Krishna Banerjee

Abstract Romance Others

3  

Krishna Banerjee

Abstract Romance Others

ভালোবাসি তোকে

ভালোবাসি তোকে

6 mins
9


                     এখন মাঝে মাঝে যখন উত্তরের ব্যালকনিতে বসে থাকি , রাস্তার ওপারে নীলাঞ্জনার রুমটা চোখে পড়ে । কতো স্মৃতি লুকিয়ে আছে ওই ঘরটার মধ্যে । নীলাঞ্জনার সাথে দিনের পড় দিন কাটাবার স্মৃতি , ওর ছেলেমানুষী আবদার গুলোকে একমনে উপলব্ধি করেছি দিনের পড় দিন । আমার এই ঘরটা ওদের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে । ও যখন স্নান সেরে মাথা মুছতে মুছতে একটা পাতলা নাইটি পড়ে ডেসিন টেবিলটার সামনে এসে দাঁড়াতো —---- বাইরের তপ্ত আলোতে নাইটিটার অন্তরালে থাকা নীলাঞ্জনার দেহটাকে কি অপরুপ দেখাতো । কত রাতে আমার পাস বালিশটাকে নীলাঞ্জনা ভেবে সুখ চুম্বন দিয়েছি। আজ নীলাঞ্জনা ওই বাড়িতে থাকেনা ওর একটা নুতন ঠিকানা হয়েছে । নীলাঞ্জনা এখন বিবাহিত । আমার মনের কথা মনেই রয়ে গিয়েছে আজও । হয়তো বলবার অনেক সুযোগ আমি পেয়েছিলাম , হয়তো নীলাঞ্জনা ও আমার মুখথেকে অনেকবার শুনতে চেয়েছিল সেদিন আমি কিছু বলতে পারিনি ।

                        আমার কাছে ওর অভিমান , আবদার সবটাই ছিলো অন্য ধরনের । আজ ওই খালি ঘরটার দিকে তাকিয়ে মনটা হুহু করে ওঠে । একটা চাপা বেদনা কমন জানো বুকটাকে কষ্ট দেয় । যখন ওর শরীর খারাপ হতো, আমাকে ফোন করে বলতো একটু আস্তে পারবে ? আমি বুঝতে পারতাম ওর নিশ্চই কোন অসুবিধা হয়েছে । আমি চাইলেই বলতে পারতাম এখন একটু দূরে আছি , ফোনেতো আজকাল কত কিছুই না হয় । কলকাতাতে বসে বলেদেওয়া যায় আমি আখন দীঘার সমুদ্র সৈকতে কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টটাই হয়েছে বারে বারে । একবার একটা বিশেষ কাজে ট্রেনে উঠতে যাবো আমার ফোনটা বেজে উঠলো , ওর নাম্বারের করার টোন টা আলাদা তাই বুঝতে অসুবিধা হলনা , ফোনটা রিসিভ করতেই বলে উঠলো তুমি কোথায় আছো একবার আসতে পারবে ? আমি বোকার মোতো ট্রেন ছেড়ে চলে আসলাম ওদের বাড়িতে । হন্তদন্ত হয়ে ওর ঘরে ঢুকে দেখি কয়েক টুকরো বরফ নিয়ে হাতে ডলছে , আমার বুকটা ধড়াস করে উঠলো , আবার কি হলো নীলাঞ্জনার । ও আমাকে তুমি বললেও আমি ওকে তুই বলেই ডেকেছি সবসময় একটু আব্দারি গলাতে বলল সাইকেল থেকে পড়ে গিয়েছি হাতে খুব লেগেছে । আমি একটু বকুল হয়েই বললাম ঔষধ খেয়েছিস কিছু । আবার বাচ্চাদের মোতো বলে উঠলো বোন গিয়েছে ঔষধ আনতে , আমি বললাম আমি একবার যাই দেখি খি ঔষধ আনছে, বাম হাত দিয়ে ও আমার হাতটা চেপে ধরলো । ঐযে ওর সামনে বসলাম পাকা চার ঘণ্টা , ওর চিন্তা ভাবনাই এমন যে আমি যদি ওর সামনে বসে থাকি ওর সকল রোগ ঠিক হয়ে যাবে । অবশেষে আমি বললাম এবার আমি উঠি , ঔষধ খেয়ে এখন ব্যাথাটা কিছুটা কমেছেতো আবার পড়ে আসবো । সত্যি কথা বলতে ওকে ছেড়ে আসতে আমারও ভালো লাগতো না , কিন্তু সমাজ এমন একটা জিনিস যে সে তিককে যখন তখন তাল বানিয়ে ছাড়বে । আসলে ওর বাবা - মা দুজনেই কাজ করতেন । ওরা দুই বোন বাড়িতে থাকতো । আমিতো ছেলে মানুষ খুব বেশি হোলে দু - চারটে কথা সোনাবে কিন্তু একটা মেয়ের একবার বদনাম হলে , সেটা সহজে মোছা যায়না ।

                            আমি হয়তো নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম , ভেবেছিলাম পায়ের তলার মাটিটা শক্ত হলে নিজের প্রতি কনফিডেন্স থাকবে । আসলে ও কোনভাবে কষ্ট পাক এটা আমি মেনে নিতে পারতাম না । ও আমাকে বহু বার নিজেকে উজাড় করে দিতে চেয়েছিলো। ওর কষ্ট হলে হয়তো ওর বাবা - মায়ের থেকে আমাকে বেশি ভরসা পেতো। একবার প্রচন্ড জর । আমি সবে খেতে বসেছি আমার ফোনটা বেজে উঠলো, আমি ফোনটা রিসিভ করতেই ধরা গলায় বলল তুমি কোথায় , আমার প্রচন্ড জর এসেছে একটিবার আসবে । আমার খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠলো , ভাত ফেলে হাত ধুয়ে ছুটলাম । আমি গিয়ে ঔষধ দিলাম , এর পর শুরু হলো আবদার —--- মাথাটা আমার পায়ের উপর তুলে দিয়ে বলল একটু হাত বুলিয়ে দেবেগো , আমার মাথাটা খুব বেথা করছে । দুই ঘণ্টা ধরে তার সেবা করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে বাড়ি ফিরলাম ।

                            যতদিন পর্যন্ত স্কুলে পড়ছিলো , ও আমার ছিলো , এটা আমার ধারনা । কলেজ ভর্তি হবার পর থেকে একটা পরিবর্তন আলো নীলাঞ্জনার মধ্যে । আমি ভাবদাম নতুন পরিবেশ , নতুন মানুষ জোন নীলাঞ্জনা হয়তো একটু চাপে রয়েছে , তাই তমন একটা যোগাযোগ করে উঠতে পারেনা । বিষয়টা তেমন ছিলোনা , বিষয়টা ছিলো নীলাঞ্জনা প্রেমে পড়েছে । এখন তার খোঁজ নেবার লোক হয়েছে , এখন আর বেথা পেলে আমাকে দরকার নেই , ওর বেথা কমানোর লোক জুটে গিয়েছে । খবরটা প্রতিবেশীদের মুখে শুনেও আমি মেনে নিতে পারলাম না । এরপর আবার একটা বিপদ , আবার ওর মনে পরলো আমাকে । বাড়িতে গিয়ে সব শুনে , আমি ওকে কাছে টেনে নেবার চেষ্টা করলাম । কিছুদিন সব ঠিক ঠাক চলল , আবার নীলাঞ্জনার মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করলাম আমি । নীলাঞ্জনা একজন ভালো ছাত্রী , আমি চেয়েছিলাম এই নিষ্ঠুর সমাজে ও একটা জায়গা করুক কিন্তু প্রেমের নেশা মানুষের লাইফে এক এক সময় এতো মারাত্বক অভিশাপ হয়ে ওঠে , যে মানুষের গতিকেই রোধ করে দেয় । 

                           নীলাঞ্জনাকে এতটাই কাছথেকে পেয়েছিলাম , ওকে কুঁড়ি থেকে ফুল হতে দেখেছি আমি । নীলাঞ্জনা কোনদিন আমার কাছে ভোগের সামগ্রী ছিলোনা ও আমার কাছে ছিলো পূজার ফুলের মত । হয়তো আমি ওকে যে জায়গাতে বসিয়েছিলাম সেখান থেকে শুধু মাত্র মনের পবিত্রতাই উপলব্ধ হতো , দেহের চাহিদা মিটতো কিনা জানিনা । কারণ জার দেহে একটা ফুসকুড়ি হলে , ওর থেকে বেশি কষ্ট হতো আমার । হয়তো ও শারীরিক বেদনা পেতো আর হৃদয় কাপতো আমার , জানি একটা স্ত্রী আর একটা পুরুষের মধ্যে যৌনো চাহিদাটা বিরাট বিষয় কিন্তু আমি হয়তো নীলাঞ্জনাকে তৃপ্তি ময় যন্ত্রনা টুকুও দিতে পারতাম না । আসলে নীলাঞ্জনা আমার কাছে ঠিক কি , সেটা ভাষা দিয়ে আপনাদের বোঝাতে আমি পারবোনা ।

                             অবশেষে একজনের সাথে নীলাঞ্জনার বিয়ে হলো , আমি আমন্ত্রিত ছিলাম , কিন্তু বিয়ের পোশাকে অন্য কারসাথে নীলাঞ্জনাকে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা। তাই ওর বিয়ের আগের দিন কালীনপং চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । ওর বিয়ের রাতে প্রথমবার এতটা মদ্যপান করছিলাম আমি যে —--- রাস্তা দিয়ে হেঁটে হোটেলে ফেরার অবস্থা আমার ছিলোনা । পূর্ণিমা গিয়েছে দু - একদিন হয়েছে , চারদিকে পাহাড়ের মাঝখানে একটা রামের বোতল হাতে সেই প্রথমবার আমি কাঁদতে কাঁদতে চিকার করে বলেছিলাম নীলাঞ্জনা আমি ভালোবাসি তোকে । পরের দিন সকালে পাহাড়ের সেই স্থানে উদ্ধার করি নিজেকে । হয়তো রাতের বেলা এক পাচলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো । আমি যখন উঠে দাঁড়ালাম তখন রামের বোতলটা শুন্য বুকে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে , আমার সারাদেহ বৃষ্টির জলে সিক্ত । প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগছিলো আমার , আমার আশপাশটা ছিলো নীলাঞ্জনা শুন্য , তাই উত্তাপ দেবার মোতো কাউকেই পেলাম না ।

                             আমাদের এই বাড়িতে আমি এখন খুব কম আসি , আসলেই অতীতটা আমাকে ঘিরে ধরে । বালিগঞ্জে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েই থাকছি এখন। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা বছর কেটে গিয়েছে । নীলাঞ্জনার ফোন নাম্বারটা আমার কাছে সেভ করা রয়েছে । এখন আর ওর ফোন আসেনা , তবুও আমি অপেক্ষাতে থাকি হয়তো কোনদিন নীলাঞ্জনার আমাকে মনে পড়বে ? হয়তো কোনদিন আমার ফোন আবার বেজে উঠবে নচিদার সেই গানটা , “ লাল ফিতে সাদা মোজা স্কুল ইউনিফ্রাম “ । এখন শুধু প্রতীক্ষা নীলাঞ্জনার পথ চেয়ে , হয়তো একদিন নীলাঞ্জনা ফিরবে নয়তো একদিন আমি হারিয়ে যাবো নীলাঞ্জনার পথ চেয়ে ।

                               সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract