Debdutta Banerjee

Tragedy

1.6  

Debdutta Banerjee

Tragedy

শৈশবের চিঠি

শৈশবের চিঠি

3 mins
2.3K


প্রিয় বাবা,


কেমন আছো? আমাদের কথা কি তোমার মনে পড়ে? কতদিন তোমায় দেখি না বাবা, তোমার গায়ের গন্ধ পাই না আর। তোমার আদর খাই না আজ বছর ঘুরে গেলো।


এখন আমরা ছোট কাকার কাছে থাকি। কোয়াটারটা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তোমার হাতে লাগানো ফুলগাছ গুলোর জন‍্য আমার খুব কষ্ট হয়েছিল চলে আসার দিন। আমাদের পেয়ারা গাছটায় কচি পেয়ারা ধরেছিল। জামরুল গাছেও জামরুলের ফুল এসেছিল। আর তোমার সেই যত্ন করে লাগানো হলুদ গোলাপ গাছটায় কুড়ি এসেছিল বেশ কয়েকটা। ফুল ফোটা আর দেখতে পাই নি।


আমাদের ভুকু কে ছোটকাকা আনতে দেয়নি। কাকার বাড়িতে কুকুর রাখার জায়গা নেই। কাকিমা কুকুর ভালবাসা না যে। চলে আসার দিন ভুখুকে আমরা রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিলাম। ও তো কখনো রাস্তায় ছাড়া পায়নি। তাই প্রথমে বুঝতে না পেরে ভৌ ভৌ করে ডাকছিল। আমাদের গাড়িটা ছাড়তেই গাড়ির পিছনে দৌড়াচ্ছিল আর করুণ স্বরে ডাকছিল।


আমার খুব কান্না পাচ্ছিল বাবা, বারবার মনে পড়ছিল আমার চার বছরের জন্মদিনটার কথা। যেদিন তুমি ছোট্ট সাদা বলের মত নরম লোমের ভুখুকে এনে দিয়েছিলে। কিভাবে ও প্লেটে করে দুধ খাচ্ছিল চেটে চেটে। ও কত তাড়াতাড়ি আমাদের আপন হয়ে উঠেছিল। এই চার বছরে আরো বড় হয়ে উঠেছিল ভুখু। রোজ আমি স্কুল থেকে ফিরলে আমায় দেখে লেজ নাড়ত। আমার পা চেটে দিত।


ও তো রাস্তার কুকুরদের ভয় পেত!! কে জানে এখন কি করছে!! ও কখনো রাস্তার কিছু খেত না। এখন কি খাচ্ছে কে জানে !!


বাবা আমি না এখন অন‍্য একটা স্কুলে যাই। এটা বাংলা স্কুল। প্রথম প্রথম কিছুই পারতাম না। খুব শক্ত লাগত। কিন্তু আমি ইংরেজি আর অঙ্কটা ভালো পারতাম বলে আমার বন্ধু হয়ে গেছিল রাধা, তিতির , পিয়া , অলকা আরো অনেকেই। প্রথম প্রথম এই স্কুলটায় মানিয়ে নিতেও কষ্ট হতো। এখন আর হয় না। আসলে এই স্কুলটায় দুপুরে খেতে দেয়। দিদিমণিরাও ভালোই। তবে রোজ সোয়াবিন আর ডিম খেতে ভালো লাগে না।


তুমি তো জানো বাবা মাছ আর চিকেন ছাড়া আমি কোনোদিন খেতাম না। কিন্তু ছোটকাকার বাড়িতে এই সব আমাদের জন‍্য হয় না। ম‍্যাগি, লুচি, মোগলাই এসবের স্বাদ ভুলে গেছি। সকালে আমি বাসি ভাত নয় জল মুড়ি খেয়ে স্কুল যাই। দুপুরে তো স্কুলেই খাই। বিকেলে বাড়ি গিয়ে গুড় রুটি খাই , আর রাতেও রুটি আর পাতলা ডাল নয়তো ঘ‍্যাট তরকারী। এখন আমি খাওয়া নিয়ে বায়না করি না আর। কোনো কোনো দিন একটু বেগুন পোড়া পাই। বিরিয়ানি আর পিৎজা এখন স্বপ্ন। মায়ের হাতের পায়েস কতদিন খাইনি।


মা কি করবে বলো ? মা কে তো বাড়ির সব কাজ করতে হয় মুখ বুজে। তারপর কাকিমা বলে এই বাজারে দুটো পেট একস্ট্রা। দুটো কাজের লোককেই ছাড়িয়ে দিয়েছে কাকিমা। ভোর রাত থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত মা বাড়ির সব কাজ করে। মার কাছে তো তেমন টাকাও থাকে না‌ । ঐ ব‍্যাঙ্কের এমাইএসের কয়েকটা টাকা, তা থেকে আমার বই খাতা, কখনো শরীর খারাপ হলে ওষুধ, সব মাকেই দেখতে হয়।


জানো বাবা আমার খুব মনে পড়ে আমাদের সেই ফেলে আসা দিন গুলোর কথা। ছুটির দিনগুলো কত সুন্দর ছিল। কত জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে তুমি! কত কি খাওয়াতে! এখন আমার কাছে ছুটির দিন মানেই আতঙ্ক। স্কুল থাকলে পেট ভরে খেতে পাই। ছুটির দিন মা এর হাতে হাতে কাজ করলে কাকিমা দুপুরে ভাত দেয় আমায়। তবে সেদিন মা চিড়া খেয়ে থাকে। কিন্তু তার থেকেও বেশি ভয় এই দিনগুলোতে কাকিমার ভাই আসে। ঐ মামাটা খুব বাজে। আমাদের ছাদের ঘরে যখন তখন উঠে আসে আর আমার সাথে .....খুব নোংরা ঐ লোকটা জানো বাবা? আমায় জোর করে....। মুখ চেপে রাখে। মা তো তখন রান্নাঘরে ব‍্যস্ত থাকে। কাকিমা একবার দেখে ফেলেছিল। কিন্তু আমাকেই বকেছিল । মা কে ভয়ে বলতে পারি না বাবা। ভয় হয়। যদি এখান থেকেও আমাদের তাড়িয়ে দেয় কোথায় যাবো?


আমাদের খুব কষ্ট বাবা। মা বলে তুমি আকাশের তারা হয়ে আছো। রোজ রাতে মা যে ছাদে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলে তুমি কি দেখতে পাও না!!


কেন আমাদের এভাবে ফেলে চলে গেলে তুমি? আমাদের কথা একটু ভাবো। ফিরে এসো বাবা। এই দিনগুলো যেন দুঃস্বপ্নের মতো। আগের সেই স্বপ্নীল রঙীন দিনগুলো ফিরিয়ে আনো।


ইতি


তোমার আদরের


তোড়া


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy