“শেয়ার করুন একটি শিক্ষা”
“শেয়ার করুন একটি শিক্ষা”
“শেয়ার করুন একটি শিক্ষা, যা আপনি পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে চান” — জনৈক ব্যক্তির এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য।
শুরু করছি :—
আমার নানারকম লেখায় যে পরিমাণ শিক্ষা বিলিয়ে দিইছি, মনে পড়ছে না, দেবার আরো কিছু বাকি আছে। শিক্ষার যে থলেটা আমার কাছে থাকে, আরও একবার না হয় সেটা ঝেড়েঝুড়ে দেখবো যদি ফটাস করে কিছু ওর ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ে। বলি কি, শিক্ষার কি আর শেষ আছে মশাই! সারা জীবন শিখে শিখে নিজে এখনও ঠিকমতো শিক্ষিত হতে পারিনি, সুতরাং এই শিক্ষা নিয়ে একটি প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়া কি চাট্টিখানি কথা নাকি, বাপ রে!
নিজে একটা অশিক্ষিত হয়ে যদি অন্যকে শিক্ষিত করার জন্য উঠেপড়ে লাগি, পাবলিক এমনি এমনি ছাড়বে না, তেল মাখানো ছড়ি দেখাবে!
এমন জ্বালায় আগে তো পড়িনি বাপু। ভালো লোক আর খুঁজে পেলো না, আমার কাছে এসেছে শিক্ষা নিতে। তাহলে এই যে এতো ধর্মীয় পুস্তক, এতো বিখ্যাত মণীষী, এতো বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, এতো এতো শিক্ষক শিক্ষিকা — কিছুই কাজের নয় দেখছি! সব বাতিল!
বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থায় যখন ভরসা থাকে না তখন মানুষ ব্যক্তিগত শিক্ষার ওপর অগাধ আস্থা রাখে—তা আজ এই ব্যক্তির কাছ থেকে শিক্ষা হলো।
সে যাই হোক, শেষে কিনা আমাকে নিয়ে টানাটানির শুরু.... পূর্ব পুরুষের তবুও লেজ ছিলো, আমার তো তাও নেই.... ধরার মতো কিছু নেই তাতেও এই টানাটানি।
আমার যদি কিছু থাকে— সেটা নাকি আবার ‘শেয়ার’ করতে হবে। ছলাকলা করে আমাকে শেয়ার বিজনেসের মধ্যে জড়িয়ে ফেলার এ আরেক ফন্দি। এতদিন বিজনেস একা একা করার চিন্তা করেছি। আমার এ জীবনে আগে কোনোদিন শেয়ারের মতো বিজনেস করতে চাইনি। শুনেছি, ঐ বিজনেসে পার্টনারগুলো দুধের সর নিজেরা তুলে খেয়ে ফেলে আর আমার হাতে ধরিয়ে দেবে মুলো। অন্যেরা এই বিজনেস করে করুক, আমি শেয়ার বিজনেসে যাচ্ছি না। বিজনেস করলে একা একাই করবো।
আবার ভেবে দেখলুম কেউ যেচে যখন শিক্ষাটা ভিক্ষা করতে আসে তখন তাকে যাই হোক একটা শিক্ষাটিক্ষা দিয়ে ছাড়তে হয়, খালি হাতে ফেরাতে নেই। নিজের কিছু থাকুক আর নাই থাকুক, শিক্ষার দরজা কোনোকালে বন্ধ করতে নেই। শিক্ষা হলো একটা বিকাশ। ‘শিক্ষা জন্মগত অধিকার।’
এক বিদ্যালয় ছাত্র একদিন বিদ্যালয় যাওয়ার পথে দেখতে পেলো, তিন রাস্তার মোড়ে একটা ফেস্টুন ঝোলানো হয়েছে, তাতে লেখা, “শিক্ষা ভিক্ষা নয়, জন্মগত অধিকার।” এর অর্থ সে বুঝলো ভিন্নভাবে। সে ঠিক করলো ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে শিক্ষার দরজায় আর ধর্না দেবে না। বাড়ি ফিরে গেলো। বাবাকে গিয়ে বললো, ”বাবা, আমি স্কুলে যাবো না। ওরা রাস্তায় লিখে দিয়েছে যারা জন্ম দিয়েছে, শিক্ষা দেওয়ার অধিকার তাদের। অন্যের কাছে ভিক্ষা করতে নেই।”
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষাটা কার কাছে গচ্ছিত রেখে যাবো সেটাই বুঝলুম না। মানে, সেই শিক্ষা, পরবর্তী প্রজন্ম এসে কোথায় খোঁজাখুঁজি করবে? ....এগুলো পরিষ্কার না হলে উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে মিছিমিছি খরচা বাড়াতে চাই না।
এই আমার কাছ থেকে একখানা দারুণ শিক্ষা-পাঠ নেওয়ার চেষ্টা করা মানে, সব শিক্ষারই জলাঞ্জলি। তখন টিপ্পনী শুনতে হবে, ‘এয়েছেন বড়ে শিকষাবিদ!’ বা ‘ওরে বাপ, ওর জীবনের কথা শুনে আমার জীবন বেরিয়ে যায়!’ ইত্যাদি।
কী দরকার, খাচ্ছিলুম তাঁতী তাঁত বুনে মরলুম শেষে হেলে গরু কিনে। লোকে বলবেন, ‘ঐ এয়েচেন এক উপদেশের ঝাড়ি। সুযোগ পেলেই ঝাড়ফুঁক মারে।’
তাই আমার কোনো উপদেশ নেই। নেই কোনও শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা দেওয়ার কর্মসূচি।
ঠিক জায়গা থেকেই আমরা ঠিকমতো শিক্ষা বেশিরভাগ সময় পাচ্ছি না। ভালো শিক্ষাগুলো আমরা নিজেরাই ভুলতে বসেছি। অপরিণত ও অসম্পূর্ণ শিক্ষার জন্যই তো আদালতগুলো থেকে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত পেয়ে চলেছি।
(থামতে হবে)