Krishna Banerjee

Romance

4  

Krishna Banerjee

Romance

কি নামে ডাকবো তাকে ?

কি নামে ডাকবো তাকে ?

6 mins
13


কি নামে ডাকবো তাকে ?

                  ( এ এক অন্য প্রেমের গল্প )

                     কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী

                          এই গল্পটা রাহুল আর রঞ্জিনির । দুজনের মধ্যে বয়সের পার্থক্য প্রায় পনের বছরের।

ওদের দুজনার আলাপ একটা অঙ্কন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে । রাহুল ওই কেন্দ্রটির একমাত্র শিক্ষক । তখন রাহুলের বয়স পঁচিশ বছর, দশ বছরের রঞ্জিনি বাবার হাত ধরে রাহুলের স্কুলের গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করে । রাঞ্জিনি তখন একটা ফুট ফুটে বাচ্চা মেয়ে । রাহুলের বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর । বাড়ির নিচের একটা ঘরে চলে রাহুলের স্কুলটি । রঞ্জিনীর বাবা তাকে ভর্তি করে দিয়ে রাহুলকে জিজ্ঞেস করলেন ওকে কখন নিতে আসবেন ? রাহুল জানালো , আপনি ঘণ্টা দেড়েক পড় চলে আসুন । রঞ্জীনির বাবা তাকে রাহুলের হতে তুলে দিয়ে চলে গেলেন । রঙ্গিনীর জীবনে নতুন একটা পর্বের সূত্রপাত ঘটলো , এই সম্পর্ক টা যে কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে সেই ধারনা হয়তো রাহুল বা রঙ্গিনীর কারোই জানা ছিলোনা। আজও তারা খুঁজে পায়নি তাদের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা আসলে কি ধরনের সম্পর্ক ? তারা জানেনা সমাজ এই সম্পর্কের ঠিক কি নাম দেবে ? আদেও কি এটা প্রেমের সম্পর্ক নাকি একটা গভীর মায়া , পবিত্র ভালবাসা চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে গিয়ে এই সম্পর্কের কি নাম দেওয়া যেতে পারে । ওটা না হয় আপনারাই ঠিক করবেন আমি গল্পটা আপনাদের বলি ।

                           আমি রাহুল সেনগুপ্ত , আমার স্ত্রী মোনালিসা , আমার একমাত্র মেয়ে নূপুর । রঞ্জিনী যখন আমার আঁকা স্কুলে ভর্তি হয় তখন নূপুরের বয়স মাত্র দুই বছর । খুব মিষ্টি মেয়ে রাঞ্জিনী। আমরা সকলেই তাকে ভালবাসি । আমাদের সংসারে অভাব থাকলেও আনন্দের অভাব ছিলোনা , যদিও সেটা আজও নেই । রোঞ্জিনি খুব এক্টিভ ধরনের মেয়ে । যেকোন জিনিস খুব সহজেই ধরে নিতে পারতো।খুব কম সময়ের মধ্যেই সে চিত্র শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠলো । একেরপর এক পরীক্ষাতে দারুন ফল হতে থাকলো তার । প্রতিটা প্রতিযোগিতায় সেই সেরা , এতে আমার একটা লাভ হল বটে , আমাদের স্কুলটার নাম ছড়িয়ে পড়ল বহু দুর পর্যন্ত । যোগ্য ছাত্রী হিসাবে কিছু ছাত্র - ছাত্রীর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল ওর হাতে । সে বছর রঞ্জিনী উচ্চ মাধ্যমিক দেবে । এই বিষয়টাতে যাবার আগে ওর সম্বন্ধে দু - একটা কথা না বললে আপনাদেরই বুঝতে অসুবিধা হবে । ওর একটা গুন ছিলো সেটা হলো ও মুখ ফুটে কিছু চাইবেনা ,অথচ ওর চোখের ভাষা আপনাকে বুঝিয়ে দেবে ও কিছু চায় । ওকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করে বিষয়টা আমি রপ্ত করে ফেলেছিলাম । আমার কাছে ওর আবদারটা ছিলো আলাদা ধরনের । যেকোন অসুবিধাতে ওর পাশে আমাকে থাকতে হবে । মাঝে মধ্যে ওকে হাতেকরে কিছু দিলেই ও খুশি । জিনিসের মূল্য নিয়ে কোন মাথাব্যথা ছিলোনা ওর । ওর এই ছোট ছোট আবদার গুলো কোন একসময় আমার চাহিদায় রূপান্তরিত হয়েছে আমি বুঝতেও পারিনি ।

     উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার তিনমাস আগেথেকে ছুটি নিলো সে । এখন এতো বড় প্রতিষ্ঠানটা আমাকে একাই সামলাতে হয় । ও কথা দিয়ে গেলো পরীক্ষার পড় ফিরে আসবে , তারপর থেকে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয় । পরীক্ষা মিটলো , রেজাল্ট বারহোল , কলেজে ভর্তি হোল রঞ্জীনি । কোন যোগাযোগ আর সেভাবে রাখেনা । ধীরে ধীরে ফোন ধারাটাও বন্ধ হয়ে গেলো । মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন । যে মেয়েটাকে হাতে করে গড়ে তুললাম সে কানো এমন করছে , ভাবলাম হয়তো নিজেই একটা স্কুল খুলেছে । আগে মাঝে মধ্যে ওদের বাড়িতে জাওয়াহত  এখন সেটাও বন্ধ । পুর ঘটনাটা ঘটে গেলো মাস ছয়েকের মধ্যেই। আমি জানতে পড়লাম ও প্রেম করছে । এটা কোন অস্বাভাবিক কিছুই নয় , যেটা অস্বাভাবিক সেটা হল যে মেয়েটা সামান্য অসুস্থ হলে আমাকে দিনের মধ্যে কয়েকবার ফোন করত সে তার জীবনে এত বড় একটা ঘটনার সন্মুখীন একটিবারের জন্যও জানালনা । আমি ধীরে ধীরে মেনে নিলাম ওর পরিবার পরিজন রয়েছে , আমিতো বাইরের লোক । কিছুটা কষ্ট হয়েছিল মানতে কারণ এতদিন ও আমারসাথে যা যা শেয়ার করেছে সেই সকল কথা হয়তো , হয়তো নয় সে তার বাবা - মায়ের সাথেই বলেনি কখনো। মাঝে মাঝে কষ্ট হত বটে কিন্তু নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করতাম। 

                          মাস ছয়েক পড় হঠাৎ তার ফোন , ফোনটা রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভেসে আসলো চেনা কণ্ঠস্বর , আমি একবার দেখা করতে চাই ।সেদিন কোন এক অজানা কারণে আমি না করতে পারলামনা । আমার সামনে আছে কান্নায় ভেঙে পড়ল সে । সবকথা শুনলাম , তাকে কথা দিলাম আমি যতদিন পৃথিবীতে আছি তার পাশে থাকবো। আবার একটা নতুন করে পথ চলা শুরু হলো । কিছুদিন ভালোই কাটলো , তখন আমার শরীরটা বেশ অসুস্থ । রঞ্জিনি স্কুলটাকে দেখাশুনা করে । আমার সাথেও নিয়মিত দেখা করে , একটা আলাদা ধরনের সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকি আমরা সবাই । ওকে ছাড়া সবকিছু যেন সম্পূর্ন । আমার। হঠাৎ জানতে পড়লাম ওর বিয়ের ঠিক হয়ে গিয়েছে । সেদিন কেনো জানিনা খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার । যদিও এটাই স্বাভাবিক টুবুও আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না । খবরটা ওর বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলাম , তাই এ বিষয়ে ওরসাথে কোন কথা বলিনি আমি । ধীরে ধীরে শরীর আরো খারাপ হয়ে পড়ার ফলে চিকিৎসার জন্যে ব্যাঙ্গালোর যাবার সিদ্ধান্ত নেই । ওর বিয়ের যে তারিখটা ওর বাবা জানিয়েছিল ঠিক তার তিনদিন আগে আমরা রিজার্ভেশন নেই । জানিনা সেদিন কেন মনে হয়েছিলো ওর বিয়েতে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয় , কারণটা আমি বলতে পারবোনা । আসলে আমার নিজেরই জানানেই ।

                              যেদিন আমাকে ডাক্তার দেখানো হচ্ছে সেদিন ওর বিয়ে । সারাদিন ধরে নানান রকমের রক্ত পরীক্ষা করবার পড় ডাক্তার জানালেন আমাকে ওখানে 6 মাস ভর্তি থাকতে হবে । আমার মাথাতে বাজ ভেঙে পড়ল আমার স্কুলের কি হবে ? একবার ভাবলাম রঞ্জিনীকে একটা ফোন করবো ওর কাছেতো স্কুলের একটা চাবি রয়েছে ও যদি স্কুলটাকে চালু রাখতে পারে । তার পরেই আবার মনে পরেগালো আজতো ওর বিয়ে , কাল ও শশুর বাড়ি চলে যাবে , স্ত্রী কে বললাম একটা কাজ করো , আমিতো হাটা চলা করতে পারছি ,তুমি বরঞ্চ কলকাতা ফিরে যাও । ওখানে গিয়ে 6 টা মাস যে ভাবে হোক স্কুল টা চালাও মেয়েটার পড়াশুনা রয়েছে । স্ত্রী প্রথমে না বললেও দুদিন পর আমার এডমিশন হয়ে গেলে ওকে বুঝিয়ে কলকাতাতে পাঠিয়ে দিলাম । 

                                  ছয়মাস দেখতে দেখতে কেটে গেলো , আমি সম্পূর্ন সুস্থ । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন আর দিন তিনেকের মধ্যে আমার ছুটি হয়ে যাবে কিন্তু অসুবিধা একটাই বাড়ির লোক লাগবে । একজন বাঙালি সেদিন আমাকে সাহায্য করলেন । তিনি আমার ডিসচার্জ কাগজে সই করে আমাকে মুক্ত করলেন । আমি তৎকালীন একটা টিকিট কেটে ফিরে আলম কলকাতা । আজ রবিবার আমার স্কুলটা আজ গমগম করে । আজও তার ব্যতিক্রম হোলনা , আমি বাইরে থেকে দেখলাম আমার স্কুলটা গমগম করছে কিন্তু ওদের শিক্ষক কে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলুম । আজ আমার স্কুলে একটা নয় দুদুটো শিক্ষিকা , একদিকে আমার স্ত্রী অপর দিকে রঞ্জিনি। আমি ধীরে ধীরে স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করলাম আমাকে দেখতে পেয়ে ওরা দুজনেই ছুটে এলো আমার দিকে । আমি রঞ্জিনিকে বললাম তুমি বিয়ে করনি ? সে স্বভাব সিদ্ধ হাঁসি হেসে জানালো তোমাদের ছেড়ে যেতে পারলামনা যে । তারপর আরো সাতটা বছর কেটে গিয়েছে । আজ আমার মেয়ের বিয়ে । আমরা একটা বাড়ি বানিয়েছি ,নাম রেখেছি শান্তি নীড়। এই বাড়িতে আমরা তিনজন ছাড়াও আর একজনও রয়ে গিয়েছে , সে হল রঞ্জিনি। এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু আজও আমি খুঁজে পাইনি আমার আর রঞ্জিনির সম্পর্ক টা ঠিক কি ? কি নামে ডাকবো তাকে ?

                                সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance