শুভ মহরত
শুভ মহরত
জিয়া আমাকে দেখে আবেগ সামলাতে পারলো না। আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি হতভম্ব, বৃষ্টি আমাদের দেখছে । আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ফেললাম, " আমি যে জানি তুই গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছিস।"
ও চোখে জল আমার কাঁধটা ছুঁলো খুব আসতে। আসতে আসতে ও বললো "হুঁ খবরটা আমি ছাপাতে বলে ছিলাম। কারণ চাচা, আব্বু সবাই জেনে গিয়েছিলো তোর কথা। তোকে ওরা পেলে। তোর জীবনটাই শেষ করে দিতো।"
আমি বললাম " বৃষ্টি দেখছে, ছাড়া।"
বৃষ্টি দিকে তাকাতেই " আমার বাপি কি তোমার বয়ফ্রেন্ড নতুন ম্যাম "
একটু না আমতা আমতা করে জিয়া বললো " না তবে বেস্ট ফ্রেন্ড "
বৃষ্টি গড়গড় করে ওর
নিজের কথা বলতে শুরু করে দিলো।" বাপি আমার বাপি হলেও আমার ম্যামির বয়ফ্রেন্ড নয়। আমার ম্যামি তখন আকাশে তারা হবার জন্য হাসপাতালে ভর্তি। বাপি আমার বাবা হতে চাইছিলো। কিন্তু কোর্ট থেকে আমি মেয়ে বলে বাপিকে আমার বাবা হতে দিচ্ছিলো না। মানে আমাকে এডপ করতে দিচ্ছিলো না। তাই আমার ম্যামিকে বিয়ে করে। আমার বাপির কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। তুমি হবে আমার বাপির গার্ল ফ্রেন্ড।"
ওর কথা শুনে জিয়া হাসতে লাগলো খুব।জিয়া বৃষ্টির স্কুলে শিক্ষকতা চাকুরী নিয়ে এসেছে। এখান থেকে কুড়ি কিমি দূরে মথুরা রিফাইনারিতে ওর বর অফিসার হয়ে এসেছে মাস তিনেক। ও একা ভালো লাগছে না বলেই চাকুরী নিয়েছে। ওর বর খুব ব্যাস্ত থাকে মাঝে মাঝে দিল্লী যায়। তাই উক এ্যান্ডে এখানে আসবে বলেছেন। ও আমার নতুন ভাড়াটে।
আমার সাথে ইনজিনিয়ারিং পড়া সময় জিয়ার সঙ্গে আলাপ। আমি মাঝপথে থামিয়ে দিলাম পড়াশোনা। কারণ সাহিত্য চর্চা আমার মূল লক্ষ্য ছিলো। তাই পুঁথি গত শিক্ষা শিক্ষিত না হয়ে ভবঘুরে জীবন যাপন বেছে নিলাম।
ও পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরিও পেয়ে গেলো। আমার নিউজ পোর্টাল প্রথম ও পয়সা ইনভেস্টমেন্ট করলো শুধু নয়, ও এডমিন মানে ব্যবস্থাপক ছিলো । এ সময় মনে হলো পয়সা ইনকাম করতে হবে । তাই বিদেশে পাড়ি দিলাম। দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার পর মনে হতে থাকলো , আমি ওকে ও আমাকে খুব ছাড়া একেবারে অচল। দুই জনে র দুই জনকে ছাড়া কিছুই যেনো ভালো লাগে না। ঠিক করলাম আমরা একসাথে থাকবো। ভারত বর্ষ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান মানুষরা ধর্ম নিয়ে বড় বেশি মাতামাতি করে। তাই দেশ ছেড়ে, ইউরোপ গিয়ে আমরা এক সাথে থাকবো বলে ঠিক করলাম। কিন্তু হঠাৎ খবর পেলাম ও মারা গেছে। আসলে ওকে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর আমি কাজের জগতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। তারপর ক্যাপটেন অভয় স্যারের বাড়িতে বৃষ্টির সাথে আলাপ। টরটর করে তখনও কথা বলতো। ওর মা বাবা সাথে অশান্তি করে ডিভোর্স নিয়ে চলে এসেছিলো বাপের বাড়িতে। কিন্তু কপাল সন্তানের সুখ হলো না উনার। ক্যানসার হয়েছিল উনার। আমি বৃষ্টিকে দত্তক নিতে চেয়েছিলাম। অভয় স্যার খুশি হয়েছিলেন। উনার একটা জমি পড়েছিলো রাজস্নানে। ভরত পুর শহরে কাছে । আমি সেই জামিটাকে আজ, আয়সি গ্যাস্ট হাউসের রূপ দিয়েছি। এখানে থেকে আগ্রা , গোবর্দ্ধন, বৃন্দাবন, বরসনা, ডিগ সব যেতে পারবেন আপনি আমার গাড়ি নিয়ে। সুন্দর ফুলের বাগান, পুকুর, রেস্টুরেন্ট, একটা ছোট মন্দির। আশ্রমিক পরিবেশ। তবে আমার প্রচার কম। তাই একটা দুইটো স্থায়ী ভাড়াটে রাখবো বলে ঠিক করেছিলাম। জিয়া আমাদের প্রথম ভাড়াটে।
বৃষ্টি , জিয়া , আমি বেশ ভালোই কাটছিল আমাদের। সেইদিন হঠাৎ জিয়াউল ওর সাথে খুব চ্যাচামেছি করলো। জিয়া খুব ভেঙে পরলো । জিয়াউল ওকে তালকা দিয়ে দিয়েছে তুচ্ছ কারণে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেলো আবার জিয়াউল দিল্লিতে মিস সোমা বোলে কোন মহিলার সাথে আসলে রিলেসন আছে। বাড়ি অমতে জিয়াউলকে ও নিকা করছিলো। ফলে ও বাড়িতে ফিরতে পারবে না।
আমি ওকে নিয়ে গোবর্দ্ধনে আমার মাসির কাছে গেলাম। মাসি সব শুনে হেসে বললো। "তুমি কেন বলছো , তোমার আত্মীয় স্বজন কেউ নেই যার কাছে যাবে তুমি। এই তো তোমার পরম আত্মীয় গোবিন্দ আছে, একে তুমি সন্তানের মতো ভালোবাসতে পারো, সখা মতো মনের কথা বলতে পারো।"
ও কেমন একটা বিভোর হয়ে গেলো। আমরা ওখানে দুই একদিন থাকলাম। মাসি বললো " শুধু নাম আর পোশাক দিয়ে তো মানুষ বুঝতে পারে তুমি হিন্দু , না মুসলিম। জিয়া নামটা বদলে , আজ থেকে যদি তোমাকে বিষ্ণুপ্রিয়া ডাকি কেমন হবে। আর একজন ছেলে ছেড়ে চলে গেছে তো ভালো হয়েছে, তোমার সামনে অনেকের মধ্যে নতুন করে ভালো বন্ধু বাছাই করা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে সে তোমাকে তাই তাকে ধন্যবাদ দাও। নতুন কাউকে বেছে নাও তুমি।"
ও আমার দিকে তাকালো । মাসি সব বুঝতে পেরে আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করলো। বৃষ্টি ও খুব খুশি। আমাদের বিয়ে হল। বৃষ্টি পাকামি কম হবার নয়। সে আমার মাসির কাছে শোবে বললো। সে বললো " কাল থেকে কিন্তু আমি তোমাদের কাছে শোবো বুঝতে পারলে তো। "
কিন্তু সত্যি ফুল শয্যা করা হলো না। জিয়া ফোনে কল এলো। হাইওয়েতে জিয়াউল এর গাড়ি দূর্ঘটনা হয়েছে। হয়তো সে আর বাঁচবে না।
জিয়া খুব ভেঙে পরলো। মাসি বললো " তদ হৃদয়ং মম্ বললেই হৃদয় মিলন যেমন হয় না, তালক বা এটা সই দিয়ে একটা সম্পর্ক ভাঙা যায় না। তাই মন চাইলে যাও তুমি। তবে মন না চাইলেও তোমাদের যাও উচিত, মন্দির মসজিদ গির্জা প্রার্থণা করলেই ঈশ্বর কে পাওয়া যায় কে বলে?? মানুষের বিপদের পাশে থাকলে যে আনন্দ তাই ঈশ্বর সঙ্গ সাক্ষাত সমান। নারী স্ত্রী হয়ে মা মতো ই , সে শুধু আশ্রয় দেয়। তাই তুমি যাও মা। "
আমি গাড়ি স্টার্ট দিলাম। জানি না আমার জীবনের শুভ মহরত হলো কিনা আজ। একটা নারী সত্যিই আশ্রয়, সে আশ্রয় আমার যুটে যদিও আমার মেয়ে বৃষ্টির কাছে। ওকে আঁকড়ে কাটিয়ে দিতে পারবো আশা করি বাকি জীবনটা।