবো । আমি হয়তো প্রতিবাদের সকল ভাষাই ভুলেজাবো । হয়তো আগামীতে আমার বিরুদ্ধে গঠিত হবে প্রতিবাদী সংগঠন । সেদিন হয়তো আমিও নিরবে অত্যাচার করেজাবো তাদের উপর যারা আজ আমার পাশে রয়েছে ।