সেলফি
সেলফি
একমাস হয়ে গেল সন্তোষবাবুর স্ত্রী মারা গেছেন। তাও ওনার সারাক্ষণ মনে হচ্ছে কেউ যেন সবসময় তার সাথেই আছে। উনি যেখানেই যাচ্ছেন ওনার সাথে সাথে সেও যাচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই ওনার চোখটা লেগে গিয়েছিল। ঘুমের মধ্যেও উনি স্পষ্ট শুনতে পেলেন,
-কী গো কেমন আছো? আরে অত ভেব না। আমি তো বলেই ছিলাম মৃত্যুর পরেও আমি ভূত হয়েও তোমার সাথে থাকব। তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। তাই তো সারাক্ষণ তোমার সাথে কেমন ঘুরে বেরাচ্ছি।
এইরকম কিছু উনি স্বপ্নেও কোনদিন আশা করেন নি। আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওনাকে থামিয়ে দিয়ে রমাদেবী বললেন- জানো তো, অনেকদিনের শখ ছিল একটা স্মার্টফোন কিনে মুখ বেঁকিয়ে সেলফি তুলব। ওই সরকারগিন্নী যেমন করে তুলে সারাক্ষণ আমাকে দেখাত। কিন্তু হঠাৎ করে পটল তুলে ফেললুম। তাতে কি আর আসে যায়। শখ তো মরে গেলেও থাকে। শখ তো অমর তাই না?
-কই গিন্নী বেঁচে থাকতে তো এই শখের কথা বলো নি।
-এখন তো বলছি। তুমি বরং এক কাজ কর।
-কী কাজ?
-ওই যে মোড়ের মাথায় নতুন ফোনের দোকানটা হয়েছে। ওখান থেকে একটা স্মার্টফোন কিনে আনো। আমি সেলফি তুলব।
-কিন্তু গিন্নী, তুমি এখন কী করে সেলফি তুলবে?
-এখন আমার অনেক ক্ষমতা। আমি এখন সব পারি। তুমি কালকেই সন্ধ্যেবেলায় কিনতে যাবে।
হঠাৎ করে ওনার ঘুমটা ভেঙে গেল।
-এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু গিন্নীর আদেশ অমান্য করার সাধ্য আমার আগেও ছিল না, এখনও নেই। এখন তো তাঁর আবার অনেক ক্ষমতা হয়েছে। রেগে গিয়ে যদি ঘাড়টাই মটকে দেয়... (মনে মনে ভাবতে থাকেন)।
পরের দিন ...
-আরে কাকাবাবু, আসুন আসুন। বলুন কী নেবেন।
-একটা ভালো দেখে স্মার্টফোন দেখাও দিকি বাছা।
-এই দেখুন কাকু, কত রকমের স্মার্টফোন।
ফোনগুলো সব নেড়েচেড়ে দেখছেন আর একবার করে কি যেন বিড়বিড় করছেন। কিন্তু একটাও ফোন ওনার পছন্দ হচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরে সন্তোষবাবুর এইসব কার্যকলাপ রাজু লক্ষ্য করছিল। এবার রীতিমতো বিরক্ত হয়ে ও প্রশ্ন করল- আচ্ছা কাকাবাবু, আপনি ঠিক আছেন তো?
-কেন বল তো?
-আসলে আপনি তখন থেকেই নিজের মনে বিড়বিড় করছেন কিন্তু ফোন কিনছেন না তাই।
-তোমার বিয়ে হয়ে গেছে রাজু?
-আজ্ঞে না। তবে হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছেন কেন?
-তোমাকে আর কী করে বোঝায় কী জ্বালায় জ্বলছি আমি (মনে মনে বলেন )।
-কী হল কিছু বলছেন না যে।
-না এমনি জিজ্ঞেস করলাম। যদি করতে তাহলে বুঝতে কত ধানে কত চাল। যেমন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
সন্তোষবাবুর এরকম কথার কোনো মাথামুন্ডু বুঝতে না পেরে রাজু শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। ওদিকে সন্তোষবাবু পড়েছেন মহা ফ্যাসাদে। এতগুলো ফোন দেখেও উনি বুঝতে পারছেন না কোনটায় ওনার স্ত্রীর সেলফি ভালো উঠবে। মাথার মধ্যে শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে "মরার পরে সেলফি কেমন ওঠে? "
(সমাপ্ত)