শিক্ষিত বৌমা
শিক্ষিত বৌমা
কাল রাত থেকে ভীষন কাশি হচ্ছে নীলিমার। ছয়দিন হলো ইস্কুলে যেতে পারেনি সে। ইস্কুলে যাওয়াতো দূরের কথা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না সে। রূপা ঘরে ঢুকে বললো " দিদি কষ্ট করে স্পুটা খেয়ে নাও দেখি , না খেলে সুস্থ হবে কি করে?"
নীলিমা বালিসে হেলান দিয়ে রূপা স্পুটা খাইয়ে দিতে শুরু করলো। নীলিমা রূপকে বললো " তোকে এতো পাক্কামি করতে কে বললো? আমি এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাবো।"
রূপা বললো " স্বার্থ তো একখান আছেই দিদিভাই। তুমি ঠিক না থাকলে সংসারটাতো ভেসে যাবে"
নীলিমা মচিকি হেসে বললো " ও ভালোটালো বাসিস না আমায়? তাহলে ডাক্তার ডাকতে কেন? অতগুলো টাকা খরচ করে ।"
রূপা বললো " যে মানুষটার তোমাকে ভালোবাসার কথা সেইতো তোমার মাইনেটাকে ভালোবাসে শুধু ।তোমার দেওয়র আমি কাল শুনেছি দাদার কথা। তুমি অসুস্থ সে দিকে খেয়াল নেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারোনি বলে কত কথা শোনালো। তাই ও দুই শো টাকা আমাকে ধার দিয়ে বললো ডাক্তার দেখিও বৌদিকে। অনেক ওষুধ দিয়েছে ডাক্তার বাবু তুমি টাকা দাও বাপু ও তোমার জন্য ওষুধ কিনে আনবে বলেছে।"
রূপাকে আলমারি চাবিটা দিলো নীলিমা। রূপা টাকা পয়সা বের করতে গিয়ে ওর থেকে কিছু পুরোনো কাগজ পত্র ফাইল পরে গেলো। কয়েকটি পেপার কাটিং তাতে নীলমার কিশোরী বয়সের ছবি। শিরোনাম পড়ে রূপা অবাক । খবরটা না পড়ে থাকতে পারলো না। গরীব বিধবার মেয়ে অনেক কষ্ট করে , ফুল বিক্রি করে পড়াশোনা চালিয়ে , মাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। গর্বে রূপার চোখে জল চলে এলো। রূপা জিঙ্গাসা করলো " তুমি এতো ভালো পড়াশোনায় ছিলে?"
নীলিমা দীর্ঘ শ্বাসে ফেলে বললো " ভালো ফল করেছিলাম বলেই আমাদের শশুর মশাই এর কথায় তোমার দাদা আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলো। তবে তোমার সেবার ভোটে না হারলে চাকুরীটা করতে দিতো না জানিস।"
এমন সময় তিন্নি ঘরে ছুটে এসে বললো " মা দাদুন আজ পাড়া যারা আজ উচ্চ মাধ্যমিক মাধ্যমিকে ভালো নম্বর পেয়েছে তাদের পুরস্কার দেবে নিজের হাতে। আমিও যাচ্ছি ওখানে।"
চৌধুরী সাহেব ঘরে তখন তৈরি হচ্ছেন বোধহয়। ললিতা দেবীর চিৎকার করে বললেন " চৌধুরী বাবু তুমি সব শিক্ষিত মেয়েদের ঘরের বৌ করে এনেছো। এখন ঠেলা বোঝো। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো শশুর শাশুড়িকে এক কাপ চা দেবার সময় পায় না তারা।"
