Krishna Banerjee

Abstract Romance Others

3  

Krishna Banerjee

Abstract Romance Others

মুক্তির রং ধূসর

মুক্তির রং ধূসর

10 mins
15


       

                       বারো বছরের সশ্রমকারাদণ্ড থেকে অবশেষে মুক্তি । 2028 সালের 18ই ফেব্রুয়ারি ছয়মাসের সেফারেশনের পর অবশেষে বিবাহ বিচ্ছেদের পক্ষেই রায় দিলেন । সেদিন যে নিঃশ্বাসটা আমার পড়েছিলো সেটাকে কতখানি তৃপ্তির তা বুঝিয়ে বলা বা ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে এক কথায় অসম্ভব। বারোটা বছর ধরে যে কারাবাস আমি করেছি সে কারাবাস হয়তো একটা দাগি আসামির কাছেও কঠিন । আমি প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম আমিও একটা মানুষ । আমারও একটা নিজস্বতা রয়েছে । মাঝে মাঝেই মনেহত আমি কি আদেও আমি ? সব কিছুর কৈফিয়ত দিয়ে বাঁচা মোটেও সম্ভব নয় । অনেক ভাবনা চিন্তার পর অবশেষে সিদ্ধান্তে আসা এবার মুক্তি চাই । জীবনটাকে নিজের মোতো করে উপভোগ করতে চাই আর নয় মিছে মায়ায় বাঁধন । একদিন রাতে ওকে বলেই বসলাম আর নয় আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই । হয়তো অভিমান করেই সেদিন বলেছিলো , এতে আর বলবার কি আছে তাতেই যদি তোমার শান্তি হয় তাই করবে । আমি উপজাজক হয়েই বলেছিলাম তোমাকে ঠকাবনা তোমার প্রাপ্য তুমি পাবে । আরও একটু অভিমানী হয়ে বলেছিলো তোমাকে যখন পছন্দ করেছিলাম তখন তোমার কি ছিলো ? যদি সম্পর্কটা কিছু পাবার আসতে করতাম তাহলে সেদিন তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হতাম না , তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ সেদিনও আমার একটা ক্যারিয়ার ছিলো আজও আছে । মহামান্য আদালত যখন আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ কে স্বীকৃতি দিলেন তখন আমি বলেছিলাম আমার সারা জীবনের উপার্জনের চার ভাগের একভাগ ওকে দিয়ে দেবো , কিন্তু ও আমাদের মেয়েকে ছাড়া আর কিছুই নিতে রাজি হয়নি । আজও ও আমার থেকে হাজার দশেক টাকা বেশি কামায় । রিটার্টমেন্টার পর আমার থেকেও অনেকটা বেশি টাকা পাবে ও তাই টাকার লোভ ওর নেই । যখন প্রথম অল্প মাইনেতে কাজ করতো সেদিনও ওর টাকার প্রতি কোনো লোভ ছিলোনা । লোভ ছিলো সম্পর্কের উপর । অধিকারের উপর , ওর মনে সেটা শুধু মাত্র ওর । আর এটাই একসময় আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠতে লাগলো । আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে যেনো ও বন্দী করে ফেলছে । ধীরে ধীরে আমি নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছি । সবকিছুতেই একটা জবাবদেহী বিষয় । সব কিছুর উপর একটা অধিকার ফলানো । বিয়ের প্রথম প্রথম বিষয়টা ভালো লাগলেও পরে আর ভালো লাগতোনা তাই বাধ্য হয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত ।

                          যাইহোক বিচ্ছেদে আমি খুশীই হয়েছিলাম । আর কেউ হাজারবার ফোন করে বিরক্ত করবেনা । বাচ্চা ছেলের মতো কেউ ঘণ্টায় ঘণ্টায় বলবিনা , এটা খেয়েছো ওটা খেয়েছো , ঔষধ খেয়েছো । একটা বিরক্ত কর পরিবেশ থেকে মুক্তি । আচ্ছা আপনারাই বলুন আমিকি নেহাত বাচ্চা ছেলে , আমিকি আমার ভালো মন্দ কিছুই বুঝিনা । কখন খাবো , কারসাথে কথা বলব , কারসাথে কথা বলবোনা পুরোটাই যেনো অসহ্য । আমিকি সার্কাসের বানর ? যাইহোক এখন আর চিন্তার কিছুই নেই , আমি সম্পূর্ন মুক্ত । এটা হয়তো ঠিক রাত্রি নিবারণের বইচনার লাইসেন্স যুক্ত মানুষটা আজ আর আমার সাথে নেই । তাতে তেমন কিছু আসে যায়না , বরঞ্চ এই লাইসেন্স মানুষের জীবনের একটা মারাত্বক বন্ধন, একটা মারাত্বক দায়িত্ব । তার খওয়া , পড়া - রোগবালাই , চাওয়া পাওয়া সবটাই বহন করতে হয় । তার চাইতে অনেক ভালো 4-5 শত টাকার বিনিময়ে রাতের সুখ কেনা । আমাদের অফিসের বেশ কিছু উপর তলার লোক আছেন যারা বিয়েই করেননি অথচ ইচ্ছে হলেই রাতপরিদের পাড়ায় গিয়ে নিজেদের দেহের উত্তাপ নিবারণ করে আসেন , ওনারা বলেন রাত গেয়ী বাত গেয়ি, এক নয়া রাত এক নয়া পরী, প্রতিদিন একই দেহ নিয়ে ঘষাঘষি করতে কার ভালো লাগে ? প্রত্যেকের দেহের আলাদা আলাদা কোমলতা , আলাদা আলাদা উত্তেজনা , আলাদা গন্ধ তানা বিয়েকরে একটা দেহকে নিয়ে দিনের পড় দিন ঘষা মজা । একটা সময় বারবারের এক ছোঁয়াতে উত্তেজনা হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায় সব অভিব্যাক্তি । কথা গুলো শুনে আমারও মনে হয়েছিল , আমরা যারা বিয়ে করি তারা কি বোকা । পৃথিবীতে কত নারী , সকলেই তো আলাদা আলাদা , তাদের সব কিছুই আলাদা , কারো দেহো মাখনের মোতো নরম তো কারো দেহো চাবুকের মোতো টান টান, আরও কতকিছুর পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তাদের মধ্যে । সবচাইতে বড় বিষয় চাহিদার পরিবর্তন , একে অপরকে উপলব্ধি করার আলাদা আলাদা আদপ কায়দা । এখন আমি মুক্ত পৃথিবীর সকল সুখ এখন আমি উপলব্ধি করবো নিজের মত করে ।

                           বন্ধু , বান্ধব - পার্টি , বার পতিতা পল্লীর গলি , সেখানে থাকা চম্পা , চামেলী , সুনয়নার হাতের পরশ । যখন যেখানে দুচোখ যায় সেখানে ছুটে যাওয়া । আর খাবার খাওয়া ওটাতো এখন অনলাইনেই হয়ে যায় । 2019 এর ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ ভালই চলল সব কিছু কিন্তু যখন সারা পৃথিবী মহামারীর কবলে আবদ্ধ হয়ে গৃহ বন্দী হয়ে গেলো , যখন থিমেগালো পৃথিবীর গতি , তখন উপলব্ধি করতে পারলাম মুক্তির রং আসলে ধূসর । আজ ওর কথাগুলো খুব মনে পড়ছে , যখন ঘরটার মধ্যে বন্দী হয়ে রয়েছি ঠিক তখন ঘরটার প্রতিটা বস্তুর মধ্যে ওর আর আমার ছোট্ট মেয়েটির প্রতিচ্ছবি উপলব্ধি করতে পারছি । আজ কেমন জানো মনে হচ্ছে ও কি একবারও ফোন করে জানতে চাইবে আমি কেমন আছি ? নাকি আমারি ফোন করা উচিৎ ? এই ধরনের সাত - পাঁচ ভাবছি সাথে ভাবছি সারাদিন ঘরে বসে কি করবো । দিনের পর দিন আলুভাতে - ভাত , এর বাইরে আর কিছুই জানা নেই আমার , আজ বুঝতে পারছি কত কিছু লাগে রান্না ঘরে । দুদিন ফোন দেখে রেসিপি বানাতে গিয়ে বুঝলাম , ঘরের মেয়ে বৌরা কানো এতকিছু আনতে বলে রান্নার জন্য । সুদি জিনিস থাকলেই যে সবকিছু সম্ভব সেটাও নয় । রেসিপি দেখে যা বানালাম সেটা পড়ার কুকুরেও খেতে চাইলনা , বুঝলাম সবটা সবার জন্য নয় । 

                             সোফায় বসে সাতপাঁচ ভাবছি , এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনি আমার স্ত্রীর নাম্বার । খুব উৎসাহের সাথে ফোনটা রিসিভ করলেও একটু গম্ভীর ভাবে বললাম হলো - ওপর থেকে চেনা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো বলল কমন আছো ? রান্নার লোক রেখেছো? আমি বললাম রান্নার লোক এখন কোথায় পাবো ? চার দিকের যা অবস্থা কেউ কাজে আসতে চাইছেনা। ওপার থেকে প্রশ্ন এলো কি খাচ্ছ তাহলে ? আমি বললাম আমি যা পারি , সেই চেনা হাঁসি হেঁসে বলল তারমানে ডাল, আলুভাতে - ভাত । আমি একটু রাগ করেই বললাম তোমারতো বেশ মজাই লাগছে তাইনা । ও বলল না অভাবে চললে শরীর খারাপ হয়ে যাবে , আমি দিনু দাকে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছি খেয়ে নেবে কমন । আমি একটু ভনিতা করে বললাম এসবের কি দরকার ছিলো। ও আবার বলল বারোটা বছর এক ছাদের তলায় কাটিয়েছি , তুমি নিজেকে জনা চেনো আমি তার থেকে একটু বেশিই তোমাকে চিনি । সব ঔষধ আছেতো , ঠিক মোতো খাচ্ছ তো ঔষধ গুলো । আমি বললাম ঠিক মোতো খাচ্ছি কিনা জানিনা তবে ঔষধ আমি খাচ্ছি । সকালে গ্যাসের ঔষধ , প্রেসারের ঔষধ খেয়েছো । আমি জিভ কেটে বললাম রান্নার চক্করে একেবারে ভুলেগিয়েছি গো , একটু আগেই টিফিন করেছি এখন খেয়ে নেবো । ওপার থেকে আবার যথারীতি শাসনের সুরে বলল এখনো বলছো খেয়ে নেবো , আগে খাও আমি ফোনে আছি । ফোনটা টেবিলে রেখে ঔষধ খেয়ে এসে ফোনটা ধরতে না ধরতেই কলিংবেল টা বেগে উঠলো । শব্দটা ওর কানেও পৌঁছে গিয়েছে , আমি কিছু বলবার আগেই তিনি বলে দিলেন , খাবার পৌঁছে গিয়েছে , খেয়ে দেয়ে পত্র টা ধুয়ে রাখবে , সন্ধ্যায় দিনুদা আবার যাবে ওনার হাতে এগুলো মনে করে পাঠিয়ে দেবেন কমন , নইলে কালকে আর খাবার পাঠাতে পারবোনা , এখন আমি রাখছি মেয়ের খাবার বানাতে হবে । আমি কিছু বলব তার আগেই লাইনটা কেটে গেলো । আমি দরজা খুলে দেখি দীনুদা আবার বেল টিপতে যাচ্ছে । দরজা খোলার শব্দ পেয়ে হাতটা নবিয়ে নিয়ে একটা তিন থাকার টিফিন কৌটো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন রাত 8 টা নাগাদ আসবো দাদা বাবু । আমি টিফিন কৌটো টা হাতে নিয়ে বললাম ঠিক আছে দিনুদা আমি এটা ধুয়ে মুছে রেখে দেবো । দিনুদা কোন কথা না বলে চলে গেলেন । টিফিন কৌটের উপর দিয়ে গ্রান নিয়ে বুঝলাম চিকেন আছে। অনেক গুলো দিন পড়ে আবার চেনা রান্নার গন্ধ পেলাম ।

                             জীবনে সমস্যা না আসলে তার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না । সেদিন আমার মনে হয়েছিল টাকা দিয়ে সব কিছুই পাওয়া যায় । যায় বয়কি তবে তার সাথে সম্পর্ক থাকে বিনিময় পর্যন্ত । বিনিময় শেষ হলেই সম্পর্ক শেষ কিন্তু মনের সম্পর্কে কোন বিনিময় থাকেনা , এটা আজ আমি বুঝতে পেরেছি । এই দের বছর যাদের সাথে চলেছি , যাদের বুকে মুখ গুঁজে দেহের উষ্ণতা উপভোগ করতে চেয়েছি তারা ততক্ষন আমার ছিলো যতক্ষণ তাদের অর্থ দিয়ে সময় কিনেছিলাম আমি , তারা সময় মেপে ভালোবাসা দিয়েছে টাকার অঙ্কের হিসাব কষে । সেখানে সবটাই ছিলো প্রফেশনাল , হৃদয়ের কোন মূল্য সেখানে নেই । সেই নগরীর একটাই স্লোগান রাত গেই বাত গেই ।

                               এখন আমার যে অনুশোচনা হচ্ছে , সেটা যদি সেদিন বুঝতাম তাহলে হয়তো আমাদের পরিবারটা ভেঙ্গেজেতো না । আজ যখন আমার ফ্ল্যাডে আমি সম্পূর্ন নিঃসঙ্গ তখন আমার সেলফোনটাও নির্বাক । যারা সন্ধে হলেই ফোনের পর ফোন করতো বারে , ডিস্কে যাবার জন্য । এখন তাদের ফোন আর আসেনা ,কারণ সারা পৃথিবী যখন স্তব্ধ , বার বা ডিস্কের দরজা বন্ধ তাই হয়তো তারা নিজেদের বন্ধ করেছে চার দেওয়ালে কিন্তু বন্ধু হিসাবে তো একবার জানতে চাওয়ায় যায় কমন আছিস তুই । উল্টে দু - একজনকে আমি ফোন করেছি , কেউ ফোন দরেনি আবার কেউ রিসিভ করে কথা বলবার অবস্থাতেই ছিলোনা । আজ আর কেউই আবদার করেনা আমার কাছে ? ছোট ছোট কথাতে আজ আর খুনসুটি হয়না এই ফ্ল্যাটের ঘর তিনটিতে । টেলিভিশন টা চালিয়ে কিছুটা সময় কাটাই বটে কিন্তু সেটা কতক্ষণ তারপর আমার ঘরটা যেনো মৃত্যু পুড়ির মত রূপ নেয় । কোথাও কোন শব্দ নেই । চল - ডাল - আলু ফুটিয়ে গিলে নেবার পড় বিছানায় শুয়ে ফোন গেম খেলা তারপর কখন যে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়তাম নিজেই জানতে পারতাম না । একটা অনিয়মিত জীবন যাত্রা যাকে বলে , কটায় খাচ্ছি , কটায় ঘুমাচ্ছি ? কখন জাগছি কোন হিসাব নেই এমন সময় ওর ফোনটা আসতে প্রায় মাসখানেক পর আবার মনে হোল না এখন আমি এই পৃথিবীতেই আছি ।

                             হাত মুখটা ধুয়ে , একটা থালা নিয়ে খাবার টেবিলটার সামনে এসে একটু থেমে গেলাম । টেবিলের চার পাশে চারটে চেয়ার , একটা আমার ওদের দুজনার দুটো , আর একটা ছিলো মায়ের । মা বছর তিনেক আগে গত হওয়াতে ওটা খালি থাকে কিন্তু থাকতেও আজ বাকি চেয়ার দুটো ফাঁকা। একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লাম , এই মুহূর্তে ওটার বিকল্প আমার কাছে কিছু নেই । আমার চেয়ারটা টেনে সেটাতে বসে টিফিন কৌটোথেকে খাবার গুলো বেড়ে খেতে যাচ্ছি এমন সময় মনের ভিতরটা হুহু করে উঠলো , আমি ফোনটা টেনে নিয়ে ওকে ফোন করতে গিয়েও থেমে গেলাম । কয়েক মুহূর্ত থেমে অবশেষে ফোনটা লাগালাম আমার এক্স স্ত্রীর কাছে । কেনো জানিনা মনে হলো ওরা খেয়েছে কিনা জানা উচিত । ফোনটা কিছুটা রিং হবার পড় আমার স্ত্রী ফোনটা ধরেই বলল খাওয়া হয়েছে ? আমি বললাম না এইতো খেতে বসেছি । স্ত্রী বলল তাহলে এখন ফোনটা করলে কানো খেয়েনিয়েই নাহয় আমার রান্নার ভুল ত্রুটি গুলো বলতে , না খেলে বুঝবে কি করে ? আমি বললাম না আমি সেইজন্য ফোন করিনি , আমি ফোন করেছি তোমরা খেয়েছো কিনা জানবার জন্য । আমার স্ত্রী সভাব সিধের মোতো বলল যাক তোমার তাহলে এটা মনে হয়েছে , আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে যা শেখাতে পারিনি বারো বছরে তুমি সেগুলো দের বছরেই শিখে গিয়েছো। এবার আমি একটু বিরক্ত হয়েই বললাম হয়তো কিন্তু তোমার স্বভাব একটুকুও বদলায় নি , ও আবার বলল আমি মানুষটাইবা কবে বদলালাম ? আমিতো শুরু থেকেই এক রকম , বদল এসেছিলো তোমার মধ্যে । আমি শান্ত ভাবে বললাম তুমি ভুল কিছু বলেনি বদলাতে চেয়েছিলাম আমি কিন্তু এই মুক্তির বদলের রং যে ধূসর হয় আমি বুঝতে পারিনি , এবার একটু উত্তেজিত হয়েই বললাম আচ্ছা আমরা আবার আগের মোতো হয়ে যেতে পারিনা ? আমার স্ত্রী বলল ওসব পড়ে ভাবা যাবে এখন আগে খেয়ে নাও , খাবার পর একটা ঔষধ রয়েছে খেয়ে নেবে ভুলে যেওনা , এখন রাখি মেয়েটা থালানিয়ে বসে রয়েছে ওর খিদে পেয়েছে । আমি বাক রুদ্ধ রয়ে গেলাম ওপার থেকে ওর গলা আবার শুনতে পেলাম কি হলো কিছু বলবে ? আমি এবার বললাম না তোমরা খেয়ে নাও । ফোনটা কেটে গেলো ।

                          খাবার খেতে খেতে আমার দু চোখ ছল ছল করে উঠলো , গোপনে চোখের জল মুছে অনেক দিন পর পরম তৃপ্তিতে খাবার খেলাম।

                                  তার পর থেকে প্রতিদিন আমাদের মধ্যে কথা হয় । স্ত্রীর সাথে , সন্তানের সাথে কিন্তু ফেরার কথা উঠলেই স্ত্রী প্রসঙ্গ বদলে ফেলে । একদিন আমি ওকে জোর করেই বলি আমরাকি আবার একসাথে থাকতে পারিনা ? আমার স্ত্রী একটুও ভনিতা না করেই বলে না । আমি বলি কিন্তু কানো ? স্ত্রী বলে সমস্যা তোমার হচ্ছিলো তাই তুমি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানিয়েছিলে, তখনতো আকবরের জন্যে আমাকে বলনি কারণটা কি ? তবে যেহেতু বিচ্ছেদ আমাদের মধ্যে আর তুমি চেয়েছো তারমানে সমস্যা আমার মধ্যেই রয়েছে , আর সেটা কোনদিন মিটবেনা , আমিতো তোমার মোন রাখতে বদলাতে পারবোনা ? আমি বললাম আমি ভুল করেছি সেটা আমি বুঝতে পেরেছি , আমার স্ত্রী বলল তুমি তোমার ভুলের জন্য নষ্ট হয়েজাওয়া দের বছর আমাদের ফিরিয়ে দিতে পারবে ? আমি একটু থেমে বললাম না । স্ত্রী বলল তারমানে যেটা চলেযায় বা ঘটে যায় সেটা ফিরিয়ে আনা যায় না , তাহলে যে সম্পর্কটা তুমি নিজের হাতে ভেঙেছো সেটাকী আগের মতো কোনদিন জোড়া লাগতে পারে ? বিষয়টা অনেকটা এভাবে বললে খুব একটা হয়তো ভুল হবেনা , আমার স্ত্রীকেই আমি আবার নুতন করে প্রেম নিবেদন করতে লাগলাম , যদিও অবশেষে জয়ী হয়েছি আমি । আমার প্রেম নিবেদনকে শেষ পর্যন্ত ফেলেদিতে পারেনি ও । তবে আমার জীবনের কাছথেকে একটা চরম শিক্ষা হয়েছে । নিজের সংসারের থেকে অধিক আপন পৃথিবীতে কেউ হতে পারে না , তাতে মাঝে মধ্যে একটু খুনসুটি হোকনা কানো , যখন এই খুনসুটি গুলোকে মিস করতে হয় তখন যে কি আপসোস হয় , যারা মিস করেছেন একমাত্র তারাই জানেন । আমিতো ধূসরতা কাটিয়ে আবার রামধেনু রং ফিরে পেয়েছি তাবলেজে সকলেই পাবেন তেমনটি কিন্তু নয় । তাই ধূসর পৃথিবীতে পা রাখার আগে ভালো করে ভেবে চিন্তে পা বাড়াবেন ।

                               সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract