পরিণতি
পরিণতি
লাশ কাটা ঘরের টেবিলে যে মেয়েটির দেহটা পড়ে রয়েছে নিস্তেজ অবস্থাতে সেই মেয়েটি আমার খুব প্রিয় ছিলো । গত সপ্তাহে মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে যায় কলেজ থেকে ফেরার পথে । মেয়েটির বাবা - মা এবং ছোট বোন থানার দ্বারস্থ হলে প্রশাসন জোড় কদমে তদন্ত চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে একটা পরিত্যক্ত খাল থেকে । বিশ্বাস করুন টেবিলের উপর যে বডিটা পড়ে রয়েছে সেই শরীরটার সাথে ছোটবেলা থেকে দেখে আসা মেয়েটির কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না । ওর পোশাক আসাক আর কলেজের আই কার্ড দেখে বাড়ির লোকেরা ওকে সনাক্ত করেছে । দেহটা ফুলে প্রায় তিন গুণ হয়েছে , মুখের কিছুটা মাংস জলের মধ্যে থাকা প্রাণীরা খুবলে খেয়েছে । রিপোর্ট বলছে মেয়েটির সাথে গনধর্ষন করাহয়েছে তারপর তাকে গলাটিপে মারা হয়েছে । কি নিষ্ঠুর ঘটনার সাক্ষী হলাম । আসামিদের মধ্যে তিনজন পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও বাকি দুজনের এখনো কোন খোঁজ মেলেনি ।
কিন্তু আসল খুনিকেকি কোনদিন ধরতে পারবে পুলিশ ?
এবারে আপনারা বলবেন এটা আবার কেমন কথা , তিনজন ধরা পড়েছে আর দুজনও ধরা পড়ে যাবে । ঠিকই বলেছেন আইনের চোখে ওরাই অপরাধী , এটা প্রমাণ হয়েযাবে কিন্তু পরোক্ষভাবে এই অপরাধের পিছনে যারা আছেন তাদের কেউ কোনদিন অপরাধী ভাবতেই পারবেন না ।
অবাক হচ্ছেন তো ? তাহলে আসল ঘটনাতে আসা যাক । আমি এই ঘটনার জন্য দায়ী করছি মেয়েটির বাবা - মা কে । না না এখনি গলি গালাজ করবেন না , আগে পুরোটা শুনুন তার পড় মন্তব্য করবেন কমন ।
ওই পরিবারের সাথে কোন এক সূত্রে আজ থেকে বছর আটেক আগে আমার আলাপ হয় । পাশাপাশি পাড়া তাই মাঝে মধ্যে আমার যাতায়াত ছিলো , তবে বেশিরভাগ সময় কোন না কোন কারনেই গিয়েছি । আমি এমন একটা প্রফেশনের মধ্যে রয়েছি যে সেই সূত্রে আসে পাশের পড়ার বহু বাড়িতেই আমার যাতায়াত রয়েছে তবে ডাকপরলেই যেতে হয় আরকি । ওদের বাড়িতেও মাঝে মধ্যেই ডাক পড়তো ফলে আমাকে যেতে হতো । বাড়িতে মোট লোক সংখ্যা চার জন । বেশ কিছুটা দূরে আপন জনরা থাকলেও যোগাযোগ তেমন একটা ছিলোনা বললেই চলে । এই ঘটনাটা ওদের জীবনে ঘটছে সেই ছোটবেলা থেকে । বাড়ির লোকেদের সাথে কথা বলে যেটুকু আমি জেনেছি । ভদ্রলোকের পড়াশুনা বেশ ভালো , একসময় চুটিয়ে রাজনীতি করেছেন । আগে যারা রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকতেন তাদের মধ্যে কম বেশি সমাজ সেবার একটা ভূত লক্ষ করা যেতো , কিছু লোক আগা গোরাই সুবিধা বাদি, তাই একসাথে রাজনীতি করলেও ওনাদের মধ্যে কয়েকজন সুযোগ বুঝে সরকারি চাকরি জুটিয়ে নিয়েছেন অবশেষে কোনো সুবিধা না পেয়ে হাজার সাতেক টাকার বেতন একটা প্রাইভেট সংস্থা তে কাজ করছেন তিনি । দু - দুটো বাচ্চার পড়াশুনা আনুষাঙ্গিক খরচ , সংসার খরচ রোগের খরচ ওই টাকাতে চালানো সম্ভব নয়। তাই অর্থের যোগান দিয়ে স্ত্রী কেউ নেমে পড়তে হলো মাঠে । চোদ্দ ঘণ্টার উপর শ্রম দিয়ে একজন মেয়ে মানুষ হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি , আমি তাকে এই কাজের জন্য কুর্নিশ না জানিয়ে পারলাম না । ফলস্বরূপ বাড়িতে সারাটাদিন একা একা থাকতে শুরু করলো মেয়ে দুটি ।
বাবা - মায়ে অনেক চিন্তা করে তাদের ভর্তি করলেন লেডিস স্কুলে , একা একা আর কত থাকা যায় তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে বন্ধু বান্ধব বাড়তে শুরু করে , বাড়তে তাদের আসা যাওয়া শুরু হয় । মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত মেয়ে বান্ধবীদের আনাগোনা ছিলো কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডিতে ঢুকতেই ছেলে বন্ধু জুটতে আরম্ভ হয়েগেলো । এখন আর আটকাবার কোন উপায় নেই । একটা কথা প্রচলিত রয়েছে এই যে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কোনদিন বন্ধু হতে পারেনা । বিজ্ঞান যদি সঠিক হয় তাহলে এটাও ঠিক —-- কারণ ছেলে আর মেয়ে হলো চুম্বকের দুই মেরু আর চুম্বকের আকর্ষণ সর্বদাই বিপরীত মেরুর দিকেই থাকে তাই মুখ যতই বন্ধু বলুক মন অন্য কিছু বলতে বাধ্য । এটা হতে পারে যে এই আকর্ষণটা একপেশে তবে একটা ফিলিংস তো আসেই, এখানেও এসেছিলো।
এবারে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে যাবার পালা , বাড়ির লোকেরা আমারসাথে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বটে সেখানে আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম লেডিস কলেজে ভর্তি করতে কিন্তু মেয়েটি জেনারেল কলেজে ভর্তি হতে চাইলেই আমার একটু খটকা লেগেছিলো বটে কিন্তু আমি আর কোনো মন্তব্য করিনি সেখানে । কারণ এটা নিছক একটা পারিবারিক বিষয় আমার কিছু বলবার একতেয়ার থাকার কথা নয় । এরপর মাস দুয়েক চুপ চাপ চলছিলো সব কিছুই । হঠাৎ করে আমাদের যোগাযোগটা বেশকিছুটা ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো নানান কারণে ।
মেয়েটির এখন ফুটন্ত যৌবন , দেখতে শুনতে বেশ ভালো , ফলে কলেজে ছেলেদের ক্রাস হয়ে উঠলো সে । এরপর প্রাইভেট টিউশন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রভৃতি তো রয়েছেই । ছেলেদের সাথে চলা ফেরা , ওঠা বসা করতে করতে দৈহিক খুদা , ছেলেদের স্পর্শ বেশ ভালো লাগতে লাগলো তার কিন্তু বাড়ির কেউ একটি বারের জন্য জানতে চাইনি কেমন চলছে সব কিছু । মেয়েরা অনেকটা পাকাল মাছের মোতো এরা পাকে থাকলেও দেহে একফোঁটা পাক খুঁজে পাবেন না আপনারা । বাবা - মা বিন্দুমাত্র বুঝতে পারলোনা ঠিক কি হতে চলেছে । একজন বয় ফ্রেন্ড আর বহু সংখ্যক ফ্রেন্ড বাসা বাঁধলো তার জীবনে । মেয়েটি যাদের ফ্রেন্ড ভাবছিলো তারাকি অদেও তেমনটা ভাবছিলো ? এখানেই হলো মেন সমস্যা । প্রত্যেকেই বাসনার শিকার , আর মেয়েটি একাকীত্বের শিকার হয়লেগালো । এটাই স্বাভাবিক যারা ছোট বেলা থেকে বাবা - মায়ের সঠিক সঙ্গ পেলনা তাদের হাজারো টাকা দিয়ে ধরে রাখা যায় না । দুমুঠো কম খেয়েও একসাথে দিন কাটিয়ে ফেলা যায় কিন্তু যখন মোন আপন জন খোঁজে তখন সেখানে টাকার মূল্য ফ্যাকাশে হয়ে যায় ।
হঠাৎ করে জন সমুদ্রে এসে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিলো মেয়েটি । বাবা - মায়ের ভালোবাসার ঘাটতি মেটাতে চেয়েছিলো প্রিয় মানুষটার কাছে , কিন্তু প্রিয় মানুষ খুঁজে পাওয়া যে এতটা সহজ নয় সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি এখনো মেয়েটির মাথায় ছিলোনা । যাদের বন্ধু ভেবেছিলো তারাই তার সৌন্দর্য , তার কোমল দেহটার লোভ সামলাতে পারেনি , অবশেষে পরিণতি তার ফুলের মোতো দেহটা পচে - গোলে পোকাতে ভরে গিয়েছে । আজ যদি বাবা - মা দুজনেই টাকার পিছনে না ছুটে কোন একজন ওদের সঙ্গ দিতেন । ওদের পিতা - মাতার স্নেহ দিতেন , টাকা দিয়ে সবকিছু মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা না করতেন তাহলে হয়তো সংসারে সচ্ছলতা একটু কম থাকতো , হয়তো প্রতিদিন ভালো - মন্দ ঘরে রান্না হতনা কিন্তু ভালোবাসার অভাবটাতো মেয়ে দুটিকে কুড়েকুড়ে খেতনা । ভালোবাসার অভাব মেটাতে যাকে তাকে আপন করে নিতনা সে । কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে অন্তত একটি বার ভাবতো আমার বাবা - মায়ের কি হবে ? আর তাহলে হয়তো এতবড় একটা ট্র্যাপে পড়তে হতনা তাকে ।
হয়তো অনেক কিছুই হতে পরতো, কিন্তু যেটা হয়েছে সেটা প্রচণ্ড ঘৃণ্য । আমার মনেহয় অভাবে মানুষ শেখে মরেনা কিন্তু লোভ মানুষের জীবন থেকে শেষ হাসিটুকুও কেরে নিতে পারে । আইনের আদালত হয়তো প্রমাণিত আসামিদের স্বাস্তি দেবেন কিন্তু পর্দার আড়ালে থেকে যাওয়া অপরাধীদের আমি ক্ষমা করতে পারবোনা , আজ তাদের আর্থের লোভে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো একটা প্রানকে । এভাবে লাভ আরো কতো প্রাণকে কেরে নেবে সেহিসাব করা বেকার । যতদিন বাবা - মেয়েদের সন্তানের প্রতি দায়িত্ব বোধ গড়ে উঠবে ততক্ষন পাড়ায় পাড়ায় এরকম ফুলের মোতো বাচ্চারা মরবে । আসল আসামিরা বাইরেই ঘুরবে বারে বারে আইন ভুল বিচারটাই করবে ।
সমাপ্ত