Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Sonali Basu

Horror

3  

Sonali Basu

Horror

সেই রাত

সেই রাত

7 mins
1.2K


অনেকক্ষণ ধরে কার শেডের পাশে দাঁড়িয়ে হাতের আড়াল করে সিগারেট ফুঁকছিল শানু। রাজুর আসার কথা। তারপর ওরা দুজনে মিলে অভিযানে বেরোবে। দলের আর কাউকে বলেনি ওরা। আসলে খবর এসেছে রাত বারোরটার সময় যে মালগাড়ি এসে উপস্থিত হবে তাতে এক নম্বর কয়লা আসছে ঝরিয়া কোলিয়ারি থেকে, যাচ্ছে ব্যান্ডেল পাওয়ার প্ল্যান্টে। কিছু যদি সরিয়ে নিতে পারে তাহলে ভালো দাম পাওয়া যাবে, অন্তত বুলেদা তাই বলেছে। তবে সেই সাথে সাবধান করে দিয়েছে, রেল পুলিশের। কয়লা চুরি বেশ বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ আধিকারিকরা খুব সতর্ক হয়ে গেছে। ধরা পড়লে খুব খারাপ হবে, তাই সাবধানে কাজ সারতে হবে। দরকার না পড়লে দলের বেশি লোককে জানাতেও বারণ করেছে বুলেদা।

কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেলো ও অপেক্ষা করছে এখানে, এখনো রাজুর দেখা নেই। কি হল? একবার কি ফোন করবে? কিন্তু চারদিক যা নিস্তব্ধ, ফোনে ফিসফিস করে বললেও অনেক জোরে শোনা যাবে। তার চেয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে দেখা যাক। কার শেডের ছায়া থেকে বেরিয়ে ও সন্তর্পণে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। চারদিকে খুব অন্ধকার। আকাশের দিকে তাকালো ও, সেখানে চাঁদের কোন টিকি নেই, তারারাও অনুপস্থিত। আজ কি তবে অমাবস্যা, ভাবলো ও। এখন রেলের থেকে জোরালো সব ইলেট্রিক বাতি লাগিয়েছে। অন্য সব রাতে চারদিকে আলোর বন্যা বয়ে যায়, মনে হয় সূচ পড়লেও খুঁজে নেওয়া যাবে কিন্তু আজ এতো অন্ধকার লাগছে কেন চারদিক। বেশ অবাক হল ও তবে খুশিও হল মনে মনে। ভালোই হয়েছে ওয়াগনে উঠে কয়লা নামাতে সুবিধা হবে, কেউ টের পাবে না। ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছিলো ও। হঠাৎ খেয়াল হল ও স্টেশনের প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে। কারণ চোখে পড়লো পরপর সব লোকাল ট্রেনগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটা নামি জংশন, প্রতি সকালে এখান থেকে প্রচুর ট্রেন ছাড়ে। সেসব এখানেই রাতে দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেনের বগিগুলোর মাঝ দিয়ে আড়াল রেখে ও স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এমন সময় হঠাৎ ট্রেনের হুইসেল শোনা গেলো। মোবাইলটা পকেট থেকে টুক করে বার করে দেখে নিলো সময় কত হল। রাত সাড়ে এগারোটা। এই সময় একটা মুম্বাই গামী মেল ট্রেন যায়। কথাটা ভাবতে ভাবতে হুইসেলের শব্দ তীব্র হল আর ট্রেনটাও তার উজ্জ্বল আলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে চলে এলো কাছে। আলোর ছটা এসে লাগাতে ও খেয়াল করলো ও যে লাইনের ওপর সেই লাইনেই ঝড়ের গতিতে ট্রেন এগিয়ে আসছে। আর এক মুহূর্ত পরেই ট্রেন ওর ওপর দিয়ে চলে যাবে, কিছু না ভেবেই ও লাফ দিয়ে একটা ট্রেনের বগির আড়ালে যেতে যেতেই ট্রেনটা পাশ দিয়ে চলে গেলো। হঠাৎই মনে হল মৃত্যুদূত যেন সামনে এসে বুড়িছোঁয়া ছুঁয়ে চলে গেলো।

ভয়ে ঘাম ঝরছে ওর। এতদিন ও এই লাইনে আছে কিন্তু কোনদিন এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি। ট্রেনটা পেরিয়ে যেতে ও হাঁপ ছেড়ে এগিয়ে চলল। কিন্তু রাজুর কোন আওয়াজ নেই কেন, তবে কি ও আসবে না? না! এবার তো ফোন করে দেখতে হয়। ও রাজুকে ফোন করলো। বেশ কিছুক্ষণ ফোন বাজার পর থেমে গেলো, রাজু ধরলো না। শানুর অস্বস্তি বেড়ে গেলো। কি করবে এখন এগিয়ে যাবে নাকি ফেরত চলে যাবে অভিযান ছেড়ে। এইসব ভাবনার মধ্যে হঠাৎ মোবাইল ভাইব্রেট করে উঠলো। তাকিয়ে দেখলো রাজু ফোন করেছে। ও ফোন তুলেই বলল “কি রে কোথায় তুই? কতক্ষণ ধরে কার শেডের কাছে অপেক্ষা করে এখন স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তোকে খুঁজতে”

রাজুর ফিসফিস করে বলল “ওখান থেকে সরে যা শানু। রতনও খবর পেয়ে তার দলবল নিয়ে আগেই হাজির হয়েছে। ওকে দেখতে পেয়ে আমি আর এগোয়নি। আমি ফিরে যাবো বলেই এগচ্ছিলাম দেখলাম রেল পুলিশের আধিকারিক ফোর্স নিয়ে আসছে ওদের ধরতে। ওরা কি ভাবে খবর পেয়েছে কে জানে। তুই আর থাকিস না, ট্রেনের আড়ালে আড়ালে বেরিয়ে আয় ওই এলাকা থেকে”

শানু আর একটাও কথা বলার সুযোগ পেলো না ততক্ষণে রাজু ফোন রেখে দিয়েছে। ও এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে ওর কর্তব্য স্থির করে নিলো তারপর দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের বগিগুলোর তলা দিয়ে স্টেশন চত্তর থেকে দূরে সরে যেতে থাকলো ধীরে ধীরে। এর মধ্যে গুলি চলার শব্দ পেলো একবার আর তারপর তার প্রত্যুত্তরে আরও গুলির শব্দ। শানু খেয়াল করলো ওর অবস্থান। একটু গলা বার করে উঁচিয়ে দেখেই বুঝতে পারলো আর সামান্য এগোলেই ও রেলের সীমানার ওপারে যে আকন্দ আর পুটুসের ঘন আর অনেক বড় ঝোপ আছে সেখানে চলে যেতে পারবে। আর ওখানে একবার চলে যেতে পারলে আর ওকে পায় কে! কিন্তু সেই ঝোপ পর্যন্ত যেতে হলে হয় এখন যে ট্রেনের বগির তলা দিয়ে ও আস্তে আস্তে হামাগুড়ি দিয়ে চলেছে শেষ পর্যন্ত সেভাবেই চলতে হবে আর নাহলে ট্রেনের তলা থেকে বেরিয়ে বগির আড়ালে আড়ালে শেষ পর্যন্ত গিয়ে তারপর সুযোগ বুঝে দৌড়ে বাকিটুকু পার হয়ে ঝোপের ভেতর চলে যেতে হবে। হামাগুড়ি দিতে কষ্ট হচ্ছে দেখে একবার বগির তলা থেকে বেরোনোর চিন্তা করলো ও কিন্তু তারপরেই কানে এলো আবার গুলির শব্দ। এক সাথে অনেকের দৌড়ে আসার পায়ের শব্দ পাওয়া গেলো রেললাইনে পাতা পাথরের ওপর দিয়ে। আর সেই শব্দ আসছে ঠিক ও যেখানে সেই দিকে। খানিক পরে কিছু লোকের জোড়া জোড়া পা এসে ঠিক ও যে বগির তলায় সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। অন্ধকারে ও বুঝতে পারলো না পুলিশের লোক নাকি রতনের দলের। ঘাম দেখা দিলো শরীরে। যদি রতনের লোক হয় আর কেউ এই মুহূর্তে যদি ট্রেনের তলায় ঢোকে আত্মরক্ষার তাগিদে ওকে দেখে তার কি প্রতিক্রিয়া হবে তা ও ভাবতেও পারলো না আর যদি পুলিশের লোক হয় তাহলেও বিপদের খাঁড়া ওর মাথার ওপর ঝুলছে। ওরা যদি চোর খোঁজার জন্য নীচু হয়ে বগির তলায় দেখে তাহলেই চিত্তির। ধরা পড়লেই রামধোলাই কপালে। কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না ও। তবে বেশিক্ষণ ভাবতে হল না আবার পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো এদিকেই ছুটে আসছে আর সেই শুনেই এই পায়ের মালিকরা ছুট দিলো অন্যদিকে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো ও তবু ওখান থেকে এগোনোর চিন্তা করলো না, আরও কিছুটা সময় যাক, ভাবলো ও। খানিকক্ষণ পরে চারদিক নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো কোন আওয়াজ আর পাওয়া যাচ্ছে না। এবার ও টুকটুক করে বগির নীচ থেকে বেরিয়ে চারদিক জরিপ করলো। চারদিক অন্ধকার তবু ও বুঝতে পারলো আসেপাশে এখন অন্তত কেউ নেই। ও তখন পা টিপে টিপে ঝোপের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলল।

প্রায় পৌঁছে শেষ রেল ট্র্যাকে, আর একটু গেলেই ওপারে সেই ঝোপ এমন সময় কিছু টর্চের আলো ওর কাছাকাছি এদিক ওদিক পড়লো তার সাথে দৌড়ে আসার শব্দ আর গম্ভীর আওয়াজ “স্টপ স্টপ”

শানু বুঝে গেলো আজ ওর শেষ রাত। এতো কাণ্ড করেও শেষ অব্দি ধরা পড়ে যাচ্ছে, কান্না পেয়ে গেলো ওর। ধরা দেওয়ার ওর কোন রকম ইচ্ছে নেই কিন্তু আর তো লুকানোরও জায়গা নেই, যে কেউ ওকে দেখতে পাবে। তাহলে? হঠাৎ পেছন থেকে কারো ফিসফিস শুনতে পেলো “উঠে এসো ট্রেনে, তাহলে তোমায় পুলিশ ধরতে পারবে না”

পেছনে ফিসফিস শুনে আতঙ্কে শানু পেছন ঘুরে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলো। একটা মেল ট্রেন দাঁড়িয়ে, যার দরজায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। এটা তো এই লাইনে ছিল না এলো কখন? ভাবলো ও। ও থম মেরে দাঁড়িয়ে গেলো দেখে মেয়েটা বলে উঠলো “কি হল উঠে এসো... পুলিশ তো চলে এলো। ধরা পড়তে চাও নাকি?” কথাটা শুনে আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ও উঠে পড়লো ট্রেনের মধ্যে। আর উঠে পড়তেই ট্রেনের দরজা বন্ধ করে দিলো মেয়েটা তারপর এগিয়ে গিয়ে বসলো একটা সীটের ওপর। শানু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো। কামরার ভেতর খুব মিটমিটে আলো জ্বলছে যার কারণে ঝুপসি অন্ধকার কামরার এদিক ওদিকে, এতে করে বেশ রহস্যময় লাগছে ভেতরটা। কেমন যেন ভূতুড়ে। তাও ওর মধ্যেই খেয়াল করলো বাকি যাত্রীরা ঘুমচ্ছে শুধু এই মেয়েটি জেগে। মেয়েটা বলল “কি হল বসবে না নাকি?” ও এগিয়ে মেয়েটির মুখোমুখি বসলো তবে মনে ওর স্বস্তি নেই কারণ যদি পুলিশ ওর খোঁজে ট্রেনে উঠে আসে তখন কি হবে? তাছাড়া এটা মেল ট্রেন মনে হল, কখন স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাবে তখন নামবে কি করে? প্রশ্নের ঝড় ওর মনকে আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। ভাবতে ভাবতেই চোখাচোখি হল মেয়েটির সঙ্গে, ও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ও জিজ্ঞেস করলো “ট্রেনটা কোথায় যাচ্ছে?”

মেয়েটি হেসে বলল “একদিন যাচ্ছিল দূরের এক সমুদ্র পারের শহরে আজ কোথাও যাচ্ছে না, আর যাবেও না”

“মানে”

“মানে যা বললাম তাই”

“তাহলে তোমরা ট্রেনে চেপে আছো কেন? নেমে গিয়ে অন্য কোন ট্রেন ধরো”

“আর দরকার নেই। আমাদের গন্তব্যও ট্রেনের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে। যেমন তোমারও যাবে কিছুক্ষণ পরেই”

“এ কথার মানে কি?”

“মানে বুঝতে পারছেন না?” শানু তাকিয়ে দেখলো এক পুরুষ যাত্রী কখন উঠে এসেছে আর এসে বসেছে ঠিক ওর পাশেই। ওকে দেখে শানু অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। কেন ওকে দেখে মন বলছে পালাও নাহলে পালানোর আর কোন সুযোগ পাবে না, ও বুঝতে পারলো না। মেয়েটা হেসে উঠলো। বলল “তুমি এতো বুদ্ধু এখনো বুঝতে পারছোনা আমরা কেউ জীবিত নই। ট্রেনটার আর কোন অস্তিত্ব নেই, অনেকদিন আগেই আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়ে গেছে আর তার সাথে এই ট্রেনে যারা যাত্রী হয়েছিল তারাও”

আর্তনাদ বেরিয়ে এলো গলা চিরে, শানু লাফিয়ে উঠলো সীট থেকে। সাজানো কামরা কেমন এক নিমেষেই ঝলসে পুড়ে যাওয়া চেহারা ধারণ করলো, চারদিকে মাকড়সার ঝুল ঝুলছে। যাত্রীরাও মেয়েটির হাসি শুনে উঠে পড়েছে। যারা উঠে এলো সীট থেকে তারাও সব ঝলসে গেছে তবু তারা পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। ও তাকালো মেয়েটির দিকে, ওর চেহারাও ঝলসে কি বিভৎস্য আকার ধারণ করেছে! ও লাফ মেরে দরজার সামনে গিয়ে দরজা খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করলো দরজার হাতল ঘুরিয়ে কিন্তু জং পড়ে যাওয়ায় হাতল ঘুরতে চাইলো না।         

সবাই এগিয়ে আসছে তার মধ্যে মেয়েটির আওয়াজ পাওয়া গেলো “তোমার নিস্তার নেই, পালাবে কোথায়”

শানু শেষ চেষ্টায় এক হ্যাঁচকা টান দিলো দরজা ধরে। পাল্লা খুলে গেলো সেই টানে কিন্তু সেই ধাক্কায় ও পড়ে গেলো কামরার ভেতরে। দরজা আবার বন্ধ হয়ে গেলো চিরদিনের মতো আর অশরীরী হাতগুলো এগিয়ে এলো ওর গলা লক্ষ্য করে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Horror