Krishna Banerjee

Abstract Romance

4  

Krishna Banerjee

Abstract Romance

সেই চিঠি

সেই চিঠি

6 mins
40


                        আজ আমার বয়স আটান্ন, আমার ঘরে একটা আলমারি রয়েছে জার মধ্যে রয়েছে শুধু আমার বই আর কয়েকটি ডায়রি । একটা সময় ছিলো যখন আমার নেশা ছিলো ডায়রি লেখা । আমি আজ যে সময়ের কথা বলতে চলেছি , সেই সময় আমার বয়স ছিলো আঠেরো । উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছি সবে । পড়াশুনাতে খুব একটা ভালো ছিলাম না , ফলে মাধ্যমিক পাশের পর কলাবিভাগ ছাড়া আর কোন বিভাগই কপালে জোটেনি । ইতিহাস , ভূগোল , রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পাশাপাশি এডুকেশন ছিলো আমার পড়াশুনার বিষয় বস্তু ।বাংলা আর ইংরেজি সেতো কমন বিষয়। স্নাতক হতে হবে নইলে নাকি এই অভাগা রাজ্যে কোন চাকরি জুটবে না । অনেকটা পড়ে বুঝেছিলাম এই রাজ্যে সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই । B.A - M.A পাস করা ডিগ্রির কাগজ নিয়ে বছরের পড় বছর কেটে যাচ্ছে এক এক জনের । চাকরি পেতে হলে চ্যানেল আর প্যানেল এই দুটোর উপর করা দখল থাকতে হবে । অগত্যা বাড়ির চাপে স্নাতক হতেই হবে । আর চ্যানেল পেতে হলে কোন না কোন ঝানডার নিচে তোমাকে আসতেই হবে । অগত্যা নাম লেখালেন ছাত্র রাজনীতিতে , পড়া শেষ করে চাকরি একটা পেতেই হবে । দলের প্রথম মিটিং আমার আলাপ হলো কমার্সের সতরূপার সাথে । পারিবারিক নামকরণ একেবারে যথার্থ। রূপে গুণে তার জুড়ি মেলা ভার । কথাবার্তা ছুরির মোতো ধরলো হলেও বেশ মিষ্টি । অল্প দিনের মধ্যে নিজেকে বেশ গ্রহণ যোগ্য করে নিয়েছে ছাত্রদের কাছে । আমাদের বিরোধী দলের একমাত্র সাবলীল নেত্রী সে । আমিও কোন অংশে কম যায়না । মেয়েদের আমার প্রতি কোথাও যেনো একটা দুর্বলতা ছিলো । ওর বিরুদ্ধে নমিনেশন জমা দিচ্ছি আমি । আমি যাতে নমিনেশন জমা না দেই সেটা বোঝাবার জন্যই আমাকে ডাকা। আমিও ছেড়ে কথা বলবার ছেলে নই, তাই আমিও ওদের বুঝিয়ে দিলাম আমি নমিনেশন জমা করবই ওরা যদি আটকাতে পারে আটকে দেখাক । এক প্রকার জেদে পরেই কথাগুলো বলে ছিলাম আর আমি জানতাম নমিনেশন জমা পড়লে জয় আমাদের পাক্কা । কারণ কলেজের রেসিও 60/ 40 । 40 ভাগ পুরুষ বাকি 60 ভাগ মেয়ে । ফার্স্ট ইয়ার থেকে ফাইনাল ইয়ার প্রতিটা মেয়ের সাপোর্ট আমার দিকেই । একটা ঝগড়ার পরিবেশ নিয়েই আমাদের পথ চলা শুরু । ভোটের দিন একটু উত্তেজনা হলেও মোটের উপর সবটাই শান্তি পুরনো ভাবেই মিটে গেলো । দু - একজনার মাথা ফেটেছিল বটে তবে এটা খুবই তুচ্ছ বিষয় । ভোটে যদি মাথা না ফাটে, হাত - পা না ভাঙে তাহলে আবার ভোট কিসের ? পরের দিন রেজাল্ট , রাত ভর আমরা ব্যালট পাহারা দিলাম । সেখান থেকেই ওর সাথে একটা সুষ্ঠ সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। ভোটের রেজাল্টে আমি জিতলেও G.S আমি হলাম না । প্রিন্সিপাল কে জানালাম G.S হবার যোগ্যতা আমার চাইতে ওর বেশি তাই ওকেই G.S করা হোক। আমি A.G.S হিসাবে থাকতে চাই । যাইহোক তেমনটাই হয়েছিল , তারপর থেকে আমাদের সম্পর্ক আরো একঘর এগিয়ে যায় ।

                           পথ চলতে চলতে কবেজে ওকে ভালো বেসে ফেলেছি সেটা বুঝেই উঠতে পারলাম না । ভালোতো বসলাম মনে মনে ওর সামনে গিয়ে মুখে বলার সাহস আমার ছিলোনা । ওর এক খুব কাছের বান্ধবীকে বিষয়টা জানাতে সে বলেছিলো, ওর হয়তো আমার প্রতি একটা দুর্বলতা রয়েছে কিন্তু সরাসরি বলাটা আমার কাছে সত্যি খুব কঠিন ছিলো, তখন ঐ মেয়েটি আমাকে পরামর্শ দিলো চিঠি লেখার , ওর কাছে সেটা পৌঁছে দেবার দায়িত্ব তার । আমিও ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম । আজ আমাদের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার শেষ দিন , এরপর দিন কয়েক ছুটি । আমি পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে চিঠিটা সেই মেয়েটির হাতে তুলে দিলাম ।

                         ছুটি শেষ হতেই আবার কলেজে আসা। একটা ভয় আমাকে কেমন যেনো গ্রাস করছিল । কলেজে ঢুকে ওর মুখমূখি হতেই ওকে বেশ কিছুটা গম্ভীর দেখলাম । আমি ভেবেই নিলাম বন্ধুত্ব টাও আর থাকবেনা এর পর । সেদিন ওর সাথে আর কোন কথাই হোলনা । একটা পেপারে আমার সইয়ের দরকার ছিলো, আজ আর ও নিজে আলোনা অন্য একটি ছেলেকে পাঠালো কাগজ দিয়ে । আমি আবার আরো confirm হোলাম আজ থেকে ওর সাথে আমার সকল সম্পর্কই শেষ হয়ে গিয়েছে । এর পর আরো দিন তিনেক কেটে গেলো । প্রতিদিন ও কলেজে আসে সকলের সাথে কথা বলে কিন্তু আমি বাদ । সেদিন রাতে আমি শুয়ে শুয়ে ভাবলাম আগামী দিন আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো তাতে অন্তত ও আমার আশেপাশে থাকবে । নিজেকে প্রস্তুত করেই কলেজে ঢুকলাম কিন্তু সেই দিনটা ছিল অন্যরকম । আমি কলেজে ঢুকতেই সেই মেয়েটি আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলল শতরূপা দিয়েছে । 

                        জানিনা কি লেখা রয়েছে ওই চিরকুটে তবুও আমার মনে একটা ঢেউয়ের তরঙ্গ আন্দোলিত হতে থাকলো । আমাদের কমন রুমটা বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকতো , আমি সেটা নিয়ে চলে গেলাম সেখানে । 

                          আজ এতগুলো বছর পড় ডায়রি খুলতেই ওর লেখা বেশকিছু চিঠি বেরিয়ে এলো। চিথিগুলোকে আমি date অনুযায়ী সাজিয়ে রেখেছি , প্রথম চিঠিটা হতে নিয়ে আমার দুচোখ জলে ভরে এলো । চিঠিটা ছিলো দুএক কথার।

                প্রিয়তম,

               ……………. 

     আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে সরাসরি জানাবে তোমার মনের কথা কিন্তু তুমি তা করলেন । তোমার লেখা চিঠিটা খুব সুন্দর হয়েছে , আমার খুব ভালো লেগেছে , তাই এটাকে আমি সারা জীবন যত্ন করেই রাখবো কিন্তু আমি সরাসরি তোমার চিঠির বয়ান টা , তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই ।

                                               ইতি…..

                                   তোমার ……………।

             পরের দিনটা ছিলো 14 ই ফেব্রুয়ারি , ভ্যালেন্টাইন্স ডে , আমি এক গোছা গোলাপ নিয়ে ওর সামনে গিয়ে , সরাসরি বললাম , শতরূপা আমি তোমাকে ভালবাসি । ও আমার হাত থেকে গোলাপের গোছাটা নিয়ে বলেছিলো , এই সামান্য কথাটা বলতে একটা বছর কাটিয়ে দিলে, এই বলে সকলের সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো , কথা দাও কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাবেনা । আমি কথা রেখেছি , আমি আজও ওর স্মৃতি গুলোকে আগলে নিয়ে বসে আছি কিন্তু কথা রাখেনি শতরূপা , আমারসাথে প্রতারনা করেছে ।

               আমরা ফাইনাল ইয়েরের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি । ইংরেজিতে ভালো ছিলো শতরূপা বলতে পারেন আমার ইংরেজির শিক্ষিকা তখন সে । আগেরদিন বেশ অনেকটা রাত পর্যন্ত ওদের বাড়িতেই আমাকে পরিয়েছে রোমিও - জুলিয়েটের গল্প । অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে দেখে ও বলেছিলো ওদের নিচের একটা ঘর খালিই থাকে অতিথিদের জন্য রাতটা ওখানে কাটিয়ে নিতে । তখন এতো ফোন ছিলোনা , মা চিন্তা করবে বলে আমি চলে এসেছিলাম । আগামীর সকালটা যে আমার জন্ম এতোটা কঠিন হবে আমি নিজেও ভাবতে পারিনি । ঘড়িতে তখন সকাল সাত টা । আমাদের ঘরের কোনিং বেলটা বেজে উঠলো। মা দরজা খুতেই আমার কানে ভাসে আসলো একটি মেয়ের কণ্ঠস্বর , মেয়েটি আর কেউ নয় , মেয়েটি সে যে আমাদের ভালোবাসার প্রথম সেতুটা নির্মাণ করেছিলো। আমি আমার রুম থেকে ধরফর করে বেরিয়ে আসলাম , ওকে জিজ্ঞাসা করলাম কিরে তুই এতো সকালে ? ও এটি কষ্টে আমাকে জানালো শতরূপা আর নেই । কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আমার পৃথিবীটা শূন্য হয়ে গেলো , মোন হলো আমার পায়ের তলার মাটিটাই হারিয়ে গিয়েছে , নিজের কানকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনা , ওকে বললাম সকাল সকাল কেনো এইধরনের মজা করছিস ? ও কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল সত্যি বলছি শতরূপা আর নেই ।

                              জামা প্যান্ট গায়ে গলিয়ে দিকবিদিক শুন্য হয়ে ছুটলাম ওর বাড়িতে । বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট গার্ডেন ছিলো , সেই গার্ডেনে ফুল - চন্দনে সাজিয়ে সোয়ানো রয়েছে তার দেহ খানা । দেখে বোঝবার জো নেই যে শতরূপার নিথর দেহ ওটা । ওর মায়ের কাছে জানতে পারলাম, ওর নাকি ব্রেন ক্যান্সার হয়েছিলো যেটা বোঝার সময়টুকুও দেয়নি । মারা যাবার আগে ও ওর বাবা - মাকে বলে গিয়েছে ওর মুখাগ্নি যেনো আমি করি । মাত্র 45 মিনিটের ব্যবধানে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলো আমার শতরূপা । না পৃথিবীর বুকথেকে হারালেও আমি আজও ওকে আমার বুকে ধরে রেখেছি , প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করি ওর উপস্থিতি । ওর ছোট থেকে ছোট স্মৃতি গুলো আমি আজও যত্ন করে রেখেছি । শতরূপার অস্তিত্ত সেদিন বিলীন হবে যেদিন 45 মিনিটের ব্যবধানে আমার রক্ত - মাংসের দেহখানা বিলীন হয়েযাবে সেই চিন্তায় যেখানে আজও জেগে আছে শতরূপা আমার অপেক্ষায়……….. ।

                 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract