সে হাতের ছোঁয়া
সে হাতের ছোঁয়া
ডুবন্ত সূর্যটাকে বহু দিন পর দেখতে ইচ্ছে করলো আজ। হুইল চেয়ার টাকে টেনে বারান্দায় নিয়ে বেশ কষ্ট হলো । শেষ কবে বারান্দায় এসেছে গেছি। এ বারান্দার গাছ গুলো আমার খুব প্রিয় ছিল। ঘুম ভেঙে ওদের দেখতো রোজ ওদের জল দিয়ে। ওদের গায়ে হাত বুলাতাম, নূতন কোনো ফুল ফুটলে তো আর কথাই নেই সেদিন সারাদিন মনটা ফুরফুরে থাকতো । ভুলে যেতাম বুকের ভিতর জমে থাকা কষ্ট গুলোকে। রূপা বেশ যত্নে রেখেছে গাছ গুলোকে দেখে ভালো লাগলো।
"দাদাবাবু কি এতো দেখছো? তুমি একা একা এলে কেন আমাকে তো একবার ডাকতি পারতে? " মিঠু মাসি বলল..
" আজ নিজেরই আস্তে ইচ্ছে করলো তাই তোমায় ডাকিনি "বললাম আমি
আজ বেশ লাগলো সূর্য অস্ত যাওয়া আকাশ টাকে. কখন যে সেই আকাশেই একটা অর্ধেক চাঁদ আর কিছু তারা উঁকি দিলো খেয়ালি করেনি | মিঠু মাসির ওপর দায়িত্ব দিয়ে ওর বাবু সোনার বিয়েতে গেছে। যদি রূপা টুবাই মা বাবা কেউ আমাকে রেখে যেতে চাই নি বিয়ে বাড়িতে। রূপা টুবাইরা আগে প্রতিবছর ঘুরতে যেতো। কিন্তু আমার অক্সিডেন্টের পর থেকে ওরা কোথাও যায় না। আগের মাসে ওদের বিয়ে বার্ষিকী ছিলো। আমি online ওদের জন্য একটা ভালো শাড়ি, আর ব্লেজার কিনে দিলাম। খুব কষ্ট লাগলো। যখন রূপা বললো " দাদা এতো দামী পোশাক কিনে দিলেন কেন আমাদের , আমরা তো কোথাও বেরাই না এখন.. " কষ্ট লাগলো আমাদের জন্য ওদের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো।
আকাশটা এখন চাঁদ তারার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত। কিন্তু ভাঙা চাঁদটা চুপচাপ বসে ঠিক আমার মতো।নিজেতো বিবাহিত জীবনটা কোনো দিন উপভোগ করতে পারলাম না। ওদের দাম্পত্য জীবনে আমি এখন একটা বোঝা হয়ে রেয়েছি।চলার শক্তি নেই আমার, আজকল হুইল চেয়ার তার সর্ব ক্ষণের সঙ্গী. বই পড়তে, গান শুনতে কিছু ভালোলাগেনা. মাঝে মাঝে সুপ্রান্তিকার কথা বড্ডো মনে পরে । নীলাঞ্জনা আমার কঠিন সময় চলে গিয়েছিলো। তখন সবাই কিন্তু নীলাঞ্জনার কথাই বিশ্বাস করেছিলো । ভেবেছিলো আমি চরিত্রহীন। কিন্তু সেই সময় ও আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছিলো। Offshore গিয়ে আমি মদ খাওয়া ধরলাম নীলাঞ্জনার করা সব অপমান গুলো ভুলতে। সেই সময় ও আমাকে বাধা দিতো। রাতের রাতে কথা বলে আমাকে নেশা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতো। তারপর সবার অমতে ও আমাকে বিয়েও করলো। ও বাইক রাইড পছন্দ করতো। আমি ওকে নিয়ে বাইক রাইড গিয়েই দূর্ঘটনা ঘটলো। ও চলে গেলো আমাকে আবার আরো একা করে। রূপা টুবাইদের কাঁধে বোঝা করে। সুপ্রান্তিকা আসো না একবার। তোমার হাত ভীষন প্রিয় আমার। তোমার হাত ধরে ট্রাম লাইন ধরে কতো দিন। হাঁটি না। তোমার হাতে হাত রেখে তোমার সাথে ভিড় হীন রাতের শহরের রাজপথে এখনও তো হাঁটা বাকি।এও এখনতো আমি হাঁটতেও পারি না।
মাসি এসে বললো "দাদা বাবু একটু কফি কইরা দিমু? "
আমি বললাম "হ্যাঁ দিতে পারো আর শোনো তুমি বলছিলে, না তোমার নাতির শরীর ভালোনা ডাক্তার দেখাতে হবে, আজ বাড়ি গিয়ে ওকে ডাক্তার দেখিয়ে কাল সকালে ফিরো । আমার ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে যেও । তুমি আমায় আমি ওষুধের এর প্যকেটটা দিয়ে যাও । "
ও বললো "নানা তোমারে রাইখ্যা কেমনে যামু রাতের খাওয়া গরম করবে কে? সে আমি কাল যামু ক্ষণ কাজ সাইরা, রূপা বৌদিরা কাল বিকেলে আইয়া পড়বে বলেসে। "
আমি "একটা দিন আমি নিয়ে খেতে পারবো তুমি সব গুছিয়ে রেখে যাও আমি গরম করে নেবো । তাছাড়া অমিত কে ফোন করেছি। অনেক দিন ড্রিঙ্ক করে না ও নিয়ে আসছে। তুমি যাও। মা বাবা নেই বলেই আনালাম তুমি যাও "
কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো মিঠু মাসি । তবে মদ খাবো শুনে ওর মুখটা যেনো কেমন হয়ে গেলো।কিন্তু ও দাঁড়িয়ে আছে দেখে বললাম " ওষুধ গুলো এনে দিয়ে বিদায় হও প্লিজ। যা করতে বলছে তাই করো। " বিরক্ত হয়ে গেছি দেখে। ও ওষুধের বাক্সটা দিয়ে। চলে গেলো।
এরপর মাসির রেখে যাওয়া ওষুধের বাক্স টা হাতে নিয়ে। সব কটা ঘুম ওষুধ খেয়ে নিলাম। আজ একটু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। তাই বেশ আরো কটা ভুল ভাল ওষুধ একবারে মুখে পুরে দিলাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলাম। বেশ বুড়ো হয়ে গেছি এ কয়েকটা বছরের মধ্যে।হুউল চেয়ার থেকে বিছানায় উঠতেই পারছিলাম না। কোন ক্রমে গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। কিন্তু চোখে একটা মিষ্টি ঘুম চলে এলো। সুপ্রন্তিকা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। যে হাত ভীষন প্রিয় আমার।
